ভারতীয় বাংলাচ্যানেল এবং নাটকের একটি পোস্টমর্টেম !!

লিখেছেন লিখেছেন শাহ আলম বাদশা ০৫ আগস্ট, ২০১৪, ১০:৪৮:৪৩ রাত



বাংলা সিনেমা বিশেষতঃ নাটকের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়–এদেশে যখন বিটিভি চালু হয় তখন ভারতীয় বাঙ্গালীরা আমাদের বিটিভি এবং বিশেষত আমাদের নাটিকা দেখতে হুমড়ি খেয়েই পড়ত। ভারতীয় বাংলাটিভি তারা তেমন দেখতোই না।

৯০ দশকে বেগম খালেদার শাসনামলে একটা জরীপের সময় ভারতীয় ছাত্রছাত্রীদের কাছে যখন প্রশ্ন করা হয় যে, পশ্চিম বঙ্গের প্রধানমন্ত্রীর নাম কী?

তখন তারা নির্দ্বিধায় জবাব দিয়েছিলো—পশ্চিমবঙ্গের প্রধানমন্ত্রীর নাম খালেদা জিয়া।

এটা কিভাবে সম্ভব হয়েছিলো? বাংলাদেশী টিভির প্রভাবেই তারা প্রভাবিত হয়েছিলো বলেই তারা তাদের প্রধানমন্ত্রীর নামও ভুলে গিয়েছিলো। তাই মিডিয়া যা খাওয়াবে আমরা নিরুপায় হয়ে তাই খেতেই বাধ্য, এটাই বাস্তবতা। ভালোমন্দের বাছবিচার তখন থাকেনা।


এখন এবারের ঈদে যেমন পাখি ড্রেসের প্রভাব দেখা গেলো, এটার জন্য কি আমাদের সন্তানরাই দায়ী নাকি যারা এটা পরিকল্পিতভাবে বাজারজাত করেছে, তারাই দায়ী? এ পোশাক বাজারজাত না হয়ে অন্য যেটাই আসতো বাজারে; আমরা কিন্তু সেটাই লুফে নিতাম বাধ্য হয়ে বিশেষতঃ যারা রেডিমেড পোশাকের বদলে নতুন পোশাক বানাতে আদৌ আগ্রহী নই?

তাই এক্ষেত্রে আমাদের জনগণ নারী বা পুরুষ কারুর দোষ নেই–দোষ হচ্ছে পোশাক আমদানীকারক মিডিয়াম্যানদের যারা এসব তৈরি করে, বাজারজাত করে আমাদের যা-ই খাওয়ায় আমরাও অবলীলায় তাই খেতে অভ্যস্ত হয়ে পড়ি, বাধ্য হই। যেমন-ওয়াসার পানিতে সংশ্লিষ্ট বিভাগ যদি সাধ করে আতর মিশিয়ে দেয়, তবে আমরা কিন্তু আতরের গন্ধও পাবো এবং সেই পানি খেতেই বাধ্য হবো। কিংবা কেউ শয়তানী করে জনগণকে ক্ষমতা দেখাতে যদি ওয়াসার পানিতে নোংরা কিছু ছড়িয়ে দেয়, আমরা কি তা খেতে বাধ্য হবোনা? আমরা এমনিতে প্রায়ই তো পানিতে কেঁচো পাই, মল-মূত্র পর্যন্ত খেয়ে থাকি। প্রতিবাদ করে কিছুই হয়না বা হবেনা।

সুতরাং স্টার জলসাসহ সব ভারতীয় চ্যানেল বন্ধ করলেও আমাদের লাভছাড়া ক্ষতি হবেনা। আমি তথ্যমন্ত্রণালয়ের অফিসার হিসেবে ফিল্ম সেন্সরবোর্ডের কাজও জানি কিভাবে ভালো-মন্দ ফিল্মগুলো ছাড়পত্র পায়। ফিল্ম ইণ্ডাস্ট্রিজের এ টু জেড পর্যন্ত আমার জানা আছে। সরকার যদি সিদ্ধান্ত নেয় যে, আমাদের ডিসলাইন ছাড়া ভারতীয় চ্যানেল চলবেনা বা বন্ধ থাকবে, তবে তাই হবে। আমরা যতই ভারতীয় চ্যানেলের পক্ষে থাকিনে কেনো? এটাই বাস্তবতা।

ভারতীয় বাংলা চ্যানেলে প্রতিটি সিরিয়ালেই দেখা যায় একটি মেয়ে চারপাঁচটি পুরুষের সাথে ঘর করছে, বিবাহ বা তালাকের বালাই নেই যাকে বলে চরমতম নোংরা পরকিয়া-প্রেম। ধর্মের বিরুদ্ধে, নৈতিকতা আর শালীনতার বিরুদ্ধে গিয়ে যত অসামাজিক নোংরামো আছে সবই চালিয়ে দিয়ে আমাদের মন-মানসিকতাকে কব্জা করা হয়। ছেলেদেরও পরকিয়া বা ৪/৫টি অবৈধ সম্পর্ক বা বিবাহকে বৈধ বলেই দেখানো হয়, যা হিন্দুধর্মেও সমর্থনযোগ্য নয়।

রক্তের সম্পর্কগূলোকে ভেঙ্গেচূরে তাদের মাঝে পারস্পারিক অবিশ্বাস-সন্দেহ-দ্বন্দ্বকে স্বাভাবিক ঘটনা বলেই চালিয়ে দেয়া হয়। সংসারে বড়দের বা শ্বশুর শ্বাশুড়ির সাথে সম্মানজনক আচরণের বদলে অপমানের সংস্কৃতির শিক্ষা দিয়ে মন্দদিকগুলোই তুলে ধরা হয়। পুত্রবধুদের সাথে বাঁদি-দাসীদের মতোই ব্যবহার করা হয়। অত্যন্ত দুর্বল ও নিম্নমানের অসংগতিহীন গল্পের বেড়াজালে আটকিয়ে সস্তা সিরিয়ালগুলোতে শুধু ভুলশিক্ষা দেয়ার চেষ্টাই চলে।




এটা ঠিক যে, আমাদের লেখক, নাট্যকাররা এমন সস্তা সিরিয়াল যেমন লেখেন না বা লিখলেও তা হালে পানি পায়না যেহেতু এখানে এসবকিছু এখনো শিল্পের পর্যায়ে যায়নি কিংবা শিল্পের মর্যাদাও পায়না।



আমাদের টিভিগুলোও এমন মেঘাসিরিয়ালের উদ্যোগ নিচ্ছেনা নানাকারণেই। আমার এক বন্ধুর ৩২ পর্বের ধারাবাহিক একটা চ্যানেলে চললেও তিনি এখনো সেই চ্যানেলের নিকট ১৬/১৭ লাখ টাকা পায়নি। তাহলে বোঝেন ঠেলা! তাই বলে আমাদের নাটক কিন্তু আন্তর্জাতিক মানের যা ভারতীয় লেখকসহ বিদগ্ধজনরাই দাবী করে থাকেন।


ভারতীয় সিরিয়াল বিশেষত জলসা আর জিবাংলার নাটকের সাহিত্য-সামাজিক মান ৪০%ও নেই–কাহিনীর ধারাবাহিকতাবিহীন, বাস্তবতা ও সমাজের সাথে সঙ্গতিহীন বানোয়াট কাহিনী সাজিয়ে কিছুটা দ্বন্দ্ব ও এডভেঞ্চার সৃষ্টি করে আকর্ষণ তৈরি করা হয় মাত্র। তবে ভারতীয় শিল্পীদের নিখুঁত ও অকৃত্রিম অভিনয়ের বলেই তাদের নাটক কিছুটা আকর্ষণ সৃষ্টি করে দর্শকদের মাঝে, এই যা।

অনেকেই হয়তো জানেনা যে, আমাদের চ্যানেল ভারতে নিষিদ্ধ এমনকি আমাদের বই-পুস্তকও সেখানে হালে পানি পায়না। কিন্তু তাদের সবই এখানে বাজারদখল করে আমাদের অর্থনীতিকে শুষে নিচ্ছে। এতে আমাদের কী লাভ হচ্ছে?

কার্টুন চ্যানেলগুলোও শিশুদের নৈতিকতা ভেংগে দিয়ে মিথ্যাচার, স্কুলফাকিবাজী, শয়তানী কাজই শেখাচ্ছে আমাদের শিশুদের। তাদের চ্যানেলে সুশিক্ষাবিহীন ও কুশিক্ষায় ভরপুর আনন্দ-বিনোদন ব্যতীত আর কিছুই নেই।


সুতরাং এসব চ্যানেল বন্ধ হলে আমরা সেই আগের মতোই আমাদের টিভি দেখতেই বাধ্য হবো; তবু ডিসলাইন কেউ কেটে দেবোনা জিবাংলা বা ভারতীয় চ্যানেল না দেখার দুঃখে!!

এখন নিচের লিঙ্ক পড়ুন, যা একজন হিন্দুই লিখেছেন- এখানে ক্লিক করুন

বিষয়: বিবিধ

১১০৩ বার পঠিত, ১০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

251290
০৫ আগস্ট ২০১৪ রাত ১১:৪৯
কাজি সাকিব লিখেছেন : দেশের সংষ্কৃতি রক্ষায় সত্যিকারার্থে আমাদের সরকারগুলো কিছুই করেনা,উল্টো সংষ্কৃতির নামে যা করে সেগুলোও ভিনদেশী সংষ্কৃতকে আমাদের বলে চালিয়ে দেবার অপচেষ্টা চালায়! একটি ভালো মানের ইন্ডাষ্ট্রি গড়ে উঠার জন্য নেই তেমন কোন প্রনোদনা,তাহলে কি করে হবে ভালো নাটক,সিরিয়াল কিংবা অন্যকিছু?
০৫ আগস্ট ২০১৪ রাত ১১:৫৭
195502
শাহ আলম বাদশা লিখেছেন : সহমত
251309
০৬ আগস্ট ২০১৪ রাত ১২:৩২
বাজলবী লিখেছেন : ভিনদেশী অপসংস্কৃতির কবল থেকে যুব সমাজকে রক্ষার কোন পদ্ধতি এ মুহুর্তে দেখা যাচ্ছে না।সরকারই দায়ী। তবে অান্দোলনে ফলপ্রসু হবে কিনা তা প্রশ্নাতীত। ধন্যবাদ।
০৬ আগস্ট ২০১৪ দুপুর ১২:৪৫
195568
শাহ আলম বাদশা লিখেছেন : সহমত ও ধন্যবাদ
251343
০৬ আগস্ট ২০১৪ রাত ০৪:৫৮
বুড়া মিয়া লিখেছেন : হুম, ভালো বলেছেন
০৬ আগস্ট ২০১৪ দুপুর ১২:৪৬
195569
শাহ আলম বাদশা লিখেছেন : অনেক শুভেচ্ছা Good Luck Good Luck Good Luck
251431
০৬ আগস্ট ২০১৪ দুপুর ০১:২৮
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ভারতে বাংলাদেশি বই এর বাজার সৃষ্টির উদ্যোগ ভারতিয়রাই নিয়ে বাধাগ্রস্থ হয়েছে। তাদের পলিসিই এমন। ইংরেজির মরহুম অধ্যাপক রেজাউল করিম একটি বিশ্ববিদ্যালয় পাঠ্য বই লিখেন যা সারা উপমহাদেশে এমনকি মালেয়শিয়াতেও গৃহিত হয়। কিন্তু ভারতে সেটা বাজারজাতকরন করা যায়নি। ভারতিয় আইন অনুসারে ভারতে বাজারজাতকরনের জন্য তার সাথে একজন ভারতিয় অধ্যাপক এর নাম সংযুক্ত করার প্রস্তাব দেয়া হলে তিনি তা প্রত্যাখান করেন। ভারতিয় বাংলা ও হিন্দি টিভি সিরিয়াল গুলি এদেশের সমাজ সংস্কৃতির জন্য হুমকি। উপরন্তু আমাদের তথ্যমন্ত্রি ভারতিয় বানিজ্যিক ছবিও আমদানির জন্য উৎসুক!!!!
০৬ আগস্ট ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:৪২
195671
শাহ আলম বাদশা লিখেছেন : সহমত Good Luck Good Luck
251508
০৬ আগস্ট ২০১৪ বিকাল ০৪:৪২
হতভাগা লিখেছেন : আগে আমাদের অন্দর মহলের মানুষদের ঠিক করতে হবে বা তাদের নিজেদেরকেই বুঝতে হবে যে , এসব অনুষ্ঠান কতটা জরুরী ব্যক্তিগত , পারিবারিক ও সামাজিক সামন্জস্য ধরে রাখতে ? নাকি এগুলো বিধ্বংসী ?

এসব অনুষ্ঠানের জন্য পাগলামী করতে দেখা যায় একটা বিশেষ লিঙ্গের মানুষদের । তারা এই পাগলামীর সাথে তাদের বিপরীত লিঙ্গের মানুষদেরও সাফার করায় ।
এই সব অনুষ্ঠান নির্মাতারা কখনই পুরুষদেরকে টার্গেট করে কিছু বানায় না । বানায় মহিলাদেরকে নিয়ে । কারণ তারা জানে '' কান টানলে মাথা আসে ''।

স্ত্রী-সন্তানসন্ততিদের প্রতি মায়ার কারণেই পুরুষেরা এসব পরিবার ধ্বংসাত্মক কাজ নিরবে সয়ে যায় ।

মহিলাদের সংসারের তথা পরিবারে প্রতি যদি কোন বিন্দুমাত্র মায়া থাকতো , তাহলে পরিস্থিতি পাখি ড্রেস নিয়ে এই কাহিনী করার মত পর্যায়ে যেত না ।
০৬ আগস্ট ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:৪৪
195672
শাহ আলম বাদশা লিখেছেন : ঠিক বলেছেন Good Luck Good Luck

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File