চোর!!!
লিখেছেন লিখেছেন মোহাম্মদ আলী বিন সুলতান ২৩ জানুয়ারি, ২০১৪, ০২:৩২:৫৫ দুপুর
ধর ধর ধর, চোর ধর।
পালাচ্ছে পালাচ্ছে ধর, চিৎকার করে উঠলো দোকানদার।
কিন্তু পালাবে কোথায়? একজন খপ করে ধরে ফেললো লোকটাকে।
সত্যি তো, এ তো দেখছি আসলেই চোর। ঐ যে, হাতে আস্ত একটা রুটি..…
রোগা লিকলিকে একটা দেহ। হাতে দলানো রুটি। গায়ে একহাতা ছেঁড়া গেন্জি। ঠক ঠক করে কাঁপছে লোকটা। ঠান্ডায় না-কি ভয়ে, সেটা বোঝার উপায় নেই।
আজকাল ঠান্ডা আর ভয় পরষ্পরের প্রতিশব্দ। উভয়ের কারনে মানুষের গায়ের লোম খাড়া হয়ে যায় এবং ঠক ঠক করে কাঁপে।
চোর ধরতে পারার আনন্দে চকচকে চোখ নিয়ে দোকান থেকে বেরিয়ে এলো দোকানদার।
" এই যে দেখুন, হারমজাদা কত বড় চোর। গরম গরম রুটি নামিয়ে রাখছিলাম, চট করে একটা নিয়ে পালাতে লাগছিল…
হ্যাঁ, তাই তো… প্রমান যে তার হাতেই এখন রুটি ধরা…
মার হালারে…
চড়-থাপ্পড়, কিল ঘুষি, লাথি সাথে কিছু সামাজিক গালাগালি।
পাশে দাঁড়িয়ে আছে চোর ধরা গর্বিত লোকটা।
কি ঠান্ডারে বাবা… উনি মাফলারটা আরো টাইট করে কানে বাঁধলেন।
লোকটা কি অশিক্ষিত, এত মার খেয়েও চিৎকার করে কাঁদলোনা। অদৃশ্য কেউ চিন্তা করছে।
ফোঁটা ফোঁটা চোখের জল ময়লা প্যান্টের উপর পড়ে আরো বিচ্ছিরি করে তুললো…
কল্পনায় কোন এক রমণী শাড়ির আঁচল দিয়ে ঐ জল মুছে ভবিষ্যতের আশ্রয় খুজতো।
প্রায় ১ বছর আগে কোন এক প্রত্রিকার পাতায় দেখেছিলাম, রুটি চুরির অপরাধে এক যুবককে তীব্র ঠান্ডার মধ্যে সারা রাত ধাতব থামের সাথে বেঁধে রাখা হয়।
রাস্তার মাঝে একটা অপরিকল্পিত আলোচনা সভা চলছে। চোরা বেটাকে কি করা যায়?
পুলিশে দেয়া হোক," একজন বললেন।
হ্যাঁ, আরেকজন সাই দিলেন, রুটি সহ তো আমরা হাতেনাতেই ধরেছি। সাক্ষীর অভাব হবেনা।
নাহ, পুলিশে দিয়ে কাজ হবেনা। পুলিশকে মোটা অংকের টাকা ঘুষ দিয়ে পালাবে…
হ্যাঁ ঠিক কথা..… অনেকেই সাই দিলেন। তাহলে কি করার?…
আলোচনা চলতে থাকে.…
প্রায় ২ বছর আগের কথা।
দিনে দুপুরে আমাদের কাছারি ঘরে চোর ঢুকেছিল। হুজুর একেবারে হাতে নাতেই ধরে ফেলেছে চোরা বেটাকে…
এলাকার মুরুব্বিরা এসে হাজির। কি হয়েছে, কি হয়েছে?
হুজুর দুপুরের খাবার খেয়ে দাঁত খিলাল শেষে কাছারি ঘরে ঘুমাচ্ছিলেন। মাথার ডান পাশে মোবাইল আর মানিব্যাগ।
চোরা বেটা( আনুমানিক ১৬-১৭ বছর ) দরজা খোলা পেয়ে চুপি চুপি এসে মোবাইল ছেড়ে মানিব্যাগের দিকে হাত বাড়ালো।
বুঝলেন তো, টাকার লোভ আর কাকে বলে," পাশের মুরুব্বি মাথা নাড়লেন।
যাই হোক, এই চোরা মানিব্যাগের গুরুত্ত বুঝেনা। মানিব্যাগ খুলে কচকচে ১০ টাকার নোট নিয়ে
ছুট দেয়ার আগেই হাতেনাতে ধরা খেয়ে গেল হুজুরের হাতে।
আর সহ্য হলোনা পাশে দাঁড়িয়ে থাকা মুরুব্বির, উনার হাতের শক্ত তালু চোরা বেটার মুখে পড়ে ঠাস করে শব্দ হলো।
এভাবে মেরে মজা নেই, আগে ভাল করে বাঁধা হোক।
জো হুকুম, বাঁধা হয়ে গেলো।
এর পর দু জন বীর পুরুষ তাদের কার্য সম্পাদন করিলেন।
মানিব্যাগে ৪-৫ টা কচকচে ১০ টাকার নোট ছিল। হারামজাদা, এ রকম টাকা দাদার জনমে দেখছস??
হ্যাঁ, চড়- লাথি চলছে.…
আমার বীর পুরুষিয় চোখ ভুল দেখতে পেলনা। ক্রমাগত কয়েকটা জুতার আঘাতে ডান গালের একটু খানি কেটে কয়েক ফোঁটা রক্ত বেরিয়ে এলো। ছোট বেলায় হয়তো কোন এক মা এই গালে চুমা দিয়ে বলতো, " বড় হয়ে আমার ছেলে ডাক্তার হবে.…
আজ এই ছেলে জুতার দিকে তাকিয়ে তার জীবনের মুল্য খোঁজে।
এই এক জোড়া জুতা বিক্রি করে আমার ১৫ দিনের পেট চলবে?
জনেক মুরুব্বি কচকচে ৫০ টাকার নোট হুজুরের দিকে বাড়িয়ে দিলেন ( অবিশ্বাস করবেননা। এক দন্ডও মিথ্যা বলছিনা)
গাড়ি ভাঁড়ার জন্য। যান, একে (চোরা বেটাকে) সেনাবাহিনীর হাতে তুলে দিয়ে আসুন।
নাহ, শেষ পর্যন্ত সেটা হলোনা।
এখন কল্পনায় এসব চোরদের সাথে মাঝে মাঝে সাক্ষাৎকার করি।
ক্ষিদার জ্বালায় এখন আর কেউ চুরি করেনা। গভমেন্ট থেকে নিষেধ আছে।
কি রে বেটা, তুই চুরি করবি ক্যান? তুই কি রেল মন্ত্রি? না-কি পদ্মা সেতুর টেন্ডার পাইছস? চুরি যদি করতেই হয় তাহলে বড় মাপের করবি, সাথে জয় বাংলা শ্লোগান মুখস্ত করে রাখবি..……
অফ যান, এই সব নিয়ে আমাদের মাথা ঘামানোর কি দরকার।
না, আরেকটু শুনুন।
এই তো কয়েক মাস আগে আমাদের এলাকার তমরদ্দি বাজারের বেলায়েত হোসেন নামে একজন বিশিষ্ট ব্যবসায়িকে দোকানের চাবির জন্য গভীর রাতে নির্মম ভাবে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়। এর পর তার দোকানে ঢুকে লোহার সিন্দুক খুলে টাকা( প্রায় ৩০ লক্ষ টাকা) নিয়ে যায়।
কয়েকদিনের মধ্যে বেলায়েত হোসেনের খুনিরা একে একে ধরাও পড়ে যায়।
তিন মাস জেল খেটে এসে তারা আবার প্রতিদিন বাজারে আসলে ধর্মনিরপেক্ষদের কাছ থেকে ডজন খানে সালামও পায়।
ছোট বেলায় পকেট মারার অভ্যাস ছিল। আউটডোরে নয়, ইনডোরে।
আব্বাজান নেই, সুতরাং আইন অনুযায়ী বড় ভাইদের দিকেই নজর দিতে হয়।
একদিন..…
পকেট হাতড়াচ্ছিলাম, অনেক গুলো ১০ টাকা, বিশ টাকার নোটের ভিতর থেকে একটা ২ টাকার নোট পেতে বেশ সময় লাগছিল।
ফলাফলঃ দুই টাকার নোট সহ হাতে নাতে ধরা পড়লাম।
ভাইজান চোখ রাঙ্গিয়ে গম্ভির ভাবে বললো," টাকার কি দরকার?
ভয়ে ভয়ে রিপ্লাই দিলাম," তুনামেন্ট !
ভাইজান, একগাল হেসে একটা বিশ টাকার নোট হাতে ধরিয়ে দিলেন।
আমি পিক করে হেসে ছুটে পালালাম।
চুরির দায়ে এমন কঠিন শাস্তি পেয়ে আর জীবনেও পকেট মারার কথা চিন্তা করতে পারিনি.…
বিষয়: বিবিধ
১৪৮৬ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন