বেদনার রাত যাপন , কিন্তু যদি.....( বিয়ে )
লিখেছেন লিখেছেন সালাহ ১৯ জানুয়ারি, ২০১৪, ০২:৪২:০৩ দুপুর
আমি ছোট বেলা থেকেই ছিলাম একটু হাঁসি ও দুষ্টামি প্রিয় । এমনকি কেউ যদি আমার পায়ে কুঠার মেরেও আমার কাছে আসত , হাঁসি থামিয়ে রাখতে পারতাম না । ঠিক এখানেও আমার সেই চিরাচরিত বদ অভ্যাস নিয়েই বেড়ে উঠা । আরবী না বুঝলেও আরবী সহকর্মীদের আমার স্বভাবসুলভ হাঁসি দিয়ে মাতিয়ে রাখি । আমার এমন আচরনে তারাও ভীষন খুশি । সেই সূত্রেই কাল এক নেপালী সহকর্মীর সাথে মজা করছি । কিন্তু হঠাৎ বেচারা রাগ করে । এক পর্যায়ে মনোমালিন্য চরম আকার ধারন করে । অবশ্য এক আরবী সহকর্মীর মধ্যস্থতায় সমাধান হয় ।
নেপালী বেচারা নিজের ভুল বুঝতে পেরে আমাকে কাছে ডাকে , কিন্তু আমিও ছাড়ার পাত্র নই । আমিও অভিমান করে কাছে গিয়েছি কিন্তু মুখটাকে নতুন ভোটার হওয়া কোন তরুনীর মাথার চুলের ন্যায় কালো করে রেখেছি । আমার রাগ ভাঙ্গাতে সে আমাকে বলে কি খাবে , জুস , ফল না অন্য কিছু । আমার এক কথা , আজ ক্ষুধা নষ্ট হয়ে গিয়েছে । তারপরও অনেক জোর করে হাফ ডজন জুস নেয়ার জন্য খুব জোর করল , নিয়ে আসলাম - কিন্তু খেলামনা । পরে সে আবার আমার অফিসে এসে এক নজর দেখে গেল । বেচারা বুঝল , আমি সত্যি সত্যি রাগ করেছি ।মনোমালিন্যের সূত্র ধরে বাসায় এসে তরকারী গরম করে ভাত না খেয়েই ঘুমিয়ে গেলাম । কিন্তু রাত প্রায় তিনটার দিকে ঘুম ভেঙ্গে গেল । শত হলেও ক্ষুধা বলে কথা কিনা । কিন্তু অভিমানের মাত্রাটা এতটা তীব্র ছিল যে , খাওয়া ছাড়াই ঘুমিয়ে গেলাম ।
কিন্তু যদি আজ আমার একটা বউ থাকত । তাহলে তার ব্যস্ততার মাঝেও আমার শিওরের কাছে গিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে বুলিয়ে ডাকত - খাবার খেতে আস । আমাকে উঠাতে না পারলে , তার ডাক্তারির যন্ত্রটা দিয়ে আমার তাপমাত্রাটা মেপে বলত , ওমা ! শরীরটা পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে । আজ সারাদিন দুষ্ট খোকাটা কিছুই খায়নি । তোমাকে নিয়ে আর পারলাম না । আগে নিজের শরীর দেখতে হয় ; তারপর কাজ । কিন্তু আমি তার কোমল কন্ঠে কাকুতি আরও শোনার জন্য অভিমান করে শুয়ে থাকলে , সে এবার কাঁদো কাঁদো স্বরে বলত , তুমি যদি না খেতে আস আমিও আজ না খেয়ে শুয়ে যাব । তোমার সাথে আড়ি ।
আমি বেচারা সহজ মানুষ । এমনিতেই কারো চোখে জল দেখতে পারি না । তারপর বউয়ের এমন কন্ঠ শুনে একটু জাগার ভান করে আবার শুয়ে যেতাম , আর বেচারী আমার রাগ ভাঙ্গানর আনন্দে বিজয়ের হাঁসি দিয়ে , আমার জন্য খাবার নিয়ে রেডি । আমিও বায়না ধরতাম - তুমি না খাইয়ে দিলে আমি খাবনা । আর লাজুক বধু কি আর করবে । নিজের হাতে আমাকে খাইয়ে সাথে সাথে গান শুনিয়ে ......আহা ! কি যে মজা ভাবতেই ............
শশুর বাড়ি বেড়াতে গেলে লবন ছাড়া শোল মাছ , ইলিশের ঝোল আরও যে কত্ত কি ! সাস্থ্য সচেতন বেচারি খাওয়ার এক ঘন্টা পর রাজশাহীর ফজলি আম নিয়ে আমার জন্য অপেক্ষা করতে থাকে আর আমি বেচারা , বাহিরে শালা শালীদের সাথে গল্পে মত্ত । এমন অবস্থায় বেচারী রাগ করে তুমি আর কত কষ্ট দিবে ! তোমাকে নিয়ে আর পারলাম না । আমি, বেচারী নববধুর রাগের কাছে পরাজিত হয়ে সুবোদ বালকের মত জী ম্যাডাম , জী ম্যাডাম বলে আম খেতে বসে যেতাম । আমতো এমনিতেই স্বাদ । তবুও বেচারীকে খুশি করার জন্য আমটা এত স্বাদ কেন , কে কেটেছে ইত্যাদি ইত্যাদি । বেচারী তখন বিশ্ব জয়ের আনন্দ নিয়ে - দেখতে হবে না কে কেটেছে ।
আমার আবার ভাল গান শোনার খুব শখ । বধুর মুখে গান শোনার আশায় কখনো কখনো বিষণ্ণ মনে আমাকে থাকতে দেখলে বেচারী বধু চিন্তিত মনে এসে তোমার শরীর খারাপ করছে নাকি , মুখটা এমন শুকনো দেখাচ্ছে কেন ? আমি তখন ভাব নিয়ে খারাপ লাগলে আর কি করা ! বেচারী তখন আমাকে আদর মাখা হাতে মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে , গান শোনাতে শোনাতে ...... ভাবী সে দিনগুলো যে কত রোমাঞ্চকর হতে পারে ......... কখনো সে দিন কি আমার জীবনে আসবে নাকি এমনিতেই চলে যাব পরপারে । সেটা হয়ত সময়ই .........
বিষয়: বিয়ের গল্প
১৬০৩ বার পঠিত, ৯ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ছেডে দেন কইলাম-
মন্তব্য করতে লগইন করুন