চাউলে আর্সেনিক !
লিখেছেন লিখেছেন তিমির মুস্তাফা ২২ নভেম্বর, ২০১৪, ০৫:০৫:২৬ সকাল
[img]
আর্সেনিক এক ধরণের বিষ, ইদুর মারা বিষের মূল উপাদান এবং একটা জ্ঞাত কারসিনোজেন (carcinogen)- যা শরীরে ঢুকলে ক্যান্সার হতে পারে। আমাদের দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পানিতে / টিউব ওয়েলে আর্সেনিক ধরা পড়েছে, অনেক এলাকায় তা সনাক্ত করা গেছে, এমনকি টিউবওয়েল গুলোও চিহ্নিত করা হয়েছে বা হচ্ছে! কিন্তু সে এলাকার ফল বা ফসলে আর্সেনিক রয়েছে কিনা তা জানার চেষ্টা হয়েছে কি না জানা নেই? সরকার গদি সামলাতে ব্যস্ত, গবেষক / বিজ্ঞানী নিজেদের প্রফেশন এর চাইতে রাজনীতি নিয়ে বেশী ব্যস্ত! কাজেই ! থাক সেসব!
২০১২ সালে প্রথম শুনা গেলেও চাউলে আর্সেনিক নিয়ে গবেষণা হয়েছে এমন রিপোর্ট আমাদের দেশের ক্ষেত্রে চোখে পরে নি। চাউল প্রধান খাদ্য – এমন দেশগুলোর মধ্যে আমরা এগিয়ে। । আমাদের দেশে উৎপাদিত দানা (grain) ফসল গুলোর মধ্যে, ধান প্রচুর পানি গ্রহণ করে থাকে।
[http://www.bdmonitor.net/blog/bloggeruploadedimage/tmirmustafa/1416611008.jpg[/img]
বিধায় পানিতে আর্সেনিক থাকলে তা ধান গাছের মাধ্যমে চালে গিয়ে জমা হবে। তাই গম, যব বা অন্য দানাদার ফসলের তুলনায় চাউলে আর্সেনিক পাবার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশী।
আমাদের দেশে এ নিয়ে গবেষণা না হলেও যারা বৈজ্ঞানিক গবেষণায় এগিয়ে তারা তাদের বাজারে পাওয়া বিভিন্ন চাউল এমনকি চাউল জাত- খাদ্য, যেমন সিরিয়াল, চালের আটা, রাইস ক্রিস্পি, ও আরও কিছু তৈরি খাদ্য নিয়ে প্রায় ২০০ নমুনার গবেষণা করে তার ফলাফল প্রকাশ করেছে। যেহেতু বাংলাদেশের বাজারে এগুলো পাওয়া যাবে না, কাজেই এখানে উল্লেখ করা হল না, কেউ দেখতে চাইলে নীচে দেখুন! http://consumerreports.org/cro/magazine/2012/11/arsenic-in-your-food/index.htm#chart
অনেক খাদ্যে বা চাউলে কি পরিমাণ আর্সেনিক থাকলে তা ক্ষতিকর এমন কোন ষ্ট্যাণ্ডার্ড ঠিক করা নেই, তবে পানির ক্ষেত্রে আছে। ১০ পিপিবি ( ১০ পার্টস পার বিলিয়ন) ! যদিও ইপিএ ( আমেরিকার এনভায়রনমেন্টাল প্রটেকশন এজেন্সি)’র বেঁধে দেয়া সীমা ছিল ৫ পিপিবি।
যাহোক, ঐ ষ্ট্যাণ্ডার্ডে (৫ পিপিবি), এক লিটার পানি পাণে একজন মানুষ এর শরীরে যে পরিমাণ আর্সেনিক ঢুকবে, ঐ লেভেলে একজন মানুষের এক বেলার ভাতে তার চেয়ে দেড় গুণ বেশী পরিমাণ আর্সেনিক ঢুকার সম্ভাবনা, এই গবেষণায় দেখা গেছে।
যেহেতু আর্সেনিক, চালের গাত্র আবরণী তথা ‘অ্যালিউরনের স্তরে বেশী থাকে, কাজেই লাল (এখানে বলে ব্রাউন) চালে, সাদা চালের চেয়ে বেশী মাত্রার আর্সেনিক পাওয়া গেছে!
কিছু ফ্যাক্টঃ
ক) ১২৮ ধরণের চালে প্রায় সবগুলোতেই পরিমাপ যোগ্য আর্সেনিক এর উপস্থিতি পাওয়া গেছে।
খ) বাদামি/লাল চালে , আর্সেনিক এর পরিমাণ, সাদা চালের চেয়ে বেশী
গ) কোথায় উৎপাদিত হয়েছে এর উপরেই মুলত নির্ভর করে কোন চালে কতটুকু আর্সেনিক থাকবে! আর্সেনিক মাটিতে বা পানিতে বেশী থাকলে ঐ এলাকায় উৎপাদিত চাউলেও আর্সেনিক বেশী থাকবে- এটাই স্বাভাবিক।
ঘ) আর্সেনিক পাকস্থলী, ফুসফুস, চামড়ার ক্যান্সারের জন্য দায়ী হতে পারে। এছাড়া হৃদরোগ, টাইপ ২ ডায়াবেটিস এও এর ভূমিকা রয়েছে।
আর্সেনিক এর সংস্পর্শে এলে বড়দের চেয়ে বাচ্চারা বেশী ক্ষতিগ্রস্থ হবে।
রান্না করার সময় বেশী করে বা বার বার ধুয়ে পানি ফেলে দিলে সেটা উত্তম। চাল সেদ্ধ হয়ে গেলে ভাতের পাতিলের অতিরিক্ত পানি ফেলে দিলে ভিটামিন বা খনিজ পদার্থ চলে যায় এটা সত্য, তবে আর্সেনিকও এর সাথে চলে যাবে, সেদিক থেকে সন্দেহজনক ক্ষেত্রে এ পদ্ধতি মন্দের ভাল। এভাবে ৩০% আর্সেনিক কমে যাবে- কঞ্জিউমারস রিপোর্টের ভাষ্য অনুযায়ী। ‘অরগানিক’ লেবেল মারা থাকলেই এই ‘ইন-অরগানিক আর্সেনিক’ থাকবে না সেই চালে- এই ধারনা ঠিক নয়!
প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় চালের পরিমাণ কমিয়ে দিলে - সেটাও খারাপ নয়। সবচেয়ে ভাল হয়, আমাদের দেশের ধান গবেষণা ইন্সটিটিউট (BRRI বা BARI,) বা কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউট প্রতিটি জেলার ধান সংগ্রহ করে তা নিয়ে গবেষণা করে, কোন এলাকার ধানে কি পরিমাণ আর্সেনিক রয়েছে তা প্রথমে নির্ধারণ করতে পারলে! এরপর আসবে পরবর্তী করনীয়!
আমরা আশা করব তারা উদ্যোগী হয়ে – নিত্যদিনের দলাদলির রাজনীতির পাশাপাশি, জনস্বার্থে দু একটা ভাল কাজও করবেন, মোটের উপর তারা তো প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী, কোন রাজনৈতিক দলের কর্মচারী নয়!
বিষয়: বিবিধ
১১১৮ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ভয়ংকার চিন্তায় ফেলে দিলেন তো ভাই!
অতি প্রয়োজনীয় বাংলাদেশী এই খাদ্যে যদি এই বিষাক্ততা পাওয়া যায় তাহলে মাঠে মারা যাবে সবাই!!!
আপনাকে ধন্যবাদ!
আপনার সর্বাঙ্গীণ সুস্থতা, সুখ ও সমৃদ্ধি কামনা করি!
মন্তব্য করতে লগইন করুন