ধারাবাহিক গল্পঃ সরকারী খরচে বিয়ে!! (সপ্তম পর্ব)
লিখেছেন লিখেছেন আবু জারীর ২২ মার্চ, ২০১৫, ০৭:৩৭:২২ সন্ধ্যা
ধারাবাহিক গল্পঃ সরকারী খরচে বিয়ে!! (সপ্তম পর্ব)
পূর্ব সূত্রঃ ঠিক আছে মা, আমি এখনই রওয়ানা হয়ে যাচ্ছি। প্রথমে গিয়ে ওদের প্ল্যান প্রগ্রাম জেনে কিছু কাজ করে আসি। অনুষ্ঠান যেহেতু শুক্রবার তাই বুধবার এসে আপনাদের নিয়ে যাব। আর আমি না আসতে পারলে আপনি সাদিয়াকে নিয়ে চলে আসবেন। আমি ফোন করে আপনাদের জানিয়ে দিব, কি করতে হবে।
সাদী যথারীতি শায়লাদের বাসায় গিয়ে হাজির। ওরা এখন আর আগের মত ধানমণ্ডির কোন আলিশান বাড়িতে থাকেনা। থাকে আজিমপুরে, ইন কমপ্লিট দোতলা বাড়ির একটা ফ্লাটে! কলিং বেল টিপতেই ভিতর থেকে দরজা খুলে গেল। মা-মেয়ে একত্রে সাদীর মুখমুখি! সালাম দিয়ে এক পলকেই সাদী দৃষ্ট নামিয়ে একান্ত অনুগত গোবেচারার মত দারিয়ে রইল। শায়লা আর তার মা যে, কতক্ষণ এক দৃষ্টিতে সাদীর দিকে তাকিয়ে ছিল তা বলতে পারবেনা। সম্বিৎ ফিরল ভিতর থেকে জামান সাহেবের ডাক শুনে।
জামান সাহেবের রুমে গিয়ে সাদীর তো চক্ষু চড়ক গাছ! এই কি সেই জামান সাহেব? যার দাপটে এক সময় ঢাকা শহরের মাস্তান, গুণ্ডা, ষণ্ডারা তটস্ত থাকত? আজ তার এ কি হাল? শার্ট, প্যান্ট, স্যুট, বুট, টাইয়ে কেতাদুরস্ত জামান সাহেব আজ অতিশয় দূর্বল এক মধ্য বয়ষ্ক লোক! আল্লাহ মানুষকে যে কোথা থেকে কোথায় নিয়ে যেতে পারে তা কল্পনারও অতীত।
- বাবা, আমাকে ক্ষমা করে দাও, আমি আসলে সেদিন সত্য মিথ্যার পার্থক্য বুঝিনি।
- না স্যার, কি যে বলেন? আসলে ভুলটা আমারই হয়েছে। আপনিতো আপনার কর্তব্য পালন করেছেন। সেদিন বরং আপনিই আমার প্রতি অনুগ্রহ করেছিলেন কিন্তু আমি তা বুঝতে পারিনি।
- স্যার বলে লজ্জা দিচ্ছ কেন? আমি কি আর এখন সরকারী দায়িত্বে আছি? তোমাকে আমি ছেলের মতই মনে করি, তোমার আন্টিকেতো তুমি খালাম্মা বলে সম্ভধোন করতে, আপত্তি না থাকলে আমাকে খালু বলতে পার। ঠিক আছে খালুজান, আপনি আমার বাবার সমতুল্য। গত দুই বছর পূর্বে বাবাকে হারিয়েছি। বাবার স্মৃতি যখন ভুলতে বসেছি তখন আপনাকে দেখে বাবার কথা বেশ মনে পরছে।
- থাক বাবা দুঃখ করে লাভ নাই, যে যাওয়ার সে চলে গেছে, তার জন্য সব সময় দুয়া করবা। হ্যারে বাবা, তোমার মা আর সাদিয়া কোথায়? তাদের নিয়ে আস নি?
- না, ওদের আনিনি, তবে এখানকার প্ল্যান প্রগ্রাম দেখে, কিছুটা কাজ এগিয়ে রেখে তার পর গিয়ে ওদের নিয়ে আসব ইনশা’আল্লাহ।
- না বাবা, তুমি কাজটা ঠিক করনি। আপা আর সাদিয়াকে নিয়ে আসলেই বরং ভালো হত। এক কাজ কর, ওনাদেরকে কাল সকালেই রওয়ানা দিয়ে চলে আসতে বল। আপাকে পেলে আমার কাজ কিছুটা হালকা হবে। তাছারা তুমিতো জানোই, আমার জন্ম শহরে, সারা জীবন শহরেই কাটিয়েছি তাই গ্রামের মানুষদের সাথে কেমন করে ডিল করতে হয় তা বুঝে উঠতে পারিনি। তাছারা তোমাদের বাড়ি মাদারীপুর আর বরের বাড়ি গোপালগঞ্জ, সে ক্ষেত্রে তোমাদের কালচার আর তাদের কালচার কাছাকাছিই হবে। তাই আপাকে পেলে আমার কোন চিন্তা থাকবেনা। আর শায়লার সময়ও সাদিয়ার সাথে ভালই কাটবে। মেয়েটাও আমার বেশ টেনশানে আছে। তোমাকে পেয়ে অবশ্য নেতিয়ে পরা আমরা বেশ চাঙ্গা হয়ে উঠেছি।
- আচ্ছা মা, আপনি যেমন হুকুম করবেন তেমনই হবে।
কোন ছেলের মুখে মিসেস জামান এই প্রথম মা ডাক শুনল। তার অন্তরটা ভরে গেল। আহা কি মধুর ডাক! শহরের ছেলে মেয়েরা কিযে কালচার শিখেছে? মাম্মি, ড্যাডি হাবি জাবি। মা ডাকে যেমন মনটা ভরে যায় অন্য ডাকে তেমনটা হয়না।
(চলবে)
বিষয়: সাহিত্য
১৫২১ বার পঠিত, ২২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ধন্যবাদ মু.।।। ভাই।
মিসেস জামান এই প্রথম মা ডাক শুনল। তার অন্তরটা ভরে গেল। আহা কি মধুর ডাক! শহরের ছেলে মেয়েরা কিযে কালচার শিখেছে? মাম্মি, ড্যাডি হাবি জাবি। মা ডাকে যেমন মনটা ভরে যায় অন্য ডাকে তেমনটা হয়না।
সুন্দর বলেছেন।
আপনার সন্তানেরাও আপনাকে সেই ভাবে ডাকুক যাতে আপনার অন্তর জুড়ায়।
ধন্যবাদ।
সত্যি তাই। মা ডাকে কত্তো মধু থাকে, কথিত আধুনিক বলদাগুলো জানবে কেমন করে।
আমার মায়ের আমার জন্য খুব টেনশন হয়য়, তাই বলে দিয়েছে, প্রতিদিন একবারের জন্যো হলেও যেন মা কে মা বলে ডাকি। আলহামদুলিল্লাহ্ আমি তাই করি। কিন্তু একদিনের জন্য জন্যও যদি মা বলতে ভুলে যাই, আমার অনুশোচনা আর মায়ের কষ্টের সীমা থাকবে না।
ধন্যবাদ চালিয়ে যান। সঙ্গেই আছি।
সুন্দর মতামত সহ সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।
তোমারটা কিন্তু আমার দুলাভাইর সাথে হবে সে ব্যাপারে কারো সাথে আপশ নাই।
আমি একটু এমনই, তবে বাকিরা কিন্তু মুরুব্বি। মুরুব্বি আর গুরুগম্ভীর ভাবটা আমার বিরক্তি লাগে অবশ্য এজন্য বৌ বাচ্চাদের দুকথাও মাঝে মধ্যে শুনতে হয়।
ধন্যবাদ বোন, সুখি হও সারাজীবন দুধ-ভাত খাও।
আপনি আগ্রহী পাঠক বলে ছোট লেখা পড়া শুরু করার আগেই শেষ হয়ে যায়।
ধন্যবাদ আহমদ মুসা ভাই।
চলছে চলবে ইনশা'আল্লাহ।
সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।
গোপালগন্জের গোপালের সাথে হচ্ছে কি ভাই বিয়া
নেক্সট পর্বে তাড়াতাড়ি জানতে হবে গিয়া।
ধন্যবাদ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন