আসহাবে কাহাফ :একবিংশ শতাব্দী

লিখেছেন লিখেছেন ড: মনজুর আশরাফ ০৩ মে, ২০১৩, ০৫:০৭:০৩ সকাল

--আসহাবে কাহাফ : অতীত --

আল্লাহ বলেন, "যখন কজন যুবক গূহায় আশ্রয় নিলো এবং তারা বললোঃ হে আমাদের রব ! তোমার বিশেষ রহমতের ধারায় আমাদের প্লাবিত করো এবং আমাদের ব্যাপার ঠিকঠাক করে দাও৷” (সুরা কাহাফ: ১০)

ইমাম ইবনে কাসীর বলেন, এখানে আল্লাহ ক'জন ঈমানদার যুবকের কথা বলছেন যারা সরকার ও লোকদের থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছিল ধর্মের খাতিরে (ঈমানী পরীক্ষায়) অত্যাচার বা হত্যা-ভয় থেকে রক্ষার্থে। প্রতিকুল সমাজ থেকে আত্মরক্ষার্থে তারা একটি পাহাড়ের গুহায় আশ্রয় নিলেন আর আল্লাহর কাছে মনের আকুতি পেশ করলেন - "হে আমাদের রব ! তোমার বিশেষ রহমতের ধারায় আমাদের প্লাবিত করো।" অর্থাৎ আপনার দয়ায় আমাদের সিক্ত করুন এবং শত্রুদের থেকে আমাদের পৃথক রাখুন। এরাই হলেন 'আসহাবে কাহাফ বা গুহাবাসী।

তারা আরও দোয়া করলেন, " আমাদের ব্যাপার ঠিকঠাক করে দাও।" অর্থাৎ আমাদের বিষয়াবলী ও ভাগ্য সুপ্রসন্ন করে দিন। আমাদের এক উত্তম ফলাফল দান করুন।এজন্য আহমদ (৬:১৪৭) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (দ) বলেন, " (হে আল্লাহ) যাই আমাদের জন্য নির্ধারিত করে দিন, তাতেই ভাল সমাপ্তি রাখুন।"

আল্লাহ বলেন, " ... আমি তাদের সঠিক পথে চলার ক্ষমতা বাড়িয়ে দিয়েছিলাম৷ (আয়াত: ১৩)"

বুখারী (রহ) ও অন্যান্য স্কলারদের মতে আল্লাহ তাদের (আসহাবে কাহাফদের) ঈমানের উন্নতি দান করেছিলেন এ ঘটনার মাধ্যমে। ঈমানের উন্নতির এ বিষয়টি আরও কিছু আয়াত দিয়ে বিশ্লেষন করা যায়:

(১) "আর যারা হিদায়াত লাভ করেছে আল্লাহ তাদেরকে আরো অধিক হিদায়াত দান করেন৷ এবং তাদেরকে তাদের অংশের তাকওয়া দান করেন৷" (৪৭:১৭)

(২) "যারা ঈমান এনেছে, ফলে তা যথার্থই ঈমান বাড়িয়েই দিয়েছে এবং তারা এর ফলে আনন্দিত৷" (৯:১২৪)

(৩) "তিনিই তো সে সত্তা যিনি মু’মিনদের মনে প্রশান্তি নাযিল করেছেন - যাতে তারা নিজেদের ঈমান আরো বাড়িয়ে নেয়৷ আসমান ও যমীনের সমস্ত বাহিনী আল্লাহর কর্তৃত্বাধীন৷ তিনি মহাজ্ঞানী ও কৌশলী৷" (৪৮:৪)

ওই যুবকদের প্রসঙ্গে আল্লাহ বলছেন, "আমি সে সময় তাদের চিত্ত দৃঢ় করে দিলাম যখন তারা উঠলো এবং ঘোষণা করলোঃ “আমাদের রব তো কেবল তিনিই যিনি পৃথিবী ও আকাশের রব৷ আমরা তাঁকে ছাড়া অন্য কোনো মাবুদকে ডাকবো না৷ যদি আমরা তাই করি তাহলে তা হবে একেবারেই অনর্থক৷" (আয়াত: ১৪)

ইবনে কাসীরের মতে, আল্লাহ তাদের "ধৈর্য শক্তি" (অপপ্রচার, অত্যাচার ইত্যাদির মোকাবেলায়) দান করেছিলেন সরকার, সমাজের কুচক্রের বিরুদ্ধে - যার জন্য বিত্ত বৈভবের জীবন, সংসার-পুত্র-কন্যা-স্ত্রী, জীবিকা (ব্যবসা, চাকুরী) সব কিছু পরিত্যগ করে ঈমান রক্ষার্থে এবং বিরোধী শক্তির অত্যাচার-হত্তাজগ্গ থেকে বাচার জন্য পাহাড়ে পালিয়ে গিয়েছিলেন।

আল্লাহ বলেন, "তারা পরস্পরকে বললোঃ) “এ আমাদের জাতি, এরা বিশ্বজাহানের রবকে বাদ দিয়ে অন্য ইলাহ বানিয়ে নিয়েছে৷ এরা তাদের মাবুদ হবার সপক্ষে কোনো সুস্পষ্ট প্রমাণ আনছে না কেন ? যে ব্যক্তি আল্লাহর প্রতি মিথ্যা আরোপ করে তার চেয়ে বড় জালেম আর কে হতে পারে ? এখন যখন তোমরা এদের থেকে এবং আল্লাহ ছাড়া যাদেরকে এরা পূজা করে তাদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছো তখন চলো অমুক গুহায় গিয়ে আশ্রয় নিই৷ তোমাদের রব তোমাদের ওপর তাঁর রহমতের ছায়া বিস্তার করবেন এবং তোমাদের কাজের উপযোগী সাজ সরঞ্জামের ব্যবস্থা করবেন৷”

তাফসিরকারকদের থেকে বর্ণিত যে, ওই যুবকেরা তত্কালীন সরকার বা রাজাকে আল্লাহর প্রতি পরিপূর্ণ আত্মসমর্পণের জন্য তথা 'আল্লাহর সার্বভৌমত্ব' স্বীকার করে নেয়ার উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছিলেন। কিন্তু রাজা ওই আহ্বান অস্বিকার করত তাদের জীবন নাসের হুমকি দিয়েছিল। এমনকি তাদের অত্যাচার-নিগ্রহ ও করেছিল - তাদের বস্ত্রহীন করেছিল। নিগ্রহের ভয়ঙ্কর অবস্থা থেকে শেষ পর্যন্ত তারা পালিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছিলেন এবং পাহাড়ের গুহায় পালিয়ে যান জীবন রক্ষার্থে আল্লাহর অনুগ্রহে। এজন্যই শরীয়তসিদ্ধ নিয়ম হল, অত্যাচার ও ফিতনার সময়ে ইমান রক্ষার স্বার্থে জীবনের ঝুকি না নিয়ে অত্যাচারী থেকে পালিয়ে যেতে হবে।

ফাতহ-আল-বারী (৭:১১) থেকে বর্ণিত হাদিসে একই রকম চিত্র ভেসে উঠে:

"শিঘ্রই এমন এক সময় আসবে যখন (প্রকৃত ঈমানদারদের) সবচেয়ে উত্তম সম্পদ হবে 'ভেড়া' যা তারা পাহাড়ের চূড়ায় চরাবে যেখানে বৃষ্টিধারা বর্ষিত হয়। কারণ তারা অত্যাচারী ও হত্যাকারীদের থেকে পালিয়ে বেড়াবে ধর্মের (ঈমানী পরীক্ষায়) খাতিরে।"

-- আসহাবে কাহাফ : বর্তমান --

বিশ্ব ব্যপী মজলুম ঈমানদাররা হয় কুফরী পরাশক্তি অথবা মুসলিম নামধারী আল্লাহ-বিরোধী স্বৈরাচারী শক্তির বিরুদ্ধে আন্দোলনরত।

বাংলাদেশের সেকুলার মুসলিম নামধারী ও প্রচন্ড ইসলাম-বিদ্বেসী সরকার আল্লাহ-রাসুল-প্রিয় মানুষদের উপর অত্যাচারের স্টিম- রোলার চালাচ্ছে! ইসলামের কথা বলার জন্য তাদের গ্রেফতার করে জেলখানা ভরে ফেলা হচ্ছে -- অত্যাচার করে অন্ধ করে দেয়া হচ্ছে -- পঙ্গু করা হচ্ছে -- মেয়েদের জেলখানায় বন্দী করা হচ্ছে -- পুলিশ বিষাক্ত গ্রেনেড ব্যবহার করছে জামায়াত, শিবির, অথবা ইসলামপ্রিয় দেশপ্রেমিকদের হত্যা করতে -- রিমান্ডে নিয়ে তীব্র অত্যাচার করা হচ্ছে নেতা-কর্মীদের-- সব ই ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ইসলামী অন্দোলনের জন্য নিবেদিত ঈমানদারদের উপর মুনাফিক আর কাফেরদের অত্যাচার -- মানবাধিকারহীন, গণতন্ত্র,নায়-বিচার অবরুদ্ধ শোষণ মাত্র!

ইসলামের জন্য নিবেদিত মানুষেরা পালিয়ে বেড়াচ্ছে 'বাংলাদেশ' নামক গুম রাজ্যে। পরিবার পরিজন বিচ্ছিন্ন, জীবিকা বিহীন, কষ্টের জীবন প্রবাহে ধাববান ২০১৩ এর বাংলাদেশের 'আসহাবে কাহাফের অবয়বেরা ! শুধু ঈমান রক্ষার্থে অত্যাচারী শাসকের খরগ-হস্ত থেকে বাচতে পালিয়ে বেড়ানো বাংলাদেশের ইসলাম-প্রিয় মানুষদের উপর আল্লাহর শান্তি বর্ষিত হোক -- আসহাবে কাহাফ্ দের মত আল্লাহ তাদেরও বিষয়াবলী ও ভাগ্য সুপ্রসন্ন করে দিন। তাদের এক উত্তম ফলাফল দান করুন।আল্লাহ তাদের জন্য যাই নির্ধারিত করুক না কেন, তাতেই ভাল সমাপ্তি রাখুক। আমিন!

জালিম রাজের কবর দিয়ে

আল কুরআনের সবক নিয়ে

হেলাল আকা নিশান খানি উড়িয়ে দেবে কে

আমরা সকলে !

বিষয়: বিবিধ

১৬৯২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File