একটি ছেলের জীবনে প্রথম কোরবানি
লিখেছেন লিখেছেন গ্রীণ ওয়ে ০৪ অক্টোবর, ২০১৪, ১০:২৯:২৯ রাত
ছেলেটি ছোটবেলা থেকে মামার বাড়িতে থাকতো । সে বুঝার বা জ্ঞান হওয়ার পর থেকেই সে দেখে এসেছে মামার বাড়ি । নানী , মামা , আর মামীকে সে জানত অভিভাবক । মামার বাড়িতে লেখা- পড়া, সংসারের কাজ এই ভাবে তার শৈশবে বেড়ে ওঠা । অনেক আদরে নানি , মামা আর মামীরা তাকে লালন-পালন করেন । এইভাবে প্রাইমারি স্কুল থেকে হাইস্কুল ওঠে। এইভাবে ছেলেটির দিন যায় দিন আসে । হঠাৎ একদিন তার মামী যে তাকে নিজের মায়া মমতা দিয়ে লালন-পালন করেছিলেন সে মামী কারেন্টের শকে মারা যায় । তখন ছেলেটি class seven -এ পড়ত । মামি মারা যাওয়ার পর ছেলেটি অনেক অসহায়ত্ব অনুভব করে তার মায়ের কাছে অর্থাৎ তার নিজ বাড়িতে চলে আসে । ছেলেটির বাবা একজন কাঠমিস্ত্রী । চার ভাই ও এক বোন । বাবার রীতিমত আয় না থাকায় সংসার আর ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া করানো ছিল খুবই কঠিন । তা ছাড়া মাঠে কোন জায়গা না থাকায় তাদের আরও হিমসিম খেতে হতো । এই অবস্থায় ছেলেটি তার ও তার ভাইবোনদের লেখাপড়া নিয়ে ছিল খুবই উদ্বিগ্ন । ছেলেটি তার লেখাপড়ার খরচ মিটানোর জন্য সাপ্তাহে ৪ দিন স্কুল আর বাকি ২ দিন মাঠে বদলা খাটতো । তার বাবা মায়ের ইচ্ছা ছিল সকল ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া করিয়ে মানুষের মত মানুষ করবে কিন্তু খরচ মিটানো তার পক্ষে ছিল অসম্ভব । বাবার ইচ্ছা দেখে তারা সবাই সিদ্ধান্ত নিলো আমরা যেভাবেই হোক লেখাপড়া চালিয়ে যাবো । তাইতো তারা কখনো লজিং , কখনো টিউশনি, কখনো মাঠে কাজ করে ও লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছে । ছেলেটি সবার বড় হলে ও নিজের লেখাপড়া , ভাইবোনদের জন্য কিছু করাও ছিল তারপক্ষে কঠিন। শুধু পরামশ দিতো আর মাঝে মাঝে নিজেকে খুব অসহায় অনুভব করত আর নিজনে চোখের পানি ফেলত । অভাবের সংসার দেখে তার ছোট ভাইয়েরাও অনেক কষ্ট করে লেখাপড়া করতে থাকে কেউ বাড়িতে কেউ লজিং এ ।তাদের এমনি অভাব ছিল যে অনেক সময় সকালে নাস্তা না খেয়েও স্কুলে যেতে হতো । ছেলেটির স্কুল জীবনের কিছু কথা না বলে থাকতে পারলাম না । ছেলেটির স্কুল জীবনের একটি ঘটনা বলি -সকালে স্কুলে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত কিন্তু এখনো পেটে কোন খাবার জোটেনি কি আর করা, কারণ ঘরে কোন খাবার ছিলনা , বাবার কাছেও কোন টাকাও নেই। স্কুল থেকে ফিরা হবে বিকাল ৫ টায় । হয়তো সারাদিন আর কিছু জুটবেনা তার ।মাঝখনে লেজার পিরিয়ড , বন্ধুরা সবাই যখন নাস্তার জন্য যায় আর তাকে শুধু CLASS ROOM বসে থাকতে
তার এক বন্ধু ছিল- নাম সাইফুল। লেখাপড়া করার বিষয় তারও ছিল বেশ সহযোগিতা । class six to s.s.c exam পর্যন্ত তাকে কখনো class এ প্যান্ট পরা অবস্থায় দেখা যায় নাই , লুঙ্গি পড়ে তাকে class করতে হয়েছে । অবশ্যই তাকে এই জন্য sir দের বকা খেতে হয়েছে । কিন্তু সেতো তার অভাবের কথা কাউকে বলতে পারছেনা । class এ ,বন্ধুদের সাথে, খেলাধুলা আর আড্ডায় কেউ বুঝতে ও পারেনি তার শত অভাবের কথা । মাঝে মধ্যে তাকে কাগজ, কলম্, ও বই ধার করে লেখাপড়া করতে হত । পারিবারিক শত অভাবেও তাকে তার পথ থেকে সরাতে পারেনি । s.s.c পরীক্ষার পর্বে, test পরীক্ষায় সে সকল বিষয়ে পাশ করায় স্থানীয় এমপি তাকে ২০০০ টাকা দিলে বাকি আরও ১৫০০ টাকা তাকে মাঠে বদলা দিয়ে আয় করে ফরমফিলাপ করতে হয় । পাঁচ সন্তানের লেখাপড়া চালানোর জন্য বাবার চেষ্টা ছিল প্রাণপণ । বাবা, মায়ের ও ভাই বোনের কষ্টের কথা ভাবে ছেলেটি s.s.c exam দিয়ে ঢাকায় চাকুরীর জন্য চলে যায় । ১৫০০ টাকা বেতন তাতে আবার থাকা- খাওয়া । s.s.c পাশ করার পর সে college এ ভর্তি হয় । লেখাপড়া আর চাকুরী একসাথে চালায় সে ।H.s.c পাশ করে সে চাকুরী ছেড়ে আবার লেখাপড়ায় মনোযোগী হয় ।H.s.c পর অনাসে ভর্তি হয় (Accounting) subject-এ । তার অনাস করা অবস্থায় কখনো , লজিং, কখনো টিউশনি করে , সংগঠন ও বন্ধু -বান্ধবের সহযোগিতায় করতে সক্ষম হয় । একটি কথা না বলে পারা যায় না - দীর্ঘ ৭টি বছর যাদের কাছে সে ছিল , তাদের অবদানে তার এই পথ আরো সুগম হয় । তাদের কথা বলে শেষ করা যাবে না । নিজের সন্তানের মত যারা আদর যত্ন করত । এখন পর্যন্ত নিজের পরিবারের সদস্যই মনে করে। অনার্স শেষ করে সে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বিদ্যাপিঠ প্রাচ্যের অক্সফোর্ড নামে খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্স করছে । তার ছোট ভাইয়েরা ও অনেক সংগ্রাম করে লেখাপড়া করতেছে । তার ইমিডিয়েট ছোট ভাই অনার্স 4th year(Accounting), তার ছোটজন ফাযিল , তার ছোটজন ডিগ্রী ১ম, এবং বোন ইন্টারমিডিয়েটে পড়ে । দারিদ্র বা অভাব তাদের বিন্দুমাত্র বাঁধা সৃষ্টি করতে পারেনি । বাবা মায়ের চেষ্টা আর তাদের অদম্য চেষ্টা তাদের থামাতে পারেনি। তার বাবা এখনো চায় ছেলেমেয়েরা লেখাপড়া করুক। এবার আসা যাক "কোরবানির " প্রসঙ্গে । তার বাবার স্বল্প আয়ে সংসার পরিচালনা আর ছেলেমেদের লেখাপড়া চালানো ছিল খুব কঠিন । তাইতো প্রতি বছর ঈদ আসে ঈদ যায় কিন্তু তারা কখনো "কোরবানি " দিতে পারেনি । তার বন্ধুরা কোরবানের ঈদ আসলে তাকে বলে - তোমাদের গরু কিনছিস কি না? দাম কত? আর ছেলেটি কোন কথা না বলে চুপ থাকত । এভাবে তার জীবনে সে কখনো পারিবারিক ভাবে "কোরবানি " দেখেনি । যাহোক , এখন সে আর তার ভাইরা বড় হয়েছে তাই এবার সিদ্ধান্ত নিয়েছে "কোরবানি " দিবে । তাইতো তার ফেমিলি প্রথম "কোরবানি " দিতে পেরে একটু বেশিই আনন্দিত । জীবনে প্রথম "কোরবানি " তার জন্য হবে নতুন অভিজ্ঞতা । আপনার জীবনে যদি প্রথম "কোরবানি " দেন আনন্দটা কি রকম হবে?
বিষয়: বিবিধ
১৬২৬ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আমাকেই যেন দেখলাম..
আলহামদুলিল্লাহ, আজ আমরা ৮ভাই-বোনই কুরবানী দিতে পারি
আল্লাহর উপর অগাধ আস্থা ও দৃঢ় মনোবল এবং প্রাণান্ত প্রচেষ্টা থাকলে সাফল্য নিশ্চিত- ইনশাআল্লাহ
এমন ইতিহাস অসংখ্য পরিবারের- আমরা ক'জনের খবর রাখি!!!
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ, জাযাকাল্লাহ
ঈদের শুভেচ্ছা- কুরবানী ও ঈদ মোবারক
ত্যাগের আলোয় ব্যক্তি ও সমাজ জীবন আলোকিত হোক
মন্তব্য করতে লগইন করুন