নীতুর কাছে লিখা চিঠি
লিখেছেন লিখেছেন সন্ধাতারা ২২ নভেম্বর, ২০১৪, ০৪:১৩:০৩ রাত
স্নেহের নীতু
আশাকরি দয়াময়ের অসীম কৃপায় ভালো আছো। প্রত্যাশাও তাই। আজ একটি অতি জরুরী বিষয়ে তোমার স্মরণাপন্ন হচ্ছি। এ কোন কল্প কাহিনী নয়, নয় কোন নাটক বা সিনেমার গল্প। আমার জীবন থেকে নেয়া একশত ভাগ সত্য কাহিনী। তোমাকে যখন এ চিঠিটি লিখছি তখন বাহিরে এবং ভিতরে কাল বৈশাখীর তাণ্ডব চলছে। আজ শ্রাবনের প্রথম দিনে অশান্ত ঝড় বাদলের প্রবল বর্ষণের প্রথম দিনটি ঠিক যেন আমার মনের আবহাওয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছে। তুমি শুধু আমার একজন সহপাঠীনিই ছিলে না নীতু, আমার কাছে তুমি ছিলে পরম পূজনীয় এক বিশ্বস্থ দরদী শুভাকাঙ্ক্ষী। জীবনে নানামুখী বিপদাপদের মুখামুখি দাঁড়িয়ে দুর্দিনের দুর্বিষহ সময়ের কঠিন বাস্তবতায় তুমিই বাড়িয়ে দিয়েছিলে শ্বান্তনা আর প্রসারিত করেছিলে ভালোবাসার অবারিত সীমাহীন সীমানা। তাইতো আজ আবারো সিদ্ধান্ত নিলাম আমার এ অসহ্য দহনের মাঝে তুমিই দিতে পারো সঠিক দিক নির্দেশনা এবং বেঁচে থাকার নতুন কোন অজানা আলোকিত পথ। যদিও বিষয়টি আমার জন্য অত্যন্ত দুর্বিষহ ও জটিল। ঘটে যাওয়া পরিস্থিতির ভার বহন করা এ মুহূর্তে আমার জন্য সত্যিই দুরূহ ও অসহনীয়। তাই এ লেখা!
আমার সমাজ সংসার, আত্মীয় স্বজন, বন্ধু-বান্ধব এবং সহপাঠী মহল সবাই জানে আমরা একটি আদর্শ সুখী দম্পতি। আমাদের বিবাহিত জীবন ছিল আলোয় আলোয় ভরা। যদিও জীবন নামক বন্ধুর বহুমুখী ছোট বড় বিপদাপদের মধ্যেই জীবনের সার্থকতা ভেবে নিতাম এবং সামনে চলার নতুন উদ্যম ও অর্থ খুঁজে পেতাম ভালোবাসার অসীম বন্ধনযুক্ত জীবনে। পেশাগত জীবনে তোমার আচরণ, বুদ্ধিমত্তা, সততা ও বিনয়ী আচরণে মুগ্ধ হয়ে আমার অভিনব বিবাহের কাহিনী একদিন তোমাকে শুনিয়েছিলাম। তুমি তন্ময় হয়ে সেদিন আমার কথাগুলো মন্ত্রমুগ্ধের ন্যায় শোষণ করছিলে। হ্যাঁ আজো স্পষ্ট মনে আছে, আমাকে বিয়ে করার জন্য সে অনেক পাগলামি করেছিলো। এক পর্যায়ে আমার পরিবার তাকে বাধ্য হয়ে পুলিশের সহায়তায় জেলে পাঠিয়েছিল। কিন্তু জেল থেকে বেড়িয়ে এসে তার ভালোবাসার উন্মত্ততা আরও ভয়ংকর রূপ নেয়, বৃদ্ধি পায় তার অভিনব পাগলামি। নিজের শরীর কেটে সেই রক্ত দিয়ে চিঠি লিখে জানিয়েছিল, আমাকে না পেলে সে আত্মহত্যা করবে। এক পর্যায়ে ভালোবাসার কাছে হার মেনে নিয়ে তাকে জীবনসঙ্গী হিসাবে বেছে নিই। তারপর আমাদের ঘর চাঁদের আলোয় ভরে উঠে দু’টি মায়াবী কন্যার উপস্থিতিতে। কন্যাদ্বয়ের লালন পালন, পেশাগত দায়িত্ব পালন বিবাহিত জীবনের পরিবেশমুখর উদ্যানে কেটে যাচ্ছিল জীবন। সোনামণিদের ভবিষ্যতের ভাবনায় আমি তখন ঢাকায় থাকতাম দু কন্যাকে নিয়ে আর আমার কর্তাবাবু গ্রামেই থাকতেন বেশী সময় তার বয়োবৃদ্ধ মা বাবার কাছে।
একদিন অফিস থেকে আমাকে জানানো হল তিন মাসের একটি স্বল্প মেয়াদী ট্রেনিং– এ আমাকে যুক্তরাজ্যে যেতে হবে খুব শীঘ্রই। উপায়ান্তর না দেখে আমার কর্তাকে আসতে বললাম ঢাকায় থাকার প্রস্তুতি নিয়ে। আমার বাড়ীওয়ালা খালুআব্বা ও খালাম্মা অত্যন্ত ধর্মভীরু ও পরহেজগার লোক। আমাকে নিজের মেয়ের মত স্নেহ করতেন। আর আমার মেয়ে দু’টি যেন তাঁদেরই আপন কলিজার মণি, অতি আদরের নাতনী। আমার সংবাদ শুনে তাঁরা দুজনেই আমাকে আশ্বস্থ করে বললেন কোনই অসুবিধা হবে না ইনশআল্লাহ। আমি যথারীতি ইউ-কের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলাম। প্রায়ই পরিবারের সাথে ফোনালাপ হতো।
আমার বড় মেয়ে সামিরা ক্লাস টেনের ছাত্রী। সে অনেক মেধাবী, সবাইকে চমকে দেয়ার মত ভালো রেজাল্ট করার দৃঢ় প্রত্যয়ে ছিল আপোষহীনা। সে অনেক নির্বাচিত শব্দের গাঁথুনিতে হৃদয়স্পর্শী কবিতা লিখতো। তার লিখা কবিতা পড়লে বিস্ময়াভিভূত হতাম আমি। মনে মনে স্বপ্নের প্রাসাদ গড়তাম এই ভেবে যে, সে একদিন বড় হয়ে নাম করা একজন লেখিকা হবে। আর ছোট মেয়ে সাবিহারও প্রতিযোগিতা ছিল বড় বোনের সাথে।
ট্রেনিং চলছিল। ট্রেনিং এর মাঝপথে হঠাৎ একদিন ফোন এলো। কণ্ঠটি অতি পরিচিত আমার শ্রদ্ধেয়া খালাম্মার। ফোন রিসিভ করেই উনার কণ্ঠ শুনে চমকে উঠলাম। তারপর খালাম্মার কাছে যা শুনলাম তাতে আমার হাত-পা অবশ হয়ে আসছিল। মনে হচ্ছিল আমার সামনে তামাম পৃথিবীটা ঘুরছে। খালাম্মার কাছে জানতে পারি, গত রাতে আমার বড় মেয়ে সামিরা টেবিলে বসে পড়ছিল, আর ছোট মেয়ে সাবিহা তখন ঘুমাচ্ছিল। হঠাৎ তার বাবা সামিরাকে এক গ্লাস দুধ হাতে দিয়ে খেতে বলে। তারপর এক পর্যায়ে তার আপন জন্মদাতা পিতা তাকে কু প্রস্তাব দিলে সে ভয়ে আতঙ্কে কেঁপে কেঁপে উঠে। উপায়ন্তর না দেখে সে বলে আমি আগে টয়লেটে যাবো। তার বাবা রাজী হয়ে যায়। টয়লেটে ঢুকে সে দরজা বন্ধ করে দিয়ে “দাদা” “দাদী” বলে চিৎকার করতে থাকে। খালাম্মা খালুআব্বা দুজনে নীচে নেমে আসলে সে ভিতর থেকে তাকে বাঁচানোর প্রাণান্তকর আকুতি জানায়। তাঁরা দুজনেই তাকে মায়ামমতায় নিরাপত্তা দেয়ার শক্তি ও সাহস যোগালে সে টয়লেটের দরজা খুলে দিয়ে তাঁদের রক্ষণাবেক্ষণে থাকে।
আমি ট্রেনিং অসমাপ্ত রেখেই দেশে ফিরে আসি। আমার মেয়ের মুখে সব কথা শুনে আমি স্তম্ভিত হয়ে যাই। আমার মেয়ে আমাকে পরিষ্কার করে জানিয়ে দেয়, আমাকে দু’জনের মধ্যে যে কোন একজনকে বেঁচে নিতে হবে। হয় মেয়ে, না হয় স্বামী। এই স্বামীকে নিয়ে ঘর করলে সে কোনদিনও আর আমার মুখ দেখবে না। কিন্তু ছোট মেয়ে তার বাবার ভক্ত। বাবা ছাড়া তার পৃথিবী অন্ধকার। এমতাবস্থায় আমার কী করণীয় কিছুই মাথায় কাজ করছে না! আশাকরি তুমি শীঘ্রই একটি সুন্দর গ্রহণযোগ্য সমাধানসহ এই জটিল পরিস্থিতির সঙ্কট নিরসনে তোমার চিরাচরিত সাহায্যের হাত আমার জন্য প্রসারিত করবে। যদিও আমি জানি আমার জীবনের চাঁদ চিরদিনের জন্য ঢেকে গেছে বৈশাখীর কালো মেঘে।
ইতি
তোমারই গুণমুগ্ধ
মিলা
বিঃ দ্রঃ- সুপ্রিয় বিজ্ঞ পাঠক সত্য এই বাস্তব ঘটনার মুখামুখি দাঁড়িয়ে আমার প্রাণপ্রিয় মেধাবী গুণী ও ধর্মভীরু এই শুভাকাঙ্ক্ষী বোনটির জন্য সহজ সমাধানে কী সদুপদেশ দিতে পারি আমার জানা নেই তাই আপনাদের স্মরণাপন্ন হলাম।
বিষয়: বিবিধ
১৭৩২ বার পঠিত, ৪৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ধরা যাক মেয়েটার বয়স ১৬ /১৭। পুরুষ চরিত্র সম্বন্ধে তার কোন তিক্ত অভিজ্ঞতা আছে কিনা? সেকি তার বাবার ব্যাপারে এমন ধরণের কথা বানিয়ে বলতে পারে? স্ত্রীর জানা থাকার কথা ! এই বয়সে হরমোনাল পরিবর্তনের কারনে ফ্যান্টাসির মধ্যে বাস করে কিছু তরুণী ! এমন কিছু হয়েছে কিনা তা জানা জরুরী! এই পুরুষ ( এখানে বাবা ও স্বামী) টির ব্যাপারে অনুসন্ধান করা যেতে পারে! সে গ্রামে থাকে- বৌ ছাড়া, তার চরিত্র দোষ ঘটে থাকতে পারে! বিয়ের আগে তার চরিত্র কেমন ছিল? যে গ্রামে সে বাস করে সেখানে খোজ করা যেতে পারে! বাড়ির কাজের মেয়েরা কি তার হাতে নিরাপদ ছিল?
অন্যদিক ও আছে ! চরম খারাপ চরিত্রের লোকও তার নিজের মেয়েকে রক্ষার জন্য জীবন দিতে পারে!এই লোক উল্টা তার মেয়েকে কুপ্রস্তাব দিয়েছে! এমন অসম্ভব ঘটনা ঘটা কি সম্ভব! কাজেই সবদিক না জেনে, সবকিছু না বিবেচনা করে পরামর্শ দেয়া খুব কঠিন। বিশেষ করে যখন তালাক্ক হচ্ছে বৈধ বিষয় গুলোর মধ্যে সবচেয়ে ঘৃণিত !
ঘটনা যদি সত্য হয়, এমন বাবার কাছে ঐ ছোট মেয়েটাও কি নিরাপদ? যতদিন না প্রমাণ হচ্ছে মেয়েরা নিরাপদ, ততদিন মেয়ে দুটো নিয়ে, মায়ের আলাদা থাকা বাঞ্ছনীয়। আর যদি সাক্ষ্য প্রমাণ- অনুসন্ধান করে এই লোকের বিপক্ষে ছোট খাট প্রমাণ ও পাওয়া যায়, অবশ্যই তার সাথে বিয়ে বিচ্ছেদ করা জরুরী, কারো পরামর্শ ছাড়াই ।
এই মহিলা কি সত্যি তার স্বামীর ভালবাসায় দ্রবীভূত হয়ে বিয়ে করেছিলেন ? স্বামী স্ত্রীর মধ্যে সামাজিক অসামঞ্জস্যতা আছে কিনা? স্ট্যাটাস! এই ঘটনার আগে- কোন কারনে এই স্ত্রী বিয়ে বিচ্ছেদ এর চিন্তা করেছেন কিনা! এ প্রশ্ন গুলোর সংগত কারণ রয়েছে! অনেক স্ত্রী বিয়ে বিচ্ছেদ এর জন্য মরিয়া হয়ে অন্য কোন কারণ দেখাতে না পাড়ায় এমন ধরণের কাহিনীর অবতারণাও করে থাকে। বলছি না – এখানে এমনটা ঘটেছে! সম্ভাবনা তো সব রকমের থাকেই! কেবল ঘনিষ্ট মানুষরাই ঠিক পরামর্শটি দিতে পারবেন!
অনৈতিকতার মহা সয়লাবে নৈতিকতার জীর্ণ খুটি একেবারেই নড়বড়ে বর্তমান সমাজ ব্যবস্হায়! অকল্পনীয় অনাকাংখিত ভয়াবহ এমন সত্য কে অস্বীকার করার উপায় নেই!
ব্লগার তিমির মুস্তফা ভাইয়ের সাথে সহমত পোষণ করতে পারলে আমারও প্রশান্তি আসতো মনে!
এ ধরণের পুরুষ সহজে পরিবর্তন হওয়ার নয়!মেয়ের থেকেও ভূল উপলব্ধির সুযোগ নেই কেননা অভিযুক্ত ব্যক্তি আপন জন্মদাতা!
বিচ্ছেদের করুণ সুর বাজানো ছাড়া অন্য কোন উপায় স্হির করতে পারছি না!!!
আমার ও মনে হয় মেয়েটি মানসিকভাবে বিকারগ্রস্ত ছিল হয়তো। নচেৎ একজন বাবা কখনোই নিজের মেয়ের সাথে এমন অনৈতিক কাজের কথা কল্পনাও করতে পারে না। খুব খারাপ লাগল লিখাটি পড়ে। মানব চরিত্রের ভিতরে এমন কুলক্ষণ সচরাচর দেখা যায় না।
নিজেই কেমন বিব্রত হলাম।
শুভেচ্ছা রইলো আপনার জন্য।
অধঃপতনের চূড়াঁয় আরোহী বিকারগ্রস্ত মানুষের এমন কুলক্ষনে স্বভাব সচরাচর দেখা না গেলেও এমন সত্যতা অস্বীকার করাও যায় না!
বিব্রতকর কয়েকটা ঘটনা আমিও জানি!!
যদি কিনে নিয়ে থাকেন তাহলে তো তিনি এবার সোজাসুজি কোর্টে গিয়ে তালাক্বনামায় সই করে আসতে পারেন, কারণ তিনি তো সেটাই চাচ্ছেন। তাহলে কেন আর সেই বাল্যবন্ধুর নিকট আবেগময় পত্র লিখে তাঁর পরামর্শ চাওয়া?
সবদিক বিবেচনায় আমার মনে হচ্ছে এই সংসারটি টিকে থাকার পক্ষে আর কোন শক্ত পিলার নেই। আলাদা হয়ে যাওয়াই মঙ্গল।
আল্লাহই সর্বোত্তম ব্যবস্থাপনাকারী।
প্রথম মন্তব্যটির সাথে একমত। কিন্তু প্রেম বা বিয়ের যে বিবরন দেয়া হয়েছে তাতে স্বামিটিকে প্রকৃতিতস্থ বলে মনে করার কোন কারন নাই। এধরনের মানুষের পক্ষে এই আচরন অসম্ভব নয়। আমার মনে হয় তালাক ই এক্ষেত্রে একমাত্র সমাধান। এছাড়া সংশ্লিষ্ট পুরুষটির চিকিৎসা ও প্রয়োজন।
তবে আমার মনে হয় বাবা না হয় মেয়ে মানসিকভাবে বিকারগ্রস্ত ।
আর একটা প্রশ্ন আপু যেই লোক এত পাগল হয়ে তাকে বিয়ে করল তাহলে তারা আলাদা মানে দুই জায়গায় থাকত কেন ?
তার বৃদ্ধ বাবামাকে দেখাশুনার দায়িত্বভার কাঁধে নিয়ে সে দূরে থাকতো। যদিও প্রায়ই সে ঢাকায় আসা যাওয়া করতো। সুন্দর এবং বুদ্ধিদীপ্ত একটি মন্তব্য রেখে যাওয়ার জন্য জাজাকাল্লাহু খাইর।
* এতো ভালোবাসার মানুষটিকে বাহিরে রেখে নিজে কিভাবে গ্রামে থাকতে পারে ?
* অনেকে বিচ্ছেদের কৌশল হিসাবে এটা কথা বলছেন, আমি একমত না । কারন বিচ্ছেদের জন্য এতো জঘন্য নাটকের দরকার হয় না ।
অবস্থার সার্বিক বিবেচনা বিচ্ছেদেরই দাবী রাখে
আর মিলার উচিত স্বামিকে ত্যগ করা। এবং নুতুন করে মেয়েদের কে নিয়ে জীবনের হাল ধরা। কথায় আছে "যা রটে তার কিছুটা বটে" আর বর্তমানে এরখমটা কোন অবাস্তব কিছু নয়।
আপনার সুন্দর ও বিজ্ঞ মতামত রেখে যাওয়ার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ। জাজাকাল্লাহু খাইরান। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন সব অবস্থায় এই কামনা রইলো।
মন্তব্যের জন্য জাজাকাল্লাহু খাইর।
মন্তব্যের জন্য জাজাকাল্লাহু খাইর।
মন্তব্য করতে লগইন করুন