রঙ্গের মানুষ - (পর্ব-৩৮)
লিখেছেন লিখেছেন প্রবাসী মজুমদার ১৩ জুন, ২০১৪, ০৯:৪৪:৪৩ সকাল
পর্ব-৩৭
বর্তমান ম্যানেজারের অধীনে কর্মরত কর্মচারীরা বেশী ভাল নেই। বিগত কয়েক মাসে সবাই বুঝতে শুরু করেছে যে, যায় দিন ভাল, আসে দিন খারাপ। প্রাক্তন ম্যানেজারের চেয়ে কম অভিজ্ঞতা সম্পন্ন এ মানুষটির প্রশাসনিক দক্ষতা একেবারেই কম। চাল চলন আর কাথাবার্তায় মনে হয়েছে,তিনি ঘুষ খাওয়ার জন্যই এখানে ট্রান্সফার হয়ে এসেছেন। এতে রবি সাহেব আর সেকেন্ড অফিসার খায়ের সাহেবের ঘুষ খাওয়াটা অনেকটা ওপেন সিক্রেট এ পরিণত হল। এ যেন ঘূষ খেতে অভ্যস্ত তিন বেপরোয়া কর্মকর্তার অঘোষিত সিন্ডিকেট।
অফিসার পদে পদপ্রার্থী প্রতিযোগিতা থেকে বিদায় নিলেন সেকান্দার সাহেব ও প্রদীপ বাবু। বুকে লালিত স্বপ্নকে বাদ দিয়ে ওরা ব্যাংক এম্প্লয়িজ ইউনিয়নে আরও সক্রিয় হয়ে উঠতে লাগল। এমনটি মফিজ সাহেবও এ ব্যাপারে পিছিয়ে থাকল না। সব কিছু মিলিয়ে সময়ে অসময়ে তিন জন ব্যাংক ষ্টাফ নিজেদের ইচ্ছেমত বাহিরে আসা যাওয়ার কারণে আমার উপর কাজের চাপটা দিন দিন বেড়েই চলল। একটা সময় এল, আমি অনেকটা হাফিয়ে উঠেছি। চাপিয়ে দেয়া অধিক কাজে অামি কিছুটা হতাশা বোধ করা শুরু করলাম। খায়ের সাহেবের বেপরোয়া ঘুষ খাওয়ার কারণে ব্যাংকের অনিয়মতান্ত্রিক লেনদেন নিয়মে পরিণত হল। বিকেল চারটা পাঁচটায় ও গ্রাহক সেবার নামে ঘূষের লেন দেন চলত। এসব ভাগ ভাটোয়ারার অংশীদারীত্ব পেয়ে ম্যানেজার দারুণ খুশী।
এক বছর পরের কথা। কর্মচারী ইউনিয়নের নেতা চৌধুরী সাহেব আমাদের শাখায় এলেন। যেচে নিজেকে তার সাথে পরিচয় করিয়ে নিলাম। বললাম, কখনও প্রয়োজন হলে আমাকে ডাকার জন্য। আমার সম্পর্কে সেকান্দর সাহেব আর প্রদীপ বাবুর ভূয়সী প্রশংসার কারণে নেতা চৌধুরী সাহেবের কাছে কিছুটা প্রিয় হয়ে উঠলাম। মাঝে মধ্যে বিভিন্ন প্রোগ্রামে আমাকে ডাকার হিড়িকটা বেড়ে গেল। সময়ে অসময়ে আমিও এখন একজন প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর। মাইরের ভয়ে ম্যানেজার নিশ্চুপ! দুর্নীতি আর অনিয়মের প্রতিবাদ করতে গিয়ে গড়ে উঠা এসব শ্রমিক আন্দোলন যেন সময়ের দাবী। ম্যানেজারের অতি বাড়াবাড়ি হতে নিজেকে বাঁচানোর জন্য আমিও সে দাবিদারদের লিস্টে যুক্ত হয়ে গেলাম।
২৯ শে এপ্রিল। ১৯৯১ সাল। বাংলাদেশে ঘটে গেল ইতিহাসের পাতায় নতুন করে সংযোজিত এক নির্মম প্রাকৃতিক দুর্যোগ। আর সে সুযোগটির পুরোটাই মঞ্চস্থ হয়েছিল প্রকৃতির নৈসর্গ ভুমি নামে খ্যাত চট্রগ্রাম বিভাগের উপর দিয়ে। গভীর সমুদ্র হতে ধেয়ে আসা সেদিন রাতের এ ভয়াল আক্রমনের গতি প্রকৃতি এতটাই ভয়ংকর ছিল যে, লিখার ভাষায় এটি বুঝানো সম্ভব নয়। দর্শকের গ্যালারী থেকে দেখা একজন জীবন্ত স্বাক্ষী হিসেবে আমার কাছে মনে হয়েছে, এ যেন কিয়ামতের ভয়াবহতার উপর নির্মিত স্বল্প দৈর্ঘ্যর কোন এক বিস্ময়কর ছায়াছবি। ক্ষণিক সময়ের জন্য মঞ্চস্থ হওয়া প্রকৃতির এ নিদারুণ অভিনয়ে লন্ড ভন্ড করে দেয়া তান্ডব বিশ্বাস আর বোধকে ধাঁধার মধ্যে রেখে গিয়েছে। অহংকার আর অত্যাচারীদের জুলুমে ক্ষিপ্ত প্রকৃতি ঘুর্নি ঝড়, জলোচ্ছ্বাস আর অগ্নি বায়ু দিয়ে আক্রমন করা দুর্যোগের হিংস্রতা এতই নিষ্ঠুর ছিল যে, ভুক্তভোগীদের মুখে না শুনলে এটি বোঝা যাবেনা। আর সে ভুক্তভোগীদের একজন নিরব স্বাক্ষী ছিলেন আমাদের ব্যাংকের সেকেন্ড অফিসার খায়ের সাহেব। খেটে খাওয়া দিন মজুর, স্বল্প পুঁজির ব্যবসায়ী আর বাকহীন মানুষদের পকেট থেকে লুট করে নেয়া ঘুষের টাকায় তিল তিল করে গড়ে তোলা খায়ের সাহেবের সাজানো সংসার এক রাতেই কিভাবে ভেস্তে গিয়েছিল গর্জে উঠা সমুদ্রের কাদা আর নোনা জলের সাথে, সে করুণ ঘটনাটি তার নিজ মুখেই শোন যাক।
(চলবে)
বিষয়: বিবিধ
১৩২৪ বার পঠিত, ৩৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
কুরআনের এই অর্থটা আরেকবার মনে দাগ কাটলো।
আর অপরাধীরা কখনও প্রশান্তির ঘুমে নিজেরা তলিয়ে যেতে পারেনা।
পড়ের পর্বের জন্যতো অপেক্ষা বাড়িয়ে দিলেন।
লিখেছেন সালমা ২৯ এপ্রিল, ২০১৪, ০২:২০:১৫ দুপুর পোস্ট টি পড়ে দেখুন।
অপেক্ষায় আছি ভাইয়া ,,
মন্তব্য করতে লগইন করুন