দুটি পাতা একটি কুড়ির দেশে (প্রথম পর্ব)

লিখেছেন লিখেছেন তরিকুল হাসান ০৯ অক্টোবর, ২০১৪, ০৭:৩৩:৪৫ সন্ধ্যা

বারটায় হানিফ বাসে করে রংপুর থেকে সিলেটের পথে রওনা হলাম। উপবন এক্সপ্রেস কমলাপুর থেকে ছেড়ে যায় রাত ৯টা ৫০ মিনিটে। আমরা ভেবেছিলাম সন্ধায় ঢাকায় পৌছে একটু বিশ্রাম নিয়ে তারপর ট্রেন ধরব, কিন্তু সে আশায় গুড়ে বালি , পথে তুমুল বৃষ্টি আর যানজট সংগী হল। ঢাকায় নামার পর সিএনজি ড্রাইভারকে বললাম, ভাড়া যা চাও তাই দিব কিন্তু ৯ টা ৫০ এর মধ্যে কমলাপুর পৌছতে হবে । সিএনজি ওয়ালা বলল, ঝড়ের গতিতে যামু তয় গ্যারান্টি দিবার পারমু না। সত্যি সত্যি ঝড়ের গতিতে চলতে লাগল সিএনজি । মনে ভয় ধরে গেল, এই বুঝি অ্যাক্সিডেন্ট হয় ! কমলাপুর যখন পৌছলাম তখন ঘড়ির কাটায় দশটা বেজেছে। রিয়াদের বন্ধু মামুন স্টেশনে টিকিট নিয়ে আমাদের জন্য অপেক্ষা করছিল। আমরা মামুনকে জড়িয়ে ধরলাম। মামুন আমাদের দৌড়াতে বলল। দৌড়ে উঠতেই ট্রেনের শেষ বাশি বাজল। এরপর ঝক ঝকাঝক আর ঝক ঝকাঝক।

রাতটা আমার দুই সংগী, রিয়াদ আর সোহেল গভীর ঘুমে কাটাল ; আমার চোখে ঘুম এলোনা। বাইরে অন্ধকারের ছোপ ছোপ আবেশ আর মৃদু বৃষ্টিতে মনে হল, গভীর রাত বড় আশ্চর্য সময়। চারদিকের নিরবতা ভেংগে আমরা চলতে লাগলাম। আমি রাত জেগে ভাবতে লাগলাম অনেক বছর আগে এরকমই এক গভীর রাতে ইবাদত করতে করতে তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়েছিলেন হযরত শাহ জালাল (রঃ)। এমন সময় তিনি স্বপ্নে দেখলেন কে যেন তাকে ডেকে বলছে ‘‘হে শাহ জালাল! তুমি যে কঠোর সাধনা ও তপস্যার দ্বারা আধ্যত্মিক জ্ঞান ও সংযমতা অর্জন করেছ, এসব তোমার নিজের জন্য নয়। এবার তুমি মানব জাতির কল্যাণের জন্য নিজেকে নিয়োগ কর। পাপাচার ধর্মান্ধ

মানুষকে আহ্বান করে ইসলামের সুশীতল

ছায়াতলে আশ্রয়দান কর। তাই মানুষকে ইসলামের দাওয়াত দিয়ে ইসলামের পতাকা উত্তোলন কর। বিপথগামী মানুষকে আশ্রয় দিয়ে মুক্তির দিশা দাও, আর বসার সময় নেই। ইসলাম জগতের মহান আর্দশকে আবার পূর্ণ প্রতিষ্ঠিত করে তার দীপ্ত রশ্মি দিয়ে কু-আচারে নিমগ্ন পাপী তাপীকে কলুষিত আত্মা থেকে আলোকিত করে তোল। ইসলাম আবার দুনিয়ার বুকে পূর্ণ জাগরুক হোক এটাই তো প্রতিপালকের পরম ইচ্ছা। সে ইচ্ছা পূরণের জন্যই আল্লাহ

তোমাকে প্রয়োজনীয় জ্ঞান দান

করেছেন। আর বিলম্ব করার সময় নেই। ধর্ম

প্রচারের জন্য উদ্ধুদ্ধ হয়ে দায়িত্ব পালনে

তৎপর হও। যে স্থান থেকে ইসলাম

বিলীনের পথে মানুষ নানা অনাচার কু-

আচারে লিপ্ত সেখানে গিয়ে দায়িত্ব

পালন কর। '

এবার তাঁর নিদ্রা ভাঙ্গল মনে পড়ল স্বপ্নে পাওয়া প্রত্যাদেশের কথা। সাথে সাথে ভীত হলেন, আবার আনন্দিতও হলেন। কারন

যে বিষয়টা নিয়ে তিনি চিন্তা ভাবনা

করতে ছিলেন সে সমস্যার সমাধান

হয়ে গেল। তাই তো পরের দিন ভোরে শিক্ষাগুরু সৈয়দ কবীরের নিকট স্বপ্নের বিষয়ে জানালেন। কিন্তু তিনি বুঝতে পারলেন না কোথায় সে জায়গাটি। এদিকে তার মামা ও শিক্ষক সৈয়দ আহম্মদ কবির তার প্রিয় ভাগীনার স্বপ্ন শুনে অত্যন্ত আনন্দিত হলেন। বললেন এ মহান দায়িত্ব তোমাকে পালন করতেই হবে। আমিও তোমাকে অনুমতি দিলাম। যাও তুমি গিয়ে তোমার দায়িত্ব পালন কর। মামার অনুমতি পেয়ে তিনি দেশ ত্যাগের জন্য প্রস্তুত হলেন। যাত্রাকালে সৈয়দ কবির শাহ জালালের হাতে এক মুঠো মাটি তুলে দিয়ে বললেনঃ যে স্থানে এই মাটির "স্বাদ" "গন্ধ" ও "বর্ণের" মিল এক হবে, সেখানেই ধর্ম প্রচারের জন্য আস্তানা গড়বে।

এই সেই সিলেটের পবিত্র মাটি। যার স্বাদ ,গন্ধ আর বর্ণ মিলে গেল ।

বিষয়: বিবিধ

১০৮১ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

272619
০৯ অক্টোবর ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:৪৪
ইবনে আহমাদ লিখেছেন : ভাই বড় চমৎকার করে বর্ণনা করেছেন। আপনাকে শাহজালালের মাটিতে স্বাগত।
১০ অক্টোবর ২০১৪ সকাল ০৯:২৬
216889
তরিকুল হাসান লিখেছেন : আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
272666
০৯ অক্টোবর ২০১৪ রাত ০৯:৫৫
আবু সাইফ লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ..

আপনাকে অনেক ধন্যবাদ, জাযাকাল্লাহ
১০ অক্টোবর ২০১৪ সকাল ০৯:২৭
216890
তরিকুল হাসান লিখেছেন : আলহামদুলিল্লাহ। আপনাকেও ধন্যবাদ।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File