ইসলাম মানলে বাঙ্গালি হওয়া যাবে না বা বাঙ্গালি হলে ইসলাম মানা যাবে না এমন কথা কোথায় পেলেন?
লিখেছেন লিখেছেন লুকোচুরি ১৯ জানুয়ারি, ২০১৪, ০৩:১১:৫৬ দুপুর
একদিন একটা লেখা পড়লাম বাংলা নিউজ টোয়েন্টি ফোর ডট কমে, যেখানে খুব সুক্ষভাবে বাঙ্গালি সংস্কৃতি আর ইসলামিক সংস্কৃতির ভিন্নতা তুলে ধরা হয়েছে, যেখানে ইসলামিক অনেক রীতিনীতিকে অপমান করা হয়েছে। যেটা মোটেও ঠিক হয়নি। লেখাটি আপনারা এখান থেকে পড়ে নিতে পারেন। এই লেখাটি পড়ার পর মনে হল এর উত্তরে কিছু একটা লিখতে হবে, তারপর লিখে ফেললাম একটা আর্টিকেলের মত। [ বিঃদ্রঃ ইসলামে জাতীয়তাবাদের কোন স্থান নেই, অনেকেই ভাবতে পারেন আমি এই লেখার মাধ্যমে বাঙ্গালি জাতীয়তাবাদের কথা বলেছি, কিন্তু আমি এমনটা মোটেও করিনি।]
"বিতাড়িত শয়তানের ওয়াসওয়াসা থেকে মহান আল্লাহ্ রাব্বুল আলামিনের কাছে আশ্রয় চাইছি"
শুরু করছি পরম করুনাময় এবং অসীম দয়ালু আল্লাহ্ তা'আলার নামে-
“হে মানব, আমি তোমাদেরকে এক পুরুষ ও এক নারী থেকে সৃষ্টি করেছি এবং তোমাদেরকে বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে বিভক্ত করেছি, যাতে তোমরা পরস্পরে পরিচিতি হও। নিশ্চয় আল্লাহর কাছে সেই সর্বাধিক সম্ভ্রান্ত যে সর্বাধিক পরহেজগার। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সবকিছুর খবর রাখেন।” (৪৯:১৩)
এই আয়াতের মাধ্যমে স্পষ্ট বোঝা যায় যে আল্লাহ্ তা'আলা মানব জাতিকে বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে ভাগ করে দিয়েছেন। আর তাদের দিয়েছেন নিজস্ব ভাষা ও স্বকীয়তা। প্রত্যেক জাতিরই রয়েছে নিজস্ব কিছু বৈশিষ্ট্য যা তাদের অন্য জাতি থেকে পৃথক করে। কিন্তু তার মানে এই না যে তারা জাতের দোহাই দিয়ে যা ইচ্ছা তাই করে বেড়াবে। আর অন্য জাতির উপর নিজের শ্রেষ্ঠত্ব ধরে রাখতে যুদ্ধ-বিগ্রহে লিপ্ত হবে। কিংবা সেই জাতির একজন হতে পেরে অহংকার করবে। সে তো ওই জাতির মানুষ হিসেবে জন্ম নাও নিতে পারত। এটা সম্পূর্ণ আল্লাহ্র ইচ্ছা একজন মানুষের জন্ম কোথায়, কখন হবে। তাহলে এত দম্ভ, এত অহংকার কেন? কেন আজকাল জাতি স্বত্বা নিয়ে চেতনা ব্যবসায় মগ্ন হয়ে পড়েছে কিছু মানুষ?
রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, "হে লোকসকল, তোমরা শোন- কোন আরবের উপর অনারবের শ্রেষ্ঠত্ব নেই, আবার কোন অনারবের উপরও আরবের শ্রেষ্ঠত্ব নেই, কোন কালোর উপর সাদার এবং সাদার উপর কালোর শ্রেষ্ঠত্ব নেই। কেননা, সবাই আদম থেকে এবং আদম মাটি থেকে সৃষ্ট। শ্রেষ্ঠত্ব যাচাইয়ের মাপকাঠি হচ্ছে তাকওয়া।"
আমি বাঙ্গালি নাকি অবাঙ্গালি এসবতো কোন কাজে আসবে না। কারন আমাদের শ্রেষ্ঠত্ব যাচাই করা হবে তাকওয়া দিয়ে, অর্থাৎ আমরা আল্লাহ্র আদেশ কতটুকু মানলাম আর কতটুকু মানলাম না। আল্লাহ্ তা'আলা কুরআনে বলেন, "আমি সৃষ্টি করেছি মানুষ ও জীনকে শুধুমাত্র আমার ইবাদতের জন্য। (সুরা জারি আত ৫৬.)" এখান থেকেই বোঝা যায় মানুষ সৃষ্টির উদ্দেশ্য। আমরা যে ভাষাভাষীর মানুষই হই না কেন আমাদের একমাত্র কাজ হচ্ছে আল্লাহ্র ইবাদত আর সর্বদা আল্লাহ্কে স্মরণ করা আল্লাহ্কে ডাকা। আমরা যে ভাষাতেই আল্লাহ্কে ডাকি না কেন আল্লাহ্ তা বুঝবেন, কারন সব ভাষা আল্লাহ্রই সৃষ্টি। তাই আমি বলব জাতি বা ভাষা নিয়ে বড়াই করার কিছু নাই। তথাকথিত সুশীল সমাজ হয়ত বলবেন, "আমাদের তো আর খেয়ে দেয়ে কাজ নাই যে চব্বিশ ঘণ্টাই ইবাদত করব। আমাদেরও তো জীবন আছে তাই না? আমাদেরও সাধ আহ্লাদ থাকতে পারে। তাই ওসব হবে না। আমরা পারব না সারাদিন ধর্ম কর্ম নিয়ে পড়ে থাকতে। ধর্মকর্ম করবে তো ওই কাঠ মোল্লারা, ওরা তো আছেই। আমাদের কেন টানাটানি কর এসব বিষয়ে" তাদের উদ্দেশ্যে বলব ইবাদত যে শুধু নামাজ আর কুরান পড়ার মাধ্যমে হয় তা কিন্তু না। নামাজ, কুরআন আর সুন্নাহ্ অধ্যয়নের সাথে সাথে আপনি হালাল উপার্জন, ভাল কথা বলা, সৎ পথে থাকা, দান করা, সর্বাবস্থায় আল্লাহ্র উপর আস্থা রাখা, আল্লাহ্র প্রশংসা করা, মা-বা, স্বামী-স্ত্রী, সন্তান-সন্ততি ও আল্লাহ্র সমগ্র সৃষ্টির প্রতি দায়িত্ব পালন করা, হারাম বর্জন করা, ঘুমোতে যাওয়ার আগে ও ঘুম থেকে উঠে এবং খাওয়ার আগে ও পরে আল্লাহ্র নাম নেয়া। এভাবে আমাদের জীবনের প্রতিটি মুহূর্তই ইবাদতের মধ্যে কাটানো যায় যদি আমরা তা চাই।
এখন আসি তাদের কথায়, যারা সবসময় বাঙ্গালি জাতীয়তাবাদ চেতনা নিয়ে লাফালাফি করে। তাদের মতে, মেয়েদের বোরকা আর ছেলেদের মুখে দাড়ি ও জুব্বা বাঙ্গালি পরিচয় বহন করে না। তাই এসব বর্জন করে শাড়ি, কপালে বড় টিপ আর ছেলেদের পাঞ্জাবী (?) পরতে হবে। কিন্তু আমার প্রশ্নটা হচ্ছে, "পাঞ্জাবী তো পাকিস্তানী পোশাক!!!" তাহলে পাঞ্জাবী কেমন করে বাঙ্গালিয়ানা পরিচয় বহন করে? এছাড়া এসব তথাকথিত বাঙ্গালিদের কোন সমস্যা হয়না যখন একজন মানুষ ইংরেজদের থেকে ধার করা কালচারে নিজেকে সবার সামনে উপস্থাপন করে। যখন কেউ শার্ট, প্যান্ট, স্যুট, টাই পরে তখন বাঙ্গালি চেতনা কোথায় যায়? আবার যখন কোন মেয়ে সেই "পাকিস্তানী পোশাক সালোয়ার-কামিজ" পরে তখনও তাদের মুখে বস্তা পচা সস্তা বাঙ্গালি চেতনার বানী শোনা যায় না। আর তারা যে শাড়ি-ব্লাউজ পরার কথা বলছে, তাদের জ্ঞাতার্থে বলতে চাই, এই ব্লাউজের প্রচলনও তো হল এইতো সেদিন, ১৯০০ শতকে রবীন্দ্রনাথ এর বড় ভাইয়ের বউ ইন্দিরা দেবীর মা প্রথম ব্লাউজ এর প্রচলন করেন। তাহলে এর আগে যখন মহিলারা ব্লাউজ পরতেন না তখন এই দেশে বাঙ্গালি ছিল না??? এখন তো দেখা যাচ্ছে, পোশাকের মাধ্যমেই যদি বাঙ্গালি পরিচয় তুলে ধরতে হয় তবে মেয়েদের পরতে হবে ব্লাউজ ছাড়া শাড়ি আর ছেলেদের পরতে হবে লুঙ্গি-কুর্তা। কিন্তু কই আমাদের চেতনাবাদী বাঙ্গালি জনগোষ্ঠীর মাঝেতো এমন পোশাক দেখা যায় না। যারা নিজেদের বাঙ্গালি বলে দাবি করে বড় বড় কথা বলে তারা নিজেরাইতো ভিন্ন সংস্কৃতির নানারকম জিনিস আত্মস্থ করায় মগ্ন সারাক্ষণ। নানারকম বিদেশী মেকআপ (?) সামগ্রী দিয়ে নিজেকে সাজিয়ে সবার সামনে বাঙ্গালি বলে উপস্থাপন করছে? মেকআপ সামগ্রী একটাও বাঙ্গালিদের আবিষ্কার না, আর এসবের নামগুলোওতো ইংরেজিতে। তাহলে এসব ব্যবহার করে কেমন করে তারা বাঙ্গালি হয় তা আমার বোধগম্য না। এসব বাঙ্গালির যুক্তি হল, দেশি পোশাক পরলে তবেই বাঙ্গালি হওয়া যায়। তার মানে এই দাঁড়ালো, আমাদের ব্যবহার্য সব জিনিসই দেশি হতে হবে, তবেই বাঙ্গালি হওয়া যাবে। কিন্তু তাদের নিত্য ব্যবহার্য জিনিসের শতকরা আশি থেকে নব্বই ভাগ জিনিস বাইরের দেশের। বাইরের দেশের ব্র্যান্ডেড কোম্পানির প্রোডাক্ট ছাড়া তাদের চলেই না। রান্নাঘর থেকে শুরু করে বাথরুম, ড্রয়িংরুম থেকে শুরু করে বেডরুম সবজায়গায় বিদেশী জিনিসে ভরপুর, এছাড়া নানারকম আধুক প্রযুক্তির মোবাইল, ল্যাপটপতো আছেই। বাঙ্গালি যদি হতেই হয় তবেতো মাটি অথবা ছনে বানানো ঘরে থেকে মাটির চুলোয় শুকনো কাঠ দিয়ে রান্না করে মাটির পাত্রে খেতে হবে, হাত পাখার বাতাসে গরম নিবারণ করতে হবে, অর্থাৎ শত বছরের পুরানো বাঙ্গালি ঐতিহ্য মেনে চলতে হবে। কিন্তু তখনতো ওরা আবার এসব যুক্তি মানবে না। আসলে এরা নিজেরাই জানে না এরা কি বলতে চায়।
শহুরে কিছু স্বঘোষিত বাঙ্গালি নারী ছাড়া আবহমান বাংলার বিপুল সংখ্যক জনগোষ্ঠী হিন্দু, মুসলিম নির্বিশেষে তারা শালীনতার জন্য মাথায় ঘুমটা দিয়ে থাকেন আর যা বহু আগে থেকেই চলে আসছে, তাহলে কি তারা বাঙ্গালি না??? এসব বাঙ্গালিদের কথা শুনেতো এটাই বোঝা যায়,বেগম রোকেয়া, জাহানারা ইমাম, সুফিয়া কামাল, এমন কি শেখ হাসিনা, খালেদা জিয়া এদের কেউ বাঙ্গালি না। সভ্যতার বিকাশে বাঙালি ব্লাউজ পরা শিখেছে, সার্ট প্যান্ট পরছে... মেয়েরা সালোয়ার-কামিজ পরছে, তাহলে কেউ যদি নিজের ইচ্ছায় হিজাব, নেকাব ,বোরকা পরে তাহলে দোষ কোথায়? মানুষের পোশাকটাই পর্দা সুতরাং যার যার রুচি অনুযায়ী পর্দা করবেন এটাই স্বাভাবিক। বিশ্বাসীরা তাদের বিশ্বাসকে অবলম্বন করে জীবনাচার পালন করবেন এতাই-তো স্বাভাবিক। যারা হিজাবকে বাঙালিয়ানার সম্মুখীন করেছেন তাদের জ্ঞাতার্থে বলছি, জিন্স, টিশার্ট, এমন কি অশ্লীলতায় পরিপূর্ণ মডেলদের পোশাক যদি বাঙালিয়ানার পরিপন্থি না হয় তবে হিজাব এর মতো সুন্দর শালীন পোশাক বাঙালি পরিপন্থি হবে কেন? হিজাব (পর্দা ) করার নির্দেশ পবিত্র কোরআনে উল্লেখিত আছে। একজন মুসলিম সেটাই পালন করেন। আপনারা যদি মনে করেন এই আদেশ জামায়াত-শিবির কিংবা হেফাজতের সেটা মূর্খতা নয় কি? আল্লাহ্ তা'আলা পবিত্র কুর'আনে বলেন,
"হে নবী! আপনি আপনার স্ত্রীগণকে, কন্যাগণকে ও মুমিনদের নারীগণকে বলুন, তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দংশ নিজেদের উপর টেনে দেয়। এতে তাদের চেনা সহজ হবে। ফলে তাদের উত্যক্ত করা হবে না। আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (সূরা আহযাব : ৫৯)"
আবদুল্লাহ ইবনে আববাস রা. উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেছেন, আল্লাহ তাআলা মুমিন নারীদেরকে আদেশ করেছেন যখন তারা কোনো প্রয়োজনে ঘর থেকে বের হবে তখন যেন মাথার উপর থেকে ওড়না/চাদর টেনে স্বীয় মুখমন্ডল আবৃত করে। আর (চলাফেরার সুবিধার্থে) শুধু এক চোখ খোলা রাখে।-ফাতহুল বারী ৮/৫৪, ৭৬, ১১৪
ইবনে সীরিন বলেন, আমি (বিখ্যাত তাবেয়ী) আবীদা (সালমানী রাহ.)কে উক্ত আয়াত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেন, কাপড় দ্বারা মাথা ও চেহারা আবৃত করবে এবং এক চোখ খোলা রাখবে।
"তোমরা তাঁদের (নবী পত্নীদের) নিকট কিছু চাইলে পর্দার আড়াল থেকে চাও। এই বিধান তোমাদের ও তাদের হৃদয়ের জন্য অধিকতর পবিত্রতার কারণ। তোমাদের কারো জন্য আল্লাহর রাসূলকে কষ্ট দেওয়া সংগত নয় এবং তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর পত্নীদেরকে বিবাহ করা তোমাদের জন্য কখনো বৈধ নয়। আল্লাহর দৃষ্টিতে এটা ঘোরতর অপরাধ। (সূরা আহযাব (৩৩) : ৫৩)"
এই আয়াত থেকেও বোঝা যায়, নারীর দেহের কোনো অংশই পর্দা-বিধানের বাইরে নয়। উম্মুল মুমিনীনগণের আমলও তা প্রমাণ করে।
এই আয়াতে যখন পর্দার বিধানকে সাহাবায়ে কেরাম ও উম্মুল মুমিনীনদের জন্যও অধিকতর পবিত্রতার উপায় বলা হয়েছে তখন উম্মতের আর কে আছে যে এই বিধানের বাইরে থাকতে পারে?
"ঈমানদার নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের যৌন অঙ্গের হেফাযত করে। তারা যেন যা সাধারণতঃ প্রকাশমান, তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে এবং তারা যেন তাদের মাথার ওড়না বক্ষ দেশে ফেলে রাখে এবং তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভ্রাতা, ভ্রাতুস্পুত্র, ভগ্নিপুত্র, স্ত্রীলোক অধিকারভুক্ত বাঁদী, যৌনকামনামুক্ত পুরুষ, ও বালক, যারা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ, তাদের ব্যতীত কারো কাছে তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে, তারা যেন তাদের গোপন সাজ-সজ্জা প্রকাশ করার জন্য জোরে পদচারণা না করে। মুমিনগণ, তোমরা সবাই আল্লাহর সামনে তওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও। (সুরা নুরঃ ৩১)"
এই সব আয়াতের মাধ্যমে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, গায়রে মাহরাম পুরুষের সামনে নারীর মুখমন্ডলসহ পূর্ণ দেহ আবৃত রাখা অপরিহার্য।
সুশীল সমাজের আবার এসব আয়াত পড়ে মাথাব্যথা বেড়ে যেতে পারে। তারা মনে করতে পারে পর্দা শুধু মেয়েদের জন্যই করা হয়েছে। আপনাদের বলব, জি না জনাব! পর্দা ছেলে মেয়ে উভয়ের জন্য করা হয়েছে। দেখুন কুরআন কি বলে এই বিষয়ে,
"মুমিনদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গর হেফাযত করে। এতে তাদের জন্য খুব পবিত্রতা আছে। নিশ্চয় তারা যা করে আল্লাহ তা অবহিত আছেন। (সুরা নুরঃ ৩০)
এই আয়াতের মাধ্যমে এটা স্পষ্ট যে, ছেলেরা গায়ের মাহরামের সাথে কিরূপ আচরন করবে। কিন্তু কিছু প্রগতিশীল মানুষরা কুরআনের এই আয়াত মানতে নারাজ। তাদের মতে এই আধুনিক সময়ে এসে ছেলে মেয়ে উভয়কেই একসাথে কাজ করতে হচ্ছে। এক্ষেত্রে একজন আরেকজনকে না দেখলে বা মেয়েদের মুখ আবৃত থাকলে ঠিকভাবে ভাবের আদান প্রদান সম্ভব না। তাই তাদের ব্যক্তিগত মতামত হচ্ছে মুখ অনাবৃত রাখা। আর আল্লাহ্ তা'আলা তাদের জন্য এই আয়াত টা কুরআনে বলেছেন,
"আল্লাহ ও তাঁর রাসূল কোনো বিষয়ে নির্দেশ দিলে কোনো মুমিন পুরুষ কিংবা মুমিন নারীর সে বিষয়ে ভিন্ন সিদ্ধান্তের অবকাশ থাকবে না। কেউ আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে অমান্য করলে সে স্পষ্টতই পথভ্রষ্ট হবে। (সূরা আহযাব (৩৩) : ৩৬)"
আমি এসব বাঙ্গালিদের এমনও বলতে শুনেছি, "একজন গায়িকা যদি টিভিতে, স্টেজে বোরখা পরে গান গায়, আমরা কি তা স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করছি? এসবকি আদৌ ঘটছে এই বাংলাদেশ নামক ভূ-খণ্ডে?" এসব বাঙ্গালিরা কি জানে না যে, গান-বাজনা ইসলামে নিষিদ্ধ। প্রসঙ্গে রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর হাদিস উল্লেখ করা যেতে পারে,
"রাসুল {সাঃ} বলেনঃ আখেরি জামানায় কোন কোন জাতিকে দাবিয়ে দেয়া হবে, কোন কোন জাতিকে উপরে উঠিয়ে নিক্ষেপ করে ধ্বংস করা হবে, চেহারা পরিবর্তন করে শুকর ও বানরে পরিণত করা হবে । রাসুল (সাঃ) কে জিজ্ঞেসা করা হল কখন এরুপ করা হবে? তিনি বললেন " যখন গান-বাজনা এবং গায়িকার সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে"। {সুনান ইবনে মাজাহ, জামে আল সাগির ২১৬}"
"তোমরা গায়িকা (দাসী) ক্রয়-বিক্রয় কর না এবং তাদেরকে গান শিক্ষা দিও না। আর এসবের ব্যবসায় কোনো কল্যাণ নেই। জেনে রেখ, এর প্রাপ্ত মূল্য হারাম। (জামে তিরমিযী হাদীস : ১২৮২; ইবনে মাজাহ হাদীস : ২১৬৮)"
বর্তমানে গান ও বাদ্যযন্ত্রের বিশাল বাজার তৈরি হয়েছে যাতে কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হচ্ছে। মনে রাখতে হবে, এর সকল উপার্জন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাদীস অনুযায়ী সম্পূর্ণ হারাম।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও ইরশাদ করেন, "আমার উম্মতের কিছু লোক মদের নাম পরিবর্তন করে তা পান করবে। আর তাদের মাথার উপর বাদ্যযন্ত্র ও গায়িকা রমনীদের গান বাজতে থাকবে। আল্লাহ তাআলা তাদেরকে যমীনে ধ্বসিয়ে দিবেন। (সুনানে ইবনে মাজাহ হাদীস : ৪০২০; সহীহ ইবনে হিব্বান হাদীস : ৬৭৫৮) "
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বলেন, "পানি যেমন (ভূমিতে) তৃণলতা উৎপন্ন করে তেমনি গান মানুষের অন্তরে নিফাক সৃষ্টি করে। (ইগাছাতুল লাহফান ১/১৯৩; তাফসীরে কুরতুবী ১৪/৫২)"
আমাদের মহান (!) সুশীল সমাজের কেউ একজন এভাবে কথাগুলো বলেছেন, "বোরকা এখানে এসেছে ইসলামী সংস্কৃতি বা ইসলামী জাতীয়তার নিদর্শনরূপে। কিন্তু আমাদের মূল্যবান পরীক্ষিত বাঙালি জাতীয়তা এবং এর ভেতরের অন্তর্নিহিত ধর্মনিরপেক্ষ স্বত্ত্বা বোরকাকে বিপুলভাবে সাদরে গ্রহণ করতে পারেনি বা একে আদৌ প্রয়োজনীয় একটা পোষাক হিসেবে গ্রহণ করেনি। এখানে ইসলামী পরিচয়বাহক এই পোষাক তার গুরুত্ব যথেষ্টভাবে হারিয়েছে, তা প্রমাণিত।" তার ভাষ্য মতে, ইসলামী পরিচয় বহনকারী এই পোশাক বাঙ্গালি জাতীয়তাবাদের কাছে তার গুরুত্ব হারিয়েছে, আসলেই কি তাই? কিংবা বাঙ্গালি জাতীয়তাবাদ কি ধর্ম নিরপেক্ষতার পরিচয় বহন করে? আমার উত্তর স্পষ্টতই 'না' হবে। কারন বাঙ্গালি জাতির বিপুল সংখ্যক জনগোষ্ঠী সেই বহু আগে থেকেই সনাতন ধর্মে দীক্ষিত। নিরপেক্ষ শব্দের অর্থ হচ্ছে, কোন পক্ষকেই সমর্থন না করা, তাহলে বাঙ্গালি জাতির এই বিশাল জনগোষ্ঠী কেন একটা ধর্মের অনুসরন করে আসছে? আপ্নারা এর উত্তরে হয়ত বলবেন, ধর্ম নিরপেক্ষতা মানে হল সবাই যার যার ধর্মের অনুসরন করবেন। এক্ষেত্রে আমি বলব, তাহলে মুসলিমরা তাদের ধর্ম পালন করতে গেলে আপনাদের অ্যালার্জি এত বেড়ে যায় কেন? আপনাদের অ্যালার্জি তো অন্য ধর্মের ক্ষেত্রে দেখা যায় না, তাহলে কেন শুধু ইসলাম ধর্মকেই বেছে নিলেন? এবার আসি বোরকা প্রসঙ্গে, আপনারা বলছেন, এদেশের মানুষ বোরকাকে গ্রহন করেনি, আমি বলব তারা বোরকা না, ইসলামিক জ্ঞান গ্রহন করতে এখনও সামর্থ্য হয়নি। কারন যেই কয়জন ইসলামিক জ্ঞান রাখে তারা সবাই যথাযথ ভাবে পর্দা করে। আর ইন শা আল্লাহ্ যেইদিন সবাই ইসলামকে সঠিক ভাবে জানবে সেইদিন সবাই পর্দা করবেন। আল্লাহ্ চাইলে হয়ত আপনিও তাদের অন্তর্ভুক্ত হবেন। আর তখন বিভিন্ন টকশো, নাটক, সিনেমাতে ছেলে-মেয়ের অবাধ বিচরন, পর্দা হীনতা কিছুই থাকবে না ইন শা আল্লাহ্।
এসব বাঙ্গালির কর্মকাণ্ড দেখে মনে হয় এরা যেন একটি সুস্পষ্ট উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য ক্রমান্বয়ে সামনে অগ্রসর হচ্ছে, আর তাহল মানুষের মাঝে ইসলাম বিমুখতা তৈরি করা। কিন্তু ওরা তো জানে না এই আয়াতটি,
" তারা যেন ফু দিয়েই আল্লাহর নুরকে নিভিয়ে দিবে। কিন্তু আল্লাহ তো তার নুরকে পূর্ণতায় পৌছাবেন (সুরাহ সাফ)"
তারা যতই চক্রান্ত করুক না কেন তারা কোনদিনই পারবে না ইসলামের আলো নিভিয়ে দিতে। ইসলাম শাশ্বত, ইসলাম চিরন্তন। আর এর রক্ষার দায়িত্ব স্বয়ং আল্লাহ্ তা'আলা নিয়েছেন। একটা সময় আসবে যখন তারা বলবে, "আমাদের এই কাজটা করা ঠিক হয়নি। এই কাজটা করলাম বলেই মানুষ ইসলামের আরও কাছে চলে গেল।" আল্লাহ্ বলেন,
"তারা কৌশল করে, আল্লাহও কৌশল করেন। আর আল্লাহ হলেন সর্বোত্তম কৌশলকারী (সুরাহ আল ইমরান)"
ইসলাম মানলে বাঙ্গালি হওয়া যাবে না বা বাঙ্গালি হলে ইসলাম মানা যাবে না এই কথা আপনারা কোথায় পেলেন? আল্লাহ্ তা'আলা আমাদের বাঙ্গালি হিসেবে সৃষ্টি করেছেন। আর আমাদের মুখের ভাষা নির্ধারণ করে দিয়েছেন বাংলা। অবশ্যই আমাদের আছে আলাদা কিছু বৈশিষ্ট্য অন্য জাতি থেকে। কিন্তু তা যে শুধু মাত্র পোশাকই তা কিন্তু না। আমাদের দৈহিক কাঠামো, আমাদের মানসিকতা, আমাদের খাবার-দাবার, আবহাওয়া অন্য জাতি থেকে পৃথক তাতে সন্দেহ নাই। কারন আল্লাহ্ তা'লাই এই পার্থক্য দিয়েছেন। আর বাঙ্গালি জাতি অন্য জাতি থেকে বহু কিছুই ধার করে নিয়েছে, পোশাকের ক্ষেত্রেও তাই। এতে যদি কারো অসুবিধা না থাকে তাহলে আমাদের স্রষ্টা যিনি আমাদের সবসময় কল্যাণ চান, যিনি আমাদের সবচাইতে বেশি ভালবাসেন আমাদের কি উচিত হবে না তাঁর কথা মেনে চলা।
পরিশেষে এটুকুই বলতে চাই, আল্লাহ্ তা'আলা কুরআনে বলেছেন,
"নিশ্চিতই যারা কাফের হয়েছে তাদেরকে আপনি ভয় প্রদর্শন করুন আর নাই করুন তাতে কিছুই আসে যায় না, তারা ঈমান আনবে না। (সুরা বাকারাঃ ৬)"
"আল্লাহ তাদের অন্তকরণ এবং তাদের কানসমূহ বন্ধ করে দিয়েছেন, আর তাদের চোখসমূহ পর্দায় ঢেকে দিয়েছেন। আর তাদের জন্য রয়েছে কঠোর শাস্তি। (সুরা বাকারাঃ ৭)"
তাই আমি যত যাই বলি না কেন সেটা তাদের কোন কাজেই আসবে না। আমার চিৎকার-চেঁচামেচিতে তারা সঠিক পথে ফিরবে না। আর আল্লাহ্ তা'আলা আরও বলেন,
"আর হে নবী (সাঃ), যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকাজসমূহ করেছে, আপনি তাদেরকে এমন বেহেশতের সুসংবাদ দিন, যার পাদদেশে নহরসমূহ প্রবাহমান থাকবে। যখনই তারা খাবার হিসেবে কোন ফল প্রাপ্ত হবে, তখনই তারা বলবে, এতো অবিকল সে ফলই যা আমরা ইতিপূর্বেও লাভ করেছিলাম। বস্তুতঃ তাদেরকে একই প্রকৃতির ফল প্রদান করা হবে। এবং সেখানে তাদের জন্য শুদ্ধচারিনী রমণীকূল থাকবে। আর সেখানে তারা অনন্তকাল অবস্থান করবে। (সুরা বাকারাঃ ২৫)"
আল্লাহ্ সুবহানাহু তা'আলা আমাদের সকলকে ক্ষমা করে দিয়ে সঠিক পথে চলার তৌফিক দিন। আমাদের তাঁর প্রিয় বান্দার অন্তর্ভুক্ত করে দিন। আর আমাদের সবাইকে অনন্তকাল জান্নাতুল ফিরদাউসে থাকার তৌফিক দিন। আমীন।
বিষয়: বিবিধ
১৬৭০ বার পঠিত, ১০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
পবিত্র কুরআন ও সহীহ হাদীসের মণি-মুক্তো দিয়ে সাজানো আপনার চমৎকার পোস্টটি ভালো লাগ্লো খুব! মহান রব আপনাকে উত্তম প্রতিদান দিন! ধন্যবাদ...
তবে পরে পড়ে মন্তব্য করে যাবো ইনশাআল্লাহ । আপুজ্বী
জাজাকাল্লাহু খাইরান।
মন্তব্য করতে লগইন করুন