"খাওয়ার আদব ও সুন্নত"
লিখেছেন লিখেছেন মাহবুবা সুলতানা লায়লা ২০ এপ্রিল, ২০১৫, ১২:৪০:৫০ দুপুর
খাওয়ার আদব ও সুন্নত
১. জুতা খুলে খাবার খাওয়া। কেননা তার মধ্যে বেশী আরাম রয়েছে। এমন নয় যে, জুতা পরে খাওয়া যাবেনা এবং গুনাহও নয়।
২. উভয় হাত কব্জী পর্যন্ত ধৌত করে খাওয়া।
৩. কুলি করা সুন্নত, যদি প্রয়োজন হয়।
৪. একজন আল্লাহর মুখাপেক্ষী বান্দার মত বসে খাওয়া। হাদীসে আছে (নবী সঃ) বাম পা উঠিয়ে, ডান পায়ের উপর বসতেন। অপর এক হাদীসে নবী (সঃ) উভয় পা উঠিয়ে বসার কথাউল্লেখ আছে। এছাড়া উলামায়ে কেরাম থেকে বসার আরো দুটি পদ্ধতি বর্ণিত আছে, এক, উভয় পা বিছিয়ে বসা। দুই, ডান পা উঠিয়ে বাম পায়ের উপর বসা। সারকথা, নম্রতার সাথে বসা।
৫. বিনয়ী অবস্থায় সামনের দিকে ঝুঁকে বসে খাওয়া।
৬. জমিনে বসে খাওয়া উত্তম। চেয়ার টেবিলে বসে খাওয়া উত্তম নয়।
৭. খাবার সামনে আসলে এ দোয়া পড়তে হয়।
آللهم بآرك لنآ فيمآ رزقتنآ وقنآ عذآب آنآر.
৮. খাওয়ার শুরুতে এ দোয়া আওয়াজের সাথে পড়া।
بسم آلله وعلى بركة آلله.
যাতে অন্যান্য লোকও শুনে পড়তে পারে। যদি শুরুতে এদোয়া পড়তে ভুলে যায়, তবে যখন মনে পড়বে, তখন এই দোয়া পড়া।
بسم آلله آوله و آخره.
৯. কোনো বস্তুর সাথে হেলান দিয়ে বা ভর করে না খাওয়া। তবে যদি অসুস্থ হয়, তাহলে খেতে পারবে।
১০. ডান হাত দিয়ে খাওয়া। প্রয়োজন হলে বাম হাত দিয়েও খেতে পারবে।
১১. শারীরিক উপকার ও আল্লাহর হুকুম পালনের নিয়্যতে খাওয়া।
১২. তিন আঙ্গুলি দ্বারা খাওয়া সুন্নত। প্রয়োজনে তিনের অধিক ব্যবহার করা যেতে পারে।
১৩. কয়েকজন একসাথে এক বর্তনে যখন খাবে, আর যদি খাবার একই ধরনের হয় তাহলে নিজের সামনে থেকে খাওয়া। অন্য জনের সামনে থেকে না খাওয়া। যদি বিভিন্ন ধরনের হয় অথবা ফল হয় তাহলে প্রত্যেকদিক থেকে খাওয়ার অনুমতি রয়েছে।
১৪. কতেক আলেম লবন দ্বারা শুরু করা এবং লবনের মাধ্যমে শেষ করা সুন্নত বলেছেন। কিন্তু যে হাদীসের উপর ভিত্তি করে তাহারা বলেন সে হাদীসটি
موضوع.
১৫. খাবার প্লেট অথবা পাত্রের একপাশ থেকে খাওয়া। মাঝখানে হাত না দেয়া। কেননা মাঝখানে বরকত অবতীর্ণ হয়।
১৬. খেজুর এবং এ জাতীয় খাবার যেমন, বিষ্কুট, মিষ্টি, ইত্যাদি এক সাথে দুটি করে না খাওয়া। বরং একটি করে খাওয়া।
১৭. এক লোকমা শেষ হওয়ার পূর্বে আরেক লোকমা না উঠানো।
১৮. অতিরিক্ত গরম খাবার না খাওয়া।
১৯. গরম খাবার ও গরম পানিতে ফুঁক দিয়ে ঠান্ডা না করা।
২০. যদি লোকমা পড়ে যায় তাহলে উঠাইয়া খাওয়া সুন্নত
২১. খাবারের মধ্যে দোষ না ধরা। যদি রান্নার মধ্যে দোষ ধরে তবে অসুবিধা নাই, খেয়াল রাখতে হবে কারো মনে যেন কষ্ট না যায়, এবং নম্রভাবে বলে দেয়া।
২২. খাওয়ার সময় এমন কাজ না করা, যার দ্বারা অন্যের কষ্ট হয়।
২৩. খাওয়ার মাঝে এমন কাজে লিপ্ত হবেনা, যার দ্বারা অপরের কষ্ট হয়। যেমন খাওয়ার মাঝখানে এমন কিছু চাওয়া যাতে খাবার রেখে উঠে যেতে হয় এবং জুরুরী জিনিষের জন্য কষ্ট হয়।
২৪. অল্প ক্ষুধা বাকি থাকতে খাবার ছেড়ে দেওয়া। এতে করে হজম শক্তি বৃদ্ধি পায়।
২৫. অঙ্গুলি এবং পাত্র পরিষ্কার করে খাওয়া। (মানে চেটে খাওয়া্) কেননা এর দ্বারা আল্লাহর নেয়ামতের প্রতি অধিক শুকরিয়া প্রকাশ পায়।
২৬. শেষ হওয়ার পূর্বে এই দোয়া পড়া।
آلحمد لله آلذى آطعمنآ وسقآنآ وجعلنآ من آلمسلمين.
২৭. দস্তরখানা বিছাইয়া খাওয়া সুন্নত
২৮. দস্তরখানা উঠানোর পূর্বে নিজে না উঠবেনা।
২৯. দস্তরখানা উঠানোর দোয়া পড়া।
آلحمد لله حمدآ كثيرآ طييبآ مبآ ركآ فيه. غير مستغنى و لا مدع عنه ربنآ.
৩০. খাবার শেষ হলে উভয় হাত কব্জি পর্যন্ত ধোয়া সাবান ইত্যাদি দ্বারা।
৩১. খাবার পর কুলি করা সুন্নত
৩২. দাঁত খিলাল করা।
৩৩. খাবার শেষে হাত ধোয়ার পর হুজুর (সঃ) তার হাত, মুখে মুছে নিতেন।
৩৪. খাবার শেষ করার পর কিছু তেলোয়াত ও জিকির করা।
৩৫. খাবার শেষ করার সাথে সাথে শুইবেনা। তাতে অন্তর শক্ত হয়ে যায়।
৩৬. দাওয়াত বা অন্যের ঘরে খাইলে এই দোয়া পড়া।
آللهم آىطعم من ىطعمنى وآسق من سقآ نى.
৩৭. একই মজলিসে কয়েকজন খেতে বসলে, যার খাওয়া শেষ, সে আগে না উঠা। এতে করে অপর জনের খেতে সমস্যা হয়।
৩৮. খাওয়ার আগে সামান্য পানি পান করা।
তিরমিযী ২য় খন্ডেরঃ- প্রথম কয়েক পরিচ্ছেদ থেকে একত্রিত করা হয়েছে!
আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে এই সমস্ত সুন্নতের উপর আমল করার তৌফিক দিন ও সহজ করে দিন। আর আমাদের ছোট ছোট আমল গুলো কবুল করে নিন। আমিন ছুম্মা আমিন!
বিষয়: বিবিধ
২৩৬০ বার পঠিত, ১৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
০ তাহলে কি ডাইনিং টেবিল + চেয়ার বাদ দিতে হবে ? বাসার সৌন্দর্য্য কি এতে কমে যাবে না !
০ তাহলে কি মাঝখানের খাবার খাওয়া যাবে না ? কতক্ষণ পর্যন্ত বরকত অবতীর্ন হবে, ততক্ষণ কি খাওয়াই যাবে না ? একপাশ থেকে মানে বরকতহীন জায়গা থেকে খেলে কি সমস্যা হবে ?
আমি জানতাম যে চেটে খাওয়া উচিত পুরোটা , কারণ বরকত নাকি যে কোন জায়গায় থাকতে পারে।
০ এতে সমস্যা হবে না ? তাতে যদি ময়লা বা মাটি লেগে যায় ?
০ যার খাওয়া আগে শেষ সে উঠে গেলে তো অন্যজনের বা জনদের জায়গা বেড়ে যাওয়া , এতে সমস্যা হবে কেন ? সেটা কিভাবে ?
সুন্দর পোস্ট দিয়েছেন - মাশা আল্লাহ ।
হতভাগা ভাইয়া
@ ডাইনিং টেবিলে বসে খাওয়া যাবেনা এটা ঠিক নয়! তবে উত্তম নয়!
@ এখানে খাবার প্লেটের কিনারা থেকে খেতে খেতে মাঝখানে যাবেন আর এভাবে আস্তে আস্তে খাওয়া শেষ করবেন! এতে বরকত নষ্ট হবেনা।
@ না বরকত নষ্ট হবেনা, আর বরকতহীন স্থান থেকে খেলে কোন সমস্যা হবেনা। আপনার জানা ঠিক আছে।
@ লোকমা যদি পড়ে যায় তা উঠাইয়া খাওয়া সুন্নত! এজন্যই খাবার দস্তরখান বিছিয়ে খাওয়া, যাতে করে খাবার পড়ে গেলে উঠিয়ে খেতে সমস্যা না হয়। আর যদি ময়লা লেগেই যায় তবে দেখে শুনে ময়লা খাবে কেন? ফেলে দেওয়াই শ্রেয় হবে।
@ ৩৭/ একই মজলিসে কয়েকজন খেতে বসলে, যার খাওয়া শেষ, সে আগে না উঠা। এতে করে অপর জনের খেতে সমস্যা হয়। @@ আপনার যুক্তি ঠিক আছে একজন উঠে গেলে আরেকজন বসতে সুবিধা হবে। তবে এখানে যেটা বুঝাতে চাইছে সেটা হলো একসাথে বা এক টেবিলে কয়েকজন খেতে বসেছে এদের মধ্যে কেউ বেশী খাবার খায় বা কেউ কম খায় অথবা কেউ আস্তে আস্তে খায়, কেউ দ্রুত খায়, এখন কেউ তাড়াতাড়ি খেয়ে উঠে গেলো তার পাশের জন আস্তে আস্তে খাওয়ার অভ্যাস সে লজ্জায় খেতে না পেরে, না খেয়েই উঠে গেলো, বা কম খেলো এজন্যই বলা হয়েছে একসাথে খেতে বসলে একসাথে উঠতে! আমাদের নবী (সঃ)এর মজলিসে যারা খেতে বসতেন তারা এইদিকটা খুবই খেয়াল করতেন যেন সবাই তৃপ্তি সহকারে খেতে পারে। আর এজন্য কারো খাওয়া আগে হয়ে গেলেও সবার খাওয়া শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতেন।
পড়ে সুন্দর ও উৎসাহ মূলক মন্তব্য রেখে যাবার জন্য আপনাকে যাযাকুমুল্লাহ!
মাশা আল্লাহ! চমৎকার সুন্নাহ পোস্টটির জন্য জাযাকিল্লাহু খাইর!
জাজাকাল্লাহ খাইরান আপু ।
জাজাকাল্লাহ খাইরান আপু ।
রিপোর্ট করুন
ইসলাম নির্ধারিত প্রতি টা কর্ম-কান্ডই সমূহ কল্যাণে ভরপুর! যাপিত জীবনের প্রতি টা বিষয়ে এর সুন্দর নীতি রয়েছে!
খাওয়ার বেলায়ও সুন্নাহ পালন পুর্ণ মুমিনের আলামত!
আল্লাহ আমাদের কে তা মেনে চলার তৌফিক দান করুন !আমিন!
জাযাকিল্লাহু খাইরান!!
মন্তব্য করতে লগইন করুন