আত্মাদের হাহাকার
লিখেছেন লিখেছেন ক্লান্ত ভবঘুরে ২৫ এপ্রিল, ২০১৪, ১০:৫৯:০৪ রাত
মাঝে মাঝে প্রবল ইচ্ছে জাগে লিখি। লিখে ফেলি সব। ভেতরের জমতে থাকা বিষাক্ত কথাগুলো তীরের মত ছুড়ে দিই সকলের মাঝে। তারা খুঁজে বেড়াক উত্তর কিংবা অধিকার। আবার ভাবি, থাক না হয়! কি হবে আমার কথায়! হয়তো সবাই শুনবে আবার ভুলে যাবে সবাই। আর যাদের শোনার কথা তারা যে চিরকালই বধির। শুধু আমি বা আমার মত গুটিকয়েক মানুষ চিল্লাফাল্লা করে বাতাস ভারি করে কি-ই বা লাভ?
আমার আজ জানতে ইচ্ছে করছে রানার কথা। আমার খুব করে জানতে ইচ্ছে করছে রানা প্লাজায় নিহত স্বজনদের অনুভূতি আর আহত মানুষগুলোর অবস্থা। কেমন আছেন তারা?
আমরা বলি, শুনি অতঃপর ভুলে যাই। আমাদের আর কি-ই বা করার আছে? কিন্তু সেই স্বজনগুলো, যারা তাদের জীবন থেকে হারিয়ে ফেলেছে একটা অংশ। যে কিনা ছিল কারো বেঁচে থাকার অবলম্বন, কারো অনুপ্রেরণা, কারো ভালোবাসা, কোন ফ্যামিলির উপার্জনের একমাত্র ব্যক্তি, কারো বাবা, কিংবা কারো মা।
সেই মানুষটিকে ছাড়া কিভাবে চলছে তাদের জীবন? অনুপ্রেরণার মানুষটি ছাড়া, ভালবাসার ব্যক্তিটি ছাড়া কিংবা উপার্জনক্ষম একমাত্র পুরুষটি ছাড়া। বাবা ছাড়া একটা শিশু কিংবা মা ছাড়া কতগুলো বাচ্চা!!!
একবছর হয়ে গেল। থেমে নেই কারো জীবন। রানার ব্যবসাও হয়ত বেড়ে হয়েছে দ্বিগুন কিংবা বহুগুণ। শুধু মাঝে থেকে হারিয়ে গেল কিছু জীবন। বিকার নেই কারো। কি-ই বা আসে যায় কার?
রেশমাকে তো বিশাল একটা চাকরি দেয়া হয়েছে। রেকর্ড হয়েছে। বাহবাও পাওয়া গেছে অনেক। রানাকেও গ্রেফতার করা হয়েছিল মাত্র চারদিনের মাথায়। কি দারুন সাফল্য!!!
অতঃপর... সেই চিরচেনা কাহিনী! চলছে মামলা, জামিনের আয়োজন! আর কি-ই বা দরকার জেল থেকে বের হওয়ার। খুব ভালই কাটছে তার জীবন। নিরাপত্তার চিন্তা নেই। তাকে নিয়ে কথাও নেই। সবই ঠান্ডা!
আর নিহত মানুষগুলোর পরিবার! কিংবা আহত মানুষগুলো! কি দরকার আর তাদের ক্ষতিপূরণ দেয়ার? তাদের অ্যাম্বাসেডর রেশমাকে উপস্থাপন করাই হয়েছিল জাতির সামনে। সবার বাহবা কুড়িয়েছিল। একজন শ্রমিকের সে কি বিশাল পুনর্বাসন!
সে রেকর্ড করেছিল। তাই সে পুরস্কারও পেয়েছিল। যেখানে রাষ্ট্রযন্ত্রের সিস্টেমটাই রেকর্ড বলতে অজ্ঞান, সেখানে সে-ই তো একমাত্র পুরস্কার পাওয়ার যোগ্য। আর বাকি শ্রমিকরা রেকর্ডের পদতলে মানুষ হবার অধিকারটাই হারিয়ে ফেলেছে।
তাই রেশমার সে চাকরিটা আমার কাছে একটা কৌতুক! আর আহত শ্রমিকদের জন্য একটা ব্যঙ্গ।
আর রানা! শান্তিতেই থাকুক জেলখনায়। এই সিস্টেমে এর বেশি কি-ই বা আর আশা করা যায়? আমরা বরং ভুলেই যাই!!! শুধু সেই অসহায় মানুষগুলোর জন্য রয়ে যাক একরাশ কান্না, একবুক হাহাকার। আর সময়ের পরতে রয়ে যাক কিছু নষ্ট স্মৃতি, দগদগে ক্ষত আর অচেনা কিছু ব্যথা।
হয়ত একদিন নিহত শ্রমিকদের হাজারখানেক আত্মা তার অস্তিত্বকে পুড়িয়ে দেবে পাপের তীব্র দহনে... শয়নে, স্বপনে কিংবা জাগরনে। প্রতিনিয়ত পুড়িয়ে যাবে তার আত্মাকে। সেই দহন হয়ত একদিন স্পর্শ করবে আমাদেরও...
বিষয়: বিবিধ
১১৫৯ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ধন্যবাদ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন