কমন স্যার এবং আহত বেদনা
লিখেছেন লিখেছেন শাহ আলম বাদশা ১৭ জুলাই, ২০১৪, ০১:১৯:২৮ দুপুর
পূর্বপ্রকাশের পর
পরদিন সকালে ইস্কুলে বেরোবার পূর্বক্ষণে খাতাটা নিয়ে যায় সুমি। ফলে শিউলীর ব্যাপারটা ফের মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। মনে পড়ে, জুয়েল একসন্ধ্যায় পড়তে পড়তে হঠাৎ বলে বসে–স্যার, শিউলী’পা না বলে, তোর স্যার দেখতে কেমনরে?
: আর তুমি কী বললে–কৌতুহলী প্রশ্ন কায়েসেরও।
: বলেছি, খুউব সুন্দর—বলামাত্রই একটা লাজুক হাসি ছড়িয়ে দেয় জুয়েল। কায়েস নিজেও লজ্জা পায় কিন্তু সামলে নিয়ে হেসে ফেলে। আরেকদিন বইয়ের ব্যাগটা টেবিলে রেখেই গড়গড়ে বলে চলে— চলেন না স্যার, আমাদের বাড়ীতে? এখানে গরমে পড়তে একদম ভাল্লাগেনা। কাল থেকে যাবেন কিন্তু, শিউলী’পা-ও তো আপনাকে খুব দেখতে চায়? কথাশেষ করেই সম্মতির আশায় খুশীতে তার মুখের দিকে অধীর আগ্রহে তাকিয়ে থাকে জুয়েল।
: কিন্তু আমি গেলে তোমার আপার অসুবিধে হবে যে, কায়েসও কৌতুক করেন?
: নাহ্ স্যার, কিচ্ছু অসুবিধা হবেনা; যাবেন না, তা-ই বলেন— স্যারের অনাগ্রহে এবার অভিমানে চুপ মেরে যায় সে।
মেসের উত্তরে পূর্ব-পশ্চিমমুখী একটা গলির সাথেই শিউলীদের প্রকান্ড বাড়ীটার উঁচু দেয়াল মেসটাকে পৃথক করে দিয়েছে। কায়েসসহ দু’তিনজন চাকুরে ব্যতীত মেসের সবাই ছাত্র। চাকরিতে ঢুকার পর দু’মাস কেটে যায় কায়েসের মেসজীবনের। পড়তে পড়তে আজও নতুন এক প্রশ্ন করে জুয়েল, আপনার কোন ছবি নেই, স্যার? থাকলে দ্যান না স্যার— ।
: ছবি দিয়ে কী হবে, বলো তো, কায়েসও মজাক করেন
: বাঃ রে, আপনি আমার স্যার, আপনাকে বাড়ীর লোকজন দেখতে চায়না বুঝি? শিউলী’পা-ও তো খুব দেখতে চায়— ওর বালসুলভ উত্তর।
আসলে কায়েস শিউলী নামের মেয়েটাকে না দেখলেও তার সম্পর্কে এত কথা শুনেছে যে, কখনো কখনো মনে হয় সে যেন তার কত পরিচিত কত আপন? সুশ্রী যুবকের প্রতি সুন্দরী একজন তরুণীর এমন আগ্রহ-কৌতুহল হয়তো অস্বাভাবিক নয়, ভাবে কায়েস! তাছাড়া সে যে একজন প্রসিদ্ধ লেখক কবি ও গীতিকার, এটাও হয়তো আকর্ষনের অন্যতম কারণ। সম্প্রতি ঢাকা থেকে তার যে, গানের ক্যাসেটটা বের হলো, তা-ও হয়তো ওর আকর্ষণটা বাড়িয়েছে। তবে মজার ব্যাপার যে, তার প্রতি শিউলীর একতরফা দূর্বলতার খবরটা এখন আর গোপন নেই, জানাজানি হয়ে গেছে! তারও যে কী হলো–সুমি খাতা নিয়ে যাবার পর ইস্কুলে এসেও অহেতুক ভাবনার হাত থেকে সে মুক্তি পায়না। ঢং ঢং করে বেলবাজলেই তবে তার দীর্ঘ ভাবনার ইলাস্টিকটা সংকুচিত হয়ে আসে, এর আগে নয়। এমনকি ঘুমানোর আগ পর্যন্ত শিউলীর ব্যাপারটা মন থেকে মুছতে পারেনা। নিজেকে নিজেও সে শুধায়, আচ্ছা, মেয়েটাকে নিয়ে আমিই বা এত ভাবছি কেন; নাকি আমিও দূর্বলতার শিকার? একসময় প্রবল স্নায়ুযুদ্ধশেষে শিউলীকে চিরতরে মন সে থেকে মুছে ফেলারও সিদ্ধান্ত নেয়।
কিন্তু ভুলতে চাইলেই কি ভোলা যায়? পরদিন বিকেলের মিষ্টি-রোদেলা পরিবেশে কায়েস কী একটা জটিল লেখা নিয়ে ব্যস্ত, সুমি আরেকটি খাতা নিয়ে হাজির? স্যার, শিউলী’পা খাতাটা দেখে দিতে বললো–প্রত্যুত্তরের কোন আশা না করে খাতা টেবিলে রেখেই দে’ দৌঁড়! কায়েস এবার রীতিমতো বিরক্তিবোধ করে। তাই রাতে জুয়েলের হাতে খাতাটা ধরিয়ে দিয়ে বলে, তোমার আপাকে বলো–স্যার খুব ব্যস্ত, তাই খাতাটা দেখার সময় পায়নি। এরপর অবশ্য আর কোন খাতা পাঠায়নি সে। তবে রহস্যময়ী নারীমূর্তিটির আকর্ষণ বাড়ার পাশাপাশি তার প্রতি অযাচিত ও বাড়তি একটা আদর-যত্নের ব্যাপারও দিনদিন বেশ লক্ষ্যনীয় হয়ে ওঠে। প্রথমদিকে বাড়ীর কাজের লোকই খাবার পৌঁছে দিয়ে যেতো। কিন্তু ইদানিং কখনও সুমি, ওর ভাই রোমেন কিংবা জুয়েল অথবা ওরা একযোগে সবাই হৈ-হল্লা করতে করতে খাবার দিয়ে যায়। হয়তো খেতে বসেছে, অকস্মাৎ কেউ একবাটি বাড়তি তরকারী নিয়ে হাজির–স্যার, শিউলী’পা দিলো। উদ্দেশ্য যা-ই থাক, আমার পুষ্টিবর্ধনতো ভালোই হচ্ছে—মাঝেমাঝে এমনতরো ভাবে আর হাসেও। কখনও এ-ও ভাবে, মেয়েটাকে এভাবে প্রশ্রয় দেয়া কি ঠিক হচ্ছে? পরক্ষণে মন বলে যায়–যেচে দিলে খেতে দোষ কী! এমনকি রোজ সকালে ও বিকেলে শিউলীর তরফ থেকে চা, কফি অথবা গরম দুধও আসতে শুরু করে। ঘটনা এতদূর গড়ায় যে, মেসের সবার মধ্যে কানাঘুষার সৃষ্টি হয়। সুতরাং বাধ্য হয়ে নুরুল হুদার কাছেই পরামর্শ চায় সে। কিন্তু রসিক হুদা উল্টো মশকরা জুড়ে দেন, আরে, না-না–শিউলীর দান ফেরত দেবেন না, খবরদার! বরং যা আসে খেয়ে নিন, এটা স্বাস্থ্যের জন্য মহাউপকারী!!
: কিন্তু বেচারী যে আদর-সোহাগে খাইয়ে-দাইয়ে একেবারে বিয়ের খোয়াব দেখছে, তার কী হবে ? কায়েস যুক্তি দেয়–এ কি প্রতারনার শামিল হচ্ছে না; সে ভালবাসা বিলাচ্ছে আর আমি গ্রহণ করে যাচ্ছি ?
: দূর, অন্যের বাড়ি থেকে তো আর আসে না? একে বরং শিক্ষকের উপযুক্ত যত্নই ভাবুন না কেন- হুদা মুখ টিপেটিপে হাসেন।
: আরে, সে দায়িত্বতো প্রেমপিয়াসি ঐ যুবতীয় নয়, তা বোঝেন না কেন হুদা ভাই, কায়েস বিরক্তিপ্রকাশ করে।
: তা, না হয় বুঝলাম; তবে বিয়েটা করে ফেলেন না, ল্যাঠা চুকে যাক- নুরুল হুদা এবার এমনই ভাব করে বলেন যেন তিনি সিরিয়াস। ব্যস, কায়েস একদম চুপ, বিয়ের কথা উঠলেই সে লাজবাব। তার কথা– বিয়ে কোন খেলো বিষয় নয় যে, মন চাইলো অমনি করে নিলাম। বিয়েতে চরম অনীহার পাশাপাশি সুচিন্তিত যুক্তিও আছে তার। তাই বড় চাকরী বা আর্থিক স্বচ্ছলতা না আসা পর্যন্ত বিয়ের কথা মুখে আনতেও নারাজ। এমনকি এক্ষেত্রে শিক্ষা এবং পুরুষত্বকে বিকিয়ে দিয়ে যৌতুকের হলাহলে পা দেয়ারও সে ঘোরবিরোধী!(চলবে)
আগের পর্ব এখানে
বিষয়: বিবিধ
৯৫৭ বার পঠিত, ১১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
A PHP Error was encountered
Severity: Notice
Message: Undefined offset: 9368
Filename: views/blogdetailpage.php
Line Number: 764
ওয়াও সুন্দর কথা বলেছেন। অনেক ধন্যবাদ
মন্তব্য করতে লগইন করুন