"শেষ ঠিকানা, অথবা জননীর "বৃদ্ধাশ্রম" যাত্রার গল্প!!
লিখেছেন লিখেছেন ইশতিয়াক আহমেদ ১১ অক্টোবর, ২০১৬, ০৭:১৯:৫০ সন্ধ্যা
প্রতিদিনই এতো ঘ্যানর ঘ্যানর করো কেন? অফিস থেকে এসে একটা দিনও শান্তি পাইনা তোমাদের জন্য। আর শায়লাকে এতো জ্বালাও কেন? তোমাদের কি কোন আক্কেল নাই? সবকিছু কি শায়লাই করতে হবে, নিজেরা কিছু করতে পারোনা? সারাদিন শুধু পায়ের উপর পা তুলে বসে থাকো বাসায়। বসে বসে হুকুম করো শায়লাকে। আর ব্যাটা কই? ব্যাটারে তো একদিনও বাসায় এসে পাইনা। কোথায় যায়??
কথাগুলি রাহিন বলছিল তার মা আফিয়া বেগমকে। তার কথার উত্তরে আফিয়া বেগম কিছুও বলতে পারলেন না। শুধু ঝর ঝর করে চোখের পানি পড়েছে উনার। আর কাপড়ের আচল দিয়ে চোখের পানি মুছছিলেন তিনি।
৭-৮ মাস আগে বিয়ে করেছে রাহিন। প্রেম করে বিয়ে করেছে। শায়লার সাথে তার রিলেশন ছিল ২বছর। পরে যখন মা বাবার কাছে শায়লার কথা বলে বিয়ে করার কথা জানিয়েছে তখন তারা নিষেধ করেননি একবারও। ছেলের পছন্দকে প্রাধান্য দিয়ে ছেলের মুখে হাসি রেখেছেন। কারণ তাদের একমাত্র ছেলে রাহিন। তাকে তো আর অখুশি রাখা যায়না !
ছোট বেলা থেকেই একমাত্র ছেলে রাহিনকে আগলে আগলে বড় করেছেন তারা। কখনো কষ্ট পেতে দেননি। সবসময় ছেলেকে খুশি রেখেছেন, তার ইচ্ছাপূরণ করেছেন। শেষে বিয়েটাও ছেলের ইচ্ছায়ই তার পছন্দমতো করিয়েছেন।
তারা কখনো ভাবেননি ছেলে এভাবে প্রতিদান দিবে ভালোবাসার। বউয়ের নালিশের উপর ভিত্তি করে এতো কথা বলবে তাদের। আজ দুপুরে শুধু এক কাপ চায়ের কথা বলেছিলেন শায়লাকে। আর তাতেই শায়লা রাহিনের কাছে বিচার দিল যে পায়ের উপর পা তুলে বসে বসে হুকুম করে শুধু। বউয়ের থেকে নালিশ পেয়েই রেগেমেগে মাকে এসে এসব কথা শুনাচ্ছিল রাহিন। এসব বলেই হুরহুর করে চলে গেল তার রুমে।
রাহিন যাওয়ার কিছুক্ষণ পরেই রুমে এসে ঢুকলেন আনাস সাহেব। তারও দু গাল বেয়ে চোখেত পানি পড়ছে । তিনি ধীরে ধীরে হেঁটে এসে বসলেন স্ত্রী আফিয়া বেগমের পাশে । স্ত্রীর কাঁধে হাত রেখে বললেন, প্রতিদিনই এসব আর কতো শুনবে এসব। এই ছেলেকেই আমরা এতো কষ্ট করে বড় করেছি? আমরা এখন তার কাছে বুজা হয়ে গেছি আফিয়া!
চলো এখানে আর থেকে লাভ নেই। আমি বাহিরে গিয়ে একটা বৃদ্ধাশ্রমের সাথে কথা বলে এসেছি। আরো আগেই তো চলে যেতাম কিন্তু তুমি মানলেনা। আজ আর না করোনা। এখানের চেয়ে ওখানে আমরা হাজারগুন ভালো থাকবো। অন্তত তিন বেলা পেটে ভাত পড়বে ওখানে। এখানে তো ঠিক মতো খাবারও পাইনা। চলো!
আফিয়া বেগম কিছুই বলতে পারলেন না। আজ আর স্বামীকে নিষেধ করার সাধ্যও তার নেই। স্বামীর সাথে চুপচাপ উঠে দাঁড়ালেন। বাসা থেকে বেরিয়ে হাঁটতে শুরু করলেন বৃদ্ধাশ্রমের উদ্দেশ্যে। এখন থেকে ওটাই তাদের ঠিকানা।
বিষয়: সাহিত্য
১৩৮৭ বার পঠিত, ১৭ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
এতে কিন্তু বেশী সাফার করে নারীরাই । ২৫/৩০ বছর পরে শায়লা - রাহিনকেও একই পরিনতি বহন করতে হবে ।
আইন করা হয়েছে পিতা মাতার সঠিক দেখভালের জন্য । এটার কার্যকর প্রয়োগ করতে গেলে দেখা যাবে যে >১০০% ক্ষেত্রে সংসারে এসব ঘটনার জন্য ছেলের বউয়েরাই দায়ী ।
কিছু কিছু বিষাক্ত বুড়ী আছে যার বিষের যন্ত্রনায় পুরো ঘর নীল হয়ে ওঠে।
ধন্যবাদ আপনাকে। রেমিটেন্স যোদ্ধা।
মন্তব্য করতে লগইন করুন