আওয়ামীলীগের সাথে ভারতের সেই ৭ দফা গোপন চুক্তি, বন্ধুত্বই সব, দেশপ্রেম মিথ্যা
লিখেছেন লিখেছেন মাহফুজ মুহন ২২ নভেম্বর, ২০১৪, ০৪:২৭:২৯ রাত
ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাথে বাংলাদেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদের ৭ দফা চুক্তি থেকে। এই চুক্তিটি করেছিলেন তাজউদ্দিন। এই চুক্তি স্বাক্ষর ছাড়া ভারত সরকার বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে ভারতীয় সেনা বাহিনী পাঠাতে রাজি ছিল না। স্বাধীন দেশে ভারতের পুতুল সরকার হয়ে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তাজউদ্দিন এই চুক্তি স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে। চুক্তির দফাগুলো ছিল নিম্নরুপ:
১. ভারতীয় সেনা বিশেষজ্ঞদের সরাসরি তত্বাবধানে বাংলাদেশে একটি প্যারা মিলিটারী ফোর্স বা আধা সামরিক বাহিনী গঠন করতে হবে।
২. ভারতীয় সেনাবিশেষজ্ঞদের অধীনে যাবতীয় সামরিক সরঞ্জামাদি ক্রয় করতে হবে। সমস্ত সামরিক যান ও যন্ত্রপাতি ভারতের কাছ থেকেই কিনতে হবে।
৩. ভারতীয় কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রনে ও তত্বাবধানে স্বাধীন বাংলাদেশের যাবতীয় ব্যবসায়িক কর্মকান্ড পরিচালিত হবে।
৪. ভারতীয় পরিকল্পনাবীদগনই বাংলাদেশের উন্নয়নের ফর্মুলা ও পঞ্চ বার্ষিকী পরিকল্পনা প্রনয়ন করবেন।
৫. বাংলাদেশের সমস্ত বৈদেশিক ও কুটনৈতিক কর্মকান্ড ভারতের নির্দেশনা অনুযায়ী পরিচালিত হবে এবং তা কোনভাবেই ভারতের জাতীয় স্বার্থকে ক্ষুন্ন করতে পারবেনা।
৬. ভারতের অনুমোদন ছাড়া বাংলাদেশ কারো সাথে কোন চুক্তি সাক্ষর করতে পারবে না।
৭. এই চুক্তিটি ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার চলমান যুদ্ধের সময় ১৯৭১ সালের ডিসেম্বরের আগে সাক্ষরিত হলো এবং চুক্তি অনুযায়ী ভারতীয় সৈন্য ভারতীয় সেনারা যে কোন সময় বাংলাদেশে প্রবেশ করে তাদের প্রতিপক্ষকে ধ্বংস করতে পারবে।
আওয়ামীলীগ নেতারাই ৭ দফা চুক্তির মাধ্যমে এসব ব্যাপার নির্ধারিত করে দিয়েছিলেন। ওই ৭ দফা চুক্তি অনুযায়ীই ১৬ ডিসেম্বরের বিজয়ের পর ভারতীয় বাহিনী বাংলাদেশের সর্বত্র সেট হয়ে বসে। ভারতীয় বাহিনীকে সর্বত্র সেট করার সুবিধার্থেই বাংলাদেশ সরকারের সদস্যদের ১৬ ডিসেম্বরের পরপরই কলকাতা থেকে বাংলাদেশে আসতে দেয়া হয়নি। বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রিসভার সদস্য ও অন্যান্য কর্মকর্তাদের বাংলাদেশে আসার অনুমতি দেয়া হয় ২২ ডিসেম্বর। বিজয়ের পরপরই ভারতীয় বাহিনী চট্টগ্রাম বন্দরে স্তূপীকৃত হাজার হাজার কোটি টাকার পণ্য, বিপুল পরিমাণ অটো মোবাইল, লোকোমোটিভ, অন্যান্য যন্ত্রপাতি, ইলেক্ট্রনিক্স সামগ্রী, অলংকারপত্র, ৯৩ হাজার পাকিস্তানী সৈন্যের অস্ত্র ও গোলাবারুদসহ বর্তমান বাজর মূল্যে প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকার সামগ্রী লুটে নিয়ে যায়।
মুজিবের শাসনামলে সমাজতন্ত্রের নামে ক্ষমতার অপব্যবহার করে আত্মীয়-স্বজন ও দলীয় লোকদের বড় বড় পদে বসিয়ে শত শত কোটি টাকা লুটপাট করানো হয়। বেপরোয়া লুণ্ঠন, অপচয় ও পাচারে জাতীয় অর্থনীতিকে বিপর্যয়ের শেষ ধাপে নামিয়ে আনা হয়। রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্পসমূহ লুটেপুটে খেয়ে পরিত্যক্ত সম্পত্তিগুলো বেআইনীভাবে দখল করে, লাইসেন্স, পারমিট বিক্রি ও হুন্ডির হিড়িক লাগিয়ে আওয়ামী-বাকশালীরা আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়। সংবাদপত্রে শিরোনাম আসে, ‘প্রভাবশালীদের জন্য ব্ল্যাক মার্কেটারদের শাস্তি হয় না। খাদ্য-শস্য রেশনের চাল, সিগারেট ও সিমেন্ট দিয়ে গ্রামাঞ্চলে ঢালাও কালোবাজারি।' (সূত্র দৈনিক গণকণ্ঠ ৪-৭-১৯৭২)
করিডোর দিয়েই যদি ট্রানজিট বলা হয় তাহলে কি করা ?
তিতাস নদীকে বাদ দিয়ে ভারতের খেদমতের ফলে বাংলাদেশ পেয়েছে মৌখিক ধন্যবাদ। বন্ধুত্বই সব, দেশপ্রেম মিথ্যা। ক্ষমতায় থাকতে হলে কি তাহলে এমনি খেদমতের চেতনা দেখিয়েই যাবে বাংলাদেশ ? বিনিময়ে এরা পানি চুক্তি করে না। ধিক্কার দিয়েও শেষ হবে না। এই কারণে ভারতের চেয়ে বাংলাদেশের মানুষ দায়ী বেশি। বিচারের জন্য ভারতকে নয় বাংলাদেশের মানুষের বিচার আগে বাংলাদেশের মাঠিতে করতে হবে।
ট্রানজিট নিয়ে ২০১১ সালে বাংলাদেশ লোক দেখানোর জন্য হলেও বাংলাদেশ সরকার একটি কোর কমিটি গঠন করে। ওই কমিটি একটি সমন্বিত ট্রানজিটের জন্য ১৫ ধরনের মাশুল আরোপের সুপারিশ করেছিল। সেই কমিটির একটি স্পষ্ট সুপারিশে ছিল, কেবল জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের শুল্ক বিভাগের মাশুলই হবে সর্বনিম্ন ৫৮০ টাকা। ট্রানজিট দিতে বাংলাদেশকে অবকাঠামো উন্নয়নে বিনিয়োগ করতে হবে ৪৭ হাজার কোটি টাকা। কোর কমিটির সুপারিশ কোনো গ্রাহ্যতা পায়নি শুধু মাত্র ক্ষমতায় থাকার জন্য কথিত বন্ধুত্বের স্বার্থে। ৫৮০ টাকার মাশুল হয়েছে ১৩০ টাকা। তার মানে ভারতের কলকাতা থেকে আগরতলায় মালামাল নিয়ে যাবে বাংলাদেশের সড়ক পথে। বিনিময়ে পাবে কিলোমিটার প্রতি ১ দশমিক ২০ টাকা। যদিও এক দিন হয়ত দেখা যাবে বাংলাদেশ আওয়ামিলিগ বিনা পয়সায় কথিত পরীক্ষা মূলক চালানের নামে কয়েক হাজার টন বিনা শুল্কে ভাততের খেদমতে বিসর্জন দিয়েছে। এই সড়ক পথ এবং অবকাঠামো ঠিক করতে খরচ হবে ৪৭ থেকে ৪৮ হাজার কোটি টাকা, যার পুরোটাই বহন করতে হবে বাংলাদেশের মেহনতি মানুষের কষ্টের টাক্সের টাকায়।
এবার বলতে হয় সেই কথা - শেখ হাসিনার অর্থ উপদেষ্টা বলেছেন - ভারতের কাছে ট্রানজি টের বিনিময়ে কাছে শুল্ক দাবি করা অভদ্রতা।
দলবাজি এবং ভুয়া চেতনার দোহাই না দিয়ে বাস্থব চিত্র একটু খুঁজে বের করলেই জানা যাবে
ভারত আসলেই কি আমাদের বন্ধু ?
বাংলাদেশের কাছে ভারতের যা কিছু চাওয়ার, বাংলদেশ আওয়ামীলীগের সরকার একে একে সবই দিয়ে দিয়েছে।
ভারতের কলকাতা থেকে ভারতীয় ভূখণ্ডের ভেতর দিয়ে আগরতলা যেতে প্রায় ১৬০০ কিলোমিটারেরও বেশি সড়ক পাড়ি দিতে হয়, আর এতে সময় লাগবে ১৯৫ ঘণ্টা। পক্ষান্তরে কলকাতা থেকে ঢাকা হয়ে আগরতলার সড়ক দূরত্ব প্রায় ৫৭০ কিলোমিটারের মতো, তাতে সময় লাগবে ৫৫ ঘণ্টা। যদি প্রতিদিনে ১০০০ ট্রাক (ট্রাক প্রতি ৫ টন হিসেবে) ট্রানজিট নিলেও শুধুমাত্র অবকাঠামো নির্মাণ করতে যে খরচ হবে তা ট্রানজিট ফি থেকে উঠাতে লাগবে প্রায় ৪৫ থেকে ৫৫ বছর। এছাড়া রাস্তা মেরামত, পুরো রাস্তায় ট্রাকের নিরাপত্তা এবং আরো লোকবল বাবদ যে খরচ হবে তার পুরোটাই বহন করতে হবে বাংলা দেশের জনগনের টাকায়।
হয়ত একদিন পত্র পত্রিকার মাধ্যমে জাতি জানতে পারবে ভারতীয় পণ্য বাহী জাহাজ, লরি মাত্র ১/২ রুপির বিনিময়ে দাবড়িয়ে বেড়াচ্ছে। তখন আমরা লেন্দুপ দর্জির মত চেয়ে চেয়ে দেখবো ?
ভারতের আদালত যে প্রকল্প ভারতে নিষিদ্ধ করেছে , সেই ভয়াবহ ক্ষতিকর প্রকল্প সুন্দর বন ধংস করে হচ্ছে। আওয়ামীলীগের মন্ত্রী বলেছেন - দরকার হলে তারা কৃত্তিম সুন্দরবন তৈরী করবেন।
জাতির জন্য আওয়ামীলীগের মন্ত্রীদের এর চেয়ে আর কি তামাশার বক্তব্য হতে পারে ?
প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় সুন্দরবন বাংলাদেশের নিরাপদ দেয়াল হিসাবে কাজ করে , সেই সুন্দরবন ধংশ করে তারা কৃত্তিম সুন্দরবনের কথা কার আবদার পূরণে মরিয়া ?
এরই মধ্যে বিদ্যুৎ, জ্বালানি এবং খনিজসম্পদ তো অন্ধকার চুক্তির মধ্যেই চলে গেছে। জাতি জানে না কি হচ্ছে ?
তাহলে বাংলাদেশ কি পেল ?
সহজেই হিসাবের পর বলতে হয় বাংলাদেশ কিছুই পায়নি , উল্টো বিপদের মধ্যে যুকির মুখে থাকবে বাংলাদেশ।
তিতাস নদীকে বাদ দিয়ে ভারতের খেদমতের ফলে বাংলাদেশ পেয়েছে মৌখিক ধন্যবাদ। বন্ধুত্বই সব, দেশপ্রেম মিথ্যা। ক্ষমতায় থাকতে হলে কি তাহলে এমনি খেদমতের চেতনা দেখিয়েই যাবে বাংলাদেশ ? বিনিময়ে এরা পানি চুক্তি করে না। ধিক্কার দিয়েও শেষ হবে না। এই কারণে ভারতের চেয়ে বাংলাদেশের মানুষ দায়ী বেশি। বিচারের জন্য ভারতকে নয় বাংলাদেশের মানুষের বিচার আগে বাংলাদেশের মাঠিতে করতে হবে।
বিষয়: বিবিধ
৪১৫৫ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন