আমি কি সুখী?
লিখেছেন লিখেছেন প্রবাসী আশরাফ ১০ জুন, ২০১৪, ০৮:৪৭:০৪ রাত
এই ছোট্ট প্রশ্নটি নিজেকে নিজে করেনি এমন মানুষ হয়তো খুঁজে পাওয়া যাবে না। আবার এমন কিছু লোক আছে যারা সুখের পেছনে ছুটতে ছুটতে হয়তো কখনো নিজেকে প্রশ্ন করা হয়নি আমি কিসে সুখী? বা কি পেলে সুখী? মায়ের উদর থেকে ধরায় আসার পর থেকেই শুরু হয়ে যায় জীবন যুদ্ধ। আমরা হয়তো ভাবছি শিশু সময়টা সবচেয়ে সুখের ছিল। কিন্তু শিশু ভাবে আমরা সুখী নই কারন ইচ্ছে মতো স্কুল ফাঁকি দিতে পারিনা, একগাধা পড়ার বোঝা, ওখানে যাওয়া যাবেনা, ওর সাথে মেশা যাবেনা, ইত্যাদি। ভাবছেন হয়তো কৈশরে সুখ ছিল? কিন্তু প্রশ্ন করে দেখুন একটি কিশোরকে সে কি বলে। ইচ্ছে মতো দৌড়ঝাপ করতে বারন, বিদ্যালয়ে শিক্ষকের শাষন, মায়ের বকুনি, সব মিলিযে শান্তিতে নেই সে। "যুবক বয়স" ভাবছেন এটাই বোধ হয় জীবনের সুখী সময়। আসলে কি তাই? কেরিয়ার গঠনের মানসিক চাপ, ভাল সঙ্গী পাবার আকাঙ্খা, জীবনে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার চাপ ইত্যাদি। মধ্যেবয়সের কথা ভাবছেন? এখানটাতো আরো ঝামেলাপূর্ন মনে হবে আপনার কাছে। অর্থ-বিত্ত, সামাজিক স্ট্যাটাস বজায় রাখা, পারিবারিক বন্ধন ঠিক রাখা, সন্তানদের মানুষ করা, ইত্যাদি। এক সময় নিজেকে খুঁজে পাবেন পৌঢ় বয়সে। ভাবছেন এই বয়সে একটু আয়েশ করবেন? বৃদ্ধ বয়সে হয় ছেলেমেয়ের বোঝা না হয় বৃদ্ধাশ্রম। সঙ্গী বিয়োগ হলে একাকীত্বের কষ্টমিশ্রিত ক্ষন।
তাহলে প্রশ্ন থেকেই যায়, আমরা কি জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত কখনোই সুখী নই? আসলে জীবন আর সুখ শব্দ দুটি গভীর সমুদ্রের মতো বিশাল। যার কোন সীমানা নির্ধারন করা সম্ভ্যব নয়। আর সুখ জিনিষটা মাপার কোন যন্ত্র আজও আবিষ্কার হয়নি, হয়তো হবেও না কোন দিন। আসলে সুখ বিরাজ করে মনের মাঝে। আর মানুষের মন তো অদ্ভুত একটা জিনিষ। পারিপার্শ্বিকত, পরিস্থিতির সাথে মনের পরিবর্তন লক্ষনীয়। ধরুন আপনি একটি কষ্টের মুভি দেখছেন এতে আপনার মন ভাড়াক্রান্ত হবে, কষ্টের তীব্রতা বেশি হলে আপনি কাঁদবেনও। পক্ষান্তরে আপনি টম এন্ড জেরী টাইপের কিছু একটা দেখুন হাসির চোটে আপনার ভুড়ি কেঁপে উঠবে। কি বিশ্বাস হচ্ছেনা? তাহলে এখনই ট্রাই মারেন...
একটা প্রবাদ বাক্য আছে আলোর বিপরীতে অন্ধকার থাকে। ঠিক তেমনি কষ্টের বিপরীতে সুখ অবস্থান করে। পৃথিবীতে কষ্ট আছে বলেই কেবল আমরা সুখকে উপলব্ধি করতে পারি। মানুষের জীবনটাই এমন। কখনো সে নিজেকে দু:খী মনে করে আবার কখনো সুখী। আসুন এবার জেনে নেই কেন মানুষ নিজেকে সুখী মনে করেনা এর কিছু কারন -
=> মানুষ যখন প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির মধ্যে সমন্বয় করতে পারেনা তখন নিজেকে সুখী মনে করেনা।
=> মানুষ যখন তার চাহিদার অতিরিক্ত প্রত্যাশা করে তখন না পাবার হতাশা তাকে ঘ্রাস করে তখন সে নিজেকে সুখী মনে করেনা।
=> কাজ সমাধা করতে সক্ষম হয়তো কোন পারপার্শ্বিক কারনে তা অর্জনে ব্যার্থ তখন নিজেকে সুখী মনে করেনা।
=> অর্থের পেছনে বিরামহীন ছুটে বেড়ানো অনেক সময় মানুষ নিজেকে সুখী করতে পারেনা। নিজেকে কিংবা নিজের প্রিয়জনদের সময় দিতে না পারায় তার কাছ থেকে প্রকৃত সুখ ফাঁকি দিয়ে চলে যায়।
=> স্বার্থপরতা কোন সময় নিজেকে সুখী হতে দেয়না।
(আরো কারন আপনাদের মাথায় থাকলে মন্তব্যর মাধ্যেমে শেয়ার করেন)
আসুন এবার নিজেকে নিজে প্রশ্ন করে দেখি...আমি কি সুখী?
আমি যা খাচ্ছি তার সঠিক স্বাদ কি আমি পাচ্ছি? উত্তর যদি হয় হ্যাঁ, তবে নিজেকে সুখী ভাবতে হবে। ভেবে দেখুন তো সেই সব মানুষের কথা, যাদের মুখের স্বাদ সৃষ্টিকর্তা তুলে নিয়েছেন। তাদের থেকে আপনি কি অনেক বেশি সুখী নন?
আপনি যখন ঘুমাতে চান, তখন কি ঘুমাতে পারেন? হ্যাঁ হলে অবশ্যই আপনি সুখী। ক্লান্ত শরীর ও মন নিয়ে বিছানায় শুয়ে প্রহর গুনছেন। কিন্তু কিছুতেই ঘুম আসছে না। শুধু ছটফট করছেন। আর বিনিদ্র রজনী পার করছেন। তখনই বুঝবেন ঘুমের গুরুত্ব। ঘুম যেন পৃথিবীতে স্বর্গসুখেরই এক স্বাদ। তাই ঠিকমতো ঘুমাতে পারলে পরের দিনটি হয় নির্মল, কর্মক্ষমতা থাকে প্রখর এবং মন ও মেজাজ থাকে ভালো। তাই তো সঠিকভাবে ঘুমাতে পারাটা সুখেরই বিষয়।
পৃথিবীতে সত্যিকার বন্ধু হিসেবে আপনার কি একজন কেউ আছে? হতে পারে সে আপনার বাবা, মা, ভাই, বোন বা স্বামী-স্ত্রী বা অন্য কেউ। যার কাছে আপনি আপনার দুঃখ অকপটে আর নিঃসংকোচে প্রকাশ করতে পারেন। যদি সংখ্যায় একজনও কেউ থাকে এমন বন্ধু, তাহলে আপনি সুখী ভাবতে পারেন নিজেকে। আর এই তিন প্রশ্নের প্রতিটিই যদি আপনার উত্তর হয় হ্যাঁ, হ্যাঁ এবং হ্যাঁ, তাহলে সত্যিই আপনি সুখী।
আসুন এবার জেনে নেই নিজেকে নিজে সুখী করার কিছু কৌশল -
=> কখনো নিজেকে অন্যর সাথে তুলনা করা যাবেনা
=> নিজের যা আছে তাই নিয়ে তুষ্ট থাকতে হবে
=> উপরে নয় নিচের দিকে তাকাতে হবে। সামাজের কোন স্তরে আপনি আছেন এটা দেখতে সবসময় নিচের দিকে দেখুন আর ভাবুন আপনি তাদের কাছ থেকে তুলনামুলক কত ভালো আছেন।
=> প্রাপ্তি নয় প্রদানই হোক স্লোগান। সুখ পেতে নয় দিতে চাই। সুখ বিলিয়ে যান দেখবেন অটো নিজে সুখী হবেন।
=> চাহিদার বেশি প্রাপ্তি মানুষকে দু:খী করে তাই নিজের চাহিদা সীমিত করে নিজে সুখী করা যেতে পারে।
=> ত্যাগী হওয়া একটা মহৎ গুন। যে কোন ব্যাপারে ত্যাগ স্বীকার করতে শিখতে হবে। ত্যাগীতে অভ্যস্থ হলে একসময় অন্যদের ভালবাসায় নিজেকে সুখী হিসাবে আবিষ্কার করবেন।
বিষয়: বিবিধ
১৬৬৮ বার পঠিত, ১৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
উত্তর পেয়েছি পৃথিবীর মধ্যে আমি অন্যতম একজন মানুষ যে এই প্রশ্নেও সুখ অনুভব করি।
আমি সুখী আমার হৃদয় প্রশান্তিতে ভরপুর।
আমার তেমন কোন চাহিদা নেই।
যেভাবে আল্লাহ চালাচ্ছেন আমি সেটাকেই প্রাচুর্য্যতা বলি।
আমার কাছে সুখীর উদাহরণ হলো ঐ দরবেশ যে রুটির একটি টুকরা পেয়ে অর্ধেকটা নিজে খেয়ে বাকি অর্ধেকটা বিলিয়ে দেয়।
আর যখন সে ঘুমাতে যায় তখন তার মধ্যে এক রব প্রদত্ত প্রশান্তি অনুভব করে।
ক্ষুধার্থ থাকে তবুও তার ঘুম হয় প্রশান্তির.......
আলহামদুলিল্লাহ।
আমি একজন পরিপূর্ণ সুখী আলহামদুলিল্লাহ।
আসলেই তাই, অল্পতে যে তুষ্ট সেই তো সুখী হবে। ভাল লাগলো জেনে যে রব আপনাকে মানসিক প্রশান্তিতে রেখেছে।
ত্যাগ যে যতবেশী করবে আর চাহিদা যতকম সে ততবেশী সুখী হবে ।
অনেক কিছু শিখলাম ধন্যবাদ ভাইয়া ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন