সোনার বাংলার কাহীনি ?
লিখেছেন লিখেছেন আইল্যান্ড স্কাই ০৩ জুন, ২০১৩, ০২:২৮:০৪ দুপুর
বাংলার মুসলমানদের উপর গোলামীর জোয়াল একটি ছিল না, ছিল দু'টি। একটি ইংরেজদের, অপরটি হিন্দু মহাজন ও জমিদারদের। ভারতের অন্য কোন প্রদেশের মুসলমানদের পশ্চাতপদতা এতটা বিশাল ছিল না। তখন বাংলার কয়জন মুসলমানের ভিটায় দালান ছিল? ক’জনের জমিদারি ছিল? ক’জনের ব্যবসা-বাণিজ্য বা চাকুরি ছিল? ক’জনের ঘরে চেয়ার-টেবিল-খাট-পালং দূরে থাক, কাঠের একখানি দরজা ছিল? ক’টি পরিবারে এক জোড়া জুতা ছিল? পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার মাত্র ৪ বছর আগে ১৯৪৩ সালে প্রায় ২০ লাখ মানুষ দূর্ভিক্ষে মারা যায়। বন্যা, খড়া, জলোচ্ছ্বাস, ম্যালেরিয়া ও কলেরা ফি বছর লেগেই থাকতো। পাঞ্জাব, সিন্ধ, সীমান্ত প্রদেশে অবস্থা তেমনটি ছিল না। পাঞ্জাব, সিন্ধু, সীমান্ত প্রদেশে ব্রিটিশদের গো্লামী থাকলেও হিন্দু জমিদারদের গোলামী ছিল না। সে সব প্রদেশে বরং মুসলমান জমিদারদের সংখ্যাই ছিল বেশী। লাহোর, করাচী, পাটনা, এলাহাবাদে যত জন মুসলিম উকিল-মোক্তার, ডাক্তার, শিক্ষক ছিল তা ঢাকাতে ছিল না। কোলকাতাতেও ছিল না। ফলে ঐসব অঞ্চলে অমুসলমানদের তুলনায় মুসলমানদের মাঝে এতটা পশ্চাদপদতা ছিল না। পাকিস্তানের গুরুত্ব বুঝাতে মুসলিম লীগকে তাই সেসব প্রদেশে প্রচন্ড বাধা পেতে হয়েছে। অথচ অতি পশ্চাতপদতার কারণেই পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার সবচেয়ে বেশী প্রয়োজন অনুভব করে বাংলার মুসলমানেরা। অথচ আওয়ামী লীগের কল্পনায় সে অধঃপতিত বাংলাটিই ছিল সোনার বাংলা। আওয়ামী লীগের অভিযোগ, পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকার সে সোনার বাংলাটিকে শ্মশান বানিয়েছে। সত্তরের নির্বাচনের আগে “সোনার বাংলা শ্মশান কেন?” নামে একটি পোষ্টার ছাপে। শ্মশান করার দায়ভার চাপিয়েছিল পাকিস্তান সরকারের উপর। কথা হল সোনার বাংলার মানুষেরা শত শত বছর ধরে যে সব সোনার ঘরে বাস করতেন তার কোন চিত্র কি বাংলাদেশের কোথাও মেলে? কথা হল, ক্ষমতার লোভে মানুষকে কি এতটা মিথ্যাচারে নামতে হবে?
শেখ মুজিব ও তার দলের নেতাদের মগজে তখন যে চেতনাটি বাসা বেঁধেছিল সেটি হল ম্যাকিয়াভিলিয়ান নীতি। এ নীতির মূল কথা, ক্ষমতায় যাওয়ার রাজনীতিতে যে কোন মিথ্যা ও প্রচারণাই জায়েজ। ১৯৭০ সালের নভেম্বরে দেশের দক্ষিণের উপকূলবর্তী জেলাগুলোতে প্রলয়ংকরি জলোচ্ছ্বাস হয়। তাতে আনুমানিক ৫ লাখ মানুষ মারা যায়। কিন্তু আওয়ামী লীগ ও বাংলাদেশের সেকুলার মেডিয়াগুলো সে জলোচ্ছ্বাসের দায়ভার চাপিয়েছিল পাকিস্তানে সরকারের্ উপর, জলোচ্ছ্বাসের উপর ততটা নয়। তখন দূর্দশাগ্রস্ত মানুষের মাঝে পুনর্বাসনের কাজের গুরুত্ব ছিল অপরিসীম। ডিসেম্বরে ছিল নির্বাচন। পাকিস্তান সরকার হিমসীম খাচ্ছিল নির্বাচনের আয়োজন নিয়ে। চাচ্ছিল নির্বাচন কিছুদিনে জন্য পিছিয়ে পুনর্বাসনের কাজ করতে। কিন্তু ক্ষমতা-পাগল আওয়ামী লীগ নির্বাচন একদিন পিছাতেও রাজী ছিল না। যে কোন বিলম্বের তারস্বরে বিরোধীতা করেছিল। সে পুনর্বাসনের কাজে পাকিস্তান সরকার সে সময় বিদেশ থেকেও তেমন সাহায্য পায়নি। ফলে রিলিফের কাজে দুরাবস্থা ছিল। জলোচ্ছ্বাসের ফলে সৃষ্ট দুর্দশাকে নির্বাচনী প্রচারে তথা রাজনীতির কাজে লাগাতে ভূল করেনি আওয়ামী লীগ। বলা যায় সত্তরের নির্বাচেন তাদের এমন অভূতপূর্ব সাফল্যের বড় কারণ ছিল, বাংলাদেশের জ্বলোচ্ছ্বাস রাজনৈতিক ব্যবহার। ভাষা, বর্ণ বা অঞ্চল-ভিত্তিক জাতিয়তাবাদী চেতনার প্রকোপে আওয়ামী নেতা-কর্মীগণ এতটাই আক্রান্ত ছিল যে, একাধিক ভাষা, বর্ণ ও অঞ্চল নিয়ে গড়া পাকিস্তানের প্রতি তাদের সামান্যতম দরদও ছিল না। এমন এক ক্ষুদ্র স্বার্থ-চেতনা ব্যক্তি থেকে একতার সামর্থই কেড়ে নেয়। তখন তার পক্ষে অসম্ভব হয়ে পড়ে মুসলিম উম্মাহর ঐক্যের লক্ষে কাজ করা। সে সামর্থ বিলুপ্ত হয়েছিল মুক্তিযোদ্ধাদের চেতনা থেকে। অথচ মুসলমান হওয়ার অর্থই হল, ঈমান ও ইবাদতের পাশাপাশি মুসলমানদের মাঝে একতা প্রতিষ্ঠায় সক্রিয় হওয়া। নামায-রোযা যতই পালিত হোক, অন্য ভাষার অন্য দেশের মুসলমানদের সাথে একাত্ম হওয়ার সামর্থ্য অর্জিত না হলে তাকে কি মুসলমান বলা যায়? মুসলিম উম্মাহর কল্যাণ চিন্তা ও একতার প্রতি অঙ্গিকার আসে আল্লাহর প্রতি ঈমান ও কোরআনী জ্ঞান থেকে। সেকুলারিজমে সেটি হয় না। পৌত্তলিক কাফের শক্তির প্রতি অনুরাগেও সে চেতনাটি বাঁচে না। তাই নামে মুসলমান হলেও সেকুলার চেতনার ধারক হওয়ার কারণে আওয়ামী লীগ নেতাদের মাঝে যেমন সে ঐক্যচেতনাটি ছিল না, তেমনি সেটি ছিল না ভারতে প্রতিপালিত মুক্তিযোদ্ধাদের মাঝেও। পাকিস্তানকে ব্যর্থ করে দেওয়ার যে কাজ ভারত ১৯৪৭ থেকে শুরু করেছিল সে মুসলিম শক্তিবিনাশী মিশনে আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সেকুলার শক্তিও যোগ দেয়।
বিষয়: বিবিধ
১৩৬৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য






































পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন