বাংলাবানান ও শব্দগঠনঃ ভুল শুধু ভুল-৫
লিখেছেন লিখেছেন শাহ আলম বাদশা ১২ জুলাই, ২০১৪, ১১:৪১:০৩ সকাল
একাধিক লেখ্যরূপযুক্ত শব্দ এবং একটিমাত্র লেখ্যরূপযুক্ত শব্দ
একাধিক লেখ্যরূপযুক্ত শব্দের বানানে লেখার সময় ভুল হতেই পারে স্বীকার করি; যেমনঃ গাড়ী/গাড়ি/শাড়ি/শাড়ী ইত্যাদি। কিন্তু এমন কিছু বাংলাশব্দ আছে যাদের একাধিক লেখ্যরূপই নেই, তবুও দেখা যায় লেখকরাই তাকে ভুলবানানে লেখে। যেমনঃ রূপকে লেখেন রুপ বানানে, পড়া আর পরা এর মাঝেও ফারাক করতে পারেন না অনেকেই দেখি। পড়া দিয়ে বোঝায় যেকোনো মুভমেন্ট বা নড়াচড়া বা আন্দোলনকে যথা- বইপড়া, আমপড়া। আর পরা দ্বারা বোঝায় শরীরে কিছু পরিধান করা। এসব শব্দের দ্বৈত বানানরূপ না থাকলেও অবুঝশিশুদের মতোই ভুল করছেন আমাদের অনলাইন লেখকরা হরহামেশাই, যা লজ্জাজনক। লেখায় অর্থবিকৃতি ঘটে যাচ্ছে-সেদিকে লক্ষ্যই নেই তাদের।
সুতরাং যাদের বাংলা শব্দভাণ্ডার এতোই কম তাদের আগে বানান না শিখে, ডিকশনারি অনুসরণ না করে লেখালেখিতে আসা ঠিক নয় যেহেতু তারা ভাবেন একবিষয় আর বানানভুলের দরুণ লেখেন অন্যকিছু। দেখুন তাহলে- ''আমি তোমার মত বলতে চাই না'' বলে মতামত/অভিমত (Opinion) বিষয়ে বলেছি, যা সঠিক। কিন্তু ৯০% লোককেই দেখি এর মানে করেন ' 'আমি তোমার মতো বলতে চাই না'' মানে তুলনা অর্থে অনুরূপ কথা (Comparing) অর্থেই বুঝাতে লিখে থাকেন যদিও বানানে লেখেন ''মত''।
ক্রিয়া আর অসমাপিকা ক্রিয়ার ফারাক
বাংলাভাষায় পাঁচটি পদের একটি হচ্ছে ''ক্রিয়াপদ'' যাকে ইংরেজিতে বলে ভার্ব। কী আশ্চর্যের বিষয় যে, এ ক্রিয়াপদের ব্যবহারও অনেকেই জানেন না অথচ কবিতা লেখেন বা লিখে থাকেন। যেমনঃ ' 'অথচ কবিতা [b]লেখেন'' [/b] এ শুদ্ধ বাক্যকে তারা লেখেন এভাবে ''অথচ কবিতা লিখেন'' অর্থাৎ সাধু ও চলিত শব্দের ফারাক বোঝেন (বুঝেন নয়) না। বুঝে আর বোঝে এর আকাশ-পাতাল ফারাক না বুঝলে লেখালেখিতে আসার মানেই হয়না। এখানে বুঝিয়া (Understanding) অসমাপিকা ক্রিয়া'র চলিতরূপ হচ্ছে বুঝে আর প্রেজেন্ট ইন্ডিফিনিট টেন্স হছে- বোঝে বা বোঝা (Understand)। কবিতা-ছড়ায় অন্ত্যমিল জুড়াতে একাজটি অনেকেই করেন যেমন- তুমি আছো আমার হৃদয়জুড়ে/তাই শুধু আমার অন্তর পুড়ে (পোড়ে হবে)।
বহুবচন শব্দের পৃথকীকরণ এবং অর্থবিভ্রাট
বাংলায় টি/টা/খানা/খানি অব্যয়গুলো যেমন সুনির্দিষ্ট ও একক অর্থে ব্যবহার করতে বুঝায় তেমনই বিপরীতরূপে অনেক বুঝাতে গুলো/গুলি/রা/বৃন্দ/সমূহ/সব অব্যয়গুলো আমরা ব্যবহার করি। এসব অব্যয় উপযুক্ত শব্দের ডানপাশে স্পেসছাড়াই যুক্ত হবার নিয়ম থাকলেও অনেকেই অযৌক্তিকভাবে ভেঙ্গে আলাদা করে লিখে থাকেন, যা হাস্যকর দেখতেও। যেমন- কথা গুলি/মেহমান বৃন্দ/ পাখি সব করে রব/ হিসেব সমূহ ইত্যাদি।
এবং/ও/আর এর ব্যবহার
আমাদের অনেকেই জানেন না যে, এবং কিংবা ও অথবা আর অব্যয় কখন -কোথায় লিখতে হয়? সবাই জানে যে, এরা বাক্যের ভেতরেই থাকে কিন্তু এতটুকু জানলেই কি চলে; এর সঠিক ব্যবহার জানাও জরুরি সঠিক বাক্যগঠনের স্বার্থেই। বাক্যের ভেতরে জটিল বাক্যগঠনের সময় বা একাধিক বাক্যাংশকে যুক্ত করতেই ব্যবহৃত হয় এবং অব্যয়টি; যেমন-তোমাকে সেখানে যেতে হবে এবং আমার কাজটি করতেই হবে। আরেকটি কথা, আর এর ব্যবহারও কিন্তু এবং এর মতোই এটি মনে রাখা উচিৎ।
ও অব্যয়টিও বাক্যের ভেতর থাকে কিন্তু এটি ব্যবহৃত দু'টি শব্দকে পৃথক করতে। যেমন-আমি মাছ কিনতে চাই রুই, কাতল ও ইলিশ। (চলবে)
আগের পর্ব পড়ুন
বিষয়: বিবিধ
১৩৮৯ বার পঠিত, ২২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আপনাদের মত জ্ঞানী গুনীদের লেখাতে ব্যকরণের ধারা উপধারাগুলো হয়তো সঠিকভাবে প্রয়োগ করার শক্তি আছে। কিন্তু যাদের মধ্যে এসব প্রয়োগ যোগ্যতা এবং শক্তি নেই তাদের জন্য কি মনের অনুভূতি প্রকাশ করে ব্লগে কিছু লেখালেখি করা একদম না জায়েজ, হারামে সাইয়্যাবাহ করে দিবেন?
তাইলে আমাগো মত কাঙ্গালরা যামু কুনায়?
হয়তো 'চোস্ত' উচ্চারণ যে করতে পারে তার কাছে অর্থবোধক হতে পারে কিন্তু শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর ৯৯ ভাগই এসব উচ্চারণের ব্যাপারে উদাসীন বা যথার্থ উচ্চারণটি জানেনও না পারেনও না। মানছি; হয়তো কিছুটা উপযোগীতা আছে কিন্তু কতটুকুর জন্য এতগুলি সমস্যাকে পণ্ডিতবর্গ জিইয়ে রেখেছেন আমার মাথায় আসে না।
আসলে বাংলাভাষার পণ্ডিতেদের উদ্ভব তো সংস্কৃত থেকে তাই তাঁরা সংস্কৃতের প্রভাবটাকে কাটিয়ে উঠতে পারেন নি বা কাটাতে চান না। নইলে ব্যাকরণের এতসব মার প্যাঁচ (পেচ হলেই বা কি ক্ষতি ছিল?) রেখে ভাষার কত উপকার হচ্ছে বুঝিনা।
ভাষার ব্যাকরণ তো আর ধর্মগ্রন্থ না যে সংশোধন করা যাবে না? আমাদের সাথে ভারতীয় ব্যাকরণ ও বানানে বিস্তর ফারাক! আমার কথাগুলো হয়তো মূর্খের বাড়াবাড়ি মনে হতে পারে কিন্তু বাস্তব সত্য যা তা ই প্রকাশ করলাম। অভিযোগটা আপনার কাছে নয়, ভাষাবিদদের কাছেই। কিছু মনে করবেন না।
ধন্যবাদ।
A PHP Error was encountered
Severity: Notice
Message: Undefined offset: 9368
Filename: views/blogdetailpage.php
Line Number: 764
মুই তো ভুল অশ্বীকার করণের মাজহাবের অনুসারী না। দর হাকিকত মুই কইতে চাইছিলুম আমাগো মতন যারা কাচঁ হাতের অদক্ষ লেখিয়ে। বিশেষ করে বাংলা বানানের ক্ষেত্রে শব্দের হাত পা ভেঙ্গেচুড়ে হলেও নিজের অনুভুতি প্রকাশ করতে মন দিল উৎলা অইয়া যায় গ্লোবালাইজেশনের সুযোগ সুবিধা ভোগ করে। যদি বেআক্কেলের মত আরেকটু খোলাসা কইরা বইলবার চাই তাইলে বইলতে অয় আইজ কাল সামাজিক যোগাযোগের ডিজিটালায়নের সুবাদে অনেক একাডেমিক শিক্ষা বঞ্জিত বনী আদমও ইন্টারনেটের সুবাধে, কম্পিউটারের কল্যাণে নিজের ভাবটারে সাহিত্যিক আকারেও প্রকাশ কইরবার প্রয়াস লক্ষ্য করণ যায়। মাগার আকসার বনী আদম যারা নন একাডেমিক জ্ঞানীগুনী আমি তাগোর কখাডা বিশেষভাবে বুঝাইবার চাইছিলুম। কেন্তু মোর আক্কেল-জ্ঞানের সীমাবদ্ধতার কারণে বিষয়ডা ভালভাবে ইলাস্ট্রেট কইরবার হারি ন।
আশা কইরছি এতোক্ষণ যে পরিমাণ বেফাস বোল চাল করলুম তাতে কিছুটা হলেও আপকে দরবারে আলিয়াতে খোশ নজদিক কইরবার হারছি।
যাযাকাল্লাহ
মন্তব্য করতে লগইন করুন