বাংলাদেশের চলমান সহিংস রাজনীতির ভবিষ্যৎ
লিখেছেন লিখেছেন এ বি এম মুহিউদ্দীন ২৯ মার্চ, ২০১৩, ০৯:০২:১৬ রাত
সরকার প্রধানত দুটি লক্ষ্যে সামনের দিকে এগিয়ে চলছে-
এক. পুনর্বার ক্ষমতা নিশ্চিত করতে নিজ সরকারের অধীনে নির্বাচন পরিচালনা করা।
দুই. আর যদি পুনর্বার ক্ষমতা নিশ্চিত করা না যায় তাহলে তৃতীয় কোন শক্তির [অভ্যন্তরীণ অথবা বর্হি] হাতে ক্ষমতা তুলে দিয়ে অন্তত: বিরোধীদের হাত থেকে বাঁচা।
বাংলাদেশে রাজনীতির প্রধান দিক হল- একমাত্র ‘ক্ষমতার রাজনীতি’ চর্চা করা। যে কোনভাবে ক্ষমতায় যাওয়া এবং তা চিরকালের জন্য কুক্ষিগত করার যে অনৈতিক প্রচেষ্টা রাজনৈতিক দলগুলোর চরিত্রে সবসময় লক্ষ্য করা যায়, তার সাথে এদেশের জনগণের পরিচয় নতুন নয়। তবে বাংলাদেশে রাজনৈতিক দলগুলোর চলমান ক্ষমতার লড়াই চিরাচরিত লড়াই থেকে কিছুটা ভিন্ন এবং অতিমাত্রার সাংঘর্ষিক। ক্ষমতার চলতি লড়াইয়ে যোগ হয়েছে নতুন উপাদান এবং নতুন শংকা। এ বিষয়েই আমাদের আজকের আলোচনা। বাংলাদেশে সাধারণত সংসদ নির্বাচনের আগ মুহূর্তে সরকার ও তার বিরোধী শিবিরে নির্বাচন কেন্দ্রিক রাজনৈতিক সংকট লক্ষ্য করা যেত। যার লক্ষ্য থাকতো, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ওপর প্রভাব বিস্তার করা। যাতে নির্বাচনে অধিক ফায়দা লাভ করা যায়। কিন্তু বর্তমান আওয়ামী জোট সরকারের নিরংকুশ ক্ষমতা লাভের পর এ দৃশ্যপট পুরোপুরি বদলে যায়। খুব অল্প সময়ের ব্যাবধানে অনেকটা ক্ষমতা গ্রহণের পরপরই বিরোধী রজনৈতিক জোটের উপর খড়গহস্ত হয়ে পড়ে সরকার। বিশেষত: ইসলামপন্থীদের উপর দলন-পিড়ন মাত্রাতিরিক্ত পর্যায়ে পৌঁছে যায়। সরকার জনগণের সামনে নিয়ে আসে স্পর্শকাতর যুদ্ধাপরাধ ইস্যু। আর এর মধ্য দিয়ে শুরু হয় বাংলাদেশে রাজনীতির নতুন মেরুকরণ এবং হত্যাযজ্ঞ। সরকার ধারণ করে ফ্যাসিবাদী চরিত্র। ইসলামপন্থী ও জাতীয়তাবাদী শক্তির জোট ভাঙ্গার জন্য আওয়ামী জোটের নিরন্তর প্রচেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পর সরকার অনেকটা খোলাখুলিভাবে ইসলামপন্থীদের উপর দমন-নিপিড়নের অনৈতিক পথে অগ্রসর হতে থাকে। জনগণের নিত্য-নৈমত্তিক সমস্যাকে দূরে ঠেলে সরকার যুদ্ধপরাধ ইস্যুকে রাজনীতির মূল খবরে পরিণত করে। সরকার ইসলামপন্থীদের নির্মুল করার লক্ষ্যে প্রকাশ্যে তাদের চরিত্র হননের জোর প্রচেষ্টায় লিপ্ত হয়। আর তাতে ইসলামপন্থীরা চলে আসে রাজনীতির একেবারে ফ্রন্ট লাইনে। কিন্তু তাতে আওয়ামী সরকার বা ইসলামপন্থী -কে কতটা লাভবান হয়েছে, তা মূল্যায়নের এখনই চূড়ান্ত সময় নয়। অন্যদিকে সে সময় রাজনীতিতে জাতীয়তাবাদী শক্তির কিছুটা ম্রিয়মান ভূমিকা দলটিকে এ মুহূর্তে বেশ বিপাকে ফেলে দিয়েছে তা স্পষ্টই দৃশ্যমান। ইসলামপন্থীদের নির্মুল করতে সরকার তার ধর্মনিরপেক্ষ নীতি-আদর্শকে বেশ ফলাও করে প্রচার করতে শুরু করে। তবে এ বিষয়টি খুব পরিস্কারভাবে ধরা পড়েছে যে, আওয়ামী জোট সরকার পুনরায় ক্ষমতা কুক্ষিগত করার পথে প্রধান প্রতিবন্ধক হিসেবে ইসলামপন্থীদেরকেই প্রধান বিবেচনায় নিয়েছে। যদ্দরুন ইসলামপন্থীদের রাজনৈতিক কর্মসূচির ব্যাপারে প্রথম থেকেই সরকারকে দেখা যায় ডানপিঠে ভূমিকায়। যুদ্ধাপরাধের বিচার প্রক্রিয়া এবং দেশের শীর্ষস্থানীয় আলেমদের নির্যাতন-নিপিড়নের পথ সরকারকে যখন খুব বেশী বেকায়দায় ফেলে দেয়, তখনই শাহবাগে উন্মোচিত হয় নোংরা রাজনীতির আরেকটি নতুন মোড়ক। শাহবাগ বাংলাদেশের চলমান সহিংস রাজনীতির একটি সফল বিতর্কিত নয়া উপাদান হতে পেরেছে। গণজাগরণের নামে ইসলাম বিদ্বেষী যে মনোভাব শাহবাগে ফুটে উঠেছে, তাতে যুদ্ধাপরাধের বিচার দাবীর যে পরিশুদ্ধ আন্দোলন তা ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শাহবাগ যখন সরকারের কন্ঠে কথা বলা শুরু করল আর ইসলামের বিরুদ্ধে প্রকাশ্য বিশোদগারে লিপ্ত হল, শাহবাগ হয়ে পড়ল সরকারের জন্য অবৈধ এক গর্ভতুল্য। এ মুহূর্তে সরকার যেন তা এ্যাবোর্শন করে ফেলতে পারলেই বাঁচে। আওয়ামী জোট সরকার প্রথম থেকেই ‘২০২১সালের বাংলাদেশ’ নামক যে রূপকল্প প্রচার করতে থাকে, তাতে এ সরকারের গোপন অভিলাসের কথা দ্বিতীয়বার ভাবতে হয় না। আর সে বাসনা পূরণের লক্ষ্যেই কোনপ্রকার জনমত ছাড়াই সরকার তড়িঘড়ি করে সংবিধান থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে দেয়। বর্তমান সরকার এ কথা এখনো বিশ্বাস করে না যে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া বাংলাদেশে কোন নির্বাচন আদৌ গ্রহণযোগ্যতা পাবে না। শাহবাগ বাংলাদেশের রাজনীতিতে সরাসরি আদর্শিক লড়াইয়ের যে নতুন উপাদনটি নিয়ে এলো তা চলমান রাজনৈতিক সহিংসতাকে আরো উসকে দিল মাত্র। বাংলাদেশের রাজনীতিতে ধর্মনিরপেক্ষতার কথা এতকাল যে প্রতিকী অর্থে ব্যবহৃত হতো, তা রাজনীতিতে এখন পূর্ণ অবয়ব ও গুরুত্বের সাথে বিবেচিত হচ্ছে। ধর্মনিরপেক্ষতার সাথে ইসলামের সরাসরি আদর্শিক সংঘর্ষ থাকার ফলে শাহবাগী তথা ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে গেল লড়াকু ইসলামপন্থী আরেকটি গ্রুপ। আর প্রচলিত রাজনীতির বাইরের পরস্পর বিপরীত এ দুটি গ্রুপ এ মুহূর্তে বাংলাদেশের রাজনীতির কোলজুড়ে অবস্থান করছে। এমনকি এ দুটি গ্রুপ যদি বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রাজনীতির নতুন কোন মেরুকরণ করে দেয়, তাতে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। অনেকে প্রত্যাশা করছেন, ক্ষমতাসীন বর্তমান আওয়ামী জোট হয়তো শেষপর্যন্ত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যস্থায় আবার ফিরে আসবে অথবা সংলাপের মধ্য দিয়ে পরবর্তীতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু সরকারের অব্যাহত সহিংস নীতি আর হত্যাযজ্ঞ সে রকম বার্তা প্রদান করে না। বরং আওয়ামী সরকারের অব্যাহত কর্মকান্ড এ বার্তাই প্রদান করে যে, সরকার প্রধানত দুটি লক্ষ্যে সামনের দিকে এগিয়ে চলছে- এক. পুনর্বার ক্ষমতা নিশ্চিত করতে নিজে সরকারের অধীনে নির্বাচন পরিচালনা করা। দুই. আর যদি পুনর্বার ক্ষমতা নিশ্চিত করা না যায় তাহলে তৃতীয় কোন শক্তির [অভ্যন্তরীণ অথবা বর্হি] হাতে ক্ষমতা তুলে দিয়ে অন্তত: বিরোধীদের হাত থেকে বাঁচা।
বিষয়: বিবিধ
১১৪১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন