জীবনটা ক্ষনিকের তবুও মনে স্বপ্ন উঁকি মারে! (৭ম পর্ব)
লিখেছেন লিখেছেন মাহবুবা সুলতানা লায়লা ১৪ নভেম্বর, ২০১৪, ১২:৫৯:২২ দুপুর
কানিজ তার বাবার ওখানে গেছে প্রায় চারদিন হলো! সপ্তাহ এখনো হয়নি! আযাদের সময়গুলো কাটছে বিষন্ন মন নিয়ে! আযাদ যেন এ'কদিন প্রাকৃতিক কাজ গুলো সারার পরে নিজেকে ব্যস্ত রেখেছে ভাবনার জগতে! কানিজের সাথে টি এন্ড টি ফোনে খোজ খবর আদান-প্রদান হয় তখন শুধু ভালো আছি কথাটাই বলে! কারন আযাদ চায় কানিজের মনটা ফুরফুরে হয়ে আসুক ওখান থেকে! যতটা হতাশা জমেছে তা ঝেরে আসুক নয়তো সেই হতাশায় চারিদিকটা অন্ধকারই হবে! আর কানিজ হতাশাতে থাকলে আযাদ কি করে ভালো থাকবে? আযাদের ভালো থাকাটা আজ কাল আসলেই কানিজের ভালো থাকার উপর নির্ভর করে! আযাদ কানিজকে নিয়ে নানা রকম ভাবনাতে ডুবে যায়! এরই মাঝে আযাদের ভাই মনির এসে ভাবনা থেকে ছেদ করে আযাদকে! জানতে চায় ভাই আপনার কি খোজ খবর? ভাবী নাকি বাপের বাড়িতে গেছে? আযাদ স্বল্প কথায় জবাব দেয় ভালো আছি! হাঁ গেছে! আযাদ লক্ষ করে মনির কিছু বলতে চায়! আযাদ তাই প্রশ্ন করে মনির তুই কি কিছু বলবি? মনির আমতা আমতা করতে করতে বলে হাঁ ভাই বলবো! আযাদ বলে তাহলে বলে ফেল! মনির তখন বলে ভাই আপনি কানিজকে সব সম্পত্তি লিখে দিয়ে ভুল করেছেন! সে পরের মেয়ে! আর আপনার একটা কিছু হলে সে অন্য একজনকে বিয়ে করে সব সম্পত্তি নিয়ে যাবে! আযাদ চুপচাপ শুনছে মনিরের কথা গুলো! আর আমরা একটা মেয়ের জন্য অনেক সম্পদ হারাবো! আপনি এটা কি করলেন ভাই? আপনি ভালো করে ভেবে দেখেছেন তো? নাকি কানিজ আপনাকে জোর করে সব সম্পদ হাত করে নিয়েছে? এখনো ভাবার সময় আছে আপনি ভালো করে ভেবে চিন্তে সঠিক সিদ্ধান্ত নেন! পরের মেয়েকে এতটা আপন ভাববেন না! সে সব সময় পরই থাকবে! আর আমরা আপনার আপন ভাই! আমরা আপনার ভালো চাই আর আমাদেরও ভালো চাই! একবার চিন্তা করে দেখুন আপনার পরে কানিজ যদি অন্য কাউকে এখানে নিয়ে আসে স্বামীর অধিকার দিয়ে তবে তার সাথে আমাদের কতটা শত্রুতা হবে? আপনার ভুল সিদ্ধান্তের কারনে আমরা সারা জীবন আরেক জনের সাথে দুশমন হয়ে থাকবো এটা কি ভালো হবে?
আযাদ এবার বলে শুন ভাই প্রথমত কানিজ সম্মানের দিক দিয়ে তোর কাছ থেকে সম্মান পাওনা! তাকে সম্মান করে কথা বলবি! তার নাম ধরে ডাকা সম্মানের নয়! আর দ্বিতীয়ত আমি কোনই ভুল করিনি! যা করেছি ঠান্ডা মাথায় ভেবে চিন্তে করেছি! আর কানিজ জানেও না তাকে কি দেব না দেব! আর শুন আমার অবর্তমানে কি হবে সেটা একমাত্র আল্লাহই জানে! তবে আমরা বলতে পারি কানিজ একজন নারী সে একা থাকা অসম্ভব! তাকে তো কোন না কোন উপায়ে জীবন যাপন করতে হবে! আর সবচেয়ে বড় কথা হলো কানিজ যে ত্যাগ আমার জন্য করেছে তার তুলনায় আমার সম্পদ কিছুই না! তবে কানিজ তখন ভেবে চিন্তে যা করে সেটাই তার জন্য ভালো হবে! সে যদি অন্য কাউকে পছন্দ করে নেয় নেবে সেটা তার ইচ্ছা স্বাধীন ব্যাপার! আমরা কেন মিছেমিছি আগাম ভাবছি? আর শুন তুই কি মনে করিস পৃথিবীতে সম্পদই সবকিছু? সম্পদ আসলে কিছুই না! কারন যাদের সম্পদ নেই তারাও কোন না কোন ভাবে পৃথিবীতে চলছে! সম্পদ ছাড়াও আমাদের চলতো! কিন্তু মানুষের সহযোগীতা আর সহমর্মিতা ছাড়া কিন্তু চলা কঠিন! এই যে দেখ আমাকে আমার বাবার সম্পদ ছাড়াও নিজের অনেকটা সম্পদ আছে তাতে কি আমি সুখী হয়েছি? এই সম্পদ কি আমার সেবা করতে পারতো নাকি করছে? যদি কানিজের মত মেয়ে এসে আমাকে সেবা না করতো? এই যে তোরা আমার ভাই কতদিন তোরা আমাকে সময় দিয়েছিস? কতবার খোজ খবর নিয়েছিস? কতটা প্রয়োজন আমার পুরা করেছিস? তোরা আমার আপন ভাই হয়ে কতটা আন্তরিকতা দেখিয়েছিস? তোরা সকলে ওতো যে যার নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত! আমাকে দেখার বা সময় দেয়ার সুযোগ কোথায় তোদের? একবার ভেবে দেখ কানিজ যদি না আসতো আমার জীবনে আমি তোদের সবার কাছে কতটা বোঝা হয়ে থাকতাম? তোরাই বা কত সেবা করতি আমাকে? অথচ পরের মেয়েটা আমাকে আমার সকল অক্ষমতা জেনেও বিনা বাক্য ব্যয়ে সেবা করে চলেছে কয়েক বছর ধরে! একবার ও কি তোরা ভেবেছিস সে কি পেয়েছে? তার কি পাওনা আছে? ভাবিসনি! তার এই কোরবানি তার এই ত্যাগ তার এইসহমর্মিতার কোনই মূল্য হয়না! অমূল্য তার ব্যবহার! তার আন্তরিক সেবাও অমূল্য! কোন দামই দেয়া যাবেনা তার ত্যাগের! তোরা যে যাই বলিস আমি আমার সিদ্ধান্তে অটল!
আযাদ আরো বলতে থাকে কানিজ তার আত্মত্যাগের মাধ্যমে আমাকে পূর্ণ করেছে আমি তাকে কি দিয়ে পূর্ণ করবো? আমার যে কিছুই নেই! তাই আমি তার পরবর্তী সময়টা যাতে সুন্দর ও অভাব মুক্ত থাকে সেজন্য শুধু চেষ্টা করছি! তোরা আর এব্যপারে কোন কথাই বলিস না! এতে কানিজ নিজেকে খুব অসহায় মনে করে আর সে আমার জন্য এমনিতেই কোরবানি হয়ে আছে তারপর যদি আরো অসহায় হয় তখন আমি আর কিছুই ভাবতে পারিনা! আমি তো তোদের কারো হক্ব নষ্ট করে কানিজকে দিচ্ছি না! আমার ভাগের অংশ থেকে দিচ্ছি! আর আমার কামাই থেকে দিচ্ছি! আর তোদের দুই ভাইকেও কিছুটা দিয়েছি তোরা তাতেই খুশি থাক ভাই! আমি যতদিন বাঁচি ততদিন আমাকে একটু আত্মশান্তিতে থাকতে দে এবং কিছুটা আত্মশান্তনা নিয়ে যেতে দে! পৃথিবীর জীবনটা তো আমার কোন ভাবে চলে যাচ্ছে কানিজের একান্ত আত্মত্যাগের মাধ্যমে! শেষ সময়টাও যাতে ভালো যায় সেজন্য তোরা আমাকে আরেকটু সহযোগীতা কর ভাই! আর আরেক কথা তুই বা খোকন কেউই কানিজকে কোন সিদ্ধান্তের ব্যপারে জোর করিস না! সে যদি খুশি মনে মেনে নেবে নয়তো তার মনের উপর কষ্টের প্রভাব ফেলে এমন কিছু করিস না! মনির ভাইকে বুঝাতে আসলেও ভাইয়ের কথায় সে খুশি হতে পারেনি! বরং মনে মনে আরো বিগরে গিয়েছে! পরের মেয়ের জন্য আমাকে এত কথা শুনালো আমার ভাই? মনির মন খারাপ করে চলে গেলো আযাদের বাসা থেকে! আর মনে মনে কল্পনা করতে থাকে সাথে প্রতিজ্ঞা ও করে সময়কে যেতে দিচ্ছি সময় যাক সময়ই বলে দেবে সম্পদ ও কানিজ দু'টোই আমার! আমি পরের মেয়ে কানিজের জন্য এত টাকার সম্পদ হাত ছাড়া হতে দেবনা! প্রয়োজনে জোর খাটাবো! বাধ্য করবো তারপরও সম্পদ আমার চাই-ই চাই! মনির চলে যাবার পর আযাদ আবারও ডুবে গেলো ভাবনার জগতে! আযাদ ভাবতে থাকে তার অবর্তমানে তার এই ভাই নানা রকম ঝামেলা করবে সেটা সে এখনই আঁচ করতে পারছে! আর আরো আঁচ করতে পারছে তার ভাই কতটা সম্পদ লোভী! আর একারনে তার কি করতে পারে তারও ছবি এঁকে নেয় মনে মাঝে আযাদ! আযাদ যেন প্রতিনিয়ত কাটাচ্ছে একজন জীবন্তলাশের ন্যায় একদিকে কানিজের আত্মকোরবানি অপরদিকে আপন ভাইয়ের সম্পদের লোভ! এতদুভয়ের মাঝে আযাদ যেন নিজেকে নিয়ে আর কিছু ভাবতে পারেনা! এদিকে কানিজ ও কাছে নেই সব মিলিয়ে আযাদ কিছু দিনের মধ্যেই অনেকটা মূমূর্ষ হয়ে পড়ে!
বিষয়: সাহিত্য
১৩০০ বার পঠিত, ১৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আপনার লেখা দেখে আবারও লগইন করলাম!
বরবরের মতই সুন্দর উপস্হাপনায় এগিয়ে যাচ্ছে কাহিনী!
'সম্পদ কম হলেও জীবন কাটানো যায়!কিন্তু সহযোগীতা-সহমর্মিতার কমতি হলে আসলেই জীবন অনেক কষ্টকর হয়ে পড়ে!
অনেক ধন্যবাদ ও জাযাকউমুল্লাহ জানাই...।
ঠিক তাই সম্পদ কম হলেও মানুষের জীবন কাটে কিন্তু মানুষের সহযোগীতা আর সহমর্মীতা ছাড়া চলা বড়ই কঠিন ব্যপার! আর সবাই সবার জন্য এতটা উদার ও আত্মত্যাগ করতে পারেও না! আর যারা পারে তারাই মহান ব্যক্তিত্ব!
পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।
ধন্যবাদ সাথে থাকার জন্য।
মন্তব্য করতে লগইন করুন