সত্য ঘটনা অবলম্বনে (৩৩) ঃ হুরপরী

লিখেছেন লিখেছেন ড: মনজুর আশরাফ ২৩ মে, ২০১৪, ০৮:২৬:০৪ রাত

-১-

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।

রাত দেড়টা।

ছাত্রলীগ নেতা তামিম এক হলের ছাদে বসে আছে। আবুইল্লা কোন বিদেশী মাল পায়নাই। তাই আজকেও দেশী মদ। সমস্যা হল দেশী টায় ভেজাল থাকে। ঘোর ও তেমন ধরেনা। পেট নামে। এক হাতে জ্বলজ্বলে গাজা। এর আগে ইয়াবা ট্যাবলেট খেতে পারলে দারুণ হত। তামিম ইয়াবা, গাজা আর দেশী মালের সম্মিলিত ঘোর দারুণ মিস করছে!

তামিমের হঠাৎ মনে হল ১০-১২ জন শিবির কর্মী দু’দিক থেকে তার দিকে এগিয়ে আসছে।

এরা এখানে কিভাবে আসল? সারা ক্যাম্পাস তো শিবির শূন্য।

আর নিচেও তো কয়েকজনের তাস খেলার কথা। ওদের তো আগেই জানানোর কথা।

আমি কি স্বপ্ন দেখছি?

আমার গলা শুকিয়ে আসছে।

এরা আমাকে কি করবে? আমার রগ কাটবে? আমি যেভাবে কাটি?

কতজনের কেটেছি?

১০, ২০ নাকি ৩০?

কত বছর ধরে কেটেছি?

১০ নাকি ২০?

নাহ, দেরি করা যাবে না।

তামিম দৌড় দিল। সুপার-দৌড়! মুহূর্তে নিচে নেমে এল।

হলগেটেই কি পুলিশ দেখছি?

‘ওই ঠোলারা, এখানে কি কর? উপড়ে যে শিবিরের দলবল গেসে খবর রাখ? দৌড় দে উপরে।

সবগুলারে গ্রেফতার করবি। তারপর থানায় আমারে খবর দিবি।’

‘সার, কেউ তো যায়নাই’। আপনি হয়ত ভয় পাইসেন। অন্ধকারে কি না কি দেখসেন?’

দুর আবালের দল। কথা বন কইরা দৌড় মার। শিবির ধর।

আচ্ছা আমি দিব্য দৃষ্টিতে কি দেখলাম। মদ, গাজার নেশা তো আমার বহু পুরানো। কিন্তু এমন আশ্চর্য ঘটনা তো আগে দেখিনাই।

**

মতিহার থানা পুলিশের একটি দল হলে তল্লশি চালায় । তবে কাউকে আটক করতে পারে নি পুলিশ।

-২-

‘মায়া। আমি তোমার হুর-পরী।’

এটা তো ব্যাংককের রাস্তা হওয়ার কথা। কারন আমি সপ্তাহ ধরেই ব্যাংককে।

পত্রিকা লিখেছে আমার ছেলে অর্ডার আর টাকা সাপ্লাই দিসিল। আর আমার আর্মির জামাই সাতজনকে মেরে পেট কেটে ইট ঢুকিয়ে শীতলক্ষ্যায় ডুবিয়েছে।

‘মায়া। আমি তোমার হুর-পরী।’

উফ, এত বিরক্ত কে করছে?

আমার সামনে এ মেয়েটি কে? এতো থাই কোন মেয়ে নয়।

বাঙ্গালী ও নয়।

কোন দেশী? এত সুন্দর মেয়ে কোন জাতের হয়?

তাহলে কি বেহেশতি হুর? আমি কি তবে বেহেস্ত পাব? বা পেয়ে গেছি?

আমার হাত লাল কেন? এ কি রক্ত? মেয়েটির চেহারা বদলে গেল কেন? তার সারা মুখে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে কেন? চারিদিকে রক্তের ফুলকি বইছে কেন? তবে কি এ নরক? এখানে পীযুষ কে দেখি কেন? একজন হিন্দু আর একজন মুসলমান একসাথে কিভাবে বেহেস্তে থাকে?

‘মায়া। আমি তোমার হুর-পরী।’

এ কি নরক? নরকে কি হুরপরি থাকে? রক্তাভ মেয়েটি কোথায়? চারদিকে ভয়ঙ্কর প্রাণী এগুলো কি?

এ তো বড়ই দুঃস্বপ্ন!

-৩-

টিএসসির মোর। চা আর বিস্কুট খাচ্ছি।

বন্ধুরা মিলে আড্ডা দিচ্ছি।

পাশেই একজন আরেকজনকে বলল, 'জান্নাতে ৭০ জন হুরপরী নিয়ে কি করবে?'

আমি আর থেমে থাকতে পারলাম না, 'ভাই, এর জন্য মুরোদ লাগে। সবার মুরোদ থাকেনা। তাই চিন্তা ও জাগে না।'

উস্কো-খুস্কো, চারুকলা ব্যগ কাধে আর গঞ্জিকার ঘ্রাণে মাতম ওই লোকের আশেপাশে আলালের ঘরে দুলাল টাইপ দুই নম্বরী টাকার লাফাঙ্গা কয়েকটা ছেলেকে ও দেখলাম। মনে হল: তলা ফুটা কয়েকটা আবালকে ওই নাস্তিকটা তার বিশেষ জ্ঞান খামাখাই দিচ্ছে!

আমার কথা শুনে ওই চার পাচ জন হায়না-চোখে আমার দিকে তাকাল - যেন শিকার পেয়েছে!

তীক্ষ্ণ দৃষ্টি সম্পুর্ন উপেক্ষা করে আমি বললাম: "ভাই, যে হুরপরী নিয়ে আপনারা যতই অবগ্গা করছেন অথবা জান্নাতের লালসা আর সুখ নিয়ে হাসছেন - তার প্রত্যেকটা জিনিস পেতে এই পৃথিবীতে আপনার দিন-রাত প্রচেষ্টার শেষ নাই। ধর্ম ফ্ল্যাশ করেছেন সেই কোন কালে। তাই লালসা ছাড়া যে মনে কিছু থাকার কথা না সেটা একটা আবাল ও বুঝে! আর যদি ধর্ম ও নাই - লালসা ও নাই বলেন - তাইলে তো আমারও looser কে কিছুই বলার নাই! মনে এক আর বাইরে আরেক কথা বলে খামাখাই ধর্মকে গালি দিচ্ছেন! এরকম দুই মুখী সাপের নীতি ছাড়েন!

বলেই উঠে পড়লাম। কি বলবে? কিছু বলার নাই। যতই আবালীয় প্রলাপ দিক, তাতে কার কি আসে যায়।

রিক্সায় উঠে পড়লাম।

শাহবাগিয় নাস্তিক সম্প্রদায়ের আস্ফালন নতুন কিছু নয়। আগে ছিল গর্তে লুকানো। এখন বের হয়ে রাজপথে সার্কাস দেখাচ্ছে। কারা যেন অদৃশ্য সুতায় নাস্তিক নাচাচ্ছে!

-৪-

আমি কোথায়? এক গাছতলায় শুয়ে। সারা আকাশ ভরা তারা। পরিস্কার আকাশ-পথ দেখা যাচ্ছে।

মাগরিব এই গাছ তলায় পড়েই শুয়ে পড়েছিলাম।

এই উঠলাম।

আমার কোন বাড়ি নাই। সরকার রাব-পুলিশ দিয়ে বাড়ি গুড়িয়ে দিয়েছে।

বাবা মা চাচার বাসায় উঠেছে।

আমার খাওয়ার জায়গা নাই।

অমলের দোকান আমার খাওয়ার জায়গার মোটামুটি একটা শেষ অবস্থান। কোথাও কিছু না জুটলে চলে আসি।

কালিপূজা উপলক্ষে আমার জন্য বেশ মজার মিষ্টি পাঠিয়েছিল ওর ছেলেকে দিয়ে।

.. এই ছেলে ছোট কালে একবার গাছ থেকে পড়ে হাত ভাঙ্গলে আমি ই নিজ দায়িত্বে হাসপাতালে নিয়ে যাই - তারপর অমলকে খবর দেই।

সেই যে ওরা আমার ভক্ত হল! আমি এখানকার শিবিরের দায়িত্বশীল আর পুলিশের খাতার দাগী আসামী তো কি - ওর পরিবারের কাছে তো সর্বপ্রিয়। আমার কাছে মনে হয় এটাই বড় অর্জন!

আমি দুপুরে খেতে গেলে খাওয়ার পরে ছেলেটাকে পাঠিয়ে দেয়। কারন আমার টাকা তো নিবেই না। অবশ্য ইদানিং টাকা ও থাকেনা! তাই নিজ -ইচ্ছায় ঘন্টা খানেক ছেলেটাকে পড়াই। যেন পড়ানোর বিনিময়ে খাদ্য!

হটাত মলে হল: দেশ আজ জ্বলছে। ঘরে ঘরে ঢুকে শিবির-জামায়াত-বিরোধী দলের নেতা-কর্মী ধরে নিয়ে যাচ্ছে। মেরে ফেলছে। লাশ গুম করছে। মানুষ বড় আতঙ্কে আছে। যারা কোন রাজনৈতিক দলের সাথে নয় - তারাও রেহাই পাচ্ছে না দানবদের থেকে!

হটাত মনে হল:

'দেশ' বুঝি একজন মানুষ।

সে কি আমার সামনে বিষন্ন বসে আছে।

সে কি একজন বিষন্ন মায়াবতী!

বিধ্বস্ত - আলুথালু বেশের কেউ?

হায়নারা কি একে হুরপরী ভাবে?

ঝাপিয়ে পড়ে? অসম্মান করে? ছিন্নভিন্ন করে ফেলে? অন্যের হাতে তুলে দেয়?

পশুরা এরপর 'দেশ' নামক হুরপরীকে ছিন্ন ভিন্ন করতে অন্য পশুদের ডাকে?

**

আবির আর ভাবতে পারছে না! ভয়ঙ্কর মাথা ব্যথায় কাতরাচ্ছে। এ কেমন যন্ত্রণা?

শরীরের যন্ত্রণা আর মনের যন্ত্রণা যখন একাকার এই তারাভরা রাতে:

"যন্ত্রণা কাকে বলে হে দেশ তুমি কি জান?

তোমার মানুষদের পেট চিরে ইট ভরে নদীতে ডুবায়,

যুবকেরে ধরে পায়ে গুলি করে জেলে পুড়ে,

কিংবা হত্যা করে লাশ গুম করে ফেলে।

অন্যদিকে তোমার স্তুতি গেয়ে নরখাদকেরা মালা পড়ায় স্বাধীনতা দিবসে

আর বাড়ি ফিরে গিয়ে সম্রাজ্যবাদী প্রভুর শেকল গলায় পড়ে নেয়।

তুমি কি করে জানবে যন্ত্রণা কাকে বলে?

তোমার আরেক দল নিস্তব্ধ স্বার্থপরের দল নদীতে ভেসে উঠা লাশ দেখলে দুর্গন্ধে থুথু ফেলে।

গুম হওয়া যুবকের কোলের শিশুকে রাজাকার আখ্যা দিয়ে পাশ কেটে যায়।

**

হে দেশ, চুপ কেন তুমি?

তুমি কি অভিশাপ দিচ্ছ?

আনন্দরত নরখাদকদের আর তাদের প্রতি নিরব সমর্থনরতদের অন্ত কি ঘনিয়ে আসছে?

(ওদের) বড় যন্ত্রনাদায়ক অন্তের অভিশাপ কি দিয়ে চলেছ নিরত?"

বিষয়: বিবিধ

২০৪৩ বার পঠিত, ৫ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

225159
২৩ মে ২০১৪ রাত ০৮:৩৩
দুষ্টু পোলা লিখেছেন : আমিও হুর পরি চাই Love Struck Love Struck Love Struck
225162
২৩ মে ২০১৪ রাত ০৮:৪৭
শিশির ভেজা ভোর লিখেছেন : একসাথে সবি টেনে এনেছেন। তবে ভালো লাগলো। বিশেষ করে হুরপরী নিয়ে গাঞ্জাটুদের মন্তব্যে এবং তার সাথে আপনার পাল্টা আক্রমণ ।
225175
২৩ মে ২০১৪ রাত ০৯:০৫
বিন হারুন লিখেছেন : Rose Rose
225176
২৩ মে ২০১৪ রাত ০৯:১২
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : Rose @};
চমৎকার লিখাটির জন্য অনেক ধন্যবাদ।
225187
২৩ মে ২০১৪ রাত ০৯:৫৫
ভিশু লিখেছেন : ভালো লাগ্লো...Happy Good Luck

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File