দুর্নীতিগ্রস্থ ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ! উপেক্ষিত প্রবাসী যাত্রীদের জন্য অশনি সংকেত!
লিখেছেন লিখেছেন প্রবাসী মজুমদার ২৫ মে, ২০১৪, ০১:০৪:১৮ দুপুর
ইউনাইটেড এয়ার ওয়েজ (বিডি) লিঃ এ "সিনিয়র সেলস এক্সিকিউটিভ" হিসেবে জেদ্দা ষ্টেশনে এক বছর যাবত কাজ করার সুযোগ হয়েছিল। দায়ীত্ব পালন করার সুবাদে জেদ্দা, মক্কা, ইয়ানবো, তায়েফসহ কয়েকটি শহরের ট্রাভেল এজেন্সী ও প্রবাসী বাংলাদেশী যাত্রীদের খুব কাছে থেকে দেখার ও শোনার সুযোগ হয়েছিল। এক বছরের তিক্ত অভিজ্ঞতায় বিস্মিত হয়েছি প্রবাসের এ বাকহীন মানুষগুলোর সাথে প্রাইভেট এয়ারলাইন্স ইউনাইটেডের অমানবিক ও ওদ্ব্যত্বপুর্ন আচরণ দেখে। অনিয়ম আর জবাবদিহিতায় অপারগ এ এয়ারলাইন্সের পরতে পরতে দেখেছি দুর্নীতিবাজদের পদচারণা।
২০১১ সালের অক্টোবর মাসে জেদ্দা-ঢাকা রুটে চালু হওয়া ইউনাইডেট এর বয়স এখন প্রায় তিন বছর। এ তিন বছরে এটির ব্যবস্থাপনা, যাত্রী সেবার মান থেকে কোন কিছুতে সামান্যতম পরিবর্তন আসেনি। দুনীতি আর অনিয়মের পদভারে নুইয়ে পড়া এ এয়ারলাইনসটি সম্পকে নিম্নের সাইটটিতে লিখার সচিত্র প্রতিবেদন যেন তারই বাস্তবতা।
http://www.banglanews24.com/beta/fullnews/bn/291408.html
একজন প্রবাসী হিসেবে প্রবাসের এ খেটে খাওয়া মানুষগুলোর জন্য কলম ধরা যেন সময়ের দাবী মনে করছি। তাই সে সব না বলা কথা নিয়ে লিখতে বসেছি লক্ষ লক্ষ প্রবাসী যাত্রীদের দিকে ধেয়ে আসা অনাকাঙ্খিত অশনি সংকেত থেকে সর্তক করার জন্য।
২০১১ সালের প্রথম দিকে বন্ধ হয়ে যাওয়া জিএমজি এয়ারলাইন্স প্রবাসীদের অর্জিত সব স্বপ্নকে ভেঙ্গে চুরমার করে দিয়েছিল। হঠাৎ করে বন্ধ হয়ে যাওয়া এ এয়ারলাইন্সের কারণে হাজার হাজার প্রবাসী দেশ থেকে আর ফিরে আসতে পারেনি। এতে অনেক বড় বড় কোম্পানী, ট্রাভেল এজেন্সীসহ প্রবাসীদের উপর নির্ভরশীল পরিবারের করুণ কাহিনীগুলো এজেন্সির এজেন্টদের কাছে শুনে মনটা খুব খারাপ হয়ে যেতো।
এজেন্সিগুলো ভিজিট করার সময় তাদের একটিই কথা ছিল,
- স্যারি ভা্ই। আমরা আপনাদের টিকেট বিক্রী করতে পারবো না। জিএমজি এয়ারলাইন্স ৭৬৭ নিয়ে এসেছিল। যাত্রীর সেবার মানও অনেক ভাল ছিল। বাংলাদেশের ধনাঢ্যদের দ্বারা পরিচালিত এ এয়ারলাইন্সটি বেশীদিন টিকতে পারেনি দুনীতি আর অনিয়মের কারণে। আপনারা যে বন্ধ হবেন না তারই বা নিশ্চয়তা কি? অনেক পুরোনো এয়ারক্রাফট ৩১০ দিয়ে কতদিন টিকে থাকবেন দেখতেই বুঝা যাচ্ছে।
সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্থ জুফ ট্রাভেলস, এয়ার উইংস, ট্রান্সওযাল্ডসহ অনেক ট্রাভেল এজেন্সীর হাজার হাজার যাত্রী ফিরে আসতে পারেনি। এমনকি যাত্রীদের অব্যবহৃত টিকেটের টাকাও ফেরত পাওয়া যায়নি। যারা ঋণ করে কিংবা জায়গা বিক্রী করে ফিরে আসতে পেরেছিল, তাদের ভাষ্য মতে, ঢাকা অফিস বলে জেদ্দায় গেলে টাকা পাবেন। জেদ্দা বলে এয়ারলাইন্স তাদের সাথে প্রতারণা করেছে। এসব মিলিয়ে মুখ থুবড়ে পড়া হতাশাগ্রস্ত ট্রাভেল এজেন্সীগুলোকে আর একটি নতুন প্রাইভেট এয়ার লাইন্সের টিকেট বিক্রীতে রাজী করা ছিল খুবই দুরুহ কাজ।
সবচেয়ে বড় কথা হল, আল বাইক, আল মাজল সহ অনেক বড় বড় কোম্পানীতে কর্মরত অনেক বাংলাদেশি ফেরত আসতে না পারায় এরা দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এজেন্সিগুলোর সাথে তাদের ব্যবসায়িক সম্পন্ন ছিন্ন হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে প্রবাসীদের হয়ে কোন এ্যাকশান না হওয়ায় ওরা বিস্মিত হয়েছে। মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল বাংলাদেশের মানুষগুলো থেকে। হাজার হাজার প্রবাসীর এসব করুণ কাহিনীর পুনচিত্র কোন এক অজানা কারণে উঠে আসেনি পত্রিকার পাতায়।
প্রথম দিকে এজেন্সির কাউন্টার এজেন্টদের কে দিয়ে ইউনাইটেডের টিকেট বিক্রী ছিল খুবই দুরুহ ব্যপার। তাই লোব দেখিয়ে শুরু হল ইনসেনটিব দেয়া। প্রতিটি ওয়ান ওয়ে টিকেটে ১৫ রিয়াল। রিটার্ন টিকেটে ২৫ রিয়াল। এতে কাজ হল। শুরু হল টিকেট বিক্রী। কাউন্টার এজেন্টরা ইচ্ছে করলে যে যাত্রীদের গরু গাড়ীতেও পাঠাতে পারে তাই দেখলাম খুব কাছ থেকে।
তবুও বাংলাদেশ বিমানের অনিয়ম, সিডিউল বিপর্যয় ইত্যাদির কারণে বাধ্য হয়েই অনেকে অনিচ্ছা সত্বে ইউনাইটেডে যাতায়াত শুরু করেন। কিন্তু সমস্যা শুরু হল অন্য জায়গা।
ইউনাইডেটে ভ্রমন করে ঘুরে আসা প্রতিটি যাত্রীই ক্ষোভের সাথে বলত, ভাই, দ্বিতীয়বার ইউনাইটেডে আর যাবনা।
- কারন?
- এটা কি বিমান না গরুর গাড়ী?
ইউনাইটেড এর এয়ারক্রাফট মডেল ৩১০। এতে ২১০ জন যাত্রী বহন করার ক্ষমতা থাকলেও অধিক মুনাফার্জনের জন্য এটিতে অতিরিক্ত আরও ৪০ টি সীট বসিয়ে ২৫০ এ উন্নীত করা হয়েছে। যার কারণে দুই সীটের মাঝামাঝি ফাঁকা স্থান এত সংকীর্ন যে একজন যাত্রী হাটু সোজা করে বসার সুযোগ নেই। পা দুটো ফাঁক করেই বসতে হয়। মাঝে মাঝে ছেঁড়া সীট গুলোও চোখে পড়ার মত। ভেতরে কোন টেলিভিশন নেই। বাথরুম নামে মাত্র তিনটা হলেও শুধু মাত্র একটি বাথরুম যাত্রীদেরকে ব্যবহার করতে দেয়া হয়। একটি ক্যাপ্টেন ক্রুদের জন্য রিজার্ভ। বাকী একটি বাথরুমের দরজা বন্ধ করে যাত্রীদের হ্যান্ডব্যাগ রাখা হয়।
- কেন?
- কারণ ৩১০-এয়ারক্রাফট এ একটিমাত্র ফুয়েল ট্যাংকি থাকলেও ইউনাইটেড লন্ডন রুটে আসা যাওয়ার জন্য অতিরিক্ত একটি টাংকি সংযোজন করেছে। সেটি খুলতে অনেক টাকা লাগবে বলে এভাবেই রেখে দিয়েছিল। অতিরিক্ত ফুয়েল ট্যাংকটি অনেক জায়গা দখল করে রাখার কারণে যাত্রীদের সব মালামাল সংকুলান হতোনা। তাই যাত্রীদের একটু কষ্ট দিয়ে হলেও একটি বাথরুম বন্ধ করে ১০ পিস ব্যাগ নিতে পারলে ক্ষতি কি?
শিশুম, মহিলা আর বয়োবৃদ্ধ মানুষদেরকে আকাশপথে দির্ঘ ৬ ঘন্টার বাথরুম কষ্ট অনেক অমানবিক হলেও ইউনাইটেড এয়ার ওয়েজের ম্যানেজ মেন্টের কাছে এটি একেবারেই উপেক্ষিত।
অন্যদিকে এ এয়ারক্রাফটি শুধূমাত্র ২১০ জন যাত্রী বহনযোগ্য মালামালের জায়গা তৈরী করলেও, বেশী যাত্রী বহন করে অধিক মুনাফার জন্য ২১০ থেকে সীট সংখ্যা বাড়িয়ে ২৫০ করায়, অতিরিক্ত ৪০ জন যাত্রীর মালামাল কখনোই নেয়া সম্ভব হতনা। অন্য কথায়, দীর্ঘ বছর পর প্রবাসী বাংলাদেশী যাত্রীরা দেশে যাওয়ার সময় টাকা পয়সা হাওলাত করে হলেও আত্মীয় স্বজনের জন্য গিফট নেয়ার রেওয়াজ চালু থাকায় প্রতিটি যাত্রীকে একের অধিক ব্যাগ নিতে দেখা যায়। যার কারণে ১৮০-২০০ যাত্রীর ব্যাগ বহন করাও অনেক সময় ইউনাইটেডের পক্ষে সম্ভব হয়না। এতে বিশেষ করে বিভিন্ন মৌসুমে প্রচুর পরিমান যাত্রীর ব্যাগ জেদ্দা এয়ারপোর্টে থেকে যেত। ব্যাবসায়িক স্বার্থ অক্ষুন্ন রাখার জন্য এ বিষয়টি কখনও যাত্রীদের জানতে দেয়া হত না। ঢাকা এয়ারপোর্টে গিয়ে ব্যাগ না পেয়ে শুরু হয় যাত্রীদের হট্টগোল। অনেক বাক বিতণ্ডা আর চীৎকার দেয়ার পর বিভিন্ন অজুহাত দিয়ে বলা হত, আপনার মাল জেদ্দা এয়ারপোর্টের ইমিগ্রেশন সমস্যার কারণে রয়ে গেছে। এভাবেই মিছেমিছি সুজাকে বুঝিয়ে হাসি মুখে দেশে যাওযা একজন প্রবাসীকে মলিন মুখে বিদায় করে দেয়া হতো।
জেদ্দায় থেকে যাওয়া এসব ব্যাগ কখনও ১৫-২০ দিন পর ফেরত পাঠালেও এতদিন জেদ্দা এয়ারপোর্ট থাকা ব্যাগে লাগানো ট্যাগ / স্লিপ অযত্নে অবহেলায় নাড়া ছাড়ার করার সময় ছিঁড়ে যেতো কিংবা লিখা মুছে যেত। ফলে অনেক ব্যাগই হয়ে যেতো নাম্বার হীন। অন্যদিকে ইউনাইটেডের জনবলের অপ্রতুলতার কারণে জেদ্দা এয়ারপোর্টে এসব ব্যাগ বিভিন্ন কোম্পানীর লোকেরা হ্যান্ডেল করার সময়ও অধিকাংশ বেগে লাগানো ট্যাগ খূলে যেতো। আর এভাবেই নাম্বার হীন ব্যাগ হয়ে যেতো মালিক হীন! যাত্রীদের অভিযোগ অনুসারে টিকেট ও ট্যাগ নাম্বার দিয়ে ঢাকা অফিসে হাজারো লিখা লিখি করেও এসবের সুরাহা হয়নি কোনদিন। সবচেয়ে বড় কথা হল, এ বিষয়ে অনেক সময় চেয়ারম্যানের কাছে লিখেও কোন এ্যাকশান হয়নি। ফলে ঢাকা এয়ারপোর্টে কর্মরত নাম্বারবিহীন ব্যাগ হাতিয়ে নিত দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মচারীরা।
(আগামী পর্ব গুলোতে এ নিয়ে আরও অনেক গুরুত্বপুর্ন তথ্য উপাত্ত থাকবে)
বিষয়: বিবিধ
১৮১০ বার পঠিত, ৩৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ!
আমি নিজে বেশ কিছু মানুষকে বলেছি। তারা টিকেট কিনেছে। অভিযোগ করার পর যা জবাব পেয়েছিলাম। তাতো দেখছি সবই অসত্য।
আপনার এই পোষ্টটা খুবই উপকারী হবে আমরা 'মরা'প্রবাসীদের জন্য।
সাহস করে লিখছেন - সকল প্রবাসীদের পক্ষ থেকে আপনাকে জানাই শুভেচ্ছা। দোয়া থাকলো আপনার জন্য।
অনুমতি ছাড়াই তা ফেবুতে দিয়ে দিলাম।
আমি ও একজন ভুক্তভুগী...
আমার ইচ্ছা ছিল এই বিষয়ে কিছু লিখব... কিন্তু ব্যস্ত্যতা এমনই এক জিনিস যার কারনে অনেক কিছুই করা হয়না।
আপনি যেহেতু লিখা শুরু করেছেন তাতে আমার লিখাটা ও পোস্ট করার উতসাহ পাবো।
বাস্তব সত্যগুলি এই ভাবে ই এক সময় বেরিয়ে আসে।
ধন্যবাদ প্রবাসী..... ভাই কে।
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
ঢাকা: মাহবুবুর রহমানের অভিজ্ঞতাই শুনুন। গত ডিসেম্বরে কক্সবাজার থেকে ঢাকার পথে ইউনাইটেডের নানা কষ্ট সয়ে জার্নি করছিলেন। তবে কষ্ট তার ভয় আর ঘৃণায় পরিণত হলো যখন মাথার ওপর দেখতে পেলেন বড় আকারের একটি তেলাপোকা। ইউনাইটেডকে ডোবাতে নিশ্চয়ই নয়, স্রেফ খেয়ালের বশে একটি ছবিও তিনি তুলে ফেলেছিলেন নিজের স্মার্ট ফোনে।
শোভন আকন্দ ইউনাইটেডকে ‘ফালতু মার্কা সার্ভিস’ বলতেও ছাড়েন নি। শোভন আকন্দ’র অভিজ্ঞতাটি অনেকটা আনকোড়া। গত ২৫ মার্চ ঢাকা থেকে যাচ্ছিলেন চট্টগ্রাম এই ‘ফালতু মার্কা’, তার ভাষায়, সার্ভিসে। ফ্লাইটে ওঠার পর জানেন সেটির এসি নষ্ট। ৪০ মিনিটের যাত্রা। যাত্রীরা ঘেমে জবজবে। গরমে তেতে ওঠা মেজাজে ইউনাইটেডকে গালি ঝাড়লেন যে যার স্টাইলে।
বিমানবালাকে শোভন জিজ্ঞাসা করলেন, এটাকে কি সার্ভিস বলে? তিনি উত্তর দিলেন এটা মেরামতের কাজ চলছে! কতদিনে শেষ হবে জানতে চাইলে এর কোনো উত্তরই দিতে পারেন নি। অবশেষে উপসংহার টানলেন শোভন: ঢাকার রাস্তায় ৬ নাম্বার বাস এর চেয়ে শত গুণে ভালো।
তিনি বলেন, সেইদিনই ভেবেছি আর কোনোদিন এই গরুর গাড়িতে উঠব না। এটাকে গরুর গাড়ি বললে গরুর গাড়িকে অপমান করা হয়...... যাত্রীসেবার নাম করে ইউনাইটেড করছে যাত্রী হয়রানি আর হাতিয়ে নিচ্ছে টাকা।
1bg
শোভনের সঙ্গে অভিজ্ঞতার মিল রয়েছে সোহেল আজিজ নামে অপর এক যাত্রীর। ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের অভিজ্ঞতাকে তার জীবনের সবচেয়ে খারাপ বিমানভ্রমণ-অভিজ্ঞতা বলেছেন সোহেল আজিজ। অফিসের কাজে তাকে প্রায়ই চট্টগ্রামের পথে উড়তে হয়। এরই মধ্যে বাধ্য হয়ে বার কয়েক ইউনাইটেডেও উড়েছেন। অধিকাংশ সময়ই দেখেছেন এয়ারক্র্যাফটের এসি কাজ করছে না। কেবিন ক্রুদের কাছে জানতে চেয়েও এর কোনো সদুত্তর তিনি পান নি। আর সোহেল বলেছেন কেবল তিনিই নন, তার আরও বন্ধু ও সহকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জেনেছেন তাদেরও একই অভিজ্ঞতা।
এক্ষেত্রে সোহেল আজিজ অবশ্য একটি বাড়তি তথ্য শেয়ার করেছেন, তিনি বলেছেন, টেকঅফের পরপরই এসি বন্ধ করে দেয় ইউনাইটেড। আর তা নাকি জ্বালানি খরচ বাঁচাতে। এটা কতটা সত্য তাই ইউনাইটেড কর্তৃপক্ষই জানে। তবে সোহেলের মতে এমন ফালতু ঘটনা পৃথিবীর আর কোথাও ঘটে বলে তার জানা নেই। তার ভাষায় বেশি টাকা খরচ করে এমন কষ্টকর ভ্রমণ করার অভিজ্ঞতা ইউনাইটেডেই হচ্ছে।
মুহাম্মদ বেলাল উদ্দীন লিখেছেন কুনিরবিল, আনোয়ারা, চট্রগ্রাম থেকে। তার চিঠিটি হুবহু তুলে ধরা হলো পাঠকের জন্য। ভুক্তভোগী অগণিত গ্রাহকদের হয়রানির বিষয়ে বাংলানিউজের সাহসী অবস্থান সত্যিই প্রশংসনীয়। বাংলানিউজকে আন্তরিক মোবারকবাদ। আমি আমার ব্যক্তিগত হয়রানির চিত্র তুলে ধরলাম।
নিতান্তই গরিব ঘরের সন্তান হিসেবে শৈশব থেকে স্বপ্ন ছিল বিমানে চড়ার। আমি কখনো পরিবারের সাথে এই স্বপ্নটি শেয়ার করিনি সংগত কারণে। বেসরকারি বহুজাতিক কোম্পানিতে চাকরির সুবাদে সেই স্বপ্ন পূরণ হয়েছিল গত বছরের নভেম্বরে অফিস বসের সাথে ঢাকা গমন করে। বিমানে ওঠার আগমুহূর্ত পর্যন্ত ছিলাম স্বপ্নপূরণে বিভোর উদগ্রীব এক রাজা। কিন্তু বিমানে ওঠার পর থেকে অফিস এবং অদ্যাবধি দিনটি আমার জন্যে আক্ষেপের, ক্ষোভের। যদিও সহযাত্রী বস আমাকে বোঝানোর চেষ্টা করলেন বাস্তবতা, কারণ বস যেহেতু মাসে কয়েকবার আসা যাওয়া করেন, উনি এটা স্বাভাবিকভাবে মেনে নিচ্ছেন বা নেওয়ার অভিনয় করছেন। আমারটাসহ অনেকগুলো সিটের উপর পড়েছিল বিভিন্ন কোম্পানীর লিফলেট, সিগারেটের অংশবিশেষ, চুইংগামের খোসা আরো কত কি? এগুলো পরিস্কার করার জন্য এক কেবিন ক্রুর দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি এমন ভাব দেথালেন যেন আমিই সেই ব্যক্তি যে তার প্রমোশন আটকে রেখেছে। ইচ্ছা থাকা সত্বেও বিমানের ভিতরে ছবি তোলার সুযোগ হয়নি। প্রায় ৫০ মিনিটের এই ভ্রমণটি ছিল অপরিচ্ছন্নতা ও দুর্ব্যবহারের যন্ত্রণার। গরুর গাড়িতে চড়ার সুযোগ হয়নি কখনো কিন্তু আমার কাছে ভ্রমণটি অনেকটা গরুরগাড়ির ভ্রমণের মতই মনে হয়েছিল। সিটি বাসের সমতুল্য আচরণও পাইনি আমি।
শওকত মোস্তফা বলেন, এমন একটি ফালতু এয়ারওয়েজ কিভাবে আন্তর্জাতিক রুটে ফ্লাইট চালায় তা জানা নেই।
আর সিভিল এভিয়েশন থেকে এরা কিভাবে অনুমতি পেয়েছে তা জানতে চান শোভন। ইউনাইটেডে এক বোতল পানি বাড়তি চেয়েও পাওয়া যায় না, এমনই সার্ভিসের অবস্থা, বলেন শওকত।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৫৫ ঘণ্টা, মে ২৫, ২০১৪
- http://www.banglanews24.com/beta/fullnews/bn/293057.html#sthash.3rfeEP4F.dpuf
ইশতিয়াক হুসাইন, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
ঢাকা: এমনিতেই ফ্লাইট শিডিউলের বেহাল অবস্থা। এর ওপর দেনা আর লোকসানে ডুবতে বসেছে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ। নিজেদের বাঁচাতে এবার তারা লাভজনক হজ যাত্রী পরিবহন কাজ পেতে চাইছে। এ লক্ষ্যেই সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানটি থার্ড ক্যারিয়ারের দাবি নিয়ে উচ্চকিত হয়।
হজ যাত্রী পরিবহনের কাজ দিতে বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে ইতোমধ্যেই সরকারের বিভিন্ন মহলে চাপ সৃষ্টির চেষ্টা করছে তারা, আবার কোথাও টাকা দিয়ে সংশ্লিষ্টদের ম্যানেজ করার চেষ্টা করছে। প্রয়োজনে ঘুষ দিয়ে হলেও তারা কাজটি পেতে চাইছে কারণ হজ যাত্রী পরিবহনের মাধ্যমে ব্যাপক মুনাফা অর্জন সম্ভব। বেসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রণালয় ও ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ বলেন, এর আগেও নিজেদের ডুবন্ত অবস্থা থেকে বাঁচাতে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ শেয়ার বাজার থেকে ৪০০ কোটি টাকা তুলে নিয়েছিল। এ ধরনের ছলচাতুরির আশ্রয় নেওয়ার রেকর্ড তাদের নতুন নয়।
তিনি বলেন, ফ্লাইট বিলম্ব, একের পর এক রুট চালু করে পুনরায় তা বন্ধ করে দেওয়াসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত ইউনাইটে এয়ারওয়েজের আর্থিক অবস্থা শোচনীয়। এ অবস্থায় শেয়ার বাজার থেকে তারা আবারও ২০০ কোটি টাকা উত্তোলনে তৎপরতা চালাচ্ছে। যদি কোনো কারণে তারা এই টাকা তুলতে ব্যর্থ হয় সেজন্য হজ যাত্রী পরিবহনের কাজটি বাগিয়ে নিতে চাইছে। তবে সত্যিকার অর্থে এ ধরনের কৌশল নিয়ে জিএমজি নিজেদের বাঁচাতে পারেনি। ইউনাইটেডও শেষ পর্যন্ত পারবে বলে মনে করেন না তিনি।
রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী এয়ারলাইন্স বিমান বিভিন্ন রুটে লোকসান দিলেও শুধু হজ যাত্রী পরিবহন করে কয়েকশ’ কোটি টাকা লাভ করে থাকে। তাই বিমানের এই লাভজনক কাজটি পেতে দীর্ঘদিন ধরেই দেশী-বিদেশি এয়ারলাইন্সগুলো চেষ্টা চালিয়ে আসছে। সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ও সৌদি এয়ারলাইন্সই হজ যাত্রী পরিবহনের কাজ পেয়ে থাকে। এর বাইরে কাউকেই এই কাজ দেওয়া হয় না। তবে ২০০৯ ও ২০১১ সালে কয়েকবার বাংলাদেশি বেসরকারি এয়ারলাইন্সসমূহ ও সৌদি আরবের অন্য এয়ারলাইন্সকে হজ যাত্রী পরিবহনের কাজ দেওয়া হয়।
মন্ত্রণালয় একটি সূত্র বলছে, ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ ও জিএমজি এয়ারওয়েজ তখন যাত্রী পরিবহনের কাজ পেয়েছিল। আগের সেই অভিজ্ঞতা তুলে ধরে এবার কাজ পেতে তদবির চালাচ্ছে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ। তারা বলছে, তাদের দু’টি এয়ারবাস এ ৩১০ উড়োজাহাজ বসে রয়েছে। সরকার চাইলে এই সময়ে তারা ২৫০ আসনের এই উড়োজাহাজ দিয়ে হাজীদের আনা নেওয়া করতে পারবেন। এজন্য বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমেও বেসামরিক বিমান মন্ত্রণালয়ে লবিং করছে ইউনাইটেড এয়ার।
এয়ারলাইন্সের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) কাছে পাওনা ৫৭ কোটি টাকা দিতে না পারায় সম্প্রতি ইউনাইটেডের ওপর এয়ার অপারেটর সার্টিফিকেশন (এওসি) স্থগিতের খড়গ নেমে এসেছিল। এ অবস্থায় সম্প্রতি ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ বেবিচকের কাছে পাওনা ৫৮ কোটি টাকার ২৮ কোটি টাকা মওকুফের আবেদনও করেছিল অর্থমন্ত্রীর কাছে।
পরবর্তীতে বেবিচকের কাছে এক কোটি টাকা নগদ পরিশোধ ও আরো চার কোটি টাকা দ্রুততম সময়ে পরিশোধের অঙ্গীকারের বিনিময়ে এওসি পায় তারা। প্রথমে এক সপ্তাহের জন্য এওসি দেয় বেবিচক। পরবর্তীতে তিন মাসের জন্য এওসি মেলে ইউনাইটেডের।
সাধারণত এক বছরের জন্য বেবিচক এওসি দিয়ে থাকে। কিন্তু ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ প্রায় এক বছর ধরে অ্যারোনটিক্যাল ও নন-অ্যারোনটিক্যাল চার্জ না দেওয়ায় বেবিচক তাদের মাত্র তিনমাসের জন্য এওসি প্রদান করে। এওসি ছাড়া ওই এয়ারলাইন্স আর ফ্লাইট পরিচালনা করতে পারে না।
এ অবস্থায় বেবিচকের পরিচালক (ফ্লাইট সেফটি) উইং কমান্ডার নাজমুল আনাম পাওনা পরিশোধ না করলে প্রয়োজনে ইউনাইটেডের ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি (এওসি) নবায়ন স্থগিতের হুমকিও দিয়েছিলেন।
ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের অ্যাসিসট্যান্ট জেনারেল ম্যানেজার (মার্কেটিং সাপোর্ট এন্ড পিআর) কামরুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, ‘বিষয়টিকে নেতিবাচকভাবে দেখার কোনো সুযোগ নেই। একটি বিদেশি এয়ারলাইন্স যদি হজ যাত্রী পরিবহনের কাজ পেয়ে থাকে তবে দেশীয় এয়ারলাইন্স হয়ে ইউনাইটেড পাবে না কেন। তাছাড়া অত্যন্ত সফলভাবে হজ যাত্রী পরিবহনের অভিজ্ঞতা আমাদের রয়েছে।’
বাংলাদেশ সময়: ০৮২৫ ঘন্টা, মে ৭, ২০১৩
- See more at: http://www.banglanews24.com/beta/fullnews/bn/288124.html#sthash.CMFkDNtP.dpuf
এমন কিছু বিষয় জানলাম। যা ভালোভাবে জানা ছিলোনা। অনেক অনেক ধন্যবাদ।
ধন্যবাদ অনেক।
মন্তব্য করতে লগইন করুন