গন অভ্যুত্থানের পদধ্বনী শোনা যাচ্ছে চারি দিকে।

লিখেছেন লিখেছেন আহমদ মুসা ৩০ অক্টোবর, ২০১৩, ০৭:০৮:৩০ সন্ধ্যা

ভূমিকা

১৯৭১ সালে পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন হলো আজ প্রায় তেতাল্লিশ বছর পার হতে চললো। একই সময়ের কিছু আগে এবং পড়ে পৃথিবীতে আরো অনেক দেশ স্বাধীনতা অর্জন করে। কিন্তু বাংলাদেশীদের মত এতো আত্মত্যাগ ও এতো রক্তস্রোত আর কোন দেশের স্বাধীনতা অর্জনের ক্ষেত্রে ঘটেনি। কিন্তু এই জাতির দুর্ভাগ্য বলতে হবে অথবা বাগ্যির নির্মম পরিহাস যে, আমাদের পরে অনেক দেশ স্বাধীনতা অর্জন করে পৃথিবীর বুকে স্বাধীনতার স্বাদ নিয়ে আত্মমর্যাদাশীল জাতি হিসেবে উন্নতির শিখরে অবস্থান করে দুনিয়াবাসীকে জানান দিচ্ছে স্বগৌরবে। সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া প্রভুতি দেশ পৃথিবীর বুকে মর্যাদার সাথে জানান দিচ্ছে তাদের অস্তিস্থ।

কিন্তু আমাদের এই বাংলাদেশটা? বিশাল জনশক্তিতে ভরপুর অথচ বিশ্বের দরবারে এক অপরিচিত ভিক্ষুকের জাতি হিসেবে পরাশক্তি ও উন্নত দেশগুলোর দয়ার পাত্রে পরিনত হয়েছি। এ জন্যই কি অসংখ্য বনি আদমের রক্তের বিনিময়ে, কোটি কোটি টাকার সম্পদ ধ্বংস করে, অগনিত নারীর ইজ্জত হানির বিনিময়ে আমাদের পূর্ব পুরুষরা স্বাধীনতা চেয়েছিল?

পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকদের অবহেলা, শোষণ, অবমূল্যায়ন, অর্থনৈতিক অসমতা, রাজনৈতিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করাসহ বিভিন্ন মৌলিক দাবী দাওয়াকে অবজ্ঞা করে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান তথা আজকের বাংলাদেশের গনমানুষের রাজনৈতিক অধিকারকে অশ্বীকার করার ফলে গনঅসন্তোস সৃষ্টি হয়। এই অসন্তোসকে পুজি করেই আওয়ামী লীগের মত একটি গুন্ডা মার্কা জঙ্গী রাজনৈতিক দল বিভিন্ন ধ্বংসাত্মক রাজনৈতিক কর্মসূচীর সূচনা করে।

একদিকে আওয়ামী রাজনীতির চিরাচরিত গুন্ডামীর সিলসিলা অন্যদিকে মাওলানা ভাষানীর দূরদর্শী রাজনৈতিক প্রজ্ঞাপূর্ণ স্বাধীনতা সংগ্রামের সূচনা।

দেশের এই রাজনৈতিক অস্থিরতার সুযোগে আওয়ামী দূর্বৃত্বরা পরিকল্পিতভাবে গোটা জাতিকে অন্ধকার অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে টেলে দিয়ে কেউ পালিয়ে দিল্লীর ইশারায় কোলকাতার হোটেলে বসে আমুদ ফুতির্তে মেটে উঠে আবার কেউ পশ্চিম পাকিস্তানী নরঘাতকদের নিরাপদ আশ্রয় থেকে পিন্ডীর উদ্দেশ্য উড়াল দেয়।

কিন্তু যারা দেশপ্রেমিক তথা বাংলাদেশপন্থী তাদের নিরাপত্তার জন্য কোন আশ্রয়স্থল ছিল না। অনিবার্য সংঘাতকে স্বীকার করে এই জাতির অস্তিস্থ রক্ষার জন্য, পৃথিবীর বুকে এই জাতি গঠনের নতুন ইতিহাস রচনার জন্য স্বাধীনতার ডাক দিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুললেন একজন আর্মি অফিসার। দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী লড়াই সংগ্রামের পর যখন বুঝতে পারলো যুদ্ধের বিভিন্ন পক্ষ দুনিয়ার বুকে একটি স্বাধীন জাতির অভ্যুদয় অশ্বীকার করা যাবে না তখন বীরদর্পে আগমন ঘটতে লাগলো দিল্লী এবং পিন্ডীর নিরাপদ আশ্রয়ে থাকা বসন্তের কুকিলেরা। সাথে তাদের আশ্রয়দাতা মুরুব্বীরাও এসে হাজির হলেন যুদ্ধ বিধ্বস্থ দেশ থেকে লোটপাট করার জন্য। তাদের লোটপাটে বাদ সাধার কারণেই মেজর জলিলের মত মুক্তিযোদ্ধা আজ অবহেলিত।

এসব বসন্তের কোকিলদের সাথে রাতারাতি খোসল বদলে চেতনাধারী বনে গেলেন একাত্তুরের মুরগি চোর থেকে শুরু করে হাল আমলের পিলার তত্বের আবিস্কারক কুখ্যাত সব রাজাকাররেরা ।

---------------------------------------------

কোন একটি দেশে গন অভ্যুত্থানের পরিবেশ সৃষ্টি হতে যে সব শর্ত শরায়ত প্রয়োজন তার সব গুলোই এখন আমাদের দেশে বিদ্ব্যমান। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে আওয়ামী লীগ তিনবার এদেশকে শাসন করেছে। এখনো তারা মেয়াদ উত্তীর্ণ প্রশ্নবিদ্ধ পেশি শক্তির জোরে, দলীয় গুন্ডা পান্ডাকে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর পোষাক পড়িয়ে, লাইসেন্সধারী সন্ত্রাসী হিসেবে ব্যবহার করে ডুবন্ত জাহাজের মত একটি সরকার চালাচ্ছে।

নিরাপেক্ষ দৃষ্টিকোণ থেকে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক ইতিহাস ও তাদের সরকার পরিচালনার পলিসি পর্যালোচনা করলে বুঝা যাবে বাংলাদেশের যত সব দূগর্তি ও দুর্ভাগ্যের, হানা হানি, খুনাখুনি ও লোটপাটের সাথে উৎপ্রোতভাবে জড়িত। এমনি কি এদেশের মানুষকে ধর্মহীন করার পেছনেও তাদের ভূমিকা অতুলীয়।

বাংলাদেশকে ধীরে ধীরে অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিনত করে প্রতিবেশী ভারতের অঙ্গরাজ্যে হিসেবে একিভুত করার মিশন নিয়েই যেন তাদের যাবতীয় সব পলিসি।

প্রথমবার তারা ক্ষমতা পেয়ে পৃথিবীর ইতিহাসে স্থান করে নিয়েছিল চুয়াত্তরের দুর্ভিক্ষ উপহার দিয়ে। খুনাখুনি হানাহানি, লোটতরাজ এমন পর্যায়ে গিয়েছিল যে, প্রকাশ্যে রাজপরিবারের সদস্য হয়ে ব্যাংক ডাকাতি করার মত কুকীর্তি সৃষ্টি করেছিল। তাদের অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে মানুষ কুনুতে নাজেলা পড়তে বাধ্য হয়েছিল আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করে। এর ফলে সৃষ্টি হয়েছিল ১৫ ই আগষ্ট। মুসলমান মারা গেলে জানাজার নামাজ হয়। অথচ সেদিন অনেকেই শোকরানার নামাজ পড়েছিল। এই জাতির জন্য এটা অত্যন্ত দুঃখ ও দূভার্গ্যজনক।

দীর্ঘ ২১ বছর পর জাতির কাছে অতীতের কৃত অপরাধের ক্ষমা চেয়ে আবারো বিভিন্ন অপকৌশল অবলম্বন করে ক্ষমতায় আরোহণ করলেন ৯৬ সালে। এই পিরিয়ডেও তারা অতীত থেকে শিক্ষা না নিয়ে বরং দ্বিগুন উৎসাহে লোটপাট ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের ভয়াবহতা এমনভাবে ছড়িয়ে দিলেন যার কারণে দেশ হয়ে গেলো দুর্নীতিতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন অপর দিকে ২০০১ সালে অপারেশন ক্লিনহার্ড এবং র‌্যাব গঠন করতে হয়েছিল পরবর্তী সরকারকে। দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা তো একেবারে ত্রাহী মধুসুধন অবস্থা করে ক্ষমতা থেকে বিধায় নিলেন।

এবারের পিরিয়ডে তাদের দেশ পরিচালনা করার অবস্থা নতুনভাবে বর্ণণা করার কিছুই নেই। অতীতের সব রেকর্ডকে ছাড়িয়ে প্রিয় মাতৃভূমিকে ইনডিয়ান আশ্রিত একটি ব্যর্থ স্ট্যাট হিসেবে পরিনত করার যাবতীয় আয়োজন সম্পন্ন করার মিশন নিয়েই কোমড় বেধে মাঠে নেমেছে। কারচুপির মাধ্যমে ক্ষমতাসীন হওয়ার মাত্র ৪১ দিনের মাথায় বাংলাদেশের গর্ব, জাতির অহংকার সসস্ত্রবাহিনীর মেরুদন্ড ভেঙ্গে দেয়ার জন্য তারা পিলখানা ম্যাসাকারের জন্ম দিলেন। দেশপ্রেমিক রাজনৈতিকদের বিভিন্ন অপবাদ দিয়ে জুডিশিয়াল কিলিংয়ের মাধ্যমে প্রতিপক্ষশুণ্য করার এক ঘৃণ্য খেলায় মেতে উঠলেন। দেশের অর্থনৈতিক সব অবকাঠামো ধ্বংস করে দিলেন। হেফাজতে ইসলাম ও রানা প্লাজাসহ বিভিন্ন গনহত্যার কথা নাই বা বললাম। স্বাধীনভাবে ধর্মকর্ম পালন করার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করলেন দেশের বৃহত্তম জনগোষ্টীকে।

এমতবাস্থায় আওয়ামী হায়েনাদের রাহুর গ্রাস থেকে নিস্কৃতি পাওয়ার আশায় এবার দেশের মানুষ জেগেছে। এই জাগরণ অতীতের সব জাগরণ থেকে একটু ভিন্ন মাত্রা যোগ করেছে। অতীতের সব গনজারণ এবং গনঅভ্যুত্থানের পেছনে আওয়ামী বর্ণচোরা রাজনৈতিক দান্ধালদের উদ্দেশ্যমূলক অংশ গ্রহণ ছিল নিজের ফায়দা হাসিলের আশায়। কিন্তু এবারের গণজাগরণ হচ্ছে আওয়ামী অপশাসন ও দূঃশাসণ থেকে স্থায়ীভাবে মুক্তি পাওয়ার আশায়। যদি দেশের মানুষ সফলভাবে গণঅভ্যুত্থান সৃষ্টি করতে পারে তবে আওয়ামী কুলাঙ্গারদের স্থায়ীভাবে এদেশের মাঠি থেকে উৎখাত করা যাবে।

গত রবিবার থেকে টানা ৬০ ঘন্টার হরতালে রাজধানী ঢাকা ছাড়া সারাদেশে আওয়ামীদের রাজপথে জনগণ নামতে দেয়নি। ঢাকাতে শুধু পুলিশি নিরাপত্তা বেষ্টনীতে তারা শো-ডাউন করেছে। আমার এলাকাতে হরতালের দ্বিতীয় দিনে আওয়ামীরা ঘোষণা দিয়েছিল রাজপথে হরতাল প্রতিহত করতে নামবে। তাদের ঘোষণা অনুযায়ী সেখানে ৫০/৬০ জনের বেশী লোকজন সমগম হয়নি। অন্যদিকে হরতালের আহবানে সাড়া দিয়ে ১৮ দলীয় লোকজনের পক্ষে আশপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে তিন চার হাজার মানুষ রাজপথে পিকেটিং করতে দেখেছি। সেদিন আমি নিজ চোখে দেখেছি আওয়ামী গুন্ডারা হাজার হাজার প্রতিবাদী জনতার উপর পুলিশের সহযোগিতা নিয়ে প্রকাশ্যে অগ্নীয়াস্ত্র নিয়ে হামলা করতে।

সুতরাং গুন্ডা-পান্ডা আর দলীয় অনুগত পুলিশের কিছু সদস্য দিয়ে শেষ রক্ষা হবে না আওয়ামীদের। বালের পতন অবশ্যই হবে। এটা সামান্য সময়ের ব্যাপার মাত্র। ভালভাবে রাজপথে ধাক্কা দিতে পারলেই এদের পতন হবেই ইনশায়াল্লাহ।

বিষয়: বিবিধ

১৯২৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File