রঙ্গের মানুষ - (পর্ব-৭)
লিখেছেন লিখেছেন প্রবাসী মজুমদার ১৫ মার্চ, ২০১৪, ০৭:৫৫:২৫ সন্ধ্যা
পর্ব-৬
এক মাস হয়ে গেল। বিপুকে পড়াতে যেতে হবে। ম্যানেজার সাহেব অপেক্ষায় আছেন। যাওয়ার দুদিন আগেই স্যারের সাথে আবার দেখা করেছি। কথা বলেছি। স্যার সেকান্দর সাহেবকে ডেকে আনলেন। বললেন, পহেলা মার্চ আমাকে সাথে নিয়ে স্যারের বাসায় যেতে। সেকান্দরও মহাখুশী। বলল,
- অসুবিধে নেই স্যার। আমি মজুমদার সাহেবকে দেখিয়ে দিয়ে আসব। আপনি নিশ্চিত থাকুন।
আজ এক তারিখ। মার্চ ১৯৮৭। বিকেল সাড়ে তিনটা। আমাকে নিয়ে একটু আগেই সেকান্দর সাহেব সাহেব বের হয়ে পড়লেন। বামে একটু হেঁটে জুবলী রোডে উঠেছি। এখানেই টেম্পু ষ্ট্যান্ড। টেম্পুতে চেপে বসে দু'জনে ছুটে চলেছি স্যারের বাসার দিকে। পাশাপাশি বসায় কথাপ্রিয় সেকান্দর সাহেব নিজেই আলাপ জুড়ে দিয়েছেন। বলছেন,
- আপনাকে নিয়ে টেক্সীতে যেতে পারতাম। কিন্তু এতে আপনি রাস্তা চিনবেন না। তাই টেম্পুতেই উঠলাম। এ পথ ধরেই আপনাকে স্যারের বাসায় যেতে হবে ।
- স্যারের সাথে আপনার সর্ম্পর্ক কেমন? জানতে চাইলাম।
- ভাল। বলতে পারেন আমি স্যারের একজন ফ্যামেলী মেম্বার।
- স্যার কি আপনার আত্মীয় হন?
- না। কিছুটা নিজের স্বার্থ হাসিলের জন্যই কাছে ভীড়েছি। বুঝেনত। স্যারের হাতেই আমার প্রমোশন। দুনিয়াটা পুরো তেলের উপর চলে।তাই স্যারের সাথে একটু ভাব রাখার জন্যই একটু মাখামাখি। চাকরিতো অনেকদিন করলাম। প্রমোশনটা আটকে আছে। দেখি এবারে অফিসার পদে পদোন্নতিটা হয় কিনা। স্যার ওয়াদা দিয়েছে। তবুও ভয় পাচ্ছি। প্রাথী অনেক। না জানি কাকে বাদ দিয়ে কাকে দেয়। স্বার্থের জন্য তলে তলে সবাই কেবলা বাবার দরগাহে যায়। তাই ভয়ও পাচ্ছি।
সেকান্দরের মত সদালাপি লোকদের ভেতর ঢুকতে বেশী সময় লাগেনা। শুধু ধৈর্য্য সহকারে এদের কথাগুলো মনোযোগ দিয়ে শুনলেই বাস। একেবারে কলিজার টুকরা। আর একটু প্রশংসা করলেতো কথাই নেই। এদের মন কেড়ে নিতে পারলে দেহও কেড়ে নেয়া যায়। আমি তাই ভাবছি।
অনেকক্ষণ চলার পর ষোল শহর দুনাম্বার গেটে এসে পৌঁছলাম। নেমে পথ পরিবর্তন করে এবার উঠলাম অন্য টেম্পুতে। বায়োজিদ বোস্তামি রোড। দেড় কিলোমিটার পথ যাবার পর আবারও নামতে হল। এবার শুরু হল পায়ে হাঁটার অনুশীলন। কিছুদুর যাওয়ার পর দেখি সামনে উচু পাহাড়।
- কি সেকান্দর সাহেব। আমাদেরকে কি ঐ পাহাড়েও উঠতে হবে।
- মুচকী হাসি দিয়ে বললেন, এইত আর একটু। পৌঁছে গেছি। চলুন। আর বেশী দুর নয়।
সেকান্দরের কথা শুনতে শুনতে পাহাড়ে উঠা শুরু। কোমরর্টা ৩৫ ডিগ্রীতে বাঁকা করে মাথা সামনের দিকে ঝূকিয়ে ৭-৮ মিনিট হেঁটে পাহাড়ের উপর সমতল ভুমিতে গিয়ে পৌছলাম। এতক্ষণে একেবারে হাঁফিয়ে উঠেছি। বড় পিপাসার্তও। জানতে চাইলাম
- আর কত দুরে সেকান্দর সাহেব?
- ঐ যে দেখা যাচ্ছে। নতুন বিল্ডিংটা। খোলা ময়দানের শেষ মাথায়। আরও ৪-৫ মিনিটের রাস্তা। গন্তব্য স্থান দেখে আশ্বস্ত হলাম। যাক এসে গেছি।
পাহাড়ের উপর নির্মল বাতাসে এখন কিছুটা ভালই লাগছে।
বাসায় ঢুকতেই হাস্যেজ্জল শ্যামবর্নের একটি মেয়ে দরজাটা খুলে দিল। নাম তাহুরা। সেকান্দর সাহেব নাম ধরেই কুশল জানতে চাইল। সংক্ষেপে উত্তর দিয়ে তাহুরা ভেতরে চলে গেল। কিছুক্ষণ পর দুটো তোয়ালে নিয়ে এল। দু'জনে হাতমুখ ধূয়ে বসলাম। তারপর আসল ম্যানেজার সাহেবের স্ত্রী।সালাম দিয়ে সামনে বসে পড়লেন। শুরু হল সেকান্দর সাহেবের সাথে কথপকথন। চা-পানি আসল। খাওয়ার মাঝে বিপুর আগমন ঘটল। পরিচয় করিয়ে দেবার পর নতুন শিক্ষক হিসেবে নাম, কোন ক্লােশে পড়ে জিজ্ঞেস করে বিদায় দিলাম। কিছুক্ষণ পর সেকান্দর সাহেবও বিদায় নিলেন। যাওয়ার সময় বলে গেলেন, ফেরত পথে আমাকে ষোল শহর আগ্রাবাদের টেম্পুতে উঠতে হবে।
ম্যানেজার সাহেবের স্ত্রী আমাকে ভেতরের রুমে নিয়ে গেলেন। এটি বিপুর থাকার রুম। পড়ার টেবিলের পাশে পাতানো দুটি চেয়ার। বিপু সালাম দিয়ে পাশের চেয়ারে বসেছে।
মেয়েটি দেখতে অনেক সুন্দর। প্রশংসা করার মত। নিস্পাপ চেহারা। চোখের চাউনীতে অন্যরকম মায়া জড়ানো। অনেকটা লাজুক প্রকৃতির। জড়োসড়ো হয়ে বসে আছে। হয়ত ভাবছে, উনি শুধু শিক্ষক নয় শূধু, বাবার অফিসের একজন স্টাফও বটে। ধর্ম-কর্মের অনুশীলনে আমি কিছুটা সিরিয়াস বলে দৃস্টিসীমাটাও ছিল সীমাবদ্ধ।..অভিজ্ঞতা সম্পন্ন লজিং মাষ্টার!
ছাত্র-ছাত্রীদের পড়ায় মনোযোগী করার জন্য আমি দুটো পদ্ধতি অবলম্বন করতাম। এতে অভূতপুর্ব সাফল্যও পেয়েছি।
প্রথমত পড়া পারুক আর নাই পারুক, ছাত্র ছাত্রীর খুব প্রশংসা করতাম। বলতাম, তোমার মেধাটা সত্যিই দারুণ। একটু চেস্টা করলে তুমি আরও বেশী ভাল করতে পারবে। মারধর না করে প্রশংসার মাধ্যমে ওদের আত্মবিশ্বাসী করে গড়ে তোলার চেস্টা করতাম। তুলে আনতাম ভেতরের লুকিয়ে থাকা মানুষটিকে।
দ্বিতীয়ত, আমার হাতের লিখা ছিল অনেক আকর্ষনীয়। আরও বড় কথা হল, পেন্সিল আর্ট ছিল তাক লাগানোর মত। ওরা দেখে অভিভুত হত। অল্প দিনেই আমার ভক্ত হয়ে যেতো। বিপুকে কয়েকদিন পড়ানোর পর স্বয়ং ম্যানেজার সাহেবই আমার প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়ে গেলেন। বললেন, আামর মেয়ে আর আপনার ভাবীতো দারুণ খুশী...।
কিন্তু স্যারের বাসার দুরত্বে আমার মনটা খুব খারাপ হয়ে গেল। (চলবে)
বিষয়: বিবিধ
১৬০১ বার পঠিত, ৬৭ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আমরাও দারুন খুশি !! না না অন্য কিছুতে নয়। আপনার লেখা পড়ে
মেয়েটির বর্ণনাতে কয়েকটি গুণবাচক বাক্য রয়েছে -
১. মেয়েটি দেখতে অনেক সুন্দর।
২. প্রশংসা করার মত।
৩. নিস্পাপ চেহারা।
৪. চোখের চাউনীতে অন্যরকম মায়া জড়ানো।
৫. অনেকটা লাজুক প্রকৃতির।
আমরা এপর্যন্ত যে কয়জন কমেন্টস করেছি তাদের চোখে শুধুমাত্র ১ নং বাক্যটিকেই হাইলাইট করছি। কেন ভাই? আমরা যখন এই ব্লগে কোন নারীর লেখা পড়ি তখন কতই না শালিনভাবে কমেন্টস করি, বা তাদেরকে সম্বোধন করি। কিন্তু যখন গল্পে এক চরিত্র সৃষ্টি করা হয়েছ, বা একটি চরিত্রের আবির্ভাব ঘটেছে তাকে আমরা অন্যভাবে দেখার লোভ সম্বোরণ করতে পারছি না। কেন? ভেবে দেখুন আমার আপনার বাচ্চাকে পড়ানোর জন্যও কোন না কোন টিচারকে বাসায় বা বাড়িতে আমন্ত্রণ জানাই। যদি তারাও এমনটিই করে তখন ... ?
ধন্যবাদ সাথে থাকে খুব সুন্দর একটা মন্তব্য লিখার জন্য।
৩ নম্বর প্যারার ২ নম্বর নাইনোত ২ বার ''সাহেব'' ন্যাকা হইছে বাপু-দেখি ঠিক করি ন্যাও
জায়গাটার যে বর্নসা দিলেন তাতে যতটুক বুজেছি ওইটা হিলভিউ হাউজিং। এখন অবশ্য সেখানে খুব বড় একটা আবাসিক এলাকা।
কথা ছিল চাঁদ আসবে
মাটির ঘরে ।
ভালবেসে রাখব তাকে
খাতির করে ।
কবিতার ভাষায় আপনার বর্ণিত ভালবাসার নোনাজলে পাল তোরা সত্যিই চমতকার।
আপনি আদর্শবান মু'মিন। কিন্তু সব গৃহশিক্ষকতো আর আপনার মতো না।
হাতের লেখা সুন্দর করার উপায়
ধন্যবাদ।
"কেন পান্থ খ্যান্ত হও হেরী দীর্ঘ পথ,উদ্যম বিহনে কার পুরে মনোরথ?"
এমন যদি হয়-
রাস্তাঘাটে চলতে কারও থাকবে না আর ভয়৷
ছিনতাই আর রাহাজানী উধাও হয়ে যাবে,
কোট কাছারী গিয়ে সবে ন্যায্য বিচার পাবে৷
দূর্নীতি আর ঘূষ রবেনা, মিথ্যা হবে শেষ,
পিছন হাঁটা বন্ধ হবে, সামনে যাবে দেশ৷
কবিরাই পারে এভাবে কবিতার লাইনে হাটতে। সতিই ভাল লাগার মতগো ভাই।
ধন্যবাদ।
আমার হাতের লেখা খুবই বিশ্রী। দ্রুত লিখতে গিয়ে অনেক ভুল করে ফেলি। বিশেষ করে ’র’ এর নিচে ফোটা দিতে ভুল করি বেশী। এক পৃষ্ঠা লিখে যদি পুনরায় রিভাইস দিই তবে নিজেই অনেক সময় বুঝতে পারি না আসলে আমি শব্দটা কি লিখেছি। দীর্ঘদিন কম্পিউটারে টাইপিং করতে অভ্যস্থ হওয়ার ফলে হাতের লেখা বর্তমানে আরো মারাত্মক জগন্য আকার ধারণ করেছে। আমি আমার সন্তানদেরকে এ সমস্যার কারণে কোনদিন লিখা শিখাই না। আমার স্ত্রীই তাদের লেখালেখি প্রশিক্ষণ দেন। আমার মেয়েরা জানে না যে, তাদের বাবা কিছুটা পড়াশুনা জানা লোক।
আমার সন্তানেরা আবার আমার গুনগুলো পায়নি। ওরা মডার্ন দুনিয়ার লোক। ওদের খেয়ালই ভিন্ন।
ধন্যবাদ।
কেন যেন এই পয়েন্টে এসে মনে হচ্ছে আপনার ছাত্রীকে পড়ানোর নিয়তই ছিল না।
আর বসের নিয়ত একটু ভিন্নই হয়ত ছিল।
শুরুই অনুমান যদিও অনেক অনুমান নিছক গোনাহের পর্যায়ে পড়ে।
ভালো লাগছে পর্বগুলো , লিখে চলুন !
তাহলে তো আমাদের বাসা (পিতৃগৃহ) থেকে একদম কাছে।
তবে তখন আমরা আবুধাবীতে ছিলাম, আমি তখন স্কুলছাত্রী
Facebook : Rehnuma Bint Anis
মন্তব্য করতে লগইন করুন