সততার সুবাসিত পুরুস্কার......।
লিখেছেন লিখেছেন সন্ধাতারা ২২ আগস্ট, ২০১৪, ০৩:০৯:২৬ দুপুর
গোলাপের মাঝে থাকলে যেমন দেহমনে সুঘ্রাণ মেখে রয় তেমনি সৎ মানুষের সান্নিধ্যে থাকলে এমনিতেই মন শান্তিতে ও আনন্দে ভরে থাকে। এসব নিষ্কলুষ সুন্দর মনের মানুষগুলো ফুটন্ত গোলাপের মতই পবিত্র মনোমুগ্ধকর। যেখানে বিচরণ করে সেখানেই সুবাস ছড়ায়। সততার আলোকময় স্পর্শে তাই আঁধারিতে থাকা ভ্রান্ত মানবকূল নব চেতনায় স্পন্দিত হয়। জীবন মানে যে শুধু বেঁচে থাকা নয় তার যথার্থতা অনুভব করে। জীবনকে অর্থবহ করার চেষ্টায় ব্যাপৃত হয়। জীবনকে গড়তে চায় নতুন চিন্তায়, কল্পনায় এবং নব আঙ্গিকে। যাতে ছোঁয়া লাগে মহতী জীবনের। যা একসময় জীবনকে মহতী করে তোলে। খুঁজে পায় দু’নো জাহানের কামিয়াবি। জীবন হয়ে উঠে মধুময় স্বর্গীয়।
ইতিহাসের পাতা থেকে নেয়া এমন এক সুবাসিত নক্ষত্রের নাম কাজী আবু বকর মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুল বাকী। যিনি মক্কায় বাস করতেন। তিনি অত্যন্ত সৎ ও আল্লাহ্র নেক বান্দা ছিলেন। একদিন তিনি প্রচণ্ড ক্ষুধার্ত কিন্তু তাঁর কাছে সেসময় কোন খাবার বা টাকা পয়সা ছিল না। এমনি এক মুহূর্তে তিনি একটি রেশমের থলে কুড়িয়ে পেলেন। রেশমের ফিতা দিয়ে থলেটি বাঁধা ছিল। বাড়ীতে এসে থলেটি খুলে দেখতে পেলেন তাতে একটি মোতির হার।
কী করবেন তিনি ভেবে পাচ্ছিলেন না। এমন সময় এক বৃদ্ধের চিৎকার তাঁর কর্ণে প্রবেশ করলো, “যে আমার থলেটি ফিরিয়ে দিবে তাঁকে আমি পাঁচশ দিনারের স্বর্ণ মূদ্রার থলেটি দিব”। তখন তিনি মনে মনে ভাবছিলেন, আমি ক্ষুধার্ত এবং অভাবগ্রস্ত সুতরাং পাঁচশ দিনারের থলেটি নিয়ে তার থলেটি ফিরিয়ে দিব।
লোকটিকে তিনি তাঁর বাড়ীতে নিয়ে আসলেন। এরপর তাঁর কাছে মোতির হারের হুবহু বর্ণনা শুনলেন। লোকটি থলের ফিতাসহ হারের মধ্যে কতটি মোতি আছে তারও পূর্ণ বিবরণ দিলেন। নিশ্চিন্ত হওয়ার পর থলেটি তিনি ফিরিয়ে দিলেন। বিনিময়ে পাঁচশ দিনারের স্বর্ণ মূদ্রার থলেটি বৃদ্ধ দিতে চাইলে তিনি তা ফেরত দিলেন। তিনি বললেন, আপনার থলেটি আপনার কাছে ফিরিয়ে দেয়া আমার দায়িত্ব ছিল। আমি আমার দায়িত্ব সম্পাদন করেছি মাত্র। তাই আমি এর কোন বিনিময় গ্রহণ করতে পারবো না। লোকটির অনেক অনুরোধ ও জোরাজুরি সত্বেও তিনি সেটা নিতে অস্বীকার করলে লোকটি অগত্যা হারটি নিয়ে ফিরে গেল।
তারপরের ঘটনা আরও ঘটনাবহুল এবং অবিস্বাশ্যকর। উপরোক্ত ঘটনার কিছুদিন পর কাজী আবু বকর সমুদ্রপথে সফরে বের হলেন। পথে জাহাজ ভেঙ্গে জাহাজের সকল আরোহী পানিতে ডুবে মারা গেলেন। আর তিনি জাহাজের একটি কাষ্ঠখণ্ডে ভেসে অলৌকিকভাবে বেঁচে গেলেন। কয়েক দিন সমূদ্রে একটি কাষ্ঠখণ্ডে ভেসে ভেসে অবশেষে তা একটি দ্বীপে গিয়ে ভিড়লো। সেখানে তিনি একটি মসজিদে আশ্রয় গ্রহণ করলেন। সেখানকার লোকেরা তাঁর তিলাওয়াত শুনে মুগ্ধ হলেন এবং তাদের ছেলেমেয়েদের কোরআন শিক্ষা দেয়ার জন্য অনুরোধ জানালেন। তাঁর কর্মে মুগ্ধ হয়ে একদিন তারা তাঁকে একটি বিবাহের প্রস্তাব দিলেন। তাদের বর্ণনায় মেয়েটি ছিল এতীম কিন্তু অগাধ ধন সম্পদের মালিক। সবকিছু শুনে তিনি প্রথমে অসম্মতি জানালেন। কিন্তু পরবর্তীতে তাদের অনেক জোরাজুরিতে তিনি রাজী হলেন।
কিন্তু বিবাহের প্রথম দর্শনে তাঁর দৃষ্টি আটকে গেল মেয়েটির গলার হারে। তিনি মেয়েটির দিকে না তাকিয়ে অবাক বিস্ময়ে গলার হারটির দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন। আশ্চর্য হয়ে ভাবলেন একি! হুবহু সেই হারটি যা তিনি কুড়িয়ে পেয়ে বৃদ্ধকে একদিন ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। মেয়েটি এতে কষ্ট পেল। সে ভাবছিল আমার দিকে না তাকিয়ে সে মোতির হারের দিকে আছে!
পরেরদিন লোকমুখে তিনি নব্য বিবাহিত মেয়েটির মনোকষ্টের কথা জানতে পারলেন। যে তিনি মেয়েটির দিকে না তাকিয়ে মোতির হারের দিকে তাকিয়েছিলেন। এমতাবস্থায় তিনি পূর্বের সব ঘটনা খুলে বললেন। মোতির হারটি কুড়িয়ে পাওয়া, এক বৃদ্ধকে ফেরত দেয়া। জাহাজে ভেসে ভেসে সেখানে পৌঁছানো সবকিছু...। তার ঘটনা শুনে সকলেই এক বাক্যে “আল্লাহু আকবার” বলে চিৎকার করে উঠলেন। পরে তিনি উপস্থিত লোকের কাছে জানতে পারলেন, তিনিই ছিলেন মেয়েটির বাবা। যাকে তিনি হারটি ফেরত দিয়েছিলেন। তার বাবা বলতেন, আমি পৃথিবীতে তার চেয়ে ভালো মানুষ দেখিনি। যে আমার মোতির হারটি কুড়িয়ে পেয়ে আবার ফেরত দিয়েছিলেন এবং এর কোন বিনিময় গ্রহণ করেননি। জীবিতাবস্থায় তিনি দু’আ করতেন, হে আল্লাহ্! আপনি এ মহৎ ব্যক্তিটিকে আমার সাথে আর একবার সাক্ষাৎ করিয়ে দেন, যাতে করে আমি আমার কলিজার টুকরা মেয়েকে তার হাতে সোপর্দ করতে পারি। তার সেই প্রার্থনা আজ বাস্তবে সত্য হলো। সুবহানাল্লাহ!
পরবর্তীতে আল্লাহ্ পাক তাকে দু’টি ছেলে সন্তান দান করলেন। কিছুদিন পর মেয়েটির ইন্তেকাল হল। তার কিছুদিন পর ছেলে দু’টিও মৃত্যুবরণ করলো। এখন সেই মোতির হারটির মালিক সে নিজেই। যে কুড়িয়ে পেয়ে একদিন ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। তার সততার জন্য। আল্লাহ্ তাঁর সততার পুরুষ্কার এভাবেই দিয়েছিলেন। আর আখিরাতের মহা প্রতিদান তো আছেই। সেদিন যদি সে থলেটি ফিরিয়ে না দিত তাহলে দুনিয়াতেই বিপদের সম্মুখীন হতো। আর আখিরাতের আজাব তো আছেই। কোন বুদ্ধিমান কী দুনিয়ার সামান্য লাভের বিনিময়ে আখিরাতের আজাব চাইতে পারে? কখনই নয়। কাজী আবু বকর ছিলেন বুদ্ধিমান। তাই তিনি থলেটি ফিরিয়ে দিয়ে দুনিয়া ও আখিরাতকে জয় করলেন। তাই সকলকে দুনিয়ার সফলতা ও আখিরাতের কামিয়াবির জন্য অবশ্যই সৎ হওয়া আবশ্যক।
মহান রবের কাছে প্রার্থনা তিনি যেন আখিরাতের ভয়াবহ আজাবের কথা আমাদের অন্তরে সর্বদা স্মরণে রেখে পাপ কাজ থেকে বিরত রাখার তৌফিক দান করেন। কখনো যেন আমরা পরকালকে ভুলে না যাই। আল্লাহ্র সামনে প্রত্যেক কাজের জবাবদিহিতা করতে হবে এ কথা অন্তরে জাগরূক রেখে যেন সদা আমাদের ঈমানকে বুলন্দ রাখি। আমীন।
বিষয়: বিবিধ
২১৬২ বার পঠিত, ৮৯ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
অনেক ধন্যবাদ সততার এ ঘটনা উদ্ধৃত করায়।
ডাডু ভাই আমাল জুনজুনি আল চক্কেট তই
জুনজুনি আল চক্কেট তাই।
আওনমণিটা কোথায়?
এখন খেয়াল করে দেখি যে আপনার কথাই সঠিক ...... এটার অর্থতো = Tongue মানে জ্বিব বের করে ভেংচি দিচ্ছে? যাককক বাবা..... সমস্যা নেই...... ওটা ভেংচি হলেও আদুরে ভেংচি... যেটা যাকে তাকে দিই না প্রিয়দের ছাড়া
তোমারতো ভালো লাগবেই।
থাপ্রাইয়া দাঁত ফালাই দিমু। পাজির হাড্ডি।
আমীন!!!
বেচারা বুড়া হয়ে যাচ্ছে
এই কষ্টবোধ থেকেও অনেক কিছু শেখার আছে আমাদের......।
সততার সাথে বিবাহের তৌফিব দান করুন। আমীন।
রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেছেন "সত্যবাদীতা বজায় রাখো, কেননা সত্যবাদিতা সততার পথ দেখায়, আর সততা জান্নাতের পথ দেখায়।" (মুত্তাফাকু আলাই), বুখারী, মুসলিম, নাসাঈ, আবু দাউদ)
অনেক ভাল লাগলো, জাযাকাল্লাহ খইর।
ধন্যবাদ আপুজ্বি সুন্দর গল্প
হারিকেন এর কি হবে?
শুভকামনা।
আমার তো মাঝে মাঝে সন্দেহ হয় যে, আমি কি ব্লগে আছি- নাকি ভুল করে কোন বাসায় "পারিবারিক বৈঠক"এ ঢুকে পড়েছি-
শ্বশুর-আব্বু, খালামনি, আপুজ্বী, লাভ্লি সান, সোনামনি....
আমরাও যেন সততাকে ধারণ ও লালন করতে পারি, সততাকে মূল্যায়ন ও পুরস্কৃত করতে পারি..
বুড়ো বয়সে গা-গতর মালিশের জন্য হাতুড়ি বড্ড উপকারী - ) )
তবে মাত্রা ছাড়া না হলেই রক্ষা
আমার তো সারা দিনরাত এখানে পড়ে থাকতে ইচ্ছে হয়,
কিন্তু দা্যিত্বের বাস্তবতা ছুটির ব্যাপারে বড্ড কৃপণ
এটা আমার একার কথা নয়-
জনমত জরীপ করা যাতে পারে, আওন পারবেন মনে হয়
ওর জন্য আমার বিয়েটা আটকাই আছে।
তোমার পড় আমার সিরিয়াল।
তোমার লইগাই তো পারিনা।
কচ্ছপ কোথাকার।
Crying Crying Crying Crying Crying
সুন্দর শিক্ষনীয় কাহিনী যা প্রকৃত মুসলমানদেরকে অনুপ্রাণিত করবে।
আর এমন গল্প শেয়ার করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। এ গল্প হতে প্রাপ্ত শিক্ষা - যেন প্রতিটি মুসলিমের চরিত্রের একটা পার্ট হয় - এটা স্রষ্টার কাছে আমার প্রার্থনা।
মন্তব্য করতে লগইন করুন