আদর্শ বাবা-মা
লিখেছেন লিখেছেন অয়েজ কুরুনী আল বিরুনী ৩০ আগস্ট, ২০১৪, ০২:৪৯:৪৪ রাত
প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার কথা বলতে গেলে তারা মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরোতে পারেন নি। কিন্তু সুশিক্ষার আয়তনে মাপলে তাঁরা সুশিক্ষিত এবং বলতে গেলে স্বশিক্ষিতই। নিজেদের শিক্ষার দৌড় থেমে গেলেও সন্তানদের যাতে আদর্শ নাগরিক হিসাবে গড়ে তোলা যায় সে লক্ষ্যে তাঁরা সন্তানদেরকে হাতে ধরে ধরে মানবতা, সামাজিকতা, নৈতিকতা, ধার্মিকতা, এবং শিষ্টাচার শিখিয়েছিলেন, আর সেজন্যই বোধহয় আমরা আজ তাদেরকে আদর্শ বাবা-মা হিসাবে গ্রহণ করে গর্ববোধ করি।
প্রশ্ন করতে পারেন এমন কি কাজ যা করলে আদর্শ বাবা-মা হওয়া যায়? হ্যাঁ সেই কথাগুলিই লিখছি যাতে কেউ অনুপ্রাণিত হয়। এক দীর্ঘ প্রক্রিয়া; আশা করি ধৈর্যহারা হবেন না।
আদর্শ বাবা
যেদিন বুঝতে পারবেন আপনার সন্তান তার মায়ের উদরে আগমন করেছে সেদিন থেকে আপনাকে হতে হবে বইয়ের পাতায় বর্ণনা করা কোন সৎ যুবক যার প্রতিটি কদমই মানুষের জন্য অনুকরণীয় হবে।
জন্মের পূর্বে
১। আগে যদি ধূমপান করার অভ্যাস থেকে থাকে তাহলে সেদিন থেকেই তাওবা করে ইস্তফা দিন, আর একেবারে ছাড়তে না পারলে কমপক্ষে বাড়ির মধ্যে আপনার শরীরে গন্ধ নিয়ে প্রবেশ করবেন না। (বুদ্ধিমান স্ত্রী হলে বিয়ের প্রথম রাতেই প্রতিজ্ঞা করিয়ে নিতে পারে)
২। যদি নিয়মিত সালাত আদায় করার অভ্যাস না থাকে তাহলে এখনি অজু করে নামাজে দাঁড়িয়ে যান আর বিগত দিনের ভুলের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করুন আর ভবিষ্যতেও সালাত ক্বাযা করবেন না বলে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হোন। আর আপনার জীবনসঙ্গী যদি বেনামাজি হয় তাহলে তাকেও আদর ভালবাসা দিয়ে বুঝিয়ে সমঝিয়ে আপনার সাথে নামাজে দাড় করান, তবে সাবধান কোন অবস্থাতেই তাকে গালিগালাজ করবেন না আর গায়ে হাত তোলার কথা তো চিন্তা ই করা যাবে না।
৩।ঘরের পরিবেশ সুন্দর করতে আপনিই উদ্যোগী হয়ে আপনার সঙ্গীকে সাথে নিন, পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন বাসস্থান মানুষের মনের উপর বড় ধরণের প্রভাব ফেলে, প্রতিদিন কিছু টাটকা ফুল (গোলাপ, রজনীগন্ধার ছড়ি ইত্যাদি) ঘরে আপনাদের একান্তে অবস্থান করার স্থানে রাখুন। ঘরে কোন প্রাণীর ছবি থাকলে নষ্ট করে ফেলুন। এর বদলে বাজারে অনেক সুন্দর সুন্দর ফল-ফুলের ছবি পাওয়া যায় সেগুলি লাগাতে পারেন দেখলে মনে প্রফুল্লতা আসবে।
৪।আপনি যদি যৌথ পরিবারে বসবাস করেন তাহলে পরিবারের অন্যান্যরা যাতে আপনার স্ত্রীর প্রতি সহানুভূতিশীল হয় সেব্যাপারে সবাইকে উত্তম পদ্ধতিতে বুঝান। আর যদি একক পরিবারে বাস করেন তাহলে আপনার স্ত্রীকে বেশি বেশি সময় দিন। রান্নাবান্না, ঘর গুছানো, কাপড় ধোয়া, এমনকি তার শরীরের যত্ন ইত্যাদির দিকে আপনি আপনার নিজের কাজের ফাঁকে ফাঁকে যতটুকু সময় পান বাইরে নষ্ট না করে সেদিকেই ব্যয় করুন।
৫। মাঝেমধ্যে বিভিন্ন মজার গল্প, কৌতুক বলে হাসির পরিবেশ তৈরি করুন, স্ত্রীর চুলে তেল দিয়ে চুল বেধে আঁচড়ে দিতে পারেন। আরও অনেকভাবে তার যত্ন নিতে পারেন। জিনিস তো আপনারই আপনি তার যত্নে যা কিছু করবেন সবই বৈধ সব কি আর লিখে দেয়া যায়।
৬। ঘরের মধ্যে চলাফেরার সময় কুরআন তেলাওয়াত করতে পারেন সুর করে করে, উঠতে বসতে মাসনুন দোয়া গুলি অনুশীলন করবেন। বিশেষ করে সন্ধ্যায় নামাজের পর অথবা ফজরের নামাজের পর স্ত্রীকে আপনার কোলের উপর শুইয়ে তার মাথা বিলি কেটে দিতে দিতে সুরা ইয়াছিন, ওয়াক্বিয়া, মুলক মুঝঝাম্মিল, আর রহমান সুরাগুলি তেলাওয়াত করতে পারেন যতক্ষণ পারা যায়। এতে আপনার অনাগত সন্তানের নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে। আর শোয়ার আগে অবশ্যই সুরা ইখলাস, নাস, ফালাক্ব পড়ে পেটের উপর ফু দিবেন। রাতের বেলায় কখনো মাকে একা উঠতে দিবেন না টয়লেটে অথবা কিচেনে যেখানেই যাওয়ার দরকার আপনাকে জাগাতে বলবেন।
৬। তাহাজ্জুদের নামাজের অভ্যাস করুন। আপনার স্ত্রীর শারীরিক অসুস্থতা হওয়ার মত সময় না হলে দু’জন একসাথে নামাজ আদায় করে আল্লাহর কাছে কান্নাকাটি করে নেক সন্তানের দুয়া করুন।
৭।স্ত্রীকে নিয়ে মাঝেমধ্যে আত্মীয় স্বজন অথবা কোন নিরাপদ সবুজ পরিবেশে ঘুরতে যান। ছোটখাটো উপহার দিন। মাঝে মধ্যে একটু খ্যাপানো কথা বার্তা বলে খুনসুটি করতে পারেন। আপনাদের বয়সের পার্থক্য যতই হোক না কেন সবসময় একে অপরের একে বারে কাছে নিয়ে আসুন হাসি ঠাট্রা খুচাখুচি ইত্যাদির মাধ্যমে।
৮। আপনার ঘরে বিনোদনের জন্য ইসলামী ভাবধারার উপন্যাস, গল্প, নাটক ওয়াজ, ইসলামি গান রাখতে পারেন। আপনার স্ত্রীকে হরর বা ভীতি সৃষ্টিকারী নাটক সিনেমা ইত্যাদি থেকে দূরে রাখবেন।
৯। তার পছন্দের খাবার জেনে নিয়ে কিনে আনুন এবং নিজের হাতে খাওয়ান।
মনে রাখবেন আপনার একটু অসতর্কতা আর অবহেলা আপনার অনাগত সন্তানের এবং তার মায়ের বিপদ ডেকে আনতে পারে।
(চলবে)
বিষয়: বিবিধ
৯৭৬ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
খুব খুব ভাল লিখেছিস। অনেক ধন্যবাদ
এসব কথা আমার দীর্ঘদিনের জমানো প্ল্যান। লাইনে থাকো বন্ধু আরো আসছে।
আপনার চিন্তার গভীরতা মর্মকে স্পর্শ করে গেলো।
অনেক অনেক ধন্যবাদ ভাই। শুভেচ্ছা রইলো।
মন্তব্য করতে লগইন করুন