আর দিও না সুখটান-বন্ধ কর হারাম (ধূম) পান- ১
লিখেছেন লিখেছেন এস এম আবু নাছের ২৭ অক্টোবর, ২০১৪, ০৪:৪১:৩৪ বিকাল
আমরা যারা ধুমপান করিনা তাদের জন্য রমযান মাসে বাইরে চলাফেরা করাটা কিছুটা হলেও শান্তির অর্থাৎ কম বিরক্তিকর আর কি! হয়ত বলবেন, রমযান, ধূমপান! আবার বাইরে চলাফেরা! ঠিক বুঝছেন না। তাহলে সহজ করেই বলি।
সাত সকালে বাস স্ট্যান্ডে এসে দাঁড়িয়েছি বাসের অপেক্ষায়। ডানে-বামে দুজন (অ)ভদ্রলোক চালু করলেন চিমনি ভাটা। মানে ধোঁয়া সেবন আর কি! একেত খালি পেট আর তার উপর এই উতকট দুর্গন্ধ! ভদ্রতা রেখেই বললাম- ভাই,চিমনি ভাটা একটু ঐদিকে গিয়ে জ্বালান। পরের কথা শুনে ত আক্কেল গুডুম দশা! বলে, সাত সকালে, একটু শান্তি করে খেতেও দিবেনা।
শুনেও চুপ থাকলাম। এ যাত্রায় অন্তত সরে গিয়ে আমায় রেহায় দিলে কিছুটা বেঁচে যাই। এত গেল বাস স্ট্যান্ডের কথা। বাসে উঠার পরেও এই রকম কিছু মানুষ পাশের সিটে বসে আপনার মেজাজ বিগড়ে দিতে বেশ ভাল ভূমিকা পালন করেন। আপনি না চাইলেও লোকাল বাসের মশা তাড়াতে তারা কিন্তু ধোঁয়া জ্বালাতে ভোলেন না। সাথেত সু (দু)র্গন্ধ ফ্রি।
আমার ছেলেবেলায় অর্থাৎ ছোটবেলায় বেরাতে গিয়েছিলাম আম্মুর সাথে ফুফুর বাড়িতে। ঈদের কয়েকদিন পরেই ছিল সেই ট্যুর। ঈদে পাওয়া নতুন জামার রেশ কাটেইনি আর সেগুলো পড়েই ফুফুর বাড়ি যাওয়া। যাই হোক বিকেলে ফুফার সাথে গেলাম গ্রামের হাটে বাজার করতে আর আমার সাধের শার্টের কিছুটা পুড়ে গেলো কোন এক আহাম্মক লোকের বিড়ির ফুল্কি গায়ে পড়ে। কি আর করা !! বলুন ? এ যেন তাদের গনতান্ত্রিক অধিকার। নিতান্ত ছোট ছিলাম বলে সেদিন কিছুই বলতে পারিনি। খুব ইচ্ছা হয়েছিল লোকটিকে আচ্ছা করে অপমান করি আর বুঝিয়ে দেয় যে, আপনি যা করলেন তার মাশুল বুঝিয়ে দিলাম কড়ায় গন্ডায়। ফুফা দুই একটা কথা বললেন আর লোকটিও খানিকক্ষণ ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে থেকে প্রস্থান করলেন। ভগ্ন মনোরথে বাড়ি ফিরলাম আর আম্মুকে বললাম। শুনে আম্মু পাল্টা সহানুভূতি দেখাবে্কী? দিল এক গাদা বকা, যেন দোষটা আমিই করেছি, কেন তার আশেপাশে দিয়ে হাঁটতে গিয়েছি? মনের খেদ মনেই চেপে রাখলাম।
ফুফুর বাড়ি থেকে ফিরে আসলাম বাড়িতে আর স্কুলও শুরু হয়ে গেল কয়েকদিন পর থেকে। সবাই একে একে বলছে নতুন জামার কথা,কে কি নিয়েছে ঈদে? কার জামা কত সুন্দর। অনেকে নতুন জামা পরে এসে বলছেও, এই দেখ, দোস্ত এইটা আমার নতুন ঈদী জামা। কেমন হয়েছে রে? তুই কি নিলি এবার? আমি আর কি বলব? দুইটি জামার একটি যেভাবে নষ্ট হয়েছে তা বললাম আর পরেরদিন অন্য নতুন জামাটা পরে স্কুলে গেলাম। স্কুলে পৌঁছতে না পৌঁছতেই দূর থেকে কয়েকজন আমায় দেখে হাসাহাসি শুরু করে দিল আর বলতে লাগল "শালা রাম ছাগল একটা, ঈদের দিনে বিড়ি খেয়ে নতুন জামাটাই নষ্ট করে ফেলেছে। আরে, খাবি খা, সাবধানে ত খাবি নাকি?" আমি কোনভাবেই তাদের বোঝাতে পারলাম না যে আমার শার্ট টি কিভাবে নষ্ট হয়েছে। সে অবধি আজও কোন ভীড়ের মাঝে গেলে আমি সতর্ক থাকি যেন সেদিনের মত করে আমার কোন পোশাক আর নষ্ট না হয়।
আমাদের পাড়া মহল্লায় আরো এক প্রকারের নির্লজ্জ প্রকৃতির মানুষ রয়েছে যারা নিয়মিত হারাম বস্তু পান করছেন বা হারাম খাবার ভক্ষণ করছেন । একদিকে তাদের জন্য কষ্ট ত হয় আবার মুসলমানের এই দেশে যখন দেখি তারা প্রকাশ্যে সেই হারাম বস্তুগুলি পান করছেন আর আমরা সবাই নিশ্চুপ হয়ে আছি আর নিশ্চুপ আমাদের শাসনব্যবস্থ।
কোনকালে শুনেছিলাম যে পাবলিক প্লেসে ধূমপান করলে নাকি কত টাকা জরিমানা হয় । সে আইনের প্রয়োগ ! হায় ! যারা আইনের রক্ষক, সেই পুলিশদেরকেই কত শত বার যে এই দুনয়নে এই আইনটির লঙ্ঘন করতে দেখেছি তা বলাই বাহুল্য । একদিকে তারা হারাম খেয়ে আল্লাহর হুকুম অমান্য করছেন অপরদিকে অপচয় করছেন এবং তারা এইসকল বস্তু থেকে আগত নানা রকম দুর্গন্ধ দ্বারা আপামর জনসাধাধারনের হক নষ্ট করছেন।
যাই হোক এই কষ্ট আমার আরও দ্বিগুন হয় যখন দেখি কিছু ভাই এইসব আবোল তাবোল খেয়ে এসে কোনমতে ফুচকুলি (গ্রাম্য ভাষায় শুধু পানি দিয়ে মুখ রগড়ানো) করেই মসজিদে প্রবেশ করেন নামাজের উদ্দ্যেশ্যে । তাদের পাশে নামাজে দাঁড়িয়ে থাকাটাও তখন কষ্টে্র বিষয় হয়ে দাঁড়ায় । অথচ বিশ্বনবী মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ (সা) আমাদের কত সুন্দর শিক্ষা দিয়ে গেলেন দেখুন...
হযরত জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ (রা) থেকে বর্ণিত নবী করীম (সা) বলেছেন,কেউ এ জাতীয় বৃক্ষ অর্থাৎ রসূন খেয়ে যেন আমাদের মসজিদে আমাদের সাথে মিলিত না হয় বা কাছে না আসে। রাবী আতা বলেন, আমি হযরত জাবের ইবনে আব্দুল্লাহকে জিজ্ঞেসা করলাম , এর দ্বারা তিনি কি বুঝেছেন? জাবের (রাঃ) বললেন, এর দ্বারা কাঁচা রসূন বুঝা যায়। হযরত মাখলাদ ইবনে ইয়াযিদ ইবনে জুরাইজ হতে বর্ণনা করেছেন যে,এ দুর্গন্ধময় বৃক্ষের অর্থ পিয়াজ ও রসূনের খারাপ গন্ধকে বুঝানো হয়েছে। (১)
রাসূল (সা) যেখানে এক প্রকারের হালাল খাবার কেও দুর্গন্ধ হবে এই জন্য তা খেয়ে মসজিদে আসতে বারন করেছেন, সেখানে এই মানুষগুলো কিভাবে পারে বিড়ি, সিগারেট বা অন্য নেশা দ্রব্য পান করে পরিষ্কার না হয়ে মসজিদে আসতে? বিবেকের কাছে বড্ড অবাক লাগে ভাবতে। আরও লক্ষ্যনীয় বিষয় হল, এই মানুষগুলো যে শুধু নিজের ক্ষতি করছে তা কিন্তু নয় তারা পরিবেশ দূষনের পাশপাশি অন্য মানুষের স্বাভাবিক চলাফেরা যেভাবে ব্যহত করছে ঠিক সেভাবে তাদের বিভিন্ন অসুখের জন্যও পরোক্ষ ভুমিকা পালন করছে।
ধূমপানকারী তার ধুমপানের দ্বারা স্ত্রী-পরিজন, সহযাত্রী, বন্ধু বান্ধব ও আশে-পার্শের লোকজনকে কষ্ট দিয়ে থাকে। অনেকে নীরবে কষ্ট সহ্য করে মনে মনে ধূমপান কারীকে অভিশাপ দেন। আবার দু একজন প্রতিবাদ করে বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে পড়ে যান। আমি বাসে ও ট্রেনে বসে অনেক ধূমপানকারীকে আদবের সাথে বলেছি ভাই সিগারেটটা শেষ করুন। আমাদের কষ্ট হচ্ছে। এতে তিনি আমার উপর প্রচন্ড ক্ষেপে গিয়ে বকাবকি করেছেন, আমাকে একটা গাড়ী বা ট্রেন কিনে তাতে আলাদা ভাবে চলাফেরা করার হুকুম দিয়েছেন। আবার এও বলেছেন "মনে হয় গাড়ীটা উনি কিনেই নিয়েছেন"।
আল্লাহ আমাদের এই নোংরা অভ্যাস থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে চলার তাওফিক দিন। আমীন।
(পরবর্তী পর্বে এ বিষয়ে কুরআন ও হাদীসের আলোকে সংক্ষিপ্ত কিছু কথা তুলে ধরা হয়েছে। পড়তে চাইলে ঘুরে আসুন- আর দিও না সুখটান-বন্ধ কর হারাম (ধূম) পান- ২)
বিষয়: বিবিধ
১৪৯৯ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন