নানা বাড়ি মধুর হাঁড়িঃ সোনালি শৈশব

লিখেছেন লিখেছেন আতিক খান ২৩ জুলাই, ২০১৪, ০৩:০৪:২৭ দুপুর



নানার বাড়ি মধুর হাড়ি। ছোটকালে নানার বাড়ি মানেই ছিল এক রুপকথার রাজ্য। নানার বাড়ি শুনলেই আমরা কয়েক মিনিটে জুতা মোজা পড়ে রেডি। গাছপালায় ঘেরা এক স্বর্গপুরী, কতকিছু যে পেতাম হাত বাড়ালেই। পেয়ারা গাছে চড়ে পেয়ারা পাড়া শিখেছিলাম। লম্বা লাঠির আগা দ্বিখণ্ড করে তাতে আমের ডাল ফাঁসিয়ে আম পাড়া হত। বেলুম্বু গাছে ঝাড়া দিলেই ঝরঝর করে বেশ কিছু বেলুম্বু পড়ত মাটিতে। আজকালকার বাচ্চারা বেলুম্বু কি সেটাই জানে না। ছাদের কোণায় বড়সড় বরই গাছ। তরতাজা দেশি বরই। খেয়ে শেষ করতে পারতাম না। পিছনের উত্তর কোনে সুপারি, কলা আর কাঁঠাল গাছ। বাসার সামনে একটা কুয়া ছিল। যেটাতে কই, তেলাপিয়া জাতীয় ছোট মাছের ছিল আনাগোনা।

পিছনে খোলা জায়গায় মুরগির খামার। দিনের বেলা মুরগিগুলো ঘুরে বেড়াতো পিছনে অনেকগুলো বাচ্চা কাচ্চা নিয়ে। আমরা গেলে নানু পছন্দমত মুরগি বেছে নিয়ে চড়িয়ে দিতেন চুলায়। এখনকার মত এত ডিপফ্রিজ আর বড় ফ্রিজ ছিল না। কিন্তু নানুর একটা স্পেশাল মিটশেফ জাতীয় আলমিরা ছিল। ছোট একটা তালা ঝুলত, যার চাবি ছিল নানুর আঁচলে। সেখানে বিশেষ বিশেষ খাবারের বৈয়াম আর ডিব্বা থাকত। আমরা গেলে কিছু কিছু বের হত সেখান হতে। ফাঁকতালে থাকতাম যদি কখনো খোলা পাওয়া যায়, পেলেই নাতি নাতনিরা কিছু গায়েব করে দিতাম। সামনের খোলা জায়গায় রোদবৃষ্টি উপেক্ষা করেই ফুটবল, ক্রিকেট, ডাংগুলি, সাতচারা, গোল্লাছুট, বোমব্লাসটিং, মার্বেল, লাটিম - কি খেলি নাই!!

আরেকটা খেলা ছিল - চারা খেলা। চ্যাপ্টা পাথরের টুকরা দিয়ে খেলা হত। সেটার পয়েন্ট বা পুরস্কার এর জন্য আমরা রাস্তা হতে সিগারেটের প্যাকেট সংগ্রহ করতাম। দামি সিগারেট এর প্যাকেট বেশি পয়েন্ট। আড্ডাস্থল ছিল সিঁড়িঘর এর চিলেকোঠা। চিলেকোঠায় ক্যারাম, লুডু, দাবা, মনোপলি সব নিয়মিত খেলার মাঝে টুর্নামেন্ট ও হত। স্বর্ণালি সব দিন, আজকাল সবাই খেলে শুধু কম্পিউটারে......।

বড় নাতি হিসাবে আমাকে খুব আদর করতেন। একবার ঈদে লুকিয়ে ৫০০ টাকা দিয়ে বলেছিলেন, কাউকে বলবে না। অন্যদের জন্য বাজেট কম। আমিও টাকাটা লুকিয়ে ফেললাম ভদ্র ছেলের মত। ৯৬ সালের অগাস্টে নানুর শরীর খুব খারাপ হয়ে গিয়েছিল। আমার এনগেজমেনটে সশরীরে যেতে পারেননি। আমার হবু বউকে তাই কমিউনিটি সেন্টার হতে সরাসরি সালাম করতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। নানু আলাদা করে বড় নাতির বউয়ের জন্য বিশাল কানের দুল জোড়া রেখে দিয়েছিলেন। সেদিন সেটা পরিয়ে দেয়ার মাস দুয়েকের মধ্যে আমাদের ছেড়ে চলে যান। বিয়েতে নানুর স্মৃতি হিসেবে তাই দুল জোড়াই ছিল।

নানা-নানুরা না থাকলে নানাবাড়ি কি সেটা বুঝাই দুষ্কর। আজকাল নাতি নাতনিরা সব বাড়িতে নইলে ফ্ল্যাটে বেড়াতে যায়। কি সব মিস করে ওরা যদি বুঝত !!

বিষয়: বিবিধ

৩৮২৮ বার পঠিত, ১৫ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

247497
২৩ জুলাই ২০১৪ দুপুর ০৩:৩৪
সুশীল লিখেছেন : ভালো লাগলো ধন্যবাদ
২৩ জুলাই ২০১৪ দুপুর ০৩:৪৮
192176
আতিক খান লিখেছেন : আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ, ১ম মন্তব্যের জন্য। Happy Good Luck Good Luck
247502
২৩ জুলাই ২০১৪ দুপুর ০৩:৩৫
আফরা লিখেছেন : আমি দেশে থাকা পর্যন্ত নানা বাড়িতেই ছিলাম ।ভাল লাগল আপনার নানা বাড়ির গল্প ।আল্লাহ আপনার নানীকে জান্নাত নসীব করুন ।আমীন ।
২৩ জুলাই ২০১৪ দুপুর ০৩:৫০
192178
আতিক খান লিখেছেন : নানাবাড়ি বা দাদাবাড়ির গল্পগুলোই অন্যরকম। :Thinking আজকাল ডিজিটাল বাচ্চারা মজার অনেক কিছু হতে বঞ্চিত। ধন্যবাদ দোয়া করার জন্য। Good Luck Good Luck
247512
২৩ জুলাই ২০১৪ বিকাল ০৪:২৭
সন্ধাতারা লিখেছেন : অনেক অনেক ধন্যবাদ খুব ভালো লাগলো মিসটি লিখাটি।
২৩ জুলাই ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:৫০
192241
আতিক খান লিখেছেন : আমাদের প্রজন্মের সোনালি শৈশব। ভালো লাগায় লেখা সার্থক। আপনাকেও ধন্যবাদ। Happy Good Luck Good Luck
247656
২৩ জুলাই ২০১৪ রাত ১১:৪৭
বৃত্তের বাইরে লিখেছেন : নানা এবং দাদা বাড়ির অনেক স্মৃতি মনে পড়ল। বেলুম্বু গাছটা আমিও চিনতে পারছিনা। পুকুর ঘাঁটে ছিপ ফেলে বসে থাকা, গোল্লাছুট, বোমব্লাসটিং খেলা, মিটশেফ থেকে আচারের বৈয়াম গায়েব করে দেয়া, কাজিনদের সাথে ঈদের সালামী নিয়ে মারামারি ইত্যাদি আরও কত কি! এখন অবশ্য মুরুব্বীরা কেউ বেঁচে নেই আর মামা-চাচাদের বেশীরভাগই প্রবাসী তাই গ্রামে যাওয়া হয়না।

অনেক ভাল লাগল। ধন্যবাদ ভাইয়া আপনাকে Happy Good Luck Good Luck
২৪ জুলাই ২০১৪ সকাল ১১:৪৪
192411
আতিক খান লিখেছেন : নানাবাড়ি আর দাদাবাড়ির স্মৃতি আসলে কখনই ভোলার নয়। মাছ ধরার ব্যাপারটা আমার দাদাবাড়ির সাথে জড়িয়ে আছে। গ্রামের সাথে আমাদের যোগাযোগ কমে যাচ্ছে ধীরে ধীরে। এটা আমাদের প্রজন্মের স্মৃতিতেই থেকে যাবে মনে হচ্ছে। ধন্যবাদ সুন্দর মন্তব্যের জন্য Applause Happy Good Luck Good Luck আপনার জন্য নিচে বেলুম্বু গাছের ছবি দিলাম। একটু টক ধরনের ফল, ভালো আচার হয় এটা দিয়ে।
247678
২৪ জুলাই ২০১৪ রাত ১২:৩৯
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : খুব ভালো লাগল সুন্দর পোষ্টটি।
২৪ জুলাই ২০১৪ সকাল ১১:৪৬
192413
আতিক খান লিখেছেন : অনেক ধন্যবাদ সবুজ ভাই, Happy ভালো থাকবেন। Good Luck Good Luck
247778
২৪ জুলাই ২০১৪ সকাল ১১:৩১
আতিক খান লিখেছেন : বৃত্তের বাইরে - আপনার জন্য বেলুম্বু গাছ এর ছবি
২৫ জুলাই ২০১৪ রাত ১২:১২
192508
বৃত্তের বাইরে লিখেছেন : আমি এই ফলটা আগে দেখিনি। ধন্যবাদ ভাইয়া আপনাকে Happy Good Luck Rose
২৫ জুলাই ২০১৪ বিকাল ০৪:৫৩
192618
আতিক খান লিখেছেন : ইদানিং আমিও দেখি না Sad Good Luck Good Luck
255533
১৮ আগস্ট ২০১৪ দুপুর ০২:৪৫
মামুন লিখেছেন : ওহ!সেই দিনগুলো!! আবার মনে করিয়ে দেবার জন্য ধন্যবাদ, আতিক।
১৯ আগস্ট ২০১৪ দুপুর ০৩:৫৩
199482
আতিক খান লিখেছেন : তোমাকেও ধন্যবাদ। ভালো থাক। Good Luck Good Luck

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File