প্রথম বসন্তদিনে-শিমুল পলাশের প্রাণে
লিখেছেন লিখেছেন সন্ধাতারা ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৫, ০৬:৫৬:০৩ সন্ধ্যা
শান্ত, ভদ্র ও বিনয়ী স্বভাবের মেধাবী শিহাব বুয়েট থেকে অনন্য কৃতিত্বের সাথে অধ্যয়নশেষে ভালো একটি চাকুরীতে দেড় বছর পূর্বে পদার্পণ করেছে। চাকুরী প্রাপ্তির পর মায়ের পছন্দ ও অনুরোধে সে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছে। বাসর রাতে শিহাব তুলিকে তার জীবনের সফলতা ও ব্যর্থতার কথা শুনিয়েছিল। সে বলেছিল আমার জীবনে সবচেয়ে বড় চাওয়া তা হল সৃষ্টিকর্তা ও আমার মায়ের সন্তুষ্টি অর্জন করা। সদা যেন দেখি আমার মায়ের আনন্দমাখা মুখ। আমার মা খুশী থাকলেই আমি মহা সুখী। তোমার কাছে আমার আর কোন চাওয়া পাওয়া নেই। সবকিছু শুনে তুলি সানন্দে মাথা নেড়ে সায় দিয়েছিল সেদিন। হৃদয়ের সবটুকু মমতা ঢেলে মনের মত করে তুলি সাজিয়েছিল শ্বাশুরী আর স্বামীকে নিয়ে তার ছোট সুখের সংসার। তার হাতের যাদুর ছোঁয়ার বিচ্ছুরিত রোশনী ফুটে উঠেছিল শুনশান বিরান ঘরে চাঁদের আলোর মত। শান্তিতে ভরা শিহাবের জীবন আজ যেন আপন আলয়ে অনন্ত স্বর্গীয় সুধা। শান্তি সুনিবিড় এই ভালোবাসার ছায়াতলে গভীর মনে সে পরম কৃতজ্ঞতায় স্মরণ করে মহান রাব্বুল আলামীনকে। যিনি অসীম অনুগ্রহে এমন পরিপূর্ণ জীবন তাকে দান করেছেন আলহামদুলিল্লাহ্।
প্রতিদিনের মত ভোরের মধুর আযানের সাথে সাথে শিহাব ও তুলি বিছানা ছেড়ে উঠে ফজরের নামায আদায় করার জন্য। মসজিদে নামাযশেষে বাসায় ফিরে আবার বিছানায় শুয়ে অতীতের অনেক সুখ দুঃখের স্মৃতি রোমন্থন করে এবং অনাগত সন্তানের আলোকিত ভবিষ্যতের স্বপ্নে বিভোর হয়ে উঠে দু’জনে। হঠাৎ এক বিকট শব্দে থমকে যায় তারা। এতক্ষণে শুরু হয়ে যায় চিৎকার চেঁচামিচি। শিহাব বাহিরে বের হওয়ার আগেই দরজা ভেঙ্গে ঘরে প্রবেশ করে সাদা পোশাকধারীরা। কোন কথা বলার সুযোগ না দিয়েই তুলে নিয়ে যায় তাকে। তার স্ত্রী তাদের আসার কারণ জিজ্ঞাসা করলে এবং শিহাবকে ছেড়ে দেয়ার জন্য করুণভাবে কাকুতি মিনতি জানালে চুলের মুঠি ধরে নীচে ফেলে দেয়। ভয়ংকর মূর্তি ধারণ করে অকথ্য ভাষায় শিবিরের সন্ত্রাসী স্ত্রী বলে গালাগাল করতে থাকে এবং সজোরে লাথি মারতে থাকে তুলির পেটে ও বুকে। এহেন অসহায় অবস্থায় পাগলের মত কাঁদতে থাকে তুলি। কান্নার শব্দে তার শাশুড়িমা হম্ভদম্ভ হয়ে ছুটে আসে। ততক্ষনে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে তুলি।
ঘটনার আকস্মিকতায় আহাজারি করতে থাকে শিহাবের মা। ছুটে আসে প্রতিবেশী। চারিদিকে স্বজনদের শুরু হয় ছুটাছুটি শিহাবের সন্ধানে। কেউবা ব্যস্ত হয়ে পড়ে তুলির সেবায়। অবশেষে অনেক সাধ্য সাধনার পর সন্ধান মেলে শিহাবের কিন্তু একটাই শর্ত চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে আট লাখ টাকা নিয়ে তাদের নির্ধারিত স্থানে যথাসময়ে হাজির হতে হবে। উদ্ভ্রান্তের ন্যায় টাকা সংগ্রহের সব চেষ্টা করে আপনজনেরা। কিন্তু এতো অল্প সময়ে এতো বড় অঙ্কের টাকা কোনভাবেই যোগাড় করতে পারে না তারা। তুলির গহনা বন্ধক রেখে ও আত্মীয়ের কাছে লোন করে সর্বসাকুল্যে ছয় লাখ টাকা হাতে নিয়ে প্রাণপণে ছুটে যায় নির্ধারিত স্থানে। পুলিশের কাছে টাকার অঙ্ক বলার সাথে সাথে বাঘের মত গর্জন করে উঠে তারা। বলে এক টাকা কম দিলেও মেনে নেয়া হবে না। তাদের কথা শুনে শরীরের রক্ত যেন হিম হয়ে যাচ্ছিল স্বজনদের।
পরের দিন এক ছাত্র এসে খবর দেয় স্কুল যাওয়ার পথে রাস্তার খাদে সে শিহাবের রক্তমাখা দেহ দেখতে পেয়েছে। প্রতিবেশীরা লাশ নিয়ে এলো বাড়ীতে। ক্ষত বিক্ষত বীভৎস রক্তমাখা গোটা শরীর। লাশ দাফনের পর ভেতর থেকে রুমের দরজা বন্ধ করে দিয়ে একান্তে অবস্থান করে তুলি। শরীর মনে প্রচণ্ড ঝড় বয়ে যাচ্ছে তখন। আজ তাদের প্রথম বিবাহ বার্ষিকীর দিন। এই দিনটিকে ঘিরে শিহাবকে চমকে দেয়ার কত স্বপ্ন কত আয়োজন ছিল তার। এরই মধ্যে জীবনের এই প্রথম বসন্তদিনে শিমুল পলাশের লাল রঙে ভেসে যাচ্ছে তার নিম্নাঙ্গ। এতক্ষণে উষ্ণ গরমে বোধোদয় হল তার। টের পেলো তাদের অনাগত চাঁদমুখ শিমুল পলাশের লালে, লাল হয়ে প্রাণের বৈপ্লবিক স্পন্দনে গলিত রক্তের প্লাবনে ও তুলির আঁচড়ে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে বিদায় নিচ্ছে এ নিষ্ঠুর ধরণী থেকে।
তুলির দু’গণ্ড বেয়ে তখন শীতল অশ্রু গড়িয়ে যেতে থাকে এই ভেবে যে, আল্লাহ্পাক বলেছেন, “হে ঈমাদারগণ, আমি কি তোমাদেরকে এমন এক (লাভজনক) বাণিজ্যের সন্ধান দেবো যা তোমাদেরকে কঠিন শাস্তি হতে রক্ষা করবে। (সে ব্যবসাটি হচ্ছে), তোমরা আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের ওপর ঈমান আনবে এবং আল্লাহ্র পথে তোমাদের জান ও মাল দিয়ে সংগ্রাম করবে, এটিই তোমাদের জন্য শ্রেয় যদি তোমরা তা বুঝতে পারো। আল্লাহ্ তোমাদের গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেবেন এবং তোমাদের তিনি প্রবেশ করাবেন এমন এক (সুরম্য) জান্নাতে যার পাদদেশে ঝর্ণাধারা প্রবাহিত হবে, তিনি তোমাদের আরও প্রবেশ করাবেন জান্নাতের স্থায়ী উত্তম বাসগৃহে। আর এটাই হচ্ছে মহা সাফল্য (সূরা আস সাফঃ ১০ - ১২)।
বিষয়: বিবিধ
১৭১১ বার পঠিত, ২৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
যখন এই শা সাফল্যের কথা কারো মুখে শুনি বা পড়ি তখন খুব ভাল লাগে ইচ্ছে করে জান মাল সব বিলিয়ে দেই আল্লাহর পথে একটু পড়েই মালের জন্য মায়া লাগে আর মাল তো মাল ই ।
আপু উৎসাহমূলক গল্প ভাল হয়েছে । ধন্যবাদ আপু ।
ছোট্টমণি হয়ে যুগে যুগে বেঁচে থাকো বড় আপুর মনের গহীনে একান্ত আদরিণী বোনটি হয়ে । ভালো থাক খুব ভালো সবসময়। দোয়া রইলো।
এই দেশে এখন কিছু অশিক্ষিত অমানুষ এর রাজত্ব চলছে!
মূল্যবান উপস্থিতি ও অনুভূতি রেখে যাওয়ার জন্য বারাকাল্লাহু ফিক।
আচ্ছা যাই হোক অনেক ধন্যবাদ আপু। জান মাল তো আল্লাহরই দেওয়া, তাই তার পথে ব্যায় করতেও সমস্যা নেই। বিনিময়ে তিনি তো জান্নাত দিবেনই। জাযাকিল্লাহ খাইর।
মহান রাব্বুল আলামীন আপনিসহ আমাদের সকলকেই ক্ষমা করুণ এবং সর্বাবস্থায় ভালো রাখুন, সুস্থ রাখুন এবং দুনো জাহানের কামিয়াবী হাসিলের তৌফিক দিন এই প্রার্থনা রইলো।
আপনিই যে অনেক বড় মনের একজন মানুষ তা আপনার মন্তব্য থেকে সহজেই আঁচ করতে পারি। পরম করুণাময় আপনাকে দীর্ঘায়ু ও সুস্থতা দান করে সকলের সেবা করার তৌফিক দিন। আমীন।
অনেক ভাল লাগল, প্রিয় আপুর হৃদয় বিদারক এ গল্পটি। এতো গল্প নয়, কল্পকাহীনিও নয়,বাংলাদেশের প্রতিদিনের প্রতিমুহুর্তের বাস্তব চিত্র।
'ওরা চায় আল্লাহর নুরকে মুখের ফুৎকারে নির্ভাপিত করতে, অথচ আল্লাহ তা প্রজ্জলিত করবেনই। অস্বীকারকারীগণ এটিকে যতোই অপন্দ করুক।'..আল কুরআন
ওরা জানেনা, ঈমানদারের জন্য সংসার কার্য যেমনি প্রশান্তির,ব্যবসা-বানিজ্যও তেমনি সস্তিদায়ক, দাওয়াতের কাজ তার চেয়েও পরিতৃপ্তির। আর বাধা-বিপত্তি একেবারেই স্বভাবিক পরিণতি। জেল, জুলম, নিপীড়ত, সম্পদহানী নিতান্তই মামুলি ব্যাপার। মৃত্যু সেতো প্রেমময় রাব্বুল আলামিনের সান্নিধ্য লাভের তীব্র আকাংখা।
সুতরাং কোন অবস্থাতেই মুমিনের পরাজয় নেই। বরং মুমিনের শত্রুরা সর্বাবস্থায় ভীত ও পরাজিত।
ওরা মুখের ফুঁৎকারেই আল্লাহ্র আলো নিভিয়ে দিতে চায় অথচ আল্লাহ্ তাঁর আলোকে পরিপূর্ণরূপে উদ্ভাসিত করতে চান, যদিও তা কাফেরদের কাছে অপছন্দনীয় (সূরা আস সাফঃ 8)।
হে ঈমাদারগণ, আমি কি তোমাদেরকে এমন এক (লাভজনক) বাণিজ্যের সন্ধান দেবো যা তোমাদেরকে কঠিন শাস্তি হতে রক্ষা করবে (সূরা আস সাফঃ ১০)।
আর তা এই যে (সে ব্যবসাটি হচ্ছে), তোমরা আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের ওপর ঈমান আনবে এবং আল্লাহ্র পথে তোমাদের জান ও মাল দিয়ে সংগ্রাম ক্রবে, এটিই তোমাদের জন্য শ্রেয় যদি তোমরা তা বুঝতে পারো (সূরা আস সাফঃ ১১)।
আল্লাহ্ তোমাদের গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেবেন এবং তোমাদের তিনি প্রবেশ করাবেন এমন এক (সুরম্য) জান্নাতে যার পাদদেশে ঝর্ণাধারা প্রবাহিত হবে, তিনি তোমাদের আরও প্রবেশ করাবেন জান্নাতের স্থায়ী উত্তম বাসগৃহে। আর এটাই হচ্ছে মহা সাফল্য (সূরা আস সাফঃ ১২)।
মহান রাব্বুল আলামীন আপনিসহ আমাদের সকলকেই ক্ষমা করুণ এবং সর্বাবস্থায় ভালো রাখুন, সুস্থ রাখুন এবং দুনো জাহানের কামিয়াবী হাসিলের তৌফিক দিন এই প্রার্থনা রইলো।
যাই হোক, সান্ত্বনার কথা এবং চুড়ান্ত প্রাপ্তির কথা। কিন্তু স্বামী বিয়োগ বেদনা তুলি কি পারবে সইতে? বিয়ের প্রথম সময়টা সম্ভবত স্বামী স্ত্রী দুজন দুজনাকে ছেড়ে পলকের জন্যও আড়াল হতে পারে না, তুলি কেমন করে সইবে!
সান্ত্বনাও যে কম নয়। কজনার সৌভাগ্য হয় আল্লাহর কাছে শহীদের স্ত্রী হিসেবে যথাযোগ্য মর্যাদা পাবার।
অনেক সুন্দর ফুটিয়ে তুলেছেন। গল্প নয় যেন চরম বাস্তবতা। খুবি খুবি খুবি প্রাসঙ্গিক একটা লিখা। আল্লাহ আপনার লিখার মাধুর্যতায় বরকত দিন।
ভালো থাকুন খুব ভালো সবসময়। দোয়া রইলো।
আপনার সুন্দর দোয়ায় আমীন।
অনুভূতি রেখে যাওয়ার জন্য জাজাকাল্লাহু খাইর।
সমস্যা হল, এদের বিকল্প হয়ে যারা এদের প্রতিস্থাপন করবে, তাদের অবস্থা এদের থেকে কত খানি ভাল?
যদি মানুষের চরিত্র পরিবর্তন না হয়, গদির পরিবর্তনে খুব বেশী লাভ হয় কি? আর বাঙ্গালী “সর্ট টার্ম মেমোরি লস” এর জাতি। আমরা খুব দ্রুত সব ভুলে যাই।
মন্তব্য করতে লগইন করুন