কলিকালের ভূতঃ (ছোটগল্প )
লিখেছেন লিখেছেন আতিক খান ০২ মে, ২০১৪, ০৭:১৪:০১ সন্ধ্যা
এপার্টমেন্ট এ থাকলে প্রায়ই মজার সব ঘটনা ঘটে।
দিন চারেক আগে আটতলার ভদ্রমহিলার ফোন। ওদের বাসায় নাকি জিন-ভূতের উপদ্রব। গেস্ট বাথরুমে রাত এগারোটার পর আসে, মাঝে মাঝে শব্দ করে, হাঁটাহাঁটি করে আর দরজা খোলার চেষ্টা করে। ওই রুমে ভদ্রমহিলার বৃদ্ধা মা, ৭ বছরের মেয়ে আর ১৬ বছর বয়সী কাজের মেয়েটা থাকে।
ভদ্রমহিলা নার্ভাস প্রকৃতির, উনার ধারনা ভূতটা উনি গত মাসে যখন উত্তরবঙ্গের গ্রামের বাড়ি গিয়েছিলেন ওখান থেকে সাথে করে নিয়ে এসেছেন। আর এক হুজুর (জিন তাড়াতে অভিজ্ঞ) জানিয়েছে বাড়িওয়ালার (আমরা) কোন শত্রু বাটি চালান দিয়ে জিন- ভুত পাঠিয়েছে যাতে ভাড়াটিয়া ভেগে যায়। আমার হাসতে হাসতে দম বন্ধ হবার অবস্থা। কোন বাড়িওয়ালা চাইবে ভাড়াটিয়া (যারা ঠিকমত ভাড়া দেয়) পালিয়ে যাক?
পরপর দুই রাত গেস্ট রুমে ভূতের আনাগোনা আর চেঁচামেচি হবার পর পাড়ার হুজুরকে ডেকে আনা হল। উনি দোয়া দরুদ পড়ার পর সেই রাতে আর ভুত এলনা। ফ্ল্যাটের ভদ্রলোক আধুনিক মানসিকতার, এসবে বিশ্বাস নেই। কিন্তু বাসার হট্টগোল আর ভুতুড়ে আবহাওয়াতে মানতে শুরু করেছেন ভূতের অস্তিত্ব। উনার এখন ধারনা ভুতটা শাশুড়ির সাথে এসেছে। আমাকে ঘটনা জানালেন, আমি অবাক। ৩১ বছর এই জায়গার উপর, চোর ডাকাত এলেও ভুত কখনো দেখিনি।
আরেকটা ঘটনা বলে নেই। কদিন আগে সুপারভাইজার ইঙ্গিত দিল এক গার্ডের সাথে আটতলার কাজের মেয়েকে কথা বলতে দেখা গেছে ২/৩ বার। গার্ড ছেলেটা বছর আঠারো, বয়স কম হলেও অনেক কাজে পারদর্শী। সেজন্য রেখেছিলাম। ওর কাছে হটাৎ গিয়ে বললাম- তোর মোবাইলটা দে। অনিচ্ছা সত্ত্বেও বের করে দিল। স্ক্রিন এ আমাদের বাসার ১৫ বছরের কাজের মেয়ের নাম দেখে হতভম্ব। উত্তর দিল আমাদের বাসার মেয়েটাকে নাকি বোনের মত ভালবাসে, তাই নাম লিখে রেখেছে। বললাম – এরকম ভাই বোনের ভালবাসা জীবনে অনেক দেখেছি। মোবাইল কল মেমরিতে পাওয়া গেল গত দুই দিনে ২০ বার কল করা হয়েছে আট তলার কাজের মেয়েটাকে। নাম্বার ক্রস চেক করে নিশ্চিত হয়ে নিলাম। আজকাল সবার কাছেই মোবাইল থাকে, অবাক হবার কিছু নাই।
গার্ডকে বললাম এদের বিয়ে করবি? সে বলল - না স্যার। তবে কি টাইম পাস? গার্ডকে ৩০ মিনিটের নোটিশে টাকা দিয়ে চাকুরিচ্যুত করা হল। আমাদের বাসার মেয়েটা জানাল ওকে প্রস্তাব দেবার কথা, যেটা সে প্রত্যাখ্যান করেছে। আর আটতলার মেয়েটাকে ধমক দিয়ে মোবাইল কেড়ে নেয়া হল। আবার মুল ঘটনায় আসি।
গতকাল রাতে আটতলার ভদ্রলোক বউকে নিয়ে বেড়াতে গেছেন। ওখান হতে ঘাবড়ানো কণ্ঠে ফোন, আবার নাকি ভূতের উপদ্রব। রাত দশটা, হুজুরকে আবার ডাকা হল। উনি গিয়ে জানলেন গেস্ট রুমের বাথরুমে কাজের মেয়েটা গিয়েছিল, ওই নাকি দেখেছে। হুজুর সবার সাথে কথা বলে ঘটনা বুঝতে পারলেন।
কাজের মেয়েটাকে ডেকে, সপাটে চড় কশালেন। জিন-ভুত আর দেখা যাচ্ছে? মেয়েটা মিনমিন করে বলল- জি না, আর দেখিনা। এসব ঘটনা সব মেয়েটার তৈরি, ওর অভিনয়, শোরগোল আর ভয় পাওয়া বৃদ্ধা নানি আর বাচ্চাটাকেও আক্রান্ত করেছিল। যেকোনো শব্দ ওদের মনে হয়েছে জীন ভূতের চলাফেরা। ওর প্রেমের অকাল মৃত্যুর প্রতিশোধ নিচ্ছিল। কলিকাল, কতকিছু দেখতে হবে আর ও।
বিষয়: বিবিধ
১১৭৪ বার পঠিত, ১৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
বিনোদিত হলাম ধন্যবাদ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন