"মদিনার চত্বরে" (৭)
লিখেছেন লিখেছেন মাহবুবা সুলতানা লায়লা ০৮ জুন, ২০১৪, ০২:০৯:৪২ দুপুর
"একটি সত্য ও শিক্ষনীয় ঘটনা"
মে মাসের কথা! সারাদিন মসজিদে নব্বীতে থাকবো এরাদা করেছি! সাথে প্রস্তুতি ও নিয়েছি এভাবে ফজর পড়ে আর ঘুমাইনি! দুপুরের রান্নার কাজ শেষ করে! সবাই সকালের নাস্তা করে ন'টা বাজার আগে আমরা পৌছলাম মসজিদে নব্বীতে! সেদিন নেমেছিলাম এগারোর বি/ টয়লেটের পাশ দিয়ে মহিলাদের নামাজের স্থান দিয়ে হেঁটে হেঁটে সোজা মসজিদে! (বলে রাখি) মসজিদে নব্বীর গেইটে ব্যাগ বা সাথে যা থাকে তা চেক করে ভেতরে প্রবেশ করতে দেয়া হয়! ভারি খাবার নিয়ে প্রবেশ নিশেধ! আমার সাথে ছোট্ট একটা হ্যান্ড পার্স ছিলো ও আরো ছিলো কিচের (কিচ হলো পলিথিন ব্যাগ) মধ্যে একটি কলম ও একটি ডায়েরী, কয়েকটা চকলেট আর একটি বিষ্কিটের প্যাকেট একটা বণ রুটি ও পানির বোতল! সারিদিন থাকার নিয়্যত তাই এই ব্যবস্থা! নিয়ে তো আসছি কিন্তু ভেতরে যেতে দেবে কিনা ভয়ে ছিলাম, দোয়া ও করতে ছিলাম যেন ভেতরে যেতে পারি! নয়তো শুধু পানির বোতল আর মোবাইল নিয়ে আসতাম! কারন মেয়েটা আমার খুব পানি কাতর চলতে চলতে অনেক বার পানি পান করতে হয়! আল্লাহর নাম জ্বপতে জ্বপতে গেইটে দেখালাম বয়ষ্ক একজন দেখেই আসতে দিলো কারন সাথে বেবী আছে! ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করলাম! ভেতরে গিয়ে একটি পিলারের কাছে বসলাম যাতে করে নুসাইবাকে পাশেই বসাতে পারি! এবং যেন নুসাইবার জন্য অন্য কারো নামাজে সমস্যা না হয়! পিলারের চারিদিকে কোরআন দিয়ে সাজানো! মুসুল্লীগণের সুবিধার্থে এভাবে রাখা হয় নয়তো অনেক গুলো সেলফ আছে যেখানো কোরআন ও রেহেল রাখা! সেখান থেকে একটি কোরআন নিলাম ও সেলফের নিচ থেকে একটি রেহেল নিয়ে রেহেলের উপর কোরআন রেখে নামাজে দাড়ালাম কারন মসজিদে প্রবেশ করেই বসার আগে দু'রাকাত নামাজ পড়ার কথা বলেছেন আমাদের প্রিয় নবী (সঃ) তাই নামাজ শেষ করে তেলোয়াতে মনোযোগ দিলাম!
প্রায় আধা পারা পড়ার পর অনুভব করলাম পাশের মহিলা দু'জন চলে যাচ্ছে! আমি তেলোয়াতেই ব্যস্ত থাকলাম আরো তিন পৃষ্ঠার মত পড়ার পর পায়ে ঝিঁমঝিঁম অনুভব করে পা সোজা করতেই দেখি পায়ের কাছেই একটি মোবাইল পড়ে আছে! দেখেই মনে হলো মোবাইলটি দামী! আমি চিন্তায় পড়ে গেলাম মহিলা দুজন কোথায় গেলো? কোথায় খুজবো তাদেরকে? মোবাইলটা হাতে নেবো নাকি নেবোনা? ভাবতে ভাবতে আমার সাথিকে কল দিলাম ও তখন ব্যস্ত তারপরও কল দিলাম কি করবো? পরামর্শ করা দরকার! তাই কল দিতেই বললাম সামান্য জুরুরী আবার জুরুরী না! ওদিক থেকে বলল; বলো! আমি বললাম আমার পাশে বসা মহিলা মোবাইল ফেলে চলে গেছে কি করবো? সে পরামর্শ দিলো তুমি ওখান থেকে সরে অন্য স্থানে বসো! আবার ওটাও বলল একটি স্থান আছে যেখানে হারানো মাল জমা দেয়া হয় কিন্তু তুমি তো তা চেনোনা! আরেক কাজ করতে পারো মোবাইল যেখানে আছে থাক, তুমি দেখ কর্তব্যরত কোন মহিলাকে দেখতে পাও কিনা তাদেরকে দেখিয়ে দাও বলেই রেখে দিলো! আমি মোবাইলটা হাতে নিয়ে দেখলাম মোবাইলে স্কীনে একটি মেয়ের ছবি! ছবি দেখে এদিক ওদিক খুজছিলাম মহিলাকে কিন্তু পেলাম না! কারন মহিলা ছিল বয়ষ্ক আর ছবি হয়তো মহিলার মেয়ের! দেখে মোবাইল যেখানে ছিলো সেখানে রেখে ওদিক ওদিক দেখতে ছিলাম কোন মহিলাকে দেখা যায় কিনা! কিন্তু না! কাউকে পেলাম না যাকে মোবাইল সম্পর্কে বলা যায়! আবারও এও ভাবছি কেউ যদি নিয়ে যায় তখন প্রকৃত মালিক এসে পাবেনা! তাই মোবাইল পাশে রেখে বসে বসে তেলোয়াত করতে লাগলাম! তেলোয়াতেও তেমন মন বসছিলোনা! ভাবছিলাম যার মোবাইল তার কি বিপদ কিভাবে কি করবে? এদিকে আমি তাদের ভাষা ও বুঝবো না যদি কল করে মোবাইলে তাই মনে মনে দোয়া করতে লাগলাম মহিলা যেন এখানে আসে এবং তার মোবাইলটা নিয়ে যায়! এজন্য দুই'রাকাত নফল পড়ারও নিয়্যত করলাম! নামাজের অল্প সময় বাকি এখনো কেউ এলোনা মোবাইলের খোজে! কি করবো? তাই দোয়া করছিলাম হে আল্লাহ একটা উত্তম উপায় বের করে দাও যার মোবাইল সে যেন এখানেই এসে মোবাইল তালাশ করে এবং নিয়ে যায় আর আমাকে উদ্ধার করে যায় এই বিপদ থেকে! আযান হয়ে গেছে, খুতবা হচ্ছিলো তখন! মোবাইল যারা রেখে গেছে সেখানে অন্য মহিলাগণ এসে বসেছে! আমি এই মোবাইল দেখার পর থেকে আন্তরিক পেরেশানিতে ভুগছিলাম! বারংবার দোয়া করছিলাম এই জিম্মি থেকে আমাকে বাঁচাও হে আল্লাহ আর যার মোবাইল তাকে এখানে পৌছে দাও!
আল্লাহ রহমতে একজন মহিলা এসে বলছে কুশি! কুশি! আর তালাশ করছে এখানে ওখানে তাকে দেখেই মনে হলো উনার মোবাইলই হয়তো হারানো গেছে! কিছুসময় দেখলাম মহিলা আমার এখানে আসে কিনা! দেখলাম মহিলা আমার পাশে যেখানে বসেছিলো সেখানেই তালাশ করছে! আমি তার হাত ধরে আমার কাছে এনে মোবাইল দেখালাম তিনি মোবাইল দেখেই হাতে নিলেন আর মোবাইল পাওয়ার আনন্দে আমাকে একটা চুমু দিলেন! দোয়া করলেন উনার ভাষায়! আমি অনেক বিপদ থেকে বাঁচলাম! মনে অনেক আনন্দ পেলাম মোবাইলটা প্রকৃত মালিকের কাছে পৌছতে পেরে! মহিলা চলে যাবার পর তাড়াতাড়ি জু'মা পড়েই নফল আদায় করলাম! আলহামদুলিল্লাহ পাওনা বস্তুটা প্রকৃত মালিকের হাতে পৌছতে পেরেছি! (বলে রাখি) জু'মার দিন জু'মার নামাজের পর পরই রাসূলুল্লাহ (সঃ) এর রওজার গেইট খুলে দেয়া হয়! এরপর অপেক্ষা করতে থাকলাম কখন খুলে দেবে সেই গেইট! প্রায় পৌনে একঘন্টা অপেক্ষা করার পর রওজার গেইট খুলে দেয়া হলো! আর ইশারা করা হলো কোন ব্যাগ নিয়ে প্রবেশ করা যাবেনা! তাই আমি যেখানে বসেছিলাম সেখানে পিলারের নিচে আমার জিনিসগুলো রেখে রওজা জেওয়ারতে গেলাম ওখানে রিয়াদ্বুল জান্নাতে দু'রাকাত নামাজ পড়লাম এবং রওজা থেকে বের হলাম কিন্তু অন্য গেইট দিয়ে বের হওয়ায় আমরা আমাদের ব্যাগ ও জুতা খুজে পেলাম না! ব্যাগ না হয় না পেলাম কিন্তু জুতা ছাড়া কিভাবে বের হবো? হে আল্লাহ সাহায্য করেন আমাদের ব্যাগগুলো পাইয়ে দেন! তালাশ করতে করতে প্রায় এক থেকে দেড়ঘন্টা তালাশের পর পেলাম আলহামদুলিল্লাহ! তখন মনে হয়েছিলো আমি আজকে ঐমহিলার মোবাইল ফেরত দিলাম হয়তো মহান আল্লাহ তাই আমার ব্যাগটাও পাইয়ে দিলেন! আলহামদুলিল্লাহ পড়তে পড়তে মসজিদে নব্বীতে বসে বসে এই লেখাটা লিখছিলাম! আর ভাবছিলাম মহান আল্লাহ মানুষকে এভাবেই সাহায্য করেন!
মসজিদে প্রবেশ করে বসার আগে ২ রাকায়াত নামায পড়ার ফজিলত◅ রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) উত্তমরূপে উযু করলেন এবং এরপর বললেন, যে ব্যক্তি এ উযুর মত উযু করবে তারপর মসজিদে এসে দু'রাকায়াত সালাত আদায় করে বসবে তার অতীতের সব গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে। [বুখারী, ৫৯৯০]
মানুষকে মহান আল্লাহ অনেক অনেক চাহিদা সম্পন্ন করে গড়েছেন! পৃথিবীতে মানুষের চাহিদার কোনই শেষ নেই! হোক তা সামান্য বা অধিক মূল্যের! তাতে কি? প্রয়োজন তো পূর্ণ হয়! আর আল্লাহর কাছে প্রার্থনা আমাদের সকল চাহিদা যেন হালাল উপার্জন দিয়ে পূর্ণ হয়! হোক কিছুটা দেরিতে, হালাল উপার্জনে রিযিক দাও সকল প্রকার হারাম থেকে বাঁচাও!
মসজিদে নব্বীতে ও অনেকের ব্যাগ হারায়, টাকা হারায়, জায়নামাজ হারায়, মূল্যবান অনেকি কিছু হারায়! তবে সবাই ফিরে পায় কিনা আমার জানা নেই! কয়েকজনকে দেখেছি তারা হারানো মাল পেলে পেরেশানিতে পড়ে যায় এবং প্রকৃত মালিক খুঁজে ও পৌছে দেয়ার দায়িত্ব পালন করেন! আল্লাহ উনাদেরকে উত্তম প্রতিদান দিন! বর্তমানে যে কেউ একটি মোবাইল হারালে কি বিপদ তা শুধু ভুক্তভুগিরাই বুঝেন! কারন অনেকের নম্বর সেইভ করা থাকে কিন্তু মোবাইল হারিয়ে ফেললে বিপদের শেষ থাকেনা! আল্লাহ আমাদেরকে (হুসনে খুলুক) উত্তম চরিত্র দান করুন। আমিন।
বিষয়: সাহিত্য
১২৬৪ বার পঠিত, ২৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
লিখবো ইনশা-আল্লাহ
রসুল (সা) এর কবরের কোন ছবি আপনার নিজের তোলা থাকলে যদি দিতেন তাহলে দেখতাম।
ব্লগে ছবি দিলে আমাকে একটু জানাবেন প্লিজ।
আপনার সেীভাগ্য দেখলে প্রচন্ড ঈর্ষায় ভুগি।
মেয়েদের মত!!
You are lucky. Please make' dua ' for us.
মন্তব্য করতে লগইন করুন