পুরানো সেই দিনের কথা
লিখেছেন লিখেছেন অগ্রহায়ণ ২৩ আগস্ট, ২০১৫, ১২:৫৩:৫৮ দুপুর
ইস্কুল থেকে ফিরে বই খাতার ইয়া বড় ব্যাগটা টেবিলের উপর ছুড়ে দিলাম।
তারপর "আম্মু... আম্মুউউউ" বলে চেচাতে চেচাতে সোজা রান্না ঘরের দিকে চলে গেলাম।
আম্মু আমায় দেখে বলল, সব ক্লাস করে আইসছ তো?
আম্মুর এসব কথা সবসময় আমার বিরক্ত লাগে। আমি অভিমানের সুরে বললাম, সব ক্লাস শেষ না হলে ছুট্টি দেয় নাকি?
আম্মু বলল, আইচ্ছা আইচ্ছা বাপ আর রাগ দেখান লাগবে না। এখন কাপড় চোপড় ছেড়ে টিউবওয়েলে যা। আমি পানি চেপে দিচ্ছি।
আমি বললাম, টিউবওয়েলে করমু না। পুকুরে করমু। বলেই আমি লুংগি আর তোয়ালে নিয়ে দিলাম ছুট। আম্মু পিছন থেকে "এই বান্দর এইইই দাড়া...." বলে ডাক ছাড়ছে। কিন্তু কে শুনে কার কথা। সোজা দৌড়ে ঝাপ দিলাম পুকুরে।
শুধু আমি একা না। সাথে সমবয়সী ভাই বেরাদার এক ঝাক। সবাই মিলে পুকুরের স্বচ্ছ পানি ঘোলা করেই যাচ্ছি।
টিভিতে দেখা রেসলিং খেলার প্রেকটিস করি পুকুরেই। একজন পাড়ে উঠে দৌড়ে ঝাপ দিল পানিতে থাকা কারো উপর। কিন্তু সে ডুব দিয়ে অন্যখানে পালিয়ে যায়।
যদি ধরে ফেলতে পারে তাহলে সে তাকে চেপে ধরে পানিতে। আর তৃতীয় জন পানি তে হাত থাপড়ায়া চিৎকার করে ১...২....৩
এমন সময় ছোট ভাই হাওয়া বিহীন ফুটবল নিয়ে ফেলল পুকুরে। আবার পুরোদমে শুরু হল হইচই। ফুটবল কেড়ে নিয়ে কে কাকে মারতে পারে। হইহুল্লোড়ে এক শেষ। ইস্কুলের ক্লান্তি ভুলে গেছি কবেই।
এমন সময় হাতে বেত নিয়ে পুকুর পাড়ে এসে হুংকার দিলেন আম্মু। "এক্ষন উঠে আয় বান্দরের দল। এক্ষন....। আজ তোদের আব্বু আসুক, মজা ঠের পাবি তখন।"
আমরা জানি আম্মু আব্বু কেউ আমাদের মারবেন না। তারপরও হাপাতে হাপাতে উঠে আসি একজন একজন করে।
আম্মু আমাদের হাত ধরে টেনে টেনে নিয়ে আসে টিউবওয়েলে। পুকুরের পানি ঘোলা করার কারনে আমাদের চুলে, কানে, নাকে কাদা চোপ চোপ লেগে আছে। আম্মু আবার মাথার উপর পানি ঢেলে নিজ হাতে ঘসে মেঝে গোসল করায়। আমার এভাবে ভাল লাগে না, চামড়ায় ব্যাথা লাগে । কিন্তু অসহয়ের মত সহ্য করি আম্মুর অত্যাচার।
আমাদের গোসল শেষ হবার পর আম্মু আমাদের ভেজা কাপড় আর ইস্কুল ড্রেস ধুতে লাগলেন। আমরা কাপড় পালটে এসে দাড়ালাম রান্না ঘরের দরজা ঘেসে। বললাম, আম্মু ভুখ লাগছে ভাত খামু।
আম্মু টিউবওয়েলে কাপড় ধুতে ধুতে বলল, ভাত বাড়া আছে। খেয়ে নে।
আমরা যার যার ভাতের প্লেট নিয়ে দেখি ভাত আর মাশকলাইয়ের ডাল ছাড়া কিছু নাই পাতে।
আমি চেচিয়ে উঠলাম, আম্মুউউউ আর কিছু নাই তরকারি?????
আম্মু কাপড় ধুতে ধুতে বললেন, এখন এটা দিয়ে খেয়ে নে। রাতে তোর আব্বু মাছ আনবে।
আম্মুর কথা শুনে ছোট ভাই বেকে বসল, "আমি এটা দিয়ে খাব না "। আমিও তাকে সমর্থন করে বললাম, আমিও খাব না।
আম্মু কাপড় ধোয়া বন্ধ করে উঠে আসলেন। এসে দেখে আমরা মুখ অন্ধকার করে বসে আছি। কিছুই খাচ্ছি না। আম্মু কিছুক্ষন আমাদের চেহেরার দিকে চেয়ে রইলেন অসহায়ের মত।
তারপর ছুটে গেলেন অন্য কারো ঘরে কিছু তরকারি পাবার আশায়। আমরা ভাত রেখে উঠে এসে ঘরের সামনের দরজার চৌকাঠে বসে বসে দেখছি আম্মু কি ব্যবস্থা করেন।
ততক্ষন আম্মু দুই-তিন ঘর চেক করে ফেলেছেন। কিন্তু আমাদের সন্তুষ্ট করা যায় এমন কোন তরকারি পেলেন না মনে হয়।
আমরা তখনো মুখ অন্ধকার করে বসে বসে আম্মুর ছুটাছুটি দেখছি।
খালি হাতে আম্মু ঘরে ঢুকলেন
আমরাও তার পিছু নিলাম। রান্না ঘরে এসে দেখি আম্মু খাচি থেকে কাচা ডিম বের করছেন। তারপর সেই কাচা ডিম ধুয়ে আমাদের পাতের পাশে দিলেন।
ডিম দেবার পর আম্মু বললেন, এটা তোর জন্য। রাতে রান্না করে দিব। ঠিক আছে?
আমি মাথা নেড়ে পাতের পাশে রাখা কাচা ডিম দেখে দেখে খাওয়া শুরু করছি। কিন্তু ছোট ভাই তখনো খাচ্ছে না। আম্মু বলল, কিরে খাস না কেন। ছোট ভাই বলল, ডিম ভাজি করে দেন।
আম্মু একটা লম্বা শ্বাস ফেলে ডিম ভাজতে গেলেন। আমি আস্তে আস্তে খাচ্ছি।
কিছুক্ষন পর আম্মু ভাজা ডিমের অর্ধেক আমাকে দিলেন বাকি অর্ধেক দিলে ছোট ভাই কে। আমি ছোট ভাইয়ের দিকে ফিরে মুচকি মুচকি হেসে বললাম, তোর ডিম শেষ। আমার ভাগের টা রাতে খামু। হি হি হি।
→→→→→→
এসব আমার ছেলেবেলার প্রতিদিনের ছোট খাট কাহিনী। ইসসস কত রঙ্গীন ছিল সেসব দিন গুলো। কত হইচই,বাধাহীন, ইচ্ছেমত....
আর আমার মা.... কত যত্ন করে আমাদের বড় করেছেন। একটু ভাল তরকারির জন্য কতবার কতজনের কাছে ছোট হয়েছেন।
এখন হঠাৎ হঠাৎ আম্মু কে জড়িয়ে বলতে ইচ্ছে করে - সরি আম্মু, আপনাকে আমরা কত শত জালাতন করেছি। আর আপনি আমাদের মুখের দিকে তাকিয়ে সব সহ্য করে গেছেন।
বিষয়: বিবিধ
১৩৪৭ বার পঠিত, ৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আমি তাড়াতাড়ি আমার ভাগেরটা শেষ করে আমার আপুর ভাগেরটা চেয়ে খেয়ে নিতাম ।
ভাল লাগল ধন্যবাদ ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন