স্রষ্টার প্রতি কৃতজ্ঞ হই সৃষ্টির মোহে
লিখেছেন লিখেছেন ইশতিয়াক আহমেদ ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪, ০৯:৩১:৩২ রাত
একবার এক ধনবান ব্যাক্তি একটি সাগরের তীরে বিশাল এক অট্টালিকা রুপী প্রাসাদ বানালেন । সাগর সৈকতে হওয়ায় প্রাসাদ টির সৌন্দর্য যেন আরও কয়েকগুন বেড়ে গেল ।
প্রাসাদ থেকে সাগরের বুকে আছড়ে পড়া ঢেউ দেখা যায়, সকাল বেলার উদিত সূর্য দেখা যায়, সন্ধ্যার অস্ত দেখা যায়, বিশাল মনোরম পাহাড় দেখা যায়, নীল সাগর আর নীল আকাশ দিগন্তে মিশে যেতে দেখা যায়, নীলের বুকে লাল সূর্যের উঁকি দেখা যায়, গাছগাছালির পাখির কোলাহল আর সমুদ্রের ঢেউয়ের গর্জন এক হয়ে যেতে দেখা যায় । দৃষ্টি ভরে সৃষ্টির রূপ নেয়া যায় ।
সাগর তীরে আগে মানুষ সাগর দেখতে আসতো, সূর্যাস্ত দেখতে আসতো । প্রাসাদ বানানোর পর থেকে প্রাসাদ টি দেখতে আসে । ধীরে ধীরে এর খ্যাতি দূর দুরান্তে ছরিয়ে পড়লে অনেক দূর থেকে মানুষ প্রাসাদ টি দেখতে আসতো ।
সব ধরনের মানুষ আসতো সেখানে । কবি আসতো, লেখক আসতো, বিজ্ঞানী আসতো , ইঞ্জিনিয়ার আসতো , ফটোগ্রাফার আসতো, সংবাদকর্মী আসতো ।
কবি এসে সারাদিন বসে পাহার,গাছ, সাগর, পকাহি, আকাশ এসব নিয়ে কবিতা লিখতেন । গল্পকার এসে সাগর তীর কে সুন্দর এক গল্পের সিনারি হিসেবে বেঁচে নিতেন । ফটোগ্রাফার এসে ক্লিক ক্লিক শব্দ তূলে প্রাসাদের ভেতর বাহির এর সাথে সাগর আকাশ এর কম্বিনেশন করে ছবি তুলতেন । ইঞ্জিনিয়ার এসে প্রাসাদের মাপ জোখ আরও অনেক কিছু মেপে স্থাপত্তের প্রসংসা করতেন, হিসাব নিকাস করে কত টাকা ব্যয় হল এসব বের করতেন । বিজ্ঞানী এসে বিল্ডিং এ বসে গবেশনা করতেন কত ডিগ্রি এঙ্গেল থেকে দেখলে সূর্যের রশ্মি এসে বিল্ডিং এ এসে পরতে কতক্ষন লাগে, সাগরের ঢেউয়ের ব্যাগ সকালে কত থাকে, আর বিকালে কত থাকে ভাবতেন । আরও বিভিন্ন পেশার লোক আসতেন । বেকার রা ও আসতো, এসে বলতো ইসস, এইরকম একটা বিল্ডিং আমার ও হতে পারত । রাজনিতিবিদ রা এসে ভাবতো, এই লোকটা যদি আমার দলের হয়, তাহলে ঠিক আছে, তা না হলে, তাকে টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ফাঁসিয়ে দেব, এভাবেই চলত সময় ।
তবে প্রাসদের মালিক একটি নিয়ম করে দেন, সেটা হল, সকাল ১০টার সময় প্রাসাদের মুল দরজা খুলা হবে, আর বিকাল ৪টার সময় লাগানো হবে । সবাইকে এই সময়ের ভেতরে আনাগনা করতে হবে, এর থেকে ১মিনিট ও বেতিক্রম হতোনা কখনো ।
কবি আসতো, লেখক আসতো, বিজ্ঞানী আসতো , ইঞ্জিনিয়ার আসতো , ফটোগ্রাফার আসতো, সংবাদকর্মী আসতো, সবাইকেই ৪ টার মাঝে চলে যেতে হতো । তবে ঢুকতে যে পারছে, এতেই তারা খুশী ছিল ।
একবার সেখানে এক সাধারন লোক ঢুকল । সে কিছুক্ষণ সৌন্দর্য পর্যবেক্ষণ করে অভিভূত হয়ে প্রাসাদের মালিকের সাথে দেখা করতে চাইল । প্রাসাদের কর্মচারীরা মালিক কে বললে উনি দেখা করতে রাজি হলেন । লোক টি মালিকের কাছে গেল এবং তার এই স্থাপত্তের প্রশংসা করলো । মালিক লোকটির উপর খুশী হলেন, তারা সারাদিন গল্প করলেন, দুজনের সম্পর্ক ও খুব গভীর হয়ে উঠলো ।
যখন বিকাল ৪টা বাজলো, তখন সবাইকে বের করে দেয়া হল প্রাসাদ থেকে । গার্ড রা তখন তাকে ও নিতে এসে বলল, সময় হয়ে গেছে, আপনাকে চল যেতে হবে । তখন প্রাসাদের মালিক বলল,এ আমার বন্ধু, তার যখন ইচ্ছা আসবে, যখন ইচ্ছা যাবে । তোমরা তার খেয়াল রাখবে, আর আপাতত তার খানাপিনার বেবস্থা কর । লোকটি তখন থেকে সুনাম ছড়াতে লাগলো । ... ... । । ।
পাঠক মুল কাহিনী এতটুকুই, যদি কিছু বুঝতে পারেন এর থেকে তাহলেই আমার লিখা সার্থক ।
দুনিয়াটা ও এরকম ই । সবার ই সময় বেঁধে দেয়া । যতটুকু সময় নির্দিষ্ট, তার চেয়ে বেশি সময় এখানে কেউ থাকতে পারবেনা । কার জীবনের ৪ টা কখন বাজবে, তা কেউ জানে না । বিজ্ঞানী বলেন, কবি বলেন, ইঞ্জিনিয়ার,ফটোগ্রাফার আর যা ই হউন না কেন, যার মালিকের সাথে সম্পর্ক নেই, তাকে এভাবেই ধাক্কা মেরে বের করে দেয়া হবে । আর যে সবকিছুর পাশাপাশি মালিকের সাথে সম্পর্ক বৃদ্ধি করবে, মালিকের কাছে কৃতজ্ঞ হবে, তার জন্য পুরস্কার সদা অপেক্ষা করছে, তাই আসুন, আমরা মালিকের প্রতি কৃতজ্ঞ হই, স্রষ্টার প্রতি কৃতজ্ঞ হই সৃষ্টির মোহে শুধু বিভোর চলবেনা ...।।।
ভুলে যাবেন না, ৪টা বাজতে বেশি সময় নেই ।
বিষয়: বিবিধ
৯৫৮ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
চমৎকার গল্পের জন্য যাজাকাল্লাহু খাইরান
মন্তব্য করতে লগইন করুন