গোলাম আযমের রায়ের প্রতিক্রিয়ায় হিউঃ রাঃ ওয়াটসের বিবৃতি নিয়ে ব্যাঃ তুরিন আফরোজের প্রশ্ন এবং তার জবাব|||
লিখেছেন লিখেছেন শুভ্র কবুতর ১৯ আগস্ট, ২০১৩, ১১:০২:৪২ সকাল
যারা আন্তর্জাতিক অপরাধ
ট্রাইবুনালের বিচার
সম্পর্কে আগ্রহী, এ ট্রাইবুনালের
কাজকর্ম ফলো আপ করছেন, তাদের
জন্য নিচের সংক্ষিপ্ত
লিখাটি অবশ্য পাঠ্য।
সম্প্রতি আন্তর্জাতিক
মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান
রাইটস ওয়াচ এ ট্রাইবুনাল
সম্পর্কে অত্যন্ত কঠিন ভাষায়
সমালোচনা করেছে। সেই যুক্তির
সামনে টিকতে না পেরে ট্রাইবুনালের
প্রসিকিউটর তুরিন আফরোজ
বিডিনিউজ২৪ এ বিভিন্ন উদাহরণ
টেনে এইচআরডব্লিওর কথাকে ভুল
প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করেছেন।
তুরিন আফরোজ যা কিছু বলার
চেষ্টা করেছেন তা যে কতটা অসার ও
ভিত্তিহীন তা প্রমাণ করেছে এই
লেখাটি। পড়লে বুঝতে পারবেন কোন
লেভেলের মেধা সম্পন্ন মানুষ এখন
আইন পেশায়
সেলিব্রিটি হয়ে বসেছে। লিখেছেন
শফিকুর রহমান। ক্ষুরধার উত্তর
দিয়ে তিনি এই প্রসিকিউটর
তুরিন আফরোজের
অগ্রহণযোগ্যতা এবং বুদ্ধিবৃত্তিক
দেউলিয়াপনা পরিস্কার
করে দিয়েছেন।
তুরিন আফরোজ ও হিউম্যান রাইটস
ওয়াচ
-------------------------------------------
যুদ্ধাপরাধী-বিচারের আর্ন্তজাতিক
ট্রাইবুনালের
বিরুদ্ধে একটা অভিযোগে পক্ষে-
বিপক্ষে সবাই মোটামুটি ঐক্যমত্
যে এই সরকার এই ট্রাইবুনালকে দক্ষ,
শক্তিশালী করার জন্যে যথেষ্ট
অর্থ, মেধা বিনিয়োগ করেনি।
দুদিক থেকেই
নানা সময়ে কথা উঠেছে যে সরকার
কোনরকমে দায়সারাভাবে বিচারের
আসল টেকনিক্যাল দিকগুলি সেরে,
রাজনৈতিক উদ্দ্যেশ্য হাসিলের
জন্যে পুরো বিচার কে ব্যবহার
করতে চেয়েছে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের
প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তুরিন
আফরোজ একজন বিখ্যাত
সেলিব্রেটি। আন্তর্জাতিক যুদ্ধ ও
মানবতাবিরোধী অপরাধ
বিষয়ে একজন বিশেষজ্ঞ
বলে পরিচিত হওয়ায় প্রায়ই তার
ডাক পড়ে টেলি-মিডিয়ায়। এই
তথাকথিত বিশেষজ্ঞের সাম্প্রতিক
একটি বক্তব্যে দেখে আক্কেলগুরুম
হবার যোগাড় হয়েছে।
গোলাম আযমের যুদ্ধাপরাধের বিচার
প্রক্রিয়া নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রভিত
্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান
রাইটস ওয়াচ প্রশ্ন তোলায়
তিনি ক্ষুদ্ধ এক
প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন,
তিনি বলেছেন “গোলাম আযমের
মামলা নিয়ে হিউম্যান রাইটস
ওয়াচের বক্তব্যে আমি স্তম্ভিত।”
তার প্রতিক্রিয়ায় তিনি হিউম্যান
রাইটস ওয়াচ এর অবস্থান
নিয়ে কয়েকটি প্রশ্ন তুলেছেন। সেই
প্রশ্নগুলো দেখে আমিও স্তম্ভিত
হয়ে গেছি।
http://bangla.bdnews24.com/bangladesh/
article659970.bdnews
তুরিন আফরোজ প্রথমেই প্রশ্ন
তুলেছেন, "আমাদের অভ্যন্তরীণ
বিচার ব্যবস্থা নিয়ে মন্তব্য করার
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ কে? এটিও
কি আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন
নয়? আন্তর্জাতিক আইনের সব
ধারা লঙ্ঘণ করে যখন আইখম্যান
বা সাদ্দাম হোসেনের বিচার
হয়েছিল, তখন হিউম্যান রাইটস
ওয়াচ কী করেছে? তখন
কি তারা তাদের কথিত
আন্তর্জাতিক আইনের সুরক্ষায়
কোনো কথা বলেছে?"
কুখ্যাত নাৎসী অপরাধী এডলফ
আইখম্যানের বিচার ও মৃত্যুদন্ড
হয়েছিলো ইজরাইলে ১৯৬১ সালে।
আইখম্যানের কথা বলেলেই
এবিষয়ে সামান্য
জানাশোনা যেকারো মনে ভেসে ওঠে জ
কাঠগড়ায় দাড়ানো আইখম্যানের
সাদাকালো ছবি। হিউম্যান রাইটস
ওয়াচ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে আমেরিকায়
১৯৭৮ সালে। আন্তর্জাতিক আইন ও
যুদ্ধাপরাধ
নিয়ে কিছুটা জানাশোনা সবাই
জানে যে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ
একটি আপেক্ষাকৃত নতুন প্রতিষ্ঠান।
এই নতুন প্রতিষ্ঠানটি সেই
সাদাকালো ছবির যুগের আইখম্যানের
বিচার নিয়ে কেনো প্রশ্ন
তুলতে যাবে এই প্রশ্নটা মাথায়
আসাটাই চরম আশ্চর্যের। সামনের
দিনে এই সরকার যদি বিরোধীদের
দমনে আরো চরমপন্থায় যায়,
হয়তো তখন তুরিন আফরোজ প্রশ্ন
তুলবেন যে সিপাহী বিদ্রোহের
সময়ে ইংরেজ সরকার যখন
এখানে রক্তগংগা বইয়ে দিচ্ছিলো তখ
কোথায় ছিলো হিউম্যান রাইটস
ওয়াচ ?
তুরিন আফরোজ প্রশ্ন করেছেন
যে "যখন সাদ্দাম হোসেনের বিচার
হয়েছিল, তখন হিউম্যান রাইটস
ওয়াচ কী করেছে? তখন
কি তারা তাদের কথিত
আন্তর্জাতিক আইনের সুরক্ষায়
কোনো কথা বলেছে?" এই
প্রশ্নে আরো নিশ্চিত
হওয়া গেছে যে এই সরকার
আন্তর্জাতিক ট্রাইবোনালের
পিছনে কি পরিমানে কৃপনতা দেখিয়
এতো বড়ো একজন প্রসিকিউটর
ব্যারিস্টারকে সামান্য ইন্টারনেট
সুবিধা দেয় নি এই সরকার।
ইন্টারনেটে গুগলে সাদ্দাম হোসেন
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ লিখে সার্চ
করলে দুই সেকেন্ডে পাওয়া যায় এই
সংবাদ,
http://www.hrw.org/news/2006/11/19/iraq-
dujail-trial-fundamentally-flawed
" The trial of Saddam Hussein and seven
other defendants before the Iraqi High
Tribunal for crimes against humanity was
marred by so many procedural and
substantive flaws that the verdict is
unsound, Human Rights Watch said in a
97-page report released today.. "
November, 2006.
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ সাদ্দামের
বিচারের পদ্ধতিগত সমালোচনায় ৯৭
পৃষ্ঠার রিপোর্ট দিয়েছিলো।
গোলাম আজমের বিচারের
সমালোচনায় তারা কয় পৃষ্ঠা খরচ
করেছে? জানাশোনর এই বহরের
পরে তুরিন আফরোজ এর
পরবর্তী প্রশ্নটি আর আশ্চর্যের
উদ্রেক ঘটাবে না।
তার দ্বিতীয় প্রশ্ন হলো, "
নিজেদের মানবাধিকার সংগঠন
বলে দাবি করলেও হিউম্যান রাইটস
ওয়াচ কি কখনো একাত্তরের
বর্বরতার শিকার মানুষের অধিকার
রক্ষায় দাঁড়িয়েছে? কেন দাঁড়ায়নি?"
এই প্রশ্নেও ফুটে ওঠে যে ব্যারিস্টার
তুরিন আফরোজ কেমন
করে আওয়ামী সরকারের ডিজিটাল
ডিভাইডের নির্মম শিকার হয়েছেন।
প্রশ্ন করার আগে তার
কাছে যদি ইন্টারনেট একসেস
থাকতো তবে ৫
সেকেন্ডে তিনি পেতেন যে,
http://www.hrw.org/news/2011/05/19/
bangladesh-unique-opportunity-j
ustice-1971-atrocities
" The Bangladeshi government's effort to
bring to trial those responsible for atrocities
during the struggle for independence in
1971 is an important and long overdue step
to achieve justice for victims, Human
Rights Watch said today. In a letter to
Prime Minister Sheikh Hasina, Human
Rights Watch said that it strongly
supports a successful legal and judicial
process that is fair and impartial." May
2011
এই প্রশ্নটির
পিছনে আরো গুরুত্বপূর্ন
একটা ব্যাপার আছে। বাংলাদেশের
কুয়ার ব্যাংদের ধারনা যে হিউম্যান
রাইটস ওয়াচ,
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল,
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল এই
সব সংস্থাগুলির একমাত্র কাজ
হলো বাংলাদেশ (বিশেষ
করে আওয়ামী সরকার)
নিয়ে মাথা ঘামানো, এ ছাড়া এদের আর
কোনো কাজ নেই।
এই কূপমন্ডুকদের এতটুকু
উপলদ্ধি নেই যে এইসব সংস্থাগুলির
প্রত্যেকটির
হাজারে হাজারে কর্মচারী আছে দুনি
তারা অজস্র রিপোর্ট বের করছে। এই
রিপোর্টগুলির এক শতাংশও
বাংলাদেশ নিয়ে নয়।
অবশ্য ক্ষমতার দৃশ্যপট
পাল্টে গেলে পুরো চিত্রও
উল্টে যাবে। বিএনপি ক্ষমতায়
এলে এই আর্ন্তজাতিক
সংস্থাগুলি পরিনত হবে এই
কূপমন্ডুকদের সবচেয়ে শ্রদ্ধেয়
উৎসে। একেকটি রিপোর্টের
প্রতিটি লাইন তার বেদবাক্য
জ্ঞানে শেয়ার করবেন।
তুরিন আফরোজের তৃতীয়
প্রশ্নটি আরো আশ্চর্যের,
"যেটা আরো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, গোলাম
আযমের মামলাটি যখন সুপ্রিম
কোর্টের আপিল
বিভাগে বিচারাধীন, তখন হিউম্যান
রাইটস ওয়াচ কেন, কেউ কি এ
নিয়ে কোনো মন্তব্য করার অধিকার
রাখে?"
বাংলাদেশে একটি সুন্দর ধারা আছে।
কোনো কন্ট্রোভার্সিয়াল বিচারের
সময়ে সরকারের জন্যে বিব্রতকর
প্রশ্ন তুললেই
সারি সারি যুক্তি পড়ে যে বিচারাধী
সময়ে কথা বলা যাবে না। বিচার শেষ
হোক, ফাসীতে ঝুলুক, তার
পরে যা বলার বলা যাবে।
এদের মাথায় এই ব্যাপারটুকু
ঢোকে না যে যেসব বিচার
সংবাদপত্রে কভার হচ্ছে, সারা দেশ
দুনিয়া যেসব বিচারকে ফলো করছে,
সেই সব বিচার
নিয়ে কথা আটকে রাখা কোন
আইনে পড়ে? বিখ্যাত-অখ্যাত সব রকম
বিচার নিয়েই কথা বলার অধিকার
রয়েছে। এই যে কদিন
আগে আমেরিকায় নাফিসের বিচার
হলো, বিচারের রায়ের আগে কেউ
কি কথা বন্ধ রেখেছে? বাংলাভাই -
শায়েখ রহমানের বিচার চলার
সময়ে কত রিপোর্ট-মন্তব্যইতো বের
হয়েছে?
সুপ্রীম কোর্ট-হাই
কোর্টে মামলা ওঠার পরে আমেরিকা,
বৃটেনে এই সকল
মামলা নিয়ে মিডিয়ায়
কি পরিমানে বিশ্লেষন হয়
এটা কি তুরিন আফরোজ
কখনো লক্ষ্য করেন নি? শুধু মন্তব্যই
নয়, কোন বিচারক কোন দিকে রায়
দেবেন এই নিয়েই তুমুল তর্ক-
বিতর্ক চলে। সাদ্দাম হোসেন,
স্লোবোদান মিলোসেভিচ এর বিচার
সারা দুনিয়ায় কিভাবে প্রচার ও
বিতর্ক হয়েছে এটাও
কি তিনি দেখেন নি?
প্রসিকিউশনের একজন স্টার
ব্যারিস্টারের আর্ন্তজাতিক বিষয়
ও আইন নিয়ে এই অজ্ঞতা কিন্তু
পুরো বিচারকে আরো বেশী প্রশ্ন
বিদ্ধ করছে। রাজনৈতিক বিচার
করে দেশের ইতিহাসের
এতো বড়ো একটা ক্ষতকে উপশম
করা সহজ হবে না।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের
সাড়াজাগানো সেই
প্রতিবেদনটি দেখতে পারেন এখানে:
http://www.hrw.org/news/2013/08/16/
bangladesh-azam-conviction-based-flawed-
proceedings
(লেখাটি ফেইসবুক পেইজ 'বাঁশেরকেল্লা' থেকে কপি করা হয়েছে)
বিষয়: রাজনীতি
৯৭৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন