কবিতার শবদাহ (৩)
লিখেছেন লিখেছেন আলমগীর মুহাম্মদ সিরাজ ০৬ ডিসেম্বর, ২০১৪, ১২:০৬:১৭ দুপুর
অনেকক্ষণ বসে থাকতে থাকতে আমাদের হাত পা কেমন স্থির হয়ে গেলো। একটু নড়ে চড়ে বসলাম সবাই। ওনি বলতে লাগলেন-
‘এভাবে নিঝু জানতে পারে যে আমি তাকে ভালাবাসি এবং তাকে নিয়ে ডায়রী লিখি। মোটামুটি তাদের ক্লাশের সব মেয়েরাই এটা জেনে যায়।
এটা জানার পর থেকে সে আমাকে দেখলেই মুচকি হাসতো। আমার কাছে এই হাসিটাকে কেমন ছলনার মনে হতো। আরো বিভিন্ন ভাবে অঙ্গভঙ্গি করতো, কেমন যেন ঢঙ করতো সব সময়। তার এই ঢঙগুলো আমার প্রেমটাকে আরো বাড়িয়ে দিতো। দিন দিন আমার ভিতরের দ্বীপটা যেন আরো বড় হতে লাগলো। আমার এক বন্ধু বলতো-
‘কোন মেয়ে যখন জানতে পারে যে একটা ছেলে তাকে পছন্দ করে। মেয়েটা তখন ছেলেটাকে নিয়ে খেলতে শুরু করে। অনেকটা হাতের পুতুলের মতো তাকে নাচায়।’
আমার কাছে মনে হতো নিঝুও আমাকে নিয়ে খেলতে শুরু করেছে। সে আমাকে নাচাতে চায়ছে। মাঝে মাঝে খূব কষ্ট লাগতো। কিন্তু কিছুই করার ছিল না।
ওদের বিদায় অনুষ্ঠানের দিন নিঝুর সাথে আমার অনেক কথা হয়েছিল। সে দিন তাকে আমার সব কথা বলেছিলাম। সে বলেছিল আমার ডায়রীটা তাকে দেওয়ার জন্য। আমি তাকে ডায়রীটা দিয়েছিলাম। তিনদিন পরে সে আমাকে ডায়রীটা ফেরত দিয়েছিল। একটা চিরকূটসহ। সেখানে লেখা ছিল-
‘আমাকে নিয়ে আপনার সব লেখা আমি পড়েছি।
কয়েকবার পড়েছি।
যতবার পড়েছি ততবারই আপনাকে আমার সবটুকু দিয়ে ভালোবেসেছি।
আর এই ভালোবাসা এখন প্রবাহিত নদীর মতো…
চিরকূটে একটা লাভ চিহ্ন আঁকা ছিল আর ভিতরে লেখা ছিল
I love you mamun sir
ইতি আপনার নিঝু’
সে দিন থেকে আমাদের প্রেম একটা নতুন মাত্রা পায়। আমার হৃদয়ে গড়ে ওঠা গোপন দ্বীপটা নিঝুর কাছে প্রকাশিত হয়ে যায়। আর সেও এই দ্বীপটার জন্য ব্যাকুল হয়ে ওঠে।
এভাবে অনেক দিন কেটে যায়। তাদের ফাইনাল পরীক্ষাও শেষ। ১২ জুন তাদের রেজাল্ট দিয়েছিল। সে দিন নিঝুকে নিয়ে আমি নেভালে বেড়াতে এসেছিলাম। সেই কালো বোরকা এবং সাদা ওড়নাটা ছিল তার পরনে। আমি জিন্স আর পাঞ্জাবী পরে ছিলাম। দুজন দুজনার হাত ধরে সেদিন আমরা অনেক হেঁটেছি।
সিন্ধু হিন্দোল স্কোয়ার থেকে ১৭ নং ইবাদত খানা পর্যন্ত আমার হাত ধরে এক সাথে হেঁটেছিলাম। অনেক কথা হয়েছিল আমাদের। কর্ণফুলির পাকা বাঁধের উপর বসে দুজনে নদীর ঢেউ দেখেছিলাম। ঢেউ’র চলাৎ চলাৎ শব্দ শোনে মুগ্ধ হয়েছিলাম। সূর্যাস্ত উপভোগ করেছিলাম। গোধুলির রোমান্সকর আভা যেন দুজনের হৃদয়ে সেদিন এঁকে দিয়েছিল অন্য এক প্রেমের অনুপম আল্পনা। সেদিন আমি তাকে একটা রবীন্দ্র সংগীতও শোনিয়েছিলাম-
‘ভালোবেসে সখি নিভৃতে যতনে আমার
নামটি লিখ তোমার মনের মন্দিরে
আমার পরাণে যে গান বাজিছে
তাহার তালটি শিখ তোমার চরণ মঞ্জিরে।
ধরিয়া রাখিয় সোহাগে আদরে আমার
মুখর পাখি তোমার প্রাসাদ প্রাঙ্গনে
মনে করে সখি বাঁধিয়া রাখিয় আমার
হাতের রাখি তোমার কনক কঙ্কণে…..’
কোথাও না শিখলেও শোনে শোনে অনেক রবীন্দ্র সংগীত আমি মুখস্ত করেছিলাম।আমার কণ্ঠে গানটি শোনে সে দিন নিঝু অবাক হয়েছিল। শক্ত করে আমার হাতটা জড়িয়ে ধরে বলেছিল- ‘আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি, অনেক… তুমি আমাকে ছেড়ে কখনো কোথাও যাবা না প্রমিস করো প্লিজ।’
আমি প্রমিস করেছিলাম। আর সেদিন নিঝু আমাকে তুমি করে বলেছিল। কিন্তু……..
কিন্তু কি? আমি জিঙ্গেস করলাম।
এতটুকু বলে ওনি থেমে গেলেন। দেখলাম ওনার চোখ দিয়ে ঝর ঝর করে পানি পড়ছে। ওনার কান্না দেখে আমি আর সিহাবও কেমন যেন হয়ে গেলাম। আমাদের চোখও ছলছল করে উঠলো।
ধুরু ভাই আপনি কাঁদছেন কেন? এটা তেমন কি হল যে কাঁদতে হবে? এটা নিয়ে কাঁদার কি আছে? এই সেই অনেক কথা বলে আমারা ওনাকে সান্ত্বনা দিয়ে চললাম।
ওনি কেমন স্তব্ধ পাথরের মতো হয়ে রইলো। চোখ থেকে অশ্রু ঝরছে অবিরাম। যেন কোন বিদীর্ণ পাথর থেকে ঝর্ণাধারা বয়তে শুরু করলো। ওনার এই অবস্থা দেখে আমরাও কেমন নির্বাক হয়ে গেলাম। এভাবে কথাহীনতার মধ্য দিয়ে একটা মুহুর্ত কেটে গেল। তারপর…
২২.১০.২০১৪
আনোয়ারা, চট্টগ্রাম
কবিতার শবদাহ, পর্ব- ১
কবিতার শবদাহ- ২
বিষয়: সাহিত্য
১১৩৩ বার পঠিত, ১১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
নির্ঘাত ছ্যাঁকা!!!
মুখর পাখি তোমার প্রাসাদ প্রাঙ্গনে
মনে করে সখি বাঁধিয়া রাখিয় আমার
হাতের রাখি তোমার কনক কঙ্কণে…..’
মন্তব্য করতে লগইন করুন