প্রেমের অল্প অপ্রেমের গল্প
লিখেছেন লিখেছেন অগ্রহায়ণ ১৯ নভেম্বর, ২০১৪, ১০:৪৪:৪৫ রাত
এই গল্পের নায়িকা রাহেলা এখন দুরপাল্লা বাসের একটি সিটে জানালার পাশে বসে আছে। তার পাশে বসে আছে এক যুবক। তার নাম দিলাম মামুন।
মামুনের সাথে রাহেলার পরিচয় তিন মাস আগে। আসুন আমরা ফিরে যাই তিন মাস আগে।
যেখানে রাহেলা একজন আয়া'র মত জীবন যাপন করছে মামা মামীর সংসারে।
এসএসসি পরীক্ষার পর রাহেলার বাবা মারা যায়।
রাহেলার মা, মেয়েকে নিয়ে উঠে আসে ভাইয়ের সংসারে।
মামার সংসারে রাহেলার প্রথম দিকে সমস্যা ছিলনা। মামা কলেজে ভর্তিও করিয়ে দিয়েছিল। লেখাপড়ার পাশাপাশি মামা মামির সংসারের কাজে লেগে থাকত সারা দিন।
কিছুদিন পর রাহেলার মা অসুস্থ হয়ে পড়ে।
সংসারের খরচ, মায়ের ওষুধ পত্র আর রাহেলার পড়ালেখার খরচ চালাতে মামা অপারগ হয়ে পড়ে।
সব দেখে লেখাপড়া থেকে আস্তে আস্তে দুরে সরে যায় সে।
সারাদিন ঘরের কাজ কর্ম করতে করতে নিজের স্বকীয় স্বত্তা কেই ভুলে যায় সে।
একগেয়ে জীবনে অভ্যস্ত রাহেলার সামনে রোমাঞ্চিত শিহরণ নিয়ে আসে মামুন।
ছাদে কাপড় শুকাতে গিয়ে একদিন দেখা হয় মামুনের সাথে। প্রথমে পাত্তা নাদিলেও ধীরে ধীরে কাছে আসতে থাকে তারা ভালোলাগার অমোঘ আকর্ষনে।
রাহেলা জানতে পারে মামুনের কয়েকজন মিলে এই বিল্ডিংয়ে একটি ব্যাচেলর ফ্লাটে থাকে।
সময়ের সাথে তারা আরো কাছে আসতে চায়। দুর থেকে দেখা হলে মুচকি হেসে চোখে চোখে কথা বলতো তারা।
আর সময় পেলে বাড়ির ছাদে গিয়ে লম্বা গল্প জুড়ে দিত।
অতীত জীবনের কথা। ভালোলাগা না লাগার কথা। স্বপ্নের কথা একে অন্যের সাথে ভাগাভাগি করে নেয় দুজন।
কিছুদিন পর এলো রাহেলার স্বপ্নপুরনের দিন। মামুন নিজ থেকেই রাহেলা কে বিয়ে করার আগ্রহ দেখায়। রাহেলা কে নিয়ে সংসার করার কথা বলে। বলে বাবা মার কাছ থেকে অনুমিত নিয়ে নতুন জীবন শুরুর কথা।
এযেন অপুর্ন জীবনে সুখের হাতছানি।
রাহেলা রাজী হয়ে যায়। দিন তারিখ ঠিক করে রাহেলা পালিয়ে যায় মামুনের হাত ধরে স্বপ্ন ধরার পথে।
।
।
।
.....এর ঠিক চার বছর পরে রাহেলার সাথে আমার দেখা।
(কিভাবে, কোথায় দেখা হল সেই গল্প এখানে না বললেও মুল গল্পের কোন ভিন্নতা / বিচ্যুতি আসবে না।)
আসুন পরের কাহিনী আমরা রাহেলার নিজের মুখে শুনি...
আমি পালানোর আগের দিন মামীর আলমারি থেকে কিছু গহনা এবং টাকা চুরি করি।
পরের দিন মামুনের সাথে রওনা দেই তার গ্রামের বাড়ির উদ্দেশ্যে। সেইদিন আমার জীবনের সবচেয়ে সুখের দিন হলেও মনের মধ্যে আনচান একটা ব্যাথা অনুভব করছিলাম।
ভয় হচ্ছিল মামুনের বাবা মায়ের কথা ভেবে। কি জানি তারা কেমন ব্যবহার করে । তার পরিবার আমাকে মেনে নেয় কিনা।
যাত্রা বিরতির জন্য বাস একটি হোটেলের পাশে দাড় করালো।
আমরা নেমে মামুন কে বললাম, তুমি একটা টেবিলে বসো। আমি বাথরুম থেকে ফ্রেস হয়ে আসি।
ফ্রেস হয়ে এসে এদিক ওদিক তাকালাম - মামুন কোথায় বসেছে দেখার জন্য।
কোথাও দেখলাম না তাকে।
সারা হোটেল দুই তিন বার চক্কর দিলাম।
বুকটা ধ্বক করে ওঠলো।
আমি তাড়াতাড়ি বাসে এসে চোখ ঘুরালাম।
মামুন কোথাও নেই।
পাশে পাবলিক ফোনের দোকানে গিয়ে কল দিলাম মামুনের নম্বরে।
মোবাইল বন্ধ।
আমার মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়ল।
কিছুই ভাবতে পারছিলাম না আমি। বুঝতে পারছিলাম না কি করা উচিত।
আমি ফুফিয়ে কেদে ফেললাম।
আমার কান্না দেখে ফোনের দোকানদার কারন জানতে চাইল
আমি সংক্ষেপে সব বললাম।
আমার কথা শুনে দোকানদার পুলিশ কে কল দিল।
পুলিশ এসে আমাকে নিয়ে গেল একটা তিনতলা বিল্ডিংয়ে।
সেখানে নিয়ে আমাকে একটা রুমে তালা দিয়ে রাখে তিন দিন তিন রাত।
তিন দিন পর এক রাতে বেহুশ অবস্থায় আমাকে ফেলে দিয়ে যায় রাস্তার ফুটপাতে।
।
পূনশ্চঃ
রাহেলা এখন একজন গার্মেন্টস কর্মী। প্রতিদিন সকালে টেবিল ক্যারিয়ার হাতে নিয়ে যায় কাজে। ফিরে আসে সন্ধ্যায়।
তার একটি বাচ্চা আছে। প্রতি শুক্রবার এতিমখানায় গিয়ে দেখে আসে থাকে।
তখন রাহেলার চোখে অশ্রু গড়িয়ে পড়তে দেখা যায়......।
বিষয়: সাহিত্য
১৩৪৫ বার পঠিত, ১০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আবেগী এমন ভূল সিদ্ধান্তের খেসারত এভাবেই দিতে হয়!রাহেলার জীবনের করুণ পরিণতির জন্যে নিজেই অধিকাংশে দায়ী!
মন্তব্য করতে লগইন করুন