রেকর্ডিং তেলাওয়াত শুনলে যদি সাওয়াব না হয় তাহলে গান শুনলে কেন গুনাহ হবে?
লিখেছেন লিখেছেন অয়েজ কুরুনী আল বিরুনী ০১ সেপ্টেম্বর, ২০১৪, ০৭:১৭:৫৪ সকাল
কারো অনুভূতিতে আঘাত দেওয়া উদ্দেশ্যে নয় বরং ভুল ধরিয়ে দিয়ে সত্য উদঘাটন করা এবং গোঁড়ামি থেকে বেরিয়ে এসে মূল ইসলামে প্রবেশ করার জন্যই মূলত এ লেখা। إِنْ أُرِيدُ إِلاّ الإِصْلاَحَ مَا اسْتَطَعْتُ
বছর দুয়েক আগের কথা যখন মুহসীন হলে থাকতাম। আসর নামাজের পর (সম্ভবত) রুমে বসে কম্পিউটারে তিলাওয়াত শুনছিলাম আর পাশাপাশি অন্য কোন কাজ করছিলাম। এমতাবস্থায় তাবলীগ জামাতের কয়েকজন ভাই দাওয়াত নিয়ে এহেন (প্রায়ই আসেন কারণ আমিও মাঝেমধ্যে তাদের সাথে দাওয়াতী কাজ করতাম)। তাদের মধ্যে একজন ভাই ছিলেন যিনি মুফতী, তিনি আমাকে নাম ধরে বললেন “অয়েজকুরুনী! মাসয়ালা জানো তো”? আমি তার কথার ইংগিত কিছুটা আঁচ করে বললাম “ও তিলাওয়াতের ব্যাপারে”? তিনি বললেন “হ্যাঁ। রেকর্ড করা তিলাওয়াত শুনলে কোনো সাওয়াব হবে না”। কথাটি বলার ধরণ এবং পরিস্থিতি দেখে আমার মনে হচ্ছিল আমি এক বাজে কাজে সময় নষ্ট করছি এবং এটা বাদ দিয়ে অন্য কাজ করা উচিৎ। তখন আমার মনে একটি প্রশ্ন উদয় হল আচ্ছা রেকর্ডকৃত তিলাওয়াত শুনলে যদি সাওয়াব না হয় তাহলে রেকর্ডকৃত নাজায়েজ সিনেমা, গান, পর্ণোগ্রাফি দেখলে কেন গুনাহ হবে? পরবর্তীতে আরো একজন মুফতী সাহেবকে জিজ্ঞাসা করে বসলে তিনি উত্তর দিলেন “যে গানের ব্যাপারে নাকি বলা আছে মাধ্যম এবং সরাসরি যে কোন ভাবে শুনলেই গুনাহ হবে। আর তিলাওয়াতের ব্যাপারে এরকম বলা নাই”। তখন আমার কাছে বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে গেল তা হল এই সব নামধারী মুফতিরা সমাজ থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন। যে কারণে তারা আছেন সাওয়াব হবে কি হবে না তাই নিয়ে। আরে মিয়া ! যে ছেলেটি আজে বাজে কাজকর্ম সিনেমা থেকে বাচার জন্য তিলাওয়াত শুনছে তাকে যদি বলা হয় যে কোন সাওয়াব হবে না তাহলে সে বলবে সাওয়াব যখন হবেই না তাহলে খামাখা সময় নষ্ট করে কি লাভ সিনেমা, নাটক দেখি। কে বলেছে সাওয়াব হবে না অবশ্যই সাওয়াব হবে। আজ একটি হাদীস শুনে বিষয়টি আরো স্পষ্ট হয়ে গেল তা হল
রাসুল সাঃ বলেছেন “ কেউ যদি হালাল ভাবে তার জৈবিক চাহিদা পূরণ করে তাহলে সেটাও সাদক্বা হিসাবে গণ্য হবে। প্রশ্ন করা হল “কিভাবে সাওয়াব হবে”? তিনি বললেন “যদি তুমি অবৈধ পন্থায় খায়েশ মিটাতে তাহলে যদি গুনাহ হতে পারে তাহলে বৈধভাবে সম্পন্ন করলে কেন সাওয়াব হবে না?।১( مسلم- تاب: الزكاة، باب: بيان أن اسم الصدقة يقع على كل نوع من المعروف، (1006)،(53).
প্রিয় ভাইয়েরা আপনারা গোঁড়ামি থেকে বেরিয়ে আসুন। শুধুমাত্র মুরব্বি আর আকাবিরদের অনুসরণ করতে গিয়ে রাসুল সা: এর মূল আদর্শ থেকে দূরে সরে যাবেন না। তিনি বলেছেন “তোমরা সহজ কর,এবং কঠিন করনা, সু সংবাদ দাও এবং নিরাশ করনা”।
বিষয়: বিবিধ
৩৮৭১ বার পঠিত, ১১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
০ বলা আছে , যে লোক ক্বুরআন তেলাওয়াত পারে না বলে করে না তার চেয়ে যে লোক ক্বুরআন তেলাওয়াত পারে অথচ করে না আলসেমীর কারণে বা নানা অজুহাতে - তার গুনাহ বেশী । তবে যে পারে না তাকে পারার জন্য চেষ্টা করতে হবে।
শুধু কানে হেড ফোন লাগিয়ে ভাব মেরে বলবে যে, ''ক্বুরআন তেলাওয়াত শুনছি'' - এটা মোটেই সঠিক বলে মনে করি না ।
কানে হেড ফোন লাগিয়ে কি শোনা হয় - ৯৯% লোকই বলবে যে সে গান শুনছে । কারণ এটা এ কাজেই ব্যবহৃত হয় বেশী , কারণ আশে পাশের লোক শুনছে না যে সে আসলে কি শুনছে ।
গান শোনার অনেক মাধ্যম আছে যার মধ্যে কানে হেড ফোন লাগিয়ে শোনাটা এখন সবচেয়ে বেশী প্রচলিত ।
আর ক্বুরআন তেলাওয়াত শোনার মাধ্যম হিসেবে হেড ফোন আসে অনেক পরে। এটা বরং তেলাওয়াত না শোনার চেয়ে গানই শুনছে বলে অনেকের কাছে মনে হবে ।
আমাদের উচিত কিভাবে ক্বুরআন সহীহভাবে তেলাওয়াত করা যায় নিজে নিজে তা আয়ত্ব করা ।
'' তোমাদের মধ্যে সেই সেরা যে নিজে ক্বুরআন শেখে এবং অন্যকে তা শেখায় '' - এরকম কথা ক্বুরআনে আছে ।
আপনি সুযোগ থাকা সত্ত্বেও কানে হেড ফোন লাগিয়ে তেলাওয়াত শোনেন তাতে কোন পাপ হবে কিনা জানি না , তবে আপনি যদি সুস্থ শরীরে থাকা সত্ত্বেও বসে বসে নামাজ পড়েন তাহলে সেটা কি ঠিক হবে ?
যেখানে আপনার নিজে ক্বুরআন শিখে তা নিজেই তেলাওয়াত করার সুযোগ প্রতিদিনই আছে সেখানে রেকর্ড করা গুলি শোনা কেন ?
এটাকে উতসাহ দিলে বা এটাকে না থামালে তখন এরকম কথাও আসবে যে,
আমরা হেড ফোনকে শুধু মাত্র গান শোনার কাজে সিমীত রাখবো কেন? সেটা কুরআন আর হেদায়েতী বক্তব্য শুনে উপকৃত হতে পারি।
আমি কানে হেড লাগিয়ে যদি কুরআন আর ভালো কিছু শুনি তাতে অন্য লোক আমাকে কি মনে করলো তার উপর তো আমার আল্লাহ ফয়সালা করবেন না। তিনি ফয়সালা করবেন বাস্তবতার নিরিখে। ধন্যবাদ।
কোন নামাজে মাসজিদে মুসল্লীদের সমাগম বেশী হয় ? সেটা কি লোক দেখানো না কি আসল ? এর কতজন বাকী ৩৪ ওয়াক্ত নামাজ মাসজিদে গিয়ে আদায় করে ?
এটাকে এখনও রেটিফাই করার সময় আসে নি বলে মনে করি । কারণ ক্বুরআন তেলাওয়াত শুনার অজুহাতে এটার অপব্যবহার হবেই । ম্যাক্সিমাম মানুষই শয়তানের দখলে । আমাদের চারপাশে যারা কানে হেডফোন লাগায় তাদের ৯০%ই উঠতি বয়সী এবং এরাই ডিরেইল্ড হয় বেশী । শয়তানের মাধ্যমে তারা আমার ঐ বোল্ড করা কথা গুলো বলা শুরু করবে বলে মনে করি ।
@ প্রেসিডেন্ট সাহেব : তেলাওয়াত কোনভাবে শুনা বেশী ভাল যদি শ্রবনকারী সক্ষম থাকে - হেড ফোন লাগিয়ে না কি জায়গায় গিয়ে ? না কি নিজে তেলাওয়াত করেই ?
এমনিতেই বেশীর ভাগ লোক নামাজ পড়তে এবং ক্বুরআন তেলাওয়াত করতে গড়িমসি করে , যেখানে মার্কেটে যেতে বলেন কোন সমস্যা নেই - লাফ দিয়ে যাবে , ফেস বুকে চ্যাটিং করতে বলেন - ঘন্টার পর ঘন্টা চলে যাবে । কনসার্ট দেখতে বলে - টাকা পয়সা , সময় , বন্ধু বান্ধব সব নিয়ে যাবে এবং তালে তালে গাইবেও ।
কিন্তু নামাজ পড়ার বেলায় বা তিলাওয়াতে বেলায় সময় নেই !
ধর্মীয় হুকুম পালনে অলস এই জাতিকে আরও অলস আমরা করে দিচ্ছি ক্বুরআন তেলাওয়াতকে নিজে নিজে করার প্রতি উতসাহ না দিয়ে বরং শোনাটা (তাও আবার কানে হেড ফোন লাগিয়ে)কে পূন্যের বলে জানিয়ে ।
যেটা নিজে নিজে করাই উত্তম সেটা অন্যকে দিয়ে করানো কি ঠিক ? পীরকে ভায়া ধরে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়ার চেয়ে বরং নিজেই আল্লাহর কাছে তা চাওয়া কি উত্তম না ? আল্লাহ কি তাকে বলার মত মুখ - জিহ্বা, দেখার মত চোখ এবং শোনার মত কান দেন নি ?
162,Sura An-a'm
আপনি বলুনঃ আমার নামায, আমার কোরবাণী এবং আমার জীবন ও মরন বিশ্ব-প্রতিপালক আল্লাহরই জন্যে।
সুতরাং মুমিন জীবণের বৈশিষ্ট্যই হচ্ছে জীবণে যা কিছু করবে সবই আল্লাহর জন্য করবে এবং তার সকল কিছুর জন্যই সে সওয়াব পাবে!
কোরআন তেলাওয়াত শোনার অনেক ইতিহাসও রয়েছে!হযরত দাউদ আঃ এত সুন্দর কোরআন তেলাওয়াত করতেন যে তা শুনতে দলবেধে লোকেরা বসে থাকতো এমনকি জ্বিন,নদীর মাছেরাও দলবেধে তিনার কোরআন তেলাওয়াত শুনতো!
আর এক অর্থে আমরা নামাজেও কোরআন তেলাওয়াত শুনি নিজেরাও অনেক জায়গায় তেলাওয়াতের পাশাপাশি!
সুমধুর কোরআন তেলাওয়াতও একটা বিশাল দাওয়াত,শুধুমাত্র কোরআন তেলাওয়াত শুনেই আল্লাহর হুকুমে কাফের সর্দার ওম্রর হয়েগিয়েছিলেন হযরত ওমর রাঃ!
আমাদের ব্যক্তিগত জীবণেও সুমধুর কোরআন তেলাওয়াত শোনার অপরিসীম গুরুত্ব অবশ্যই আছে।কোন একটা কাজ করছি আর তার সাথে কোরআন তেলাওয়াত শুনলে মন নরম থাকে,আল্লাহর প্রতি জবাবদিহিতার ভয় জাগ্রত হয়,শরীর খারাপ লাগছে অথবা কেউ পরিশ্রান্ত অবস্থায় কোরআন তেলাওয়াত শুনতেই পারে কেন এতে সোয়াব হবে না?অনর্থক কি কারণে যে এ ধরনের কথাবার্তা অনেকে বলে আমার কোন বুঝেই আসে না
!
তবে হ্যাঁ অবশ্যই কোরআন চর্চাকে শুধুমাত্র তেলাওয়াত শোনার মাঝেই আবদ্ধ করে রাখলে হবে না,নিজে তেলাওয়াত করতে হবে,অর্থসহ পড়তে হবে,সর্বপরি সে অনুযায়ী আমলের চেষ্টা করতে হবে!
আমাদের অন্যতম সমস্যা হচ্ছে নতুন কোন প্রযুক্তিকে বিবেচনা না করেই অনেকে হারাম সাব্যস্ত করে দেন।
মন্তব্য করতে লগইন করুন