মুগ্ধ আর এক কচ্ছপ - ২
লিখেছেন লিখেছেন মোহাম্মদ শাব্বির হোসাইন ০৯ অক্টোবর, ২০১৪, ০৬:২৮:২০ সন্ধ্যা
তাই সে নির্ভয়ে জিজ্ঞেস করল, তোমার বয়স কত?
কচ্ছপ উত্তর দিল, তুমি আসলে আমাকে যত ছোট মনে করছ, আমি কিন্তু তত ছোট না। আমার বয়স এখন ৪৫ বছর। একটা কচ্ছপ সাধারণত ৬০ বছর পর্যন্ত বাঁচে। শুধু তাই নয়, আমাদের মধ্যে একটা প্রজাতি আছে যাকে 'তেসটুডো’ বলে। এরা বাঁচে ১৮৯ বছর পর্যন্ত। কী খুব অবাক হচ্ছো? শোনো, এ বিশাল পৃথিবীতে আল্লাহ তায়ালা কত বিচিত্র জিনিষ সৃষ্টি করেছেন তোমরা মানুষেরা এখনও তার অনেক কিছুই জানো না। তুমি তো অনেক ছোট। বড় হও, অনেক অনেক পড়াশুনা কর, তখন দেখবে সব।
মুগ্ধ বলল, তুমি তো অনেক বুদ্ধিমান। মানুষের অনেক কিছুই জানো দেখছি। আচ্ছা, কোন্ ঋতু তোমার পছন্দ? মানে, বছরের কোন্ সময়টা তুমি বেশি পছন্দ করো?
আমি তোমার প্রশ্ন বুঝতে পেরেছি। শোনো, গ্রীষ্মকাল আমাদের বেঁচে থাকার জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের চারপাশে বাতাসে যে তাপমাত্রা আছে তার পরিবর্তনের সাথে সাথে আমাদের শরীরের তাপমাত্রাও ওঠানামা করে। এটা ৩২.২ থেকে ৩২.৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট (০.১ থেকে ০.২ ডিগ্রী সেলসিয়াস) যা কিনা বাতাসের সাধারণ তাপমাত্রার চেয়েও কম। আমরা যা কিছু খাই সেটা হজমের যে প্রক্রিয়া তা বাতাসের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাবার সাথে সাথে দ্রুত হয়। আল্লাহ যখন আমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন তখন আমাদের ভেতর এ ধরণের বৈশিষ্ট্য দিয়েই সৃষ্টি করেছেন যেন বাতাসের তাপমাত্রা অতিরিক্ত বৃদ্ধি পেলেও আমাদের বেঁচে থাকতে কোনো অসুবিধা না হয়। কাজেই আল্লাহ আমাদেরকে যেসব উপহার দিয়েছেন তার সবই আমাদের চাই। কিন্তু তিনি আমাদের যা কিছু প্রয়োজন তার চেয়েও অনেক বেশি ধনী। অর্থাৎ, তাঁর ভান্ডারের কোনো শেষ নেই।
মুগ্ধ বিষ্ময়ের সাথে জিজ্ঞেস করল, তোমার প্রিয় খাবার কী?
আমরা হলুদ স্কোয়াশ পছন্দ করি। হলুদ স্কোয়াশ কী বুঝতে পারছো তো? এটা হলো এক জাতীয় নরম কাঁচা সবজি। আমরা এটা খেতে খুব পছন্দ করি। আমাদের চোখ খুব শার্প এবং তা হলুদ রং দেখার জন্য ওস্তাদ। কাজেই আমাদের খাবার খুঁজে পেতে আমাদের কোনো সমস্যা হয় না।
মুগ্ধর আরো একটি প্রশ্ন করতে মন চাইলো। সে জিজ্ঞেস করল, আচ্ছা, শীতকালে তোমরা কী করো? তখন তোমরা কী গায়ে কোনো কম্বল দাও?
হ্যাঁ শোনো, যখন শীতকাল আসে মানে আবহাওয়া আস্তে আস্তে ঠান্ডা হতে শুরু করে, বিশেষ করে অক্টোবরের পর থেকে, এ সময় আমাদের জন্য খাবার খোঁজা খুব কঠিন হয়ে যায়, তখন আমাদের শরীর নিস্তেজ হয়ে পড়ে। এ থেকে মুক্তির জন্য আমরা তখন কয়েক মাসের জন্য ঘুমিয়ে পড়ি। আমাদের হার্টবিট এবং নিশ্বাস তখন খুব ধীর গতিতে চলে। আমরা অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত ঘুমিয়েই কাটিয়ে দিই। কারণ আল্লাহ আমাদেরকে এভাবেই সৃষ্টি করেছেন। শীতকালে না খেয়ে আমাদেরকে জেগে থাকতে হয় না। যদি হতো তাহলে আমাদের জন্য সেটা খুব বিপজ্জনকই হতো। কাজেই আল্লাহ বংশ পরম্পরায় একটা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ঘুমের ব্যবস্থা করে দিয়ে আমাদেরকে অদ্ভুতভাবে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছেন।
(চলবে)
*** [আগামী একুশে বইমেলায় (২০১৫) ছোট্ট সোনামনিদের জন্য প্রকাশিতব্য আমার বইয়ের একটি গল্প আপনাদের মূল্যায়ন ও মতামতের জন্য উপস্থাপন করলাম। ধারাবাহিকভাবে সবগুলিই উপস্থাপনের ইচ্ছা আছে। আশা করি, আপনাদের মূল্যবান মতামত আমার কাজে লাগবে।]
বিষয়: সাহিত্য
১২১৪ বার পঠিত, ১২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আমার কপির অর্ডার দিয়ে রাখলাম। কোথায় পাওয়া যাবে সময়মত জানাবেন।
আপনার অগ্রিম অর্ডার দেবার জন্য ধন্যবাদ। সময়মত জানাবো ইনশাআল্লাহ।
কচ্ছপ অনেক দিন বাঁচে। কলকাতা চিড়িয়াখানায় কয়েকবছর আগে একটি কচ্ছপ মারা গেছে প্রায় ২৫০ বছর বয়সে! সেই কচ্ছপটির মালিক নাকি ছিলেন স্বয়ং লর্ড ক্লাইভ!!
সুন্দর উপস্থাপনা,
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ, জাযাকাল্লাহ
ধন্যবাদ।
আসলে আমাদের শিশুরা অলীক বস্তু হাটটিমাটিম শিখছে। শিখছে ঠাকুরমার ঝুলি, অমুক ভূত-পেত্নী এসব। আর এসব মিথ্যা বস্তু আর ফালতু গাঁজাখুরি গল্প তাদেরকে কল্পনার জগতে এক মিথ্যা ফানুস তৈরি করতে সাহায্য করছে। যখন তাদের একটু বুদ্ধি হয় তখন তারা উপলব্ধি করে এগুলো সব মিথ্যা। ছোট্টবেলায় মানসপটে গভীরভাবে ছাপ ফেলা এসব ঘটনা পরবর্তীতে তাদের মিথ্যা বলতে উৎসাহী করে। এখন সকল শিশুরাই শিশুকাল থেকেই মিথ্যা বলতে শুরু করে। এসব মিথ্যা কণ্প-কাহিনী তাদেরকে শেখানো তার পেছনে অন্যতম একটি কারণ বলেই মনে হয়।
তাই তাদেরকে গল্পের ছলে মহান স্রষ্টা এবং তাঁর সৃষ্টি বৈচিত্র ও বিশালত্ব সম্পর্কে সত্য ধারণা দিবার জন্যই আমার এ ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা।
মন্তব্য করতে লগইন করুন