অন্তর্যামীই ভালো জানেন...!!
লিখেছেন লিখেছেন সন্ধাতারা ২২ মার্চ, ২০১৫, ০৭:৫০:৪৬ সন্ধ্যা
পার্থিব দৃষ্টি যেখানে অন্ধ, অন্তর্দৃষ্টি সেখানে চক্ষুষ্মান। যে অদৃশ্য গোপনের খোঁজ শুধুমাত্র একজনই রাখেন তিনি আমার অন্তর্যামী। নির্জনে জান্নাতী স্বপ্নে বিভোর সুপ্ত মনের তীব্র বাসনা থেকে সেখানে জন্ম নেয় প্রবহমান একজন মানুষের সুন্দর থেকে সুন্দরতরের দিকে অভিযাত্রা। যার জীবনের মূল আকর্ষণ প্রভূ ভাবনা এবং তাঁর সন্তুষ্টি অর্জন। তার জীবন-জীবিকা, চিন্তা-চেতনা ও সাধ্য-সাধনার স্রোতে মিশে থাকে অব্যক্ত অনুভূতি সারাবান তহুরার প্রস্রবণ। এই আত্মোপলব্ধি যে কী আনন্দের আর উপভোগের তা কালির আঁচড়ে ফুটিয়ে তোলা সম্ভব নয়!
এই অপরিসীম ভালোলাগার বোধোদয় সৃষ্টি হয়েছিল আমি যখন একাকীত্বকে সম্বল করে আমার মালিকের দিকে নিঃশর্ত প্রত্যাবর্তন করেছিলাম। একান্ত নির্জন নিরালায় পার্থিব জীবনের ব্যস্ততা, দুঃখ তাপ, হাসি আনন্দকে দূরে ঠেলে দিলের মধ্যে গেঁথে রেখেছিলাম শুধুমাত্র প্রভূ দর্শনের মোহমায়া। ভাবাবেগের অতল সমূদ্রে কতটা মুহূর্ত কেটেছে আমি জানিনা। তবে শীতল প্রাণ জানিয়ে দিয়েছিলো সেই প্রাপ্তির অমূল্য স্বাদ!
মানুষের ভীড়ে বেড়ে উঠা আমি হঠাৎ একসময় প্রভূর দয়ায় নির্জনতায় বসবাসের সৌভাগ্য জোটে আমার ললাটে। পাঁচটি বছর কেটেছে এমনিভাবে গভীর নিমগ্নতায়। প্রাথমিকভাবে যদিও এই পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছিলো আমার ইচ্ছায় নয় সম্পূর্ণ প্রভূর দয়ায়। সপ্তাহে তিন দিন ৩৬ ঘণ্টার ফুল টাইম জব করা আর বাকী চারদিন নিজের ভূবণে একাগ্রতায় ডুবে থাকা। এটাই ছিল আমার সাধনাময় জগতের শান্তিপূর্ণ জীবন।
মাঝে মাঝে জীবন জীবিকার তাগিদে বাসার বাহিরে যেতে হতো। মিশতে হতো শুভাকাঙ্ক্ষীদের সাথে। কিন্তু মন তা মেনে নিতে অনীহা প্রকাশ করতো। কিছুতেই মন শান্তি খুঁজে পেতো না এসব পারিবারিক পরিবেশে। পরবর্তীতে সহপাঠী ও শুভাকাঙ্ক্ষীদেরকে এড়িয়ে চলার চেষ্টা করেছি অনেকটা সঙ্গত কারণেই। তাদের সান্নিধ্যে গেলে প্রসঙ্গক্রমে পরচর্চা পরনিন্দার বিষয়গুলি চলে আসতো যা আমার ভীষণ অসহ্য লাগতো। এরপর অনেক অপবাদ সয়েছি। আমি একজন পাগল মহিলা এমন কথাও শুনেছি। কিন্তু তাতে আমার পরমানন্দ হতো।
আমার মোহ, চিন্তা, সাধ, একাগ্রতা এবং সাধনা তখন এতটা প্রবল ছিল যে তাদের অভিযোগগুলো শুনতেও আমার ভালো বোধ হতো না। কেবল মালিকের কাছে আমার প্রাণের সকল দুঃখ-বেদনা, আশা-আকাঙ্ক্ষার কথা উজাড় করে বলতাম। সে যে কী এক অভিভূত করা অনুভূতি ভুক্তভোগী এবং অনুরাগী মাত্রই জানেন। যা ছিল আমার জীবনের সত্যিই কল্পনাতীত, অচিন্তনীয় এবং অবিশ্বাস্য মূহূর্ত। প্রতিদিন তরজমাসহ কোরআন তেলোওয়াত করা, হাদিসের বই পাঠ করা, সপ্তাহে অন্তত দু’দিন রোযা রাখার পাশাপাশি কোন কোন দিন এক শত রাকায়াত নফল নামায আদায় করা হতো আলহামদুলিল্লাহ্।
তাছাড়া আমার অনেক দিনের পুরানো অভ্যাস যতটা সম্ভব সারাদিন জিকিরের মধ্যে থাকা। সেটা গৃহে, ভ্রমণে এবং কর্মস্থলে যেখানেই হোক না কেন। একদিন অনুভব করলাম আমার ক্বলব জিকির করছে আর আমি তা শুনতে পাচ্ছি। এভাবে ক্রমেই আমার অন্যান্য অঙ্গগুলোও জিকির করা শুরু করে দিলো। প্রায় প্রতিদিন সেই জিকিরের আওয়াজ আমি শুনতে পাই স্পষ্টভাবে আলহামদুলিল্লাহ্।
এরূপ ছোট ছোট অনেক অবিশ্বাস্য ঘটনা ঘটতে লাগলো আমার প্রাত্যহিক জীবনে। আমি জানিনা এর সঠিক পরিণাম বা পরিণতি। মাঝে মাঝে মনে হয় এসব ভ্রান্ত অলীক কিছু, আবার কখনো ভাবি পরীক্ষামূলক অন্য কিছু!!
নিজের অভিজ্ঞতার আলোকে এই আত্মোপলব্ধিমূলক লিখাটি আওণ রাহ’বারের ১৭ই মার্চ এর পোষ্টটি পঠন শেষে লিখতে অনুপ্রাণিত হয়েছি আলহামদুলিল্লাহ্। যদিও ইতিপূর্বে আমার মনে হয়েছিল বিষয়গুলো একান্তই আমার হৃদয়ে প্রচ্ছন্নভাবে গচ্ছিত থাকাই অধিকতর শ্রেয়। প্রভূর ভালোবাসায় আমার হৃদয়াবেগের বিপুল ভাব সৃষ্টির ক্ষেত্রে এর শুভত্ব কিংবা অশুভত্ব একমাত্র আমার অন্তর্যামীই ভালো জানেন!!
বিষয়: বিবিধ
১৫২৬ বার পঠিত, ৩৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মাশাআল্লাহ্! আপনার উৎসাহব্যঞ্জক ও উদ্দীপ্তময় প্রথম উপস্থিতি ভীষণ মুগ্ধ করলো।
জাজাকাল্লাহু খাইর।
তাছাড়া আমার অনেক দিনের পুরানো অভ্যাস যতটা সম্ভব সারাদিন জিকিরের মধ্যে থাকা। সেটা গৃহে, ভ্রমণে এবং কর্মস্থলে যেখানেই হোক না কেন। একদিন অনুভব করলাম আমার ক্বলব জিকির করছে আর আমি তা শুনতে পাচ্ছি। এভাবে ক্রমেই আমার অন্যান্য অঙ্গগুলোও জিকির করা শুরু করে দিলো। প্রায় প্রতিদিন সেই জিকিরের আওয়াজ আমি শুনতে পাই স্পষ্টভাবে আলহামদুলিল্লাহ্।
জাজাকাল্লাহ খায়রান। আমি এত আমল কখনই করিনি। যা করি টুকটাক কিন্তু আল্লাহকে ভয় পাই আর তাকে অনেক ভালবাসি। আর সামান্য পাথেয়কে নিয়ে প্রতিদান চাই বেশী কারন আমার আল্লাহ এরকমই। তিনি অতি অল্প ইবাদতেও বড় বরকত দিতে পারেন। আর যারা অনেক বড় মাপের তারা তো আল্লাহর থেকে পাবে অনেক বেশী। সবকিছু ছাপিয়ে আল্লাহর ক্ষমা,রহমত প্রাপ্ত হওয়াই আসল সফলতা। আল্লাহ যেন আমাদের আমলের দিকে না তাকিয়ে সামান্য এসব চেষ্টার দিকে তাকান এবং বিশাল পুরষ্কার দেন
আল্লাহ্ যদি রহমত এবং বরকত দান করেন তাহলে অল্প ইবাদতেই আশাতীত ফল পাওয়া যাবে ইনশআল্লাহ্। যথার্থই বলেছেন।
বোনের জন্য বেশী বেশী দোয়ার দরখাস্ত রইলো।
অন্তরস্পর্শী দোয়া ও মন্তব্যের জন্য
জাজাকাল্লাহু খাইর।
আপনি ভুলে যান কেন, আল্লাহর রাসূলও পাগল বলে অনেক গালি শুনেছেন! আপনি যা করেছেন ঠিক করেছেন। আমাদের দাওয়াতী কাজ অবশ্যই করতে হবে, কিন্তু তা করতে গিয়ে যদি নিজের আমল আখলাক হালকা হতে থাকে, তাহলে সে পথে না যাওয়াই ভাল। তবে যখন মনে আপনার ইমান অনেক দৃঢ় হয়েছে, তখন আবার তাঁদের কাছে, তাঁদের দ্বীনের দাওয়াত দেওয়া অবশ্য কর্তব্য।
শেখ সাদী যথার্থই বলেছেন, 'সৎ সঙ্গে স্বর্গবাস, অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ'। অতএব আপনি যা করেছেন ভালই করেছেন। কেননা সংগ মিশতে গিয়ে যদি সংগ দোষে পেয়ে বসে, তাহলে মিশার চাইতে নিজের ইমানের দৃঢ়তা রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়ে।
আপনি আপনার স্বাভাবিক ইবাদত চালিয়ে যান, আপনাকে দেখে/শুনে নিশ্চয় অনেকে আপনার অনুকরণ করার চেষ্টা করবে।
আমি ছোটবেলা থেকেই রোজা রাখায় অভ্যস্ত হলেও ভীষণ কষ্ট হত, হাজার বার বলতাম, মা, আমার খুব ক্ষুধা লাগছে। কিছুদিন আগ থেকে একটা বিশেষ কারণে প্রতিদিন রোজা রাখতে শুরু করি, দেখি আমার একদম কষ্ট হচ্ছে না। সবাই জিজ্ঞেস করে কি জন্যো রোজা রাখি, আর পারি কেমন করে, আমাকে দেখে বিস্ময় বোধ করে। মজার ব্যপার হল, কয়েক দিন পরেই এক ভাই বলে, সালাউদ্দিন, ভোর রাতে আমাকে ডেকে দিও, আমিও রাখব, তবে কারো কাছে বলবানা, আমিও জানাতে চাইনি , কিন্তু ধরা পড়ে গেছি। তাই বলছি, আপনি আপনার স্বাভাবিক ইবাদত চালিয়ে যান, আপনাকে দেখে অনেকে প্রেরণা খুঁজে পাবে।
আপনি আমার ফেসবুক ঘুরে এসেছেন, এটাও দেখেছেন নিশ্চয়, 'হজরত আবু হুরায়রা প্রতিদিন বারহাজার বার তাসবীহ পাঠ করতেন! তারপরেও কি বুঝতে সমস্যা বা জানতে সমস্যা হবে?
আর নয়, দীর্ঘকায় কমেন্টে বিরক্তি আসলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
মহান রাব্বুল আলামিন সকলের পবিত্র ও সুন্দর আকাঙ্ক্ষাগুলো পূর্ণ করার তাওফিক দিন। আমীন।
ক্ষমা কেন!! অনেক অনেক কৃতজ্ঞতা।
মহান রাব্বুল আলামীনের দরবারে আপনার জন্য প্রাণভরা দোয়া ও শুভকামনা রইলো।
ভালো থাকবেন খুব ভালো সবসময়।
মাশা-আল্লাহ, খালাম্মুনি আপনি তো দেখছি আখিরাতের কাজে অনেক অগ্রগামী। আল্লাহ তায়ালা আপনাকে আরো বেশি অগ্রগামী হওয়ার তাওফীক দান করুক। তবে খালাম্মুনি একটি অনুরোধ করবো, ইবাদতের বিষয়গুলো গোপন রাখাই ভাল। আল্লাহ তায়ালা এই ইবাদতের বদলা যদি দুনিয়াতে দিয়ে আখিরাতে শূন্য করে দেয়, তখনতো উপায় থাকবে না খালাম্মুনি। আমি তো সবসময় এই ভয় করি যে, আমার সামান্য ইবাদাত যা করছি একে তো ত্রুটিমুক্ত নয়, দ্বিতীয়ত কবুল হচ্ছে কিনা তাও শিউর নই, কিন্তু অন্যায় বা গুনাহ যে গুলো আমার দ্বারা হচ্ছে তা তো ১০০% গ্যারান্টি যে গুনাহ হচ্ছে অন্যায় হচ্ছে। এজন্য আমি অনেক অনেক আগের গুনাহর জন্য এখনো খুব ভয় করি। তাওবা করেছি, কিন্তু মাফ হয়েছে কি না তাতো জানি না। প্লিজ খালাম্মুনি দুঃখ পেলে মাফ করবেন। আপনার দুনিয়া ও আখিরাতের মঙ্গল কামনা করছি। জাযাকিল্লাহু খাইরান।
আপনার সাথে আমিও একমত আর এটাও খুব ভালো করে বুঝতে পেরেছি আমি কী মহৎ উদ্দেশ্যে এসব বলেছেন। আমিও জানি সেই উদ্দ্যেশ্যে আমার আমলকে অন্যের সম্মুখে জাহির করা বা হালকা করার উদ্দ্যেশ্যে নয় বরং অন্য রকম নিয়্যতে এই লিখাটির অবতারণা। যা আমার মহামহিম অন্তর্যামীই শুধু জানেন!!
আমার জন্য দোয়া করবেন।
আজকে কী আপনার ছুটি ছিল?
জান্নাতমণি কেমন আছে?
"আজছে ছোট কাল বড় হব ঠিক
দ্বীনের আলো মোরা গড়বো চতুর্দিক।"
এটি রনাঙ্গণ শিল্পী গোষ্ঠীর একটি গানের কলি, আমার খুব আনন্দ লাগলো, জান্নাতের জন্য দোয়া করবেন। আল্লাহ হাফেজ। এখক ঘুমাবো।
আল্লাহ্ পাক জান্নাতি পাখীকে সর্বাবস্থায় ভালো রাখুন।
ভালো থাকবেন খুব ভালো সবসময়।
অনেক অনেক শুকরিয়া।
জাজাকাল্লাহু খাইর।
খোদার প্রেমের শরাব পিয়ে
বেহুঁশ হয়ে রই পড়ে
ছেড়ে মসজিদ আমার মুর্শিদ
এল যে এই পথ ধরে।।
দুনিয়াদারীর শেষে আমার
নামাজ রোজার বদলাতে
চাই না বেহেশত খোদার কাছে
নিত্য মোনাজার করে ।।
কায়েস যেমন লায়লী লাগি
লভিল মজনু খেতাব,
যেমনি ফরহাদ শিরীর প্রেমে
হল দিওয়ানা বেতাব,
বে-খুদীতে মশগুল আমি
তেমনি মোর খোদার তরে।।
পুড়ে মরার ভয় না রাখে
পতঙ্গ আগুনে ধায়,
সিন্ধুতে মেটে না তৃষ্ণা
চাতক বারি বিন্দু চায়,
চকোর চাহে চাঁদের সুধা,
চাঁদ সে আসমানে কোথায়
সুরুয থাকে কোন্ সুদূরে
সূর্যমুখী তারেই চায়,
তেমনি আমি চাহি খোদায়,
চাহিনা হিসাব ক’রে।।
জাযাকিল্লাহু খাইরান ফিদ্দুনিয়া ওয়াল আখিরাহ।
আপনার মূল্যবান মতামত ও উপদেশ স্মরণে রাখবো ইনশআল্লাহ্।
বোনের জন্য প্রাণভরে দোয়া করবেন যেন ঈমানের সাথে শহীদি মৃত্যুকে বরণ করতে পারি।
নজরুল ইসলামের লিখা অতি প্রিয় গজলটি মনে করিয়ে দেয়ার জন্য জাজাকাল্লাহু খাইর।
বোনের জন্য বেশী বেশী করে দোয়া করবেন।
ভালো থাকবেন খুব ভালো সবসময়।
অনেক অনেক শুকরিয়া।
জাজাকাল্লাহু খাইর।
আপু ।
আপু আমি তো কিছুই করিনা আপনার তুলনায় কি নিয়ে যাব আল্লাহর দরবারে আল্লাহ যদি আমাকে অনুগ্রহ না আমার কোন উপায় নাই । আপু আমার জন্য বেশী করে দুয়া করবেন আমি যেন আপনার মত ইবাদত করতে পারি ।
পাপী তাপী আপুর জন্যেও তুমি বেশী বেশী করে দোয়া করবে।
ভালো থাকবেন খুব ভালো সবসময়।
অনেক অনেক শুকরিয়া।
জাজাকাল্লাহু খাইর।
জাজাকাল্লাহু খাইর।
কেমন আছো?
তোমার জন্য প্রাণভরা দোয়া ও অনিঃশেষ শুভকামনা রইলো।
আমার জন্য দোয়া করিও।
তুমি কি তার খোঁজ রেখেছো একটিবারের জন্য...!!
অবশ্যই দোয়া করবো আপু!! এইটুকুই তো করতে পারি আর বেশী কিছু নয়।
জাজাকাল্লাহু খাইর।
ভালো থাকুন আপনার জন্য অনিঃশেষ দোয়া রইলো।
ভালো থাকুন আপনার জন্য অনিঃশেষ দোয়া রইলো।
মন্তব্য করতে লগইন করুন