সভ্যতার দন্দ্ব ও আমাদের দেশে তার প্রভাব
লিখেছেন লিখেছেন আহমদ মুসা ৩০ মে, ২০১৩, ০৬:৪৯:৫৭ সন্ধ্যা
বাংলাদেশের প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপির জনগনের মৌলিক অধিকার আদায়ের ব্যাপারে বর্তমান নিষ্ক্রীয়তার কারণে হয়তো এই জাতি-রাষ্ট্রকে চরম মূল্য দিতে হতে পারে। এই জাতি এবং এই দেশের আসল শত্রুদের হাত থেকে এই দেশকে, দেশের জনগণকে উদ্ধারের জন্য কোন কার্যকরী কর্মসূচী দেয়ার যোগ্যতা, দক্ষতা ও ক্ষমতা থাকার পরেও দলটি নিরামিষ বিরক্তিকর কিছু কর্মকান্ডের মধ্যে সীমাবদ্ধ।
যাহোক এখানে একটি ভিন্ন একটি বিষয়ে কিছু আলোচনা করতে চাই। বিশ্বব্যাপী ইসলামবিদ্বেষী গোষ্ঠীর প্রচারের কল্যাণে হান্টিংটনের থিওরি অনুযায়ী সেই জায়গা নিয়েছে ১৫০ কোটিরও অধিক মুসলমান। সাম্রাজ্যবাদের ভাষায় এদেরকেই ইসলামিস্ট সন্ত্রাসী নামে অভিহিত করা হচ্ছে। মার্কিন সমাজ বিজ্ঞানী হান্টিংটনের থিওরী এবং তার প্রস্তাবনা আজ ব্যর্থতার দিকেই ধাবিত হচ্ছে মনে হয়। সভ্যতার দন্দ্বের উস্কানীর আড়ালে পৃথিবী থেকে ন্যায়, ইনসাফ ও মানবতার কবর রচনার যে আয়োজন করেছিল তা আজ বুবেরাং হয়ে তাদের শিখড়ে কুটারাঘাত করছে। তথাকথিত মানবতার মশালধারী, গরীব-দুঃখী শ্রমিক শ্রেণীর সর্বহারা মানুষের সস্থা আবেগকে পুজি করে বিশ্ববাসীকে সমাজতন্ত্রের গায়কদের অদ্ভুদ ও কৃত্রিম ধানবীয় তুরুফের তাজ ১৯৯০ সালে ভেঙ্গে যাওয়ার দশ বছর পর জন্ম দিল ৯/১১ নাটকের। শুরু হলো হান্টিংটন থিওরী ও প্রস্তাবনার বাস্তবায়নের খেলা। অবশ্য তারও কিছুটা আগে থেকেই এই নাটকের রিহার্সেল দুনিয়াবাসী দেখতে পেয়েছে আফগানিস্তানে তালেবানদের ইসলামী খেলাফতের আদলে প্রতিষ্ঠিত সরকার ব্যবস্থাকে উৎখাতের মাধ্যমে। ইসলামী সমাজ ও সভ্যতার আলোকবর্তিকা নিয়ে উদিয়মান সূর্যের আলো থেকে বঞ্চিত রাখার জন্য নানান কিসিমের আয়োজন দুনিয়াবাসী অবলোকন করতে থাকল।মুসলিম সমাজের এক বিশাল জনগোষ্ঠী বৈরাগ্যবাদী চিন্তাচেতনায় গড়ে উঠা কোন বাধাহীনভাবে সহজভাবে পালনীয় ইসলামের সেই সব মৌলিক বিষয়গুলোর অনুসরণকারী বিদ্ধমান। এদেরকে বিভিন্ন মুসলিম দেশে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা চর্চাকারী শাসক-শোষক শ্রেণী কখনো প্রতিপক্ষ মনে করেনি। কারণ এই গোষ্ঠীটি ইসলামের রাজনৈতিক ভূমিকাকে স্বযত্বে আড়ালে রাখে। রাজনৈতিক ময়দানের অপশাসন-দুঃশাসন, অরাজকতা, দুর্নীতিসহ যাবতীয় মানবতা বিরোধী অপকর্মের বিরুদ্ধে ইসলামকে দাড় করাতে এই গোষ্ঠীটির দারুন অনিহা। তাই ক্ষমতা চর্চাকারীরাও মাঝে মধ্যে এই শ্রেণীর নিকট আশ্রয় পশ্রয় নিয়ে নিজেরাও তাদের লেবাস পরিধান করে বড় ধরনের ধার্মিক পরহেজগার হিসেবে পরিচয় দিতে পছন্দ করে। মুসলমানদের এই শ্রেণীটিকে সাম্রাজ্যবাদী শক্তি বাহুর সমস্ত বল দিয়ে টিকিয়ে রাখার চেষ্ঠা করছে। তারা এদেরকে বিভিন্ন ছটকদার নামও দিয়েছে “মডারেট মুসলিম“। ক্ষেত্র বিশেষে পরহেজগার মুসলিম। কিন্তু তাদের এই কলা-কৌশলের ভিতরেই হয়তো মহান আল্লাহ তার হেকমত জাহির করতে চান। তারই নিদর্শন দেখতে পাচ্ছি আজ ইউরোপ-আমেরিকার হৃদপিন্ডে প্রতি বছর হাজারে হাজার মানুষ ইসলামের দিকে প্রত্যাবর্তন দেখে। এটা কোন সাধারণ বিষয় নয়। ইউসুফ স্টেইস, প্রফেসর ডা. লরেন্স ব্রাউন, আব্দুর রাহীম গ্রীণ, ড. বেলাল পিলিপ্স, প্রফেসর ডেবিট কিটমোর, সাংবাদিক লরেন বুজ, রিডলী সহ ইউরোপ-আমেরিকার অনেক বাঘা বাঘা দার্শনিক-বুদ্ধিজীবী জ্ঞানী-গুনীজন ইসলামের চায়াতলে নিজেকে সোপর্দ করেছে। হয়তো সে দিন আর বেশী দুরে নয় যেদিন ইউরোপ-আমেরিকার সংখ্যগরিষ্ঠ মানুষের মুখ দিয়ে উচ্চারিত হবে “এই অভিসপ্ত সমাজ ব্যবস্থাকে বদলাতে হবে, রক্ষা করতে হবে মাবনজাতির মূল্যেবোধ। এটা সম্ভব শুধুমাত্র সমাজ ও রাষ্ট্রকে ইসলামাইজড করার মাধ্যমে।“ স্লোগান উঠবে ‘লিল্লাহি তাকবীর, আল্লাহ আকবর‘।
অপর দিকে একটি শক্তিশালী শ্রেণীর অস্তিত্ব বিশ্ববাসী অনুভব করছে যারা ইসলামের সার্বিক সৌন্দর্যকে মানব সমাজে ছড়িয়ে দেয়ার মাধ্যমে সমাজকে, রাষ্ট্রকে সৌন্দর্য্যমন্ডিত করতে চায়। ইসলামকে একটা নিছক ধর্ম হিসেবে নয় বরং পরিপূর্ণ এবং চুড়ান্ত জীবন বিধান হিসেবে মেনে নিয়ে মানব সমাজ থেকে যাবতীয় অনাচার, অশান্তি, অরাজকতা দুর করে মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণের মাধ্যমে সার্বিক কল্যাণকর একটি সিস্টেম প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে মানুষের পার্থিব সুখ শান্তি এবং পারলৌখিক জবাবদিহিদার উপযোগি হিসেবে গড়ে তোলার যে আন্দোলন গত শতাব্দীর গোড়া থেকে এশিয়া ও আফ্রিকায় সূচনা হয়েছিল তা আজ মহীরূহ ধারণ করে প্রশব বেদনার আনন্দে অস্থির। তাগুতী শক্তির দোষররা প্রশুতী ও নবজাতক শিশু উভয়কেই আজ গলা টিপে হত্যা করার ব্যর্থ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তুরস্ক, তিউনিসিয়া, মিশরে আজকে সেই নবজাতক শিশুটিকে নার্সিং করতে হবে অত্যন্ত যত্ন ও আদর সহকারে। প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ‘র আকাশ-বাতাস বেদনার কান্নায় ভারী হয়ে উঠেছে আজ। নবীর ওয়ারেস জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান আলেম ওলামা মাশায়েখদের পবিত্র রক্তে রঞ্জিত হয়েছে এদেশের রাজধানী ঢাকার রাজপথ! হে আল্লাহ! আমাদেরকে ধর্য্য ধরার তাওফীক দাও। তোমার প্রিয় বান্দাদের ত্যাগ ও কুরবানীকে তুমি কবুল কর। তুমি হেফাজতকারী, তুমিই একমাত্র নিরাপত্তাদানকারী, তুমিই তোমার দ্বীনদার বান্দাদের ইজ্জ্বতরক্ষাকারী। তাই তোমার কাছেই ফরিয়াদ করি, হে আল্লাহ তুমি এদেশের জাতীয় নেতৃবৃন্দে আলেম ওলামাদের কপালে শাহাদাত যদি নসীব থাকে তবে দাও। কিন্তু কোন মিথ্যা দুর্নামের অপবাদ নিয়ে এক মহুর্তের সাজাকেও যেন চ্যলেঞ্জ করতে পারি সেই শক্তির তাওফীক দাও।
বিষয়: বিবিধ
১৮২৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন