***উপলব্ধি*** ছোট গল্প (পর্ব ৩)
লিখেছেন লিখেছেন egypt12 ১৮ মে, ২০১৪, ১০:৩৬:১৮ রাত
***উপলব্ধি*** ছোট গল্প (পর্ব ১)
***উপলব্ধি*** ছোট গল্প (পর্ব ২)
(এভাবেই কথা শুরু, রাজ্জাক নিজেকে অবিবাহিত পরিচয় দিল, শান্তা বলল সে প্রথম দর্শনেই রাজ্জাকের প্রেমে পড়ে গেছে...কথা চলল রাত তিনটা পর্যন্ত; রাজ্জাক ফিরে এল বাসায়। ইতিমধ্যে রাজ্জাক বিদেশী টাকা গুলো কোথায় ভাঙ্গাবে তাও মোটামুটি ঠিক করে ফেলেছে।)
২দিন পরের সকাল
আজ রাজ্জাক খুব খুশি শান্তা তার সাথে ঘুরতে যাবে। (শান্তা জানে রাজ্জাকের বাবা ডিসপেনসারী মালিক, ছেলেকে চট্টগ্রাম শহরে ডিসপেনসারীর দোকান করে দেবে তাই রাজ্জাক মেডিসিনের উপর তিন মাসের একটি শর্ট কোর্স করার জন্য চট্টগ্রাম এসেছে এবং খালার বাসায় উঠেছে। রাজ্জাকই শান্তাকে এসব বলেছে) শান্তা স্যানমারের সামনে রাজ্জাকের জন্য অপেক্ষা করছিল। রাজ্জাক রিক্সায় স্যানমারের সামনে আসলো এবং শান্তাকে নিয়ে “ফয়’স লেক” ঘুরতে গেল। এভাবেই তারা ৫ দিনে পর পর তিনবার দেখা করল এবং ইচ্ছে মত ঘুরে বেড়ালো। এরই মাঝে শেষ দিন শান্তা বলল আগামী মাসে সে গ্রামের বাড়ি ‘চকরিয়া’ যাবে। তবে যাওয়ার পথে তার শখ রাজ্জাককে নিয়ে দুইদিন ‘বান্দরবন’ ঘুরে আসা। শান্তা চকরিয়া যাবার পথেই বান্দরবনের রাস্তা পড়ে, তবে অনেক শখ থাকলেও সে কখনো বান্দরবন যায়নি(শান্তার চোখে আরও অনেক কিছুর সিগন্যাল ছিল; তাছাড়া ইতিমধ্যে তারা অনেক ঘনিষ্ঠ হয়েছে)। তাই রাজ্জাক সহজেই খুশিতে রাজি হয়ে গেল।
এত তাড়াতাড়ি শান্তা তাকে এত বিশ্বাস করবে রাজ্জাক কখনই ভাবেনি! কিন্তু জেবুও তো তাকে বিশ্বাস করে ঘর ছেড়েছিল? রাজ্জাক দুপুরের খাবার খাওয়ার পর শুয়ে শুয়ে ভাবছিল... পরে রাজ্জাক সিদ্ধান্ত নিল সে জেবুকেও ঠকাবে না আর শান্তাকে বিয়ে করে কক্সবাজার রাখবে আর জেবুকে ঢাকা বা কুমিল্লা। এতে রাজ্জাক জেবুকেও ছাড়তে হবে না আর শান্তার মত অপরূপ মেয়েও তার ঘরণী হয়ে তার জীবন সার্থক করে তুলবে। এই প্ল্যানটাই ভালো হবে বলে রাজ্জাক উচ্ছসিত হয়ে উঠে...জেবুর ঘুম ভেঙ্গে যায় এতে রিয়াদ তখনও গভীর ঘুমে মগ্ন...জেবু রাজ্জাকের ভাবসাব বুঝতে ব্যর্থ হয়ে গত ৪-৫ দিন ধরে রাগ করে কথা বলছে না। রাজ্জাকও জেবুর রাগ ভাঙাচ্ছে না(টাকার ব্যাপারটা গোপন রাখার জন্য, জেবু রাগ করে থাকায় রাজ্জাক এখন জেবুকে কৈফিয়ত দিতে হচ্ছে না, এটাই সুবিধা রাজ্জাকের জন্য)।
শান্তা আজ রাজ্জাককে নিয়ে বান্দরবন যাবে, রাজ্জাকও শান্তার সাথে বান্দরবন গিয়ে দুইদিন থাকবে ভাবতেই রাজ্জাকের খুশি যেন ধরে না। গত রাতে তাই ঘুমও হয়নি। সে তার বন্ধু লন্ড্রি কর্মচারী তাপস থেকে দুই সেট ভালো কাপড় ধার নিয়েছে আর নিজের কাছে থাকা সর্বশেষ চৌদ্দ হাজার টাকা থেকে আট হাজার টাকা সাথে নিল এবং সতর্কতা স্বরূপ পঞ্চাশ হাজার মূল্যমানের বিদেশী টাকার একটি ব্যান্ডেলও নিল। সে জেবুর কাছ থেকে বিদায় নিল এবং চিন্তা করতে নিষেধ করে বলল “একটু দূরে যাইতাছি একটা জায়গা বেচার কাজ পাইছি আমাগোর দিন ফির্যা যাইব দেখবা”। জেবু সহাস্যে সরল ভঙ্গীতে রাজ্জাককে বিদায় জানালো “ফি আমানিল্লাহ”।
শান্তা রাজ্জাকের জন্য মুরাদপুর অপেক্ষা করছে... কিছুক্ষনের মধ্যেই রাজ্জাক এখানে এসে শান্তার সাথে মিলিত হল; সাথে সাথেই শান্তা বলল- তোমার ভাইয়ের পাঠানো বিদেশী টাকা গুলো নিছ?
রাজ্জাকঃ হ্যাঁ নিছি।
শান্তাঃ চলো আমি একটু আমার বান্ধবীর বাসায় যাব। তোমার জন্য কেনা গিফট গুলো ওখানেই রেখেছি; আম্মু দেখলে রাগ করবে তো।
রাজ্জাকঃ তাইলে চল দেরি না করে ওখানেই যাই।
তারা একটা সি.এন.জি নিয়ে অক্সিজেনের দিকে ছুটল...
রাজ্জাক শান্তার বান্ধবীর বাসায় বসে আছে, শান্তা ভেতরে। কিছু সময় পর সে শান্তাকে অন্য কাপড়ে দেখতে পেলো...
রাজ্জাকঃ শান্তা দেরী হইয়া যাবে তো, তাড়াতাড়ি কর।
শান্তাঃ এইতো হয়ে যাবে... ঠিক তখনই রাজ্জাকের দুই হাত দুই যুবক এসে শক্ত করে ধরে ফেলল এবং তাকে মেঝেতে শুইয়ে মারতে লাগলো। যুবকদ্বয় তার সাথে থাকা সব টাকা পয়সা ও মোবাইল নিয়ে নিল...মারের চোটে সে জ্ঞান হারাল...
কিছুক্ষন পর...
রাজ্জাকের জ্ঞান ফিরেছে তার দুই হাত, দুই পা ও মুখ বাঁধা, শান্তা ও তার মা তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে, শান্তার মুখে তাচ্ছিল্ল্যের হাঁসি। রাজ্জাক কিছুই বুঝে উঠতে পারলো না এবং শান্তা বলল “এই গাধার বাচ্চা রাজ্জাক তোর কি মনে হয় তোর মত একটা খেতকে আমি বিয়ে করব? তোর উচ্চারণও তো ঠিক নেই শুদ্ধ বাংলায় কিছুই বলতে পারিস না। ( রাজ্জাকের চোখে পানি সে কিছু বলতে চাইছিল কিন্তু মুখ বাঁধা থাকায় সে কিছুই বলতে পারলো না, এরমধ্যে এক যুবক তার নাকে রুমাল চেপে ধরল...
একটি হাত-পা বাঁধা মানুষের লাশ নেভালের রাস্তায়... লাশ ঘিরে উৎসুক জনতার ভিড়... কিছুক্ষনের মধ্যেই পুলিশ চলে আসবে...
কিন্তু না লাশটি নড়াচড়া শুরু করল, কিছু মানুষ ভয় পেয়ে দূরে সরে গেল কিন্তু এক মধ্যবয়সী মানুষ তার হাত ও পায়ের বাঁধন খুলে দিল, মানুষটির প্রথম প্রশ্ন ছিল তোমার নাম কি? রাজ্জাক উত্তর আসলো...
রাজ্জাকঃ আমি কোথায়?
মধ্যবয়সী লোকঃ এটা নেভাল পতেঙ্গা সি-বিচের কাছাকাছি।
রাজ্জাক এবার উঠে দাড়ালো সে বুঝল মানুষ পুলিশকে খবর দিয়েছে... সে কোন পুলিশি সমস্যায় জড়াতে চাইলো না, তাই দ্রুতই স্থান ত্যাগ করল...
বাসায় এসে রাজ্জাক জেবুকে জানালো সে ছিনতাই কারীর খপ্পরে পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জেবু এটা শুনে বলল হাজার শুকরিয়া তুমি ঠিক আছ, আমি এতেই খুশি। বলতে না বলতেই চোখ দুটো জুড়ে অশ্রু টলমল করতে লাগলো... বয়ে পড়া খুশি ও সন্তুষ্টির অশ্রুগুলো রাজ্জাক পরম মায়ায় জেবুর চোখ থেকে মুছে দিতে দিতে ভাবল; ‘তার জেবুই তার জন্য ঠিক ব্যক্তি যে তাকে সরল মনে ভালবাসে অথচ তার প্রতি তেমন চাহিদাও নেই’। তৎক্ষণাৎ রাজ্জাক সিদ্ধান্ত নিল জেবুকে নিয়েই সে আগামীর পুরো পথ চলবে আর কখনই সে তাকে ঠকানোর চেষ্টা করবে না... শান্তার কথা মনে আসতেই রাজ্জাকের শরীরে হিম বিদ্যুৎ বয়ে গেল (রাজ্জাক শুধু ভাবল ভাগ্য ভালো যে শান্তার কাছে শুধু একটি ব্যান্ডেল নিয়ে গিয়েছিল আর জেবু ঘটে যাওয়া এসবের কিছুই জানে না)
সকাল নয়টায় রাজ্জাক জেবুর হাতের বানানো নাস্তা খেয়ে বাসা বের হল আগ্রাবাদের ব্যাংক পাড়ায় যাবার জন্য। উদ্দেশ্য ওখানে ভালো একজন ব্রোকার খুঁজে নিয়ে একটি ব্যান্ডেল ভাঙ্গানো। ইতিমধ্যে রাজ্জাক একজন ব্রোকারকে পেয়ে টাকা ভাঙ্গানোর কথা বলল...
ব্রোকারঃ কোন দেশের মানি।
রাজ্জাকঃ ইন্দোনেশিয়া।
ব্রোকারঃ (অবাক হয়ে) কত টাকা আছে?
রাজ্জাকঃ এখন এক ব্যান্ডেল মানে ৫০০০০ বিদেশী টাকা।
ব্রোকারঃ অনেক!
(রাজ্জাক ভয়ে কাঁপছে)
.
চলবে...
বিষয়: সাহিত্য
১৫২৩ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
>>> নাহ চকোরিয়াই বেটার
>>> হুম মাহমুদ ভাই গল্পের চর্চাও করে যাচ্ছি
মন্তব্য করতে লগইন করুন