সাদা মনের খোঁজে - (পর্ব-২)
লিখেছেন লিখেছেন প্রবাসী মজুমদার ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৫, ১২:৫৫:০৩ দুপুর
প্রথম পর্ব
তিনি আজ আর নেই। না বলে চলে গেছেন না ফেরার দেশে। কিন্তু তার রেখে যা্ওয়া কস্টের স্মৃতিগুলো আজ্ও তাড়িয়ে বেড়ায়। স্তব্ধ করে দেয় সব ভাবনাকে। ভুলে থাকতে চাই। স্মৃতির জাবর কাটার অনুশীলন থেমে দিতে চাই। কিন্তু পারিনা। মনের অজান্তেই ভেসে উঠে কল্পনার পর্দায়। মন বলতে কথা। যাকে ভালবাসে, তার জন্য শিউলীর অঘ্য সাজিয়ে নিজের মাঝেই তৈরী করে বিশাল স্মৃতির মিনার। ভেবে তৃপ্তি পায়। খুজে পায় মিছে শান্তনা।
এ মানুষটি ছিল একটি ইন্ডাষ্ট্রি। বিশাল এক সাঙস্কৃতিক সামাজ্যোর প্রবর্তক। শ্রমিকবিহীন এ কারখানায় অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে তিনি নিজেই গড়ে তুলেছিলেন এক অবিশ্বাস্য সম্পদের পাহাড়। কোটি কোটি শব্দ ছন্দের বুননে গড়া এ পাহাড় চুম্বকের মত কাছে টেনে এনেছিল লাখো তরুন তরুনীকে। অতৃপ্ত মনের খোরাক জুগিয়েছে। উলঙ্গ সভ্যতার অথৈই সাগরে পাল তুলেছে লাখো যুবকের আশাহত হৃদয়ে। তিনি শুধু একটি নাম নয়। একটি জীবন্ত ইতিহাস। নাম - কবি মতিউর রহমান মল্লিক।
দুর থেকে ভেবেছিলাম, খুব সাদা সিদে জীবনে অভ্যস্থ একজন দীপ্ত মানুষ। বাকহীন এক কলমী যোদ্ধা। ভাবনা জগতের সম্রাট। তরুনদের ভালবাসার ছোয়ায় তৃপ্ত একজন পথিকৃত কবি। না। আর ্ও উপরের একজন।
তৃপ্তির হাসি দিয়ে সবাইকে সহজভাবে বরণ করে নেয়া এ মানুষটিকে দেখে বুঝার উপায় নেই যে, এক সাগর কষ্ট নিয়ে টিকে থাকা তিনি সভ্য দুনিয়ার একজন বড় যাযাবর। কিন্তু বাস্তবতা বড়ই ভিন্ন। করুন। বেদনাদায়ক।
সত্যর মিছিলে যোগ দেয়ার অপরাধে বহিস্কৃত হলেন আপন ঘর থেকে। সংস্কৃতির প্রতি ঝোঁক দেখে মতিউর রহমান খান ভাই তাকে একটা ক্যাসেট প্লেয়ার কিনে দিলেন। বাস। গানের জন্য নেশাগ্রস্থ এ মানুষটিকে আর কেউ ঠেকাতে পারেনি। অতৃপ্ত মনের খোরাকের সন্ধানে গানের রাজ্যে কেটে দিলেন পুরোটা জীবন। পারিবারিক সমস্যা, দারিদ্রতার কষাঘাত, কোনটাই তাকে রুখে দিতে পারেনি এ পথ থেকে। তার লিখা প্রতিটা গান ছিল তার সন্তানসম। তিনি প্রতিটা গান প্রসব করার আগে দুরাকাত নামাজ পড়ে নিতেন। তার পর কলম ধরতেন মহান প্রভুর প্রশংসা দিয়ে গান লিখতে। স্বল্প সময়ে গড়ে তোলা তার এ বিশাল গানের ভান্ডার সত্যিই বিস্মিত হবার মত।
জেদ্দায় আসার পর খুব কাছ থেকে দেখার সুযোগ হয়েছিল এ মানুষটিকে । স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে দুচার লাইনের মাধ্যমে অনুভব করলাম যাতনার পাহাড় নিয়ে ঘূরে বেড়ানো আপোষহীন এক না জানা মতিউর রহমান মল্লিককে।
সত্যর এ মিছিলের মুখচেনা স্বার্থপর যাত্রীদের যাতনা বড়ই অসহ্যনীয়। এরা আপনাকে ছূটে চলা ঘোড়ার উপর থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেবে। আপনি যদি পেছনে ঝুলে থাকেন, সজোরে লাথি দেবে। লেজ ধরে যদি টিকে থাকতে চান, রক্তাক্ত হন, দুস্টের হাসি দিয়ে ্ওরা বলবে,,, বেচারা। উহ করতে পারবেন না। আনুগত্যার বিঘ্ন ঘটার দায়ে...। মুষ্টিমেয় স্বার্থাম্বেষীদের গড়ে তোলা সিন্ডিকেট রাজনীতিতে লুকিয়ে থাকা এসব অযোগ্য নেতৃত্বের কাছে যোগ্যরা এভাবেই বিতাড়িত হয়ে আসছে যুগ যুগ ধরে।
সময়ের বিবর্তে কবি মল্লিক ভাইয়ের মত সৃস্টিশীল ত্যাগী মানুষগুলোই সাদা মনের মানুষ হিসেবে খ্যাতি লাভ করে। দিশেহারা জনপদকে রক্ষা করার জন্য আজ এসব ক্ষণজম্মা মল্লিক ভাইদের বড়ই প্রয়োজন। যাদের অনুশীলন করা হৃদয় হতে বিচ্ছুরিত আলোকরম্মি লাখো যুবককে অনুপ্রাণিত করে টিকে থাকতে। তৈরী করবে ইস্পাতসম এক চেতনার পাহাড়। ত্যাগের স্বাক্ষর দেখে সমাজের মানুষগুলো হ্যামিলনের বাশী ্ওয়ালার মত এদের পেছনে ছুটবে। এদের অনুপস্থিতির কারণেই মুলত: বিপ্লব আজ বড়ই বিলম্বিত।
(চলবে)
বিষয়: বিবিধ
১৬৩০ বার পঠিত, ৩৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
বাংলাদেশ তথা বিশ্বময় ইসলামী সংস্কৃতিক বিপ্লব সাধনে মরহুম মতিউর রহমান মল্লিক একটি উজ্জল নক্ষত্র!যা সব সময়ই আলোর পথ দেখাবে!
২০২৪ সালে মোহাম্মদপুরে উঁনার সাথে মুসাফাহার স্মৃতি এখনো মনে পড়ে!
আল্লাহ উনার স্বপ্নময় কর্ম কে প্রতিষ্ঠিত করুন এবং জান্নাতের সম্মানিত মেহমান বানান!আমিন!!
দুঃখিত টাইপে ভূল হয়েছে,২০০৪ সাল হবে!!
জাযাকাল্লাহু খাইরান।
নষ্ট-দুর্ঘন্ধযুক্ত, পচে যাওয়া আজকের এই নোংড়া সাংস্কৃতিক পরিবেশে মল্লিকদের খুব বেশী প্রয়োজনক। আল্লাহ এ জাতির মাঝে লাখে লাখে মল্লিক তৈরী করে দিন। আমিন।
প্রত্যাশা প্রাঙ্গন,মোহাম্মদপুর এ তার সাথে প্রথম পরিচিত হওয়ার ঘটনা এখনও স্মৃতিতে উজ্জল। তিনি ফিরিয়ে এনেছিলেন বাংলায় ইসলামি সংগিত কে। ফররুখ,গোলাম মো্স্তফার পর যা প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।
২/" এদের অনুপস্থিতির কারণেই বিপ্লব আজ বড়ই ত্বরাম্বিত।"এখানে ত্বরান্বিত শব্দটা৷ আমি একে বারে বুঝে শততভাগ নিশ্চিত, এ দাবী করিনা৷ আমার কাছে একটু বে মানান লেগেছে৷ সঠিক হতেও পারে৷ রাগ হলে আমিি লজ্জিত৷ স্যরি৷
২/" এদের অনুপস্থিতির কারণেই বিপ্লব আজ বড়ই ত্বরাম্বিত।"এখানে ত্বরান্বিত শব্দটা৷ আমি একে বারে বুঝে শততভাগ নিশ্চিত, এ দাবী করিনা৷ আমার কাছে একটু বে মানান লেগেছে৷ সঠিক হতেও পারে৷ রাগ হলে আমিি লজ্জিত৷ স্যরি৷
দ্বিতীয়ত, মল্লিক ভাইয়ের মত সাদা মনের ধৈযশীল এবং সৃস্টিশীল মানুষের সংখ্যাটা অপ্রতুল বলেই বিপ্লব ত্বরাম্বিত হচ্ছে বা দেরী হচ্ছে। বুঝাতে চেয়েছি।
আপনাদের প্রয়াসে আবারো যুগে যুগে কালজ্বয়ী মল্লিকগণের আবির্ভাব ঘটবে ইনশাল্লাহ। অনবদ্য লিখনীটি ভরে দিল মনটা।
জাজাকাল্লাহু খাইর ভাইয়া।
বিনয়ের পরাকাষ্ঠা বললেও বোধহয় কম বলা হবে। জুম্মিকে খোঁজ করতে চাচার ফোনে ফোন দিতে হতো। কারন জুম্মির নিজস্ব কোন ফোন ছিলনা। যতবারই ফোন করা হতো চাচা এমনভাবে কথা বলতেন যেন জুম্মি বাসায় না থাকাটা উনার দোষ! বলতেন মা,,তোমরাতো অনেক কষ্ট করে ফোন দিচ্ছ। কি যে করি। ও তো বাসায় নেই।
বাসায় গেলে নিজ হাতে আপ্যায়ন করতেন। ঘরে যা আছে তাই। আর বারবার বলতেন আন্টি নেই বলে কিছু করতে পারলেন না।
এমন অনেক ক্ষণজন্মা আমাদের আন্দোলনে আছে। আবার দুর্জনও আছে। আল্লাহ এদের পাঠান সান্তনা স্বরুপ। যাতে এদের সংস্পর্শে আমরা ভুলে যাই নিজেদের মান অভিমান। ক্ষমা করে দিই সেসব দুর্জনদের। যদি ক্ষমা করতে না পারি তবে লুজার কিন্তু আমরাই।
আশা করছি নির্মোহ থেকে আপনার সাদা মনের এই সিরিজ চালিয়ে যাবেন। আমরা অপেক্ষায় থাকবো।
মন্তব্য করতে লগইন করুন