"আল্লাহ জালীম কওমকে সৎপথ প্রদর্শন করেন না"

লিখেছেন লিখেছেন শেখের পোলা ২৯ মার্চ, ২০১৩, ০৮:৪৯:১৯ রাত



আত তাওবাহ; রুকু;-৩ আয়াত;-১৭-২৪

মক্কা বিজয় অভিযানের পক্ষে উৎসাহ প্রদান করতে, আল্লাহ তায়ালা তার ঘর, যা তারই ইবাদত করার জন্য হজরত ইব্রাহীম আঃ তৈরী করেছিলেন, আজ সেখানে মুশরীকদের ইমাম, কোরাইশরা, তার রক্ষনাবেক্ষন ও তীর্থযাত্রীদের সেবার নামে অধিকার করে আছে৷ আল্লাহ বলেন, সেখানে ঐ মুশরীকদের কোন অধিকার নেই৷ এ কথার মাধ্যমেই আলোচ্য রুকুটি শুরু হতে যাচ্ছে৷

১৭/مَا كَانَ لِلْمُشْرِكِينَ أَن يَعْمُرُواْ مَسَاجِدَ الله شَاهِدِينَ عَلَى أَنفُسِهِمْ بِالْكُفْرِ أُوْلَئِكَ حَبِطَتْ أَعْمَالُهُمْ وَفِي النَّارِ هُمْ خَالِدُونَ

অর্থাৎ;-মুশরীকদের অধিকার নেই যে, তারা আল্লাহর ঘরের রক্ষনাবেক্ষন করবে৷ যখন তারা নিজেরাই নিজেদের কুফরীর স্বীকৃতি দিচ্ছে৷ এদের আমল বরবাদ বরবাদ হবে৷ এরা অনন্তকাল দোজখে থাকবে৷



১৮/إِنَّمَا يَعْمُرُ مَسَاجِدَ اللّهِ مَنْ آمَنَ بِاللّهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ وَأَقَامَ الصَّلاَةَ وَآتَى الزَّكَاةَ وَلَمْ يَخْشَ إِلاَّ اللّهَ فَعَسَى أُوْلَـئِكَ أَن يَكُونُواْ مِنَ الْمُهْتَدِينَ

অর্থাৎ;-আল্লাহর ঘরের রক্ষনাবেক্ষন তো কেবল তারাই করবে যারা ইমান এনেছে আল্লাহর প্রতি ও শেষ দিনের প্রতি এবং নামাজ কায়েম করে, জাকাত আদায় করে, আল্লাহকে ছাড়া আর কাউকে ভয় করেনা৷ অতএব আশা করা যায় তারা হেদায়েত প্রাপ্তদের অন্তর্ভূক্ত হবে৷



১৯/أَجَعَلْتُمْ سِقَايَةَ الْحَاجِّ وَعِمَارَةَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ كَمَنْ آمَنَ بِاللّهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ وَجَاهَدَ فِي سَبِيلِ اللّهِ لاَ يَسْتَوُونَ عِندَ اللّهِ وَاللّهُ لاَ يَهْدِي الْقَوْمَ الظَّالِمِينَ

অর্থাৎ;-তোমরাকি হাজীদের পানি পান করানো এবং মসজিদে হারামের রক্ষনাবেক্ষনকে ঐ ব্যাক্তির আমলের সমান সাব্যস্ত করে নিয়েছ, যে ব্যাক্তি ইমান এনেছে আল্লাহর প্রতি এবং শেষ দিনের প্রতি, আর জেহাদ করেছে আল্লাহর পথে? এরা আল্লাহর কাছে সমান নয়৷ আর আল্লাহ জালিম কওমকে সৎ পথ প্রদর্শন করেন না।



যারা আল্লাহ আর কেয়ামতের দিনের উপর ইমান রাখে, আল্লাহর পথে অবিচল থাকার জন্য অমানুষিক লাঞ্ছনা গঞ্জনা অত্যাচার সহ্য করেছে, দেশান্তরীও হয়েছে, তাদের সাথে ঐ মুশরীক, যারা সামান্য সেবা দান করে, ইবাদতের বদলে ঐ ঘরে, ঘরের মালিকের সাথে শির্কের আড্ডাখানা বসিয়েছে, তাদের সমান করা যায়না৷ বরং ঐ ঘরের রক্ষনাবেক্ষনের দায়িত্ব ঐ মুমিনদের হাতে থাকাই বাঞ্ছনীয়।

২০/الَّذِينَ آمَنُواْ وَهَاجَرُواْ وَجَاهَدُواْ فِي سَبِيلِ اللّهِ بِأَمْوَالِهِمْ وَأَنفُسِهِمْ أَعْظَمُ دَرَجَةً عِندَ اللّهِ وَأُوْلَئِكَ هُمُ الْفَائِزُونَ

অর্থাৎ;-যারা ইমান এনেছে, দেশ ত্যাগ করেছে এবং নিজেদের জান মাল দিয়ে আল্লাহর রাস্তায় জেহাদ করেছে, আল্লাহর কাছে তাদের বড়ই মর্যাদা রয়েছে৷ আর তারাই প্রকৃত সফলকাম৷

২১/يُبَشِّرُهُمْ رَبُّهُم بِرَحْمَةٍ مِّنْهُ وَرِضْوَانٍ وَجَنَّاتٍ لَّهُمْ فِيهَا نَعِيمٌ مُّقِيمٌ

অর্থাৎ;-তাদের রব তাদের সুসংবাদ দিচ্ছেন স্বীয় অনুগ্রহের ও সন্তোষের এবং জান্নাতের, যার মধ্যে রয়েছে চিরস্থায়ী নেয়ামত।

২২/خَالِدِينَ فِيهَا أَبَدًا إِنَّ اللّهَ عِندَهُ أَجْرٌ عَظِيمٌ

অর্থাৎ;- তারা সেখানে অনন্তকাল থাকবে৷ নিশ্চয় আল্লাহর কাছে আছে মহা পুরষ্কার৷

২৩/يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ لاَ تَتَّخِذُواْ آبَاءكُمْ وَإِخْوَانَكُمْ أَوْلِيَاء إَنِ اسْتَحَبُّواْ الْكُفْرَ عَلَى الإِيمَانِ وَمَن يَتَوَلَّهُم مِّنكُمْ فَأُوْلَـئِكَ هُمُ الظَّالِمُونَ

অর্থাৎ;-হে ইমানারগন, তোমরা আপন পিতা ও ভাইদের অভিভাবকরূপে গ্রহন কোরনা যদি তারা কুফরীকে প্রীয় মনে করে ইমানের তুলনায়৷ তোমাদের মধ্যে যারা তাদের অভিভাবক রূপে গ্রহন করবে তারাই জালিম৷

বিশেষ করে তাদেরকেই বলা হচ্ছে যাদের আপন পিতা, ভাই বা নিকট আত্মীয় তখনও মক্কায় অবস্থান করছিল ও ইমান এনে ছিলনা৷ অভিযানে হয়ত তাদেরই বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরতে হবে৷ অতএব তারা দ্বিধা দন্দে ছিল৷ কেমন করে বিরোধিতা করব, তারাতো আমাদের গুরুজন৷ আল্লাহর পরিষ্কার ঘোষনা, তারা যেই হোক, যতক্ষন তারা মুমিন না হচ্ছে তাদের সাথে অভিভাবকত্বের সম্পর্ক রাখা যাবেনা৷ আর যদি রাখ তবে তোমরাও তাদের দলে শামিল বলে গন্য হবে।

আফসোস! আজ পৃথিবীতে এমন দেশ বা শাসক পাওয়া দুষ্কর যিনি মুশরীকদের অভিভাবকত্বের বাইরে শুধুই আল্লাহর অভিভাবকত্বেই সীমাবদ্ধ আছেন৷

২৪/قُلْ إِن كَانَ آبَاؤُكُمْ وَأَبْنَآؤُكُمْ وَإِخْوَانُكُمْ وَأَزْوَاجُكُمْ وَعَشِيرَتُكُمْ وَأَمْوَالٌ اقْتَرَفْتُمُوهَا وَتِجَارَةٌ تَخْشَوْنَ كَسَادَهَا وَمَسَاكِنُ تَرْضَوْنَهَا أَحَبَّ إِلَيْكُم مِّنَ اللّهِ وَرَسُولِهِ وَجِهَادٍ فِي سَبِيلِهِ فَتَرَبَّصُواْ حَتَّى يَأْتِيَ اللّهُ بِأَمْرِهِ وَاللّهُ لاَ يَهْدِي الْقَوْمَ الْفَاسِقِينَ

অর্থাৎ;-আপনি বলেদিন, তোমাদের কাছে যদি তোমাদের পিতা, তোমাদের সন্তান, তোমাদের ভাই, তোমাদের জোড়া (spouse), তোমাদের গোত্র, তোমাদের অর্জিত ধন-সম্পদ, তোমাদের ব্যবসা যার মন্দা পড়ার ভয় কর, এবং তোমাদের পছন্দের বাস গৃহ, আল্লাহ, তার রসুল, এবং তার পথে জিহাদ করার চেয়ে অধিক প্রীয় হয়, তবে অপেক্ষা কর, আল্লাহর নির্দেশ আসা পর্যন্ত৷ আল্লাহ ফাসেক লোকদের পছন্দ করেন না৷

অত্যন্ত কঠোর নির্দেশ৷ যার হৃদয় না কেঁপে উঠবে তার প্রকৃত মুমিন হওয়া সুদূর পরাহত৷ একদিকে মুমিনের পার্থিব দুনিয়ার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আটটি জিনিষ, যথা;- আপন পিতা, সন্তান, ভাই, স্বামী বা স্ত্রী, বংশ, যে অর্থ সম্পদ তীলে তীলে অর্জন করে সঞ্চয় করা হয়েছে, যে ব্যবসা কে শূন্য হতে মেধা পরিশ্রম দিয়ে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে, প্রতি পদে যাতে লোকসানের ঝুঁকির আশংকা রয়েছে৷ সুরম্য প্রাসাদ, যা ঘাম ঝরানো কামাই দিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে, একদিকে এই গুলি আর অন্য দিকে মাত্র তিনটি জিনিষ, যথা;- আল্লাহ ও তার রসুল এবং আল্লাহর দ্বীনকে আল্লাহর দুনিয়ায় প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম৷ এ তিনটির মোকাবেলায় পার্থিব আটটির কোনটি যদি প্রীয়তম হয়ে যায়, তবে ইমানের দাবীদার মুমিন ওয়েটিং লিষ্টে অপেক্ষা করতে থাক, আল্লাহর পরবর্তী নির্দেশের জন্য৷ তার পরেই বলা হয়েছে, আল্লাহ ফাসেকদের পছন্দ করেণ না৷ পারত পক্ষে তাদের ফাসেকই বলা হল।

বিষয়: বিবিধ

১২৩৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File