রবি ঠাকুর, রাহাজানি এবং রবীন্দ্রপূজারীবৃন্দ

লিখেছেন লিখেছেন শাহ আলম বাদশা ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৫, ০৯:১৫:২৬ রাত

উপরোক্ত শিরোনামের লেখাটি ভাল্লাগায় আমি এখানে তুলে দিলাম, যা আমাদের জানা দরকার। অনেকেই হয়তো জানেন, তবুও দিলাম। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আমাদের জাতীয় সঙ্গীত রচনায় গগন হরকরা নামক এক পিয়নের লেখা গানের কাঠামো এবং সুর হুবহু কিভাবে চুরি করেছেন এবং বিদেশী গীতিকারের গানের সুর ও কাঠামো চুরি করে ''ফুলে ফুলে দুলে দুলে'' গানটি রচনা করেন, তাও জানতে পারবেন। আরো জানবেন অবিশ্বাস্য সব কাহিনী।

আমি কোথায় পাব তারে

আমি কোথায় পাব তারে আমার মনের মানুষ যে রে –

হারায়ে সেই মানুষে তার উদ্দেশে দেশ বিদেশে বেড়াই ঘুরে।

লাগি সেই হৃদয়শশী সদা প্রাণ হয় উদাসী

পেলে মন হত খুশি দেখতাম নয়ন ভরে।

আমি প্রেমানলে মরছি জ্বলে নিভাই অনল কেমন করে

মরি হায় হায় রে

ও তার বিচ্ছেদে প্রাণ কেমন করে

ওরে দেখ না তোরা হৃদয় চিরে।

দিব তার তুলনা কি যার প্রেমে জগৎ সুখী

হেরিলে জুড়ায় আঁখি সামান্যে কি দেখিতে পারে

তারে যে দেখেছে সেই মজেছে ছাই দিয়ে সংসারে।

মরি হায় হায় রে –

ও সে না জানি কি কুহক জানে

অলক্ষ্যে মন চুরি করে।

কুল মান সব গেল রে তবু না পেলাম তারে

প্রেমের লেশ নাই অন্তরে –

তাইতে মোরে দেয় না দেখা সে রে।

ও তার বসত কোথায় না জেনে তায় গগন ভেবে মরে

মরি হায় হায় রে –

ও সে মানুষের উদ্দিশ যদি জানুস কৃপা করে

আমার সুহৃদ হয়ে ব্যথায় ব্যথিত

আমার সোনার বাংলা

আমার সোনার বাংলা

আমি তোমায় ভালোবাসি।

চিরদিন তোমার আকাশ

চিরদিন তোমার আকাশ, তোমার বাতাস

আমার প্রাণে বাজায় বাঁশি।

ও মা, ফাগুনে তোর আমের বনে

ঘ্রাণে পাগল করে–

(মরি হায়, হায় রে)

ও মা, অঘ্রাণে তোর ভরা খেতে,

(আমি) কি দেখেছি মধুর হাসি।।

কী শোভা, কী ছায়া গো,

কী স্নেহ, কী মায়া গো–

কী আঁচল বিছায়েছ

বটের মূলে, নদীর কূলে কূলে।।

মা তোর মুখের বাণী

আমার কানে লাগে

সুধার মতো–

(মরি হায়, হায় রে)

মা, তোর বদনখানি মলিন হলে

আমি নয়ন জলে ভাসি।।

শুধু এই গানের কাঠামো অনুসরণে কবিতা রচনা করেই ক্ষান্ত হন নি তিনি। বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে আন্দোলনের সময় আমার সোনার বাংলাতে হুবহু গগন হরকরার সৃষ্ট সুর বসিয়ে দেন। আমাদের জানামতে গগন হরকরা সেই সময় জীবিত থাকার পরেও তাঁর কাছ থেকে অনুমতি নেওয়া বা তাঁকে জানানোর প্রয়োজনটুকুও তিনি বোধ করেন নি। এ যেন তাঁর নিজের লিখিত দুই বিঘা জমির সেই জমিদারের মত। রাজা হয়েও ‘যার হস্ত করে সমস্ত কাঙালের ধন চুরি’। এত বড় একজন কবি এবং সংগীতকার হয়েও গ্রামের একজন দরিদ্র ব্যক্তির মেধাপ্রসূত সম্পদকে চুরি করতে তাঁর বিন্দুমাত্রও বাধে নি। যোগাযোগের অপ্রতুলতা এবং এখনকার মত তথ্যের অবাধ প্রবাহ সেই সময়ে না থাকার কারণে কারো পক্ষেই এত বড় একটা চুরি ধরা সম্ভবপর হয় নি। পরে যখন বিষয়টা জানা গেছে, তখন অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে। এর মধ্যেই রবীন্দ্রনাথ পরিণত হয়ে গিয়েছেন মহাকাশস্পর্শী এক মহীরুহে। তাঁর বিশাল এক স্তাবকবাহিনী তৈরি হয়ে গিয়েছে। এই স্তাবকবাহিনী তাঁদের পূজনীয় ঠাকুরকে বাঁচানোর জন্য গালভরা এক শব্দ ‘অনুপ্রেরণা’কে বেছে নিয়েছেন, ভাঙা গানের ভরাট ঢালের আড়ালে অত্যন্ত সুকৌশলে নিয়ে গিয়েছেন শতাব্দীর সেরা চৌর্যবৃত্তিকে।

রবীন্দ্রনাথের সাহিত্যের অনেক কিছুই মৌলিক নয়, বরং বলা যায় বিদেশী সাহিত্যের ছায়া-অবলম্বনে লেখা । যেমন, গবেষক প্রতাপনারায়ণ বিশ্বাস তার লেখা ‘রবীন্দ্রনাথের রহস্য গল্প ও অন্যান্য প্রবন্ধ’ নামের একটি বইয়ে বলেছেন, রবীন্দ্রনাথের চারটি অতি পরিচিত গল্প -যেমন মহামায়া, গুপ্তধন, নিশীথে, এবং সম্পত্তি সমর্পণ -- বিখ্যাত মার্কিন রহস্য গল্পলেখক এডগার অ্যালান পো’র সে সময়কার চারটি গল্প থেকে ‘অনুপ্রাণিত’। ফরাসি লেখক তেওফিল গতিয়ের লেখা­ Le Pied de Mome (১৮৬৬) গল্পের প্রভাব আছে তার বিখ্যাত গল্প ক্ষুধিত পাষাণের ওপর; আর রক্তকরবীর ওপর আছে সুইডিশ নাট্যকার অগাস্ট স্ট্রিণ্ডবার্গের ‘A Dream Play’-এর ছাপ [প্রতাপনারায়ণ বিশ্বাস, রবীন্দ্রনাথের রক্তকরবী : তত্ত্ব ও তথ্য, অনুষ্টুপ, ১৯৮৯]।

কিন্তু এগুলোর ক্ষেত্রে কেবল ‘বিদেশী গল্পের ছায়া’ থাকায় সরাসরি প্লেইজারিজমের অভিযোগ থেকে না হয় তাকে অব্যাহতি দেয়া যায়, কিন্তু হতদরিদ্র গগন হরকরার সাথে জমিদারবাবু যা করেছিলেন তার কোন তুলনা নেই। ২০০৬ সালে বিবিসি সর্বকালের সেরা বাংলা গান কোনটি তাঁর একটি জরিপ চালিয়েছিল। সেই জরিপে বিপুল ভোট পেয়ে সেরা গান হয়েছিল আমার সোনার বাংলা। অথচ কী আশ্চর্য! সর্বকালের সেরা গানের সুরস্রষ্টা গগন হরকরাকে আমরা চিনি-ই না, চিনি একজন কুম্ভিলক রবীন্দ্রনাথকে। এর চেয়ে দুঃখজনক বিষয় আর কী হতে পারে। এই গানটা আবার আমাদের জাতীয় সংগীতও। শত শত বছর ধরে এটা গাওয়া হবে, অনাগত দিনের বাংলাদেশিরা সকৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করবে রবীন্দ্রনাথ নামের একজন মহান কবি এবং সংগীতকারকে, এরকম একটি অসাধারণ শ্রুতিমধুর গানকে সৃষ্টি করার জন্য। এর পিছনের বঞ্চনার ইতিহাস, চুরির ইতিহাস ঢাকা পড়ে যাবে অন্ধ পূজারীদের পরম মিথ্যায় এবং রবির কিরণের তীব্র কষাঘাতে। বেচারা গগন হরকরা। তাঁর সৃষ্ট সম্পদ অন্যে চুরি করেছে বলে যে হতাশামাখানো দীর্ঘশ্বাসটুকু ফেলবেন, তাঁর সুযোগও নেই। জানতেই পারেন নি যে, নিজের অজান্তেই সর্বকালের সেরা বাংলা গানের সুর সৃষ্টি করে ফেলেছিলেন তিনি। আর সেই অনন্য সুরটাকে নির্দ্বিধায় মেরে দিয়েছিল, তাঁর গানের কথাকে অনুকরণ করে কবিতা লিখেছিল, তাঁদেরই গানপাগলা জোড়াসাঁকোর জমিদারবাবু ছোটো ঠাকুর।

এইলিঙ্কে পুরো প্রবন্ধ পড়ুন

এ লিঙ্কেও যেতে পারেন গান দুটো শুনতে

বিষয়: বিবিধ

১৭৪৩ বার পঠিত, ১২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

305231
১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ রাত ০৯:২৯
হতভাগা লিখেছেন : বড় মাপের মানুষেরা এরকম এক আধটু এদিক সেদিক করলে সেটা খারাপ কিছু না
১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ রাত ০৯:৩৩
246918
শাহ আলম বাদশা লিখেছেন : আইন সবার জন্য সমান হতে হবেই। আর তার কাহ্নী একটুআধটুতেই থেমে থাকেনি যে?
১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ রাত ০৯:৪৫
246920
সাজেদুল ইসলাম লিখেছেন : ঠিক বলেছেন।
১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ রাত ১০:৫৭
246924
শাহ আলম বাদশা লিখেছেন : সহমত
305236
১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ রাত ১০:৩৫
মোতাহারুল ইসলাম লিখেছেন : রবিন্দ্রনাথ শুধু চুরিই করেননি, উনি শব্দ ব্যাবহারেও মারাত্মক ভুল করেছেন। "ভেঙ্গে মোর ঘরের চাবি নিয়ে যাবি কে আমারে" চাবি ভেঙ্গে কাউকে ঘর থেকে বের করা যায়না, ভাঙ্গতে হয় তালা। এমন হলে বধ হয় মানাতো,

"ভেঙ্গে মোর ঘরের তালা, নিয়ে যাবি কোন শালা "
১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ রাত ১০:৫৭
246922
শাহ আলম বাদশা লিখেছেন : হুম--সত্যি
305241
১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ রাত ১১:১৯
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : সকল কবি-সাহিত্যিক এর লিখায়ই এই ধরনের ছাপ পাওয়া যায়। একটা মজার ঘটনা পড়েছিলাম। প্রেমেন্দ্র মিত্রর একটি ছায়ছবির স্ক্রিপট লিখেন। ছবিটি মুক্তি পাওয়ার পর বুদ্ধদেব বসু প্রতিবাদ করে বলেন যে কাহিনি টি তার একটি উপন্যাস থেকে নেওয়া। প্রেমেন্দ্র মিত্র স্বিকার করেন যে এটা মেীলিক নয় ঠিকই কিন্তু বুদ্ধদেব বসু যেখানে থেকে নিয়ে ছিলৈন সেখান থেকেই নেওয়া!
রবিন্দ্রনাথের কিছু প্রভাবিত বা অনুদিত লিখা তার প্রতিভাকে খাটো করেনা। সমস্যাটা রবিন্দ্র পূজারিদের জন্যই সৃষ্ট।
১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ রাত ১১:৩১
246929
শাহ আলম বাদশা লিখেছেন : পুজারীর বিষয়ে সহমত করলেও রবিঠাকুরের প্রজানির্যাতন, গগন হরকরাকে জুলুমসহ মুসলিমনির্যাতন এবং বঙ্গভঙ্গ রদের পক্ষে থাকা কি সামান্য কিছু?
305270
২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ রাত ০২:৫০
সজল আহমেদ লিখেছেন : লেখাটা প্রিয়তে লইয়া গেলাম ।সুযোগ পাইলে গান,সুর চোর রবীন্দ্রনাথের কুইকি সেপাইগুলারে গদাম দেওয়া হইবে ।ধন্যবাদ ।
২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ সকাল ১০:২০
246972
শাহ আলম বাদশা লিখেছেন : লেখাটা প্রিয়তেেয়ায় খুশি হলাম
305273
২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ রাত ০৩:১৭
মন সমন লিখেছেন : ভালো লাগলো । অনেক ধন্যবাদ ।
২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ সকাল ১০:২০
246973
শাহ আলম বাদশা লিখেছেন : আপনাকেও ধন্যবাদ Good Luck Good Luck

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File