ডিজিটাল বাংলাদেশের কথা কেবল শ্লোগান নয়, একটি অভীষ্ট লক্ষ্য

লিখেছেন লিখেছেন ইগলের চোখ ১১ অক্টোবর, ২০১৬, ০৭:০৯:০৮ সন্ধ্যা

বাংলাদেশ তথ্যপ্রযুক্তিতে অসামান্য অগ্রগতি সাধন করেছে। বাংলাদেশে তথ্যপ্রযুক্তি বিকাশের সুবর্ণ সময়টির সূচনা হয় ১৯৯৬ সালের পর। এর আগে তথ্যপ্রযুক্তি বিপ্লবের একটি বড় ঘটনা ঘটে যায় ডেস্কটপ বিপ্লবের মধ্য দিয়ে। তবে এর আগে বাংলাদেশের সরকার ১৯৯২ সালে একটি চরম ভুল সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। সেই সময়ে আমাদের বঙ্গোপসাগর দিয়ে সি-মিউ-উই-৩ নামক সাবমেরিন ক্যাবল লাইন স্থাপিত হয়। তখন বাংলাদেশকে সেই সংযোগ গ্রহণ করার অনুরোধ করা হয়। কিন্তু বিনামূল্যে সেই সংযোগ আমরা গ্রহণ করিনি। এর ফলে বাংলাদেশকে একটি দ্রুতগতির সংযোগ পাওয়ার জন্য ২০০৬ সালের মে মাস পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। এটি বাংলাদেশকে দারুণভাবে পিছিয়ে দেয়। অন্যদিকে ইন্টারনেটের আগমন, উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমের প্রসার এবং দ্রুতগতির প্রসেসরের জন্য তথ্যপ্রযুক্তির একটি নতুন দিগন্ত প্রসারিত হয়। ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ প্রথম অনলাইন ইন্টারনেটের যুগে প্রবেশ করে। এরপর ১৯৯৭ সালে বাংলাদেশ মোবাইলের মনোপলি ভাঙে। ১৯৯৬ সালেই দাবি ওঠে শুল্ক ও ভ্যাটমুক্ত কম্পিউটারের। ১৯৯৮ সালে সরকার কম্পিউটারের ওপর থেকে বিভিন্ন প্রকারের শুল্ক ও ভ্যাট তুলে নেয়। একই সময়ে সরকার জেআরসি কমিটির ৪৫টি সুপারিশ গ্রহণ করে এবং সেগুলো বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করে। সেই সুপারিশের অংশ হিসেবে ১৯৯৭ সালের ডিসেম্বরে সরকার, বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতি ও রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় সেমিনারের আয়োজন করে যেখান থেকে বাংলাদেশ সফটওয়্যার ও সেবা খাত রপ্তানির এক নতুন পথে যাত্রা শুরু করে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে ২০০১ সালের বাংলাদেশে ক্ষমতার পালাবদল হওয়ার পর তথ্যপ্রযুক্তির প্রতি সরকারের মনোযোগে ভাটা পড়ে। ২০০৯ সাল থেকে বাংলাদেশ যেভাবে তার তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে সামনে যাচ্ছে, তাতে এ কথাটি নিঃসন্দেহে বলতে পারি যে, সামনের দিনে আমরা এ অঞ্চলের আইসিটি খাতের নেতৃত্ব দেব। বর্তমান সরকার তথ্যপ্রযুক্তির বিকাশ এবং প্রসারে নানা পদক্ষেপ গ্রহন করছে। দক্ষ জনবল গড়তে দেশের বিভিন্ন এলাকায় আইসিটি ক্লাবও গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে। দেশ পুরোপুরি তথ্যপ্রযুক্তিতে সমৃদ্ধ করতে দক্ষ জনবলের বিকল্প নেই। ২০১৮ সালের মধ্যে দেশে ৭০ হাজারের বেশি তথ্যপ্রযুক্তিবিদ তৈরির পরিকল্পনার অংশ হিসেবে প্রযুক্তি বিভাগ এ উদ্যোগ নিয়েছে। দেশের ১২৮টি বিশ্ববিদ্যালয়সহ ৬৪টি জেলায় তথ্যপ্রযুক্তি ল্যাব গড়ে তোলা হচ্ছে। এ লক্ষ্য পূরণে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের লিভারেজিং আইসিটি ফর গ্রোথ, এমপ্লয়মেন্ট এ্যান্ড গবর্নেন্স (এলআইসিটি) প্রকল্প গুণগত প্রশিক্ষণে ৩৪ হাজার দক্ষ মানব সম্পদ গড়ে তুলছে। এর আগে বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে ৩ হাজার ৫শ’ শিক্ষার্থীকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। তারা দক্ষতা অর্জনে কাজ করে যাচ্ছে। তথ্যপ্রযুক্তি বিকাশে শুধু নেটওয়ার্কিংয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে তথ্যপ্রযুক্তির বিকাশ ঘটবে না। এজন্য প্রয়োজন যথেষ্ট সুযোগ-সুবিধার। এ রকম সুযোগ-সুবিধা নিয়ে গড়ে তোলা হবে তথ্যপ্রযুক্তি ল্যাব। এই ল্যাবে কাজ করে একজন সাধারণ ছাত্রও তথ্যপ্রযুক্তি জ্ঞানে সমৃদ্ধ হয়ে উঠতে পারেন। শুধু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে কম্পিউটার দিলেই দক্ষ জনবল সৃষ্টি হবে না। এজন্য দক্ষ শিক্ষকের প্রয়োজন। প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তথ্যপ্রযুক্তিতে দক্ষ শিক্ষকদের আরও প্রশিক্ষণ দিয়ে সমৃদ্ধ করে গড়ে তোলার পরিকল্পনা করছে। তারাই মূলত ওই ল্যাবগুলোতে ছাত্রছাত্রীদের দক্ষ করে তুলবেন। তাছাড়া দেশের বিভিন্ন এলাকায় আইসিটি ক্লাবগুলোতে দায়িত্ব পালন করবেন আর্নস্ট এ্যান্ড ইয়ং এর টপ আপ আইটি প্রশিক্ষণপ্রাপ্তরা। অবশ্য আর্নস্ট এ্যান্ড ইয়ং এর প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদের ৬০ শতাংশের কর্মসংস্থান হয়েছে। যারা এখনও কর্মসংস্থানে যেতে পারেননি তারা এ দায়িত্ব পালন করবে। বাঙালি তার স্বাধীনতা অর্জনের প্রায় সাড়ে চার দশকের পথচলায় তার গন্তব্যের ঠিকানা জানে। এই জাতি যে ডিজিটাল বাংলাদেশের কথা বলেছে বা একটি জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গড়ার কথা বলেছে সেটি মোটেই কেবল একটি শ্লোগান নয়, এটি তার অভীষ্ট লক্ষ্য।

বিষয়: বিবিধ

৯১৫ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

378581
১১ অক্টোবর ২০১৬ সন্ধ্যা ০৭:৩১
স্বপন২ লিখেছেন :

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File