ম্যারি ফারারের জবানবন্দী থেকে
লিখেছেন লিখেছেন অগ্রহায়ণ ১৯ জানুয়ারি, ২০১৫, ০৯:৪০:০৩ রাত
যা বলছিলাম বলি
সদ্য ভুমিষ্ট হওয়া অসামাজিক শিশুটির ভাগ্যে কি জুটল,বলি।
মরিয়মদের পরিচয় আমরা কখনোই জানতে চাইনা। আর তার দরকারও পড়েনা। কেননা তাদের ডাকনাম হাউস মেড।
যখন সে ৪ মাসের অন্তর্সত্বা তখন একবার সাহেবের ক্যাবোর্ড থাকে রাখা রেড লেবেলের সাথে গুড়া মরিচ মিশিয়ে খেয়েছিল। আর প্রানপনে চেষ্টা করেছিল, নেমে যাক বাচ্চা টা নেমে যাক।
দুই দিন বেহুশ হয়ে পড়েছিল সে। বাচ্চা তার মাকে ছাড়েনি। কেননা, তার জন্ম নেবার জন্য মা'কে দরকার।
যখন ৬ মাসের
তখন একদিন ফলকাটার চুরি দিয়ে নিজের তলপেট কেটে বাচ্চা ফেলে দিতে চেয়েছিল মরিয়ম।
কেটেছিল ইঞ্চিখানেক। রক্ত গড়িয়েছিল অনেক। কাপঁতে কাপঁতে হাত থেকে পড়ে গিয়েছিল চুরি। কিন্তু বাচ্চা পড়েনি। কেননা তার জন্ম নেবার জন্য মায়ের পেটে থাকা দরকার আরো কিছুদিন।
তখন ৭ মাস
কি বুঝে মরিয়ম কার যেন বুদ্ধি নিয়ে হাজির হল নিকটস্থ মাতৃ সদনে। ডাক্তার তাকে বুঝি বলল, এখন অনেক দেরি হয়ে গেছে। এই মুহুর্তে এব্রোশন করা হলে মরিয়মের জন্যই আশংকাজনক।
তারপরেও চাইলে বাচ্চা বের করা হবে। তার জন্য অগ্রিম টাকা জমা দিতে হবে একাঊন্টে।
মরিয়ম শুধু শুনে গেল। বলল না কিছুই। ফেরার পথে বিড় বিড় করে বলল, টাকা টাকা। টাকা আমি কই পামু। মাইনষের বাড়ি বাড়ি কাজ করে দুই বেলা ভাত জুটে কোন মতে। আর ঈদের সময় পুরান কাপড়।
৯ মাসের একরাতে
নিশি পাওয়া গোর লাগা মানুষের মত হঠাৎ জেগে উঠে প্রার্থনায় বসে গেল।
একটানা
বহুক্ষন
গা বেয়ে দর দর ঘাম ঝরতে লাগল। ঘেমে পুরো শরীর ভিজে গেল। প্রার্থনায় ভোর হল। তবু বাচ্চা খসলো না।
কেননা সে এই নগ্ন দুনিয়ার তামাশা এক মুহুর্ত হলেও দেখতে চাই।
একদিন এল সেই ক্ষনটি।
প্রচন্ড ব্যাথায় মরিয়মের চোখে নেমে এল অন্ধকার। কিন্তু সামান্য চিৎকারও সে করল না। কারন এই ব্যাথা সভ্য পাড়ার এক বড় সাহেবের কয়েক মুহুর্তের কামনার ফল। মুখের ভিতর ঘুজে দিয়েছিল সে একদিন হরণ হওয়া উড়না।
অবশেষে জন্ম নিল সেই শিশু।
অসামাজিক শিশুটি।
প্রসব বেদনায় অজ্ঞান হয়ে যাওয়া মরিয়মের যখন হুশ ফিরে এল সে শুনতে পেল চিঁ চিঁ একটা কান্নার আওয়াজ।
তুলে নিল সদ্য ভুমিষ্ট হওয়া বাচ্চা কে। তারপর তার কপালে চুমু খেল। চুমু খেল ঠোটে।
তারপর একপাশে ফেলে একটা বালিশ গুজে দিল বাচ্চা টার মুখে। মাত্র কয়েক সেকেন্ড। শান্ত হয়ে গেল শিশু টা। অসামাজিক শিশু টা।
সারা রাত নিথর প্রানহীন দেহ বুকে চেপে শুয়ে ছিল মরিয়ম। ভোর রাতে ফেলে দিল আবর্জনার স্তুপে। দশমাস দশদিনের যন্ত্রনা সে ছুড়ে ফেলল কুকুর বেড়ালের জন্য।
;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;
;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;
কি ভাবছেন মশাই?
কি বলবেন মরিয়ম কে?
কি নাম দেবেন তার?
- কলংকিনী, কুলাটা, নাকি ইংরেজীতে মুখ বাকা করে বলবেন, ব্লাডি বিচ....
প্লিজ মশাই এসব বলবেন না। এসব মরিয়মের জন্য কম পড়ে যাবে। শুধু কলংকিনী, কুলাটা বলে মরিয়মের অপরাধ কে তুচ্চ করবেন না।
মরিয়ম বহন করেছে এই সমাজের সব আবর্জনা। সে তুলে নিয়েছে পৃথিবীর সমস্ত অপরাধ।
প্লিজ মশাই, তাকে আরো উচু দরের গালি দিন। প্লিজ.....
বিষয়: সাহিত্য
১৪০০ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য






































পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন