বহুদিন পরে মনে পড়ে আজি-১

লিখেছেন লিখেছেন ফাতিমা মারিয়াম ০৮ নভেম্বর, ২০১৩, ০৯:৫৪:১৮ রাত

কোথাও আমার হারিয়ে যাওয়ার নেই মানা

****************************************************

ছোটবেলায় আমার দৈনন্দিন রুটিনের মধ্যে বিকেলের খেলাটা একেবারেই বাধ্যতামূলক ছিল। কোন একদিনও বাদ পড়েছে এরকম হয়নি। দুপুরের খাবারের পর মক্তবে পড়তে যেতাম। সেখান থেকে ফিরে এসেই সোজা মাঠে । এক্কেবারে মাগরিবের আজান হলে বাসায় ফিরতাম। সমবয়সী ছেলেমেয়ে মিলিয়ে বেশ অ-নে-কজন একসাথে খেলা করতাম। সাধারণত আমরা বিভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত হয়ে খেলতাম। এই গ্রুপ আবার হত বয়সের ভিত্তিতে। আমাদের গ্রুপটা বেশ বড় ছিল। এই গ্রুপেও আবার সাব গ্রুপ হত। আমরা একেক দিন একেকটা খেলা করতাম।

একদিন আমাদের একটি গ্রুপের কয়েকজন মিলে সিদ্ধান্ত নিলো তারা ঘুরতে যাবে। সন্ধ্যার আগেই আবার চলে আসা হবে। আমার ঠিক এই মুহূর্তে মনে নেই এই সিদ্ধান্তটা কে নিয়েছিলো? অথবা আমি যে কিভাবে এই গ্রুপে ঢুকে পড়েছিলাম তাও মনে করতে পারছিনা!!! যেই ভাবা সেই কাজ! সাথে সাথে ১২/১৪জনের একটি দল হাঁটা শুরু করে দিলাম। এখানে আমাদের সবার বয়স ৮ থেকে ১০ বছরের মধ্যেই হবে। হাঁটতে হাঁটতে আমরা মাঠের শেষ প্রান্তে চলে গেলাম। কিন্তু ঘরেফেরার প্রতি কারও বিন্দুমাত্র ইচ্ছে নেই। আমি আর কখনও এতদূর আসিনি। কিন্তু কেন জানি ঐ সময়ে একটুও ভয় লাগছিলনা। সামনে একটি খাল দেখা গেল। সামান্য পানি। খাল পার হয়ে ওপারে যাওয়ার লোভ কেউ সামলাতে পারছিলামনা। ব্যস সবাই মিলে নেমে পড়লাম খালে।

ওপারে গিয়ে সবাই মিলে আবার হাঁটতে শুরু করলাম। আমরা হাঁটছিতো হাঁটছি। এর মধ্যে আমরা যে কতখানি পথ চলে এসেছি তা কেউই বুঝতে পারিনি!!! একসময় আমরা ফিরার সিদ্ধান্ত নিলাম। ফিরতে গিয়েই দেখলাম যে আমরা পথ হারিয়ে ফেলেছি। আমরা এতগুলো বাচ্চা একবার এদিক যাচ্ছি আরেকবার ওদিক যাচ্ছি।

এদিকে প্রায় সন্ধ্যা হয়ে আসছিলো। ভয়ে আমি কান্না শুরু করে দিলাম। ( আমার সেই গ্রুপের ২/১জন মেম্বার আমাকে এখনও খুব টিটকারি করে সেই বিখ্যাত কান্নার জন্য।) এরপর কিভাবে যে ফিরে এসেছিলাম তা আজ আর কোনভাবেই মনে করতে পারছিনা! তবে সেদিন বাসায় ফিরতে সন্ধ্যা পার হয়ে গিয়েছিলো। বাসায় কোন কৈফিয়ত দিতে হয়েছিলো কিনা তাও মনে নেই।

এখন মাঝে মাঝে অবাক হয়ে ভাবি কী অসীম স্বাধীনতা ছিল আমাদের। টই টই করে ঘুরে বেড়ানো আর ইচ্ছামত খেলাধুলা করার সুখ এই যুগের কয়টা বাচ্চা পায়? আহারে!এখনকার বাচ্চারা একটু ভালমত খেলার সুযোগ থেকেও বঞ্চিত। তাদের জীবনটা এখন স্কুল-বাসা- কোচিং- আর কিছু যন্ত্রের মধ্যেই ঘুরপাক খায়। খেলাটাও যন্ত্র নির্ভর। এই যান্ত্রিক জীবনের বেড়াজাল থেকে শিশুদের মুক্তি দিতে অভিভাবকদের মাঝেও কোন সচেতনতা নেই। আমরা কি পারিনা শিশুদেরকে একটি 'বাধা বন্ধন মুক্ত আনন্দময় শৈশব' উপহার দিতে?

[ 'বহুদিন পরে মনে পড়ে আজি' এই শিরোনামে এসবি ব্লগে কিছু লেখা দিয়েছিলাম। এখন ভাবছি আবারও শুরু করবো। আগের লেখাগুলো অবশ্য এখানের অনেকেই এসবিতে পড়েছিলেন। তাই ওগুলো না দিয়ে নতুন করে এই লেখাটা দিয়ে শুরু করলাম।]

বিষয়: বিবিধ

২৬৪১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File