বন্ধনঃ পর্ব ২ (পিঠাপিঠী ভাই বোনের গল্প)
লিখেছেন লিখেছেন আতিক খান ১০ জুন, ২০১৪, ০৮:২৫:১০ রাত
বড় ভাইবোনরা যখন বিদেশে থাকে, দেশে আসার সময় ছোটদের বিশাল আগ্রহ থাকে কি উপহার আসছে তাদের জন্য। টাকা উপার্জন করলেও বা বয়স বাড়লেও এই অপেক্ষা বা আশাবাদ মনেহয় কোন কালেই শেষ হয়না। আপুর গত দুইবারের ভিজিট আর উপহার নিয়ে দুটো মজার ঘটনা শেয়ার করি।
১। খেয়াল করলাম কবছর ধরেই কানাডা হতে সব গিফট আমার বউ আর মেয়ের জন্য আসছে। ছোট ভাই চালাক, লিস্ট দিয়ে সব আনিয়ে নেয়। আর আমার জন্য বরাদ্দ থাকে পেটব্যথা আর কাশির ওষুধ। শিপে ছিলাম, আপুকে ফোনে বললাম একটা হ্যান্ডিক্যাম (ক্যামেরা) নিয়ে এসো, টাকা দিয়ে দেব। দেশে আসার সময় ৩৫০০০ টাকার ক্যামেরা চলে এল। একদিন ফোনে হটাত বউ বলল – আপু টাকাটা চেয়েছে, শপিং করবে। মনে মনে ভেবেছিলাম টাকাটা নাও চাইতে পারে, আশায় গুড়েবালি। ভেবেচিন্তে ৪ লাইনের একটা আবেগঘন মেইল করলাম।
“ছোট ভাই প্রতিবার আশায় আশায় থাকি – আপু আমার জন্য কতকিছু আনবে। আমার হৃদয় ভেঙ্গে যায় অন্যদের উপহার আর আমার জন্য আনা ওষুধের শিশি দেখে ইত্যাদি ইত্যাদি।“ মেইলে যাদুর মত কাজ হল। বউ ফোনে বলল – মেইল পড়ে আপুর চোখ বেয়ে টপটপ করে জল ঝরেছে.........। ভাঙ্গা গলায় বলেছে আতিককে বলিও, ক্যামেরার জন্য টাকা লাগবে না। ওটা ওর গিফট।
কদিন পর আমি ফোন দিলাম। আপু অপরাধীর গলায় কথা শুরু করতেই থামিয়ে দিলাম – ‘ধুর! কিসের হৃদয় কিসের কি! ৪ লাইন মেইল করে একটা ক্যামেরা যদি বাগানো যায়, চান্স নিয়ে দেখলাম আর কি, হিহিহি ।‘ রাগে ওর কথা বন্ধ হয়ে গেল প্রথমে, পরে হেসে ফেলল – শয়তান...............।
২। পরেরবারের ঘটনা। আপা দেশে আসবে। আমার পিঠাপিঠি বড় একমাত্র বোন। এবার বিদেশে চাকুরির ডাক উপেক্ষা করে দেশে থেকে গেলাম। আসার দিন দশেক আগে মেইল পাঠাল, আমার জন্য কি আনবে লিখে পাঠাতে। বছরে এই একটাই সুযোগ ভালো কিছু প্রাপ্তির। শালা শালিদের থেকেও প্রচুর উপহার আসে, কিন্তু ওদের তো আর মুখ ফুটে সেভাবে বলা যায় না।
ডেস্কটপ থাকা সত্ত্বেও ল্যাপটপ নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরে ঘরে টানাটানি চলছে। এর থেকে পরিত্রান পাবার উপায় হল, আরও ভালো কিছু মা-মেয়ের হাতে তুলে দেয়া। খবর নিলাম বাকিরা কি লিস্ট পাঠিয়েছে। ওদের শপিং নাকি শেষ। বউ, ভাই সবার বাজেট দেখি বেশ মোটা অঙ্কের। একই বাজেট হলে আমি একটা ১০" স্যামসাং ট্যাব ৩ নিতে পারি। মাস ছয়েক আগের একটা পুরানো মেইল ঘেঁটে কোন এক আবেগের মুহূর্তে আমাকে লিখা একটা লাইন কোট করে জানতে চাইলাম ...।
"বিশ্বের সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ ভাই" এর জন্য তোমার বাজেট কত?
লাভ হল না, আমার প্রত্যাশার বেলুন ফুটা করে দিয়ে উত্তর এলো - তুমি যেহেতু জব কর, অন্যদের অর্ধেক। ধর ২০০ ডলার। একটা ঘড়ি কিনি?
বিপদে পড়লাম। ঘড়ি আজকাল পরা হয় না। আর ট্যাব না কিনলে হয়ত আমাকেই কিনে দিতে হবে। অতএব একটা ফন্দি আঁটলাম। মেইল করলাম - ট্যাব ৩ নিয়ে আসো। বাজেটের অতিরিক্ত টাকা আমি দিয়ে দিব। ওকে আমি ভালই চিনি। অর্ধেক উপহার ওর পক্ষে দেয়া সম্ভব না। ট্যাব ৩ চলে এলো, টাকাটাও চাইতে পারল না। হাসিমুখেই অবশ্য বলল এই নাও ট্যাব ৩। বাকি টাকা মনে হয়না পাওয়া যাবে।
বললাম, তুমি কি চাও আমি মানুষজনকে বলে বেড়াই তুমি অর্ধেক ট্যাব দিয়েছ?
- নাহ, তা অবশ্য চাই না।
তাহলে আর কি, কেস ডিসমিস ... হিহিহি.........।।
বিষয়: বিবিধ
১৬০৯ বার পঠিত, ৪২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
সুর্যের পাশে হারিকেন লিখেছেন : তুমি কি চাও আমি মানুষজনকে বলে বেড়াই তুমি অর্ধেক ট্যাব দিয়েছ?
এভাবেই সব কিছু আদায় করে নিচ্ছেন, তাইনা?
খুব ভালো লাগলো ভাই বোনের গল্প!
"৩০ টাকা দিলে পায়ের কাছে কোনায় ঘুমাতে পারো। ডিস্টার্ব করলে পরেরবার ৫০ টাকা।" এই লাইনটা পড়ে ইচ্ছেকরছিলো আপনাকে আচ্ছাকরে হাতুড়ি পেটা করি। কি নিষ্ঠুর আপনি...
আবার "ছাড়াছাড়িঃ" প্যারাটা পড়ে উপরের রাগটাগ ভুলে কান্নায় চোখের পানি নাকের পানি একাকার করে ফেলি।
বুঝতে পারছিনা আমার এখানে কেনো এত্তো প্রতি মন্তব্য করা হচ্ছে!??
তবে, আমিও হাতুড়ী মারতে জানি কিন্তু!!!
অজান্তে গড়ে উঠে বন্ধুত্ব
তা হতে পারে অপ্রত্যাসিত কোন ব্যক্তির
সাথে , সময়ের প্রয়োজনে জীবনের
বাস্তবতায় আবার তার বিচ্ছেদ ও ঘটে ,
প্রয়োজনের তাকিদে অনেক
দূরে চলে গেলেও যেনো মুছে না ফেলি সৃতির
পাতা থেকে কেউ কাউকে ।
অনেক ভালোলাগা রইলো ভাইয়া.....।
আমিও একজন ভাই এবং বোনকে অনূভব করি কারন আমি একা।
মন্তব্য করতে লগইন করুন