{}{} ইকামতে দ্বীনের জন্য জরুরী চারটি কাজ--( শেষাংশ) {}{}
লিখেছেন লিখেছেন শেখের পোলা ১৮ ডিসেম্বর, ২০১৫, ০৮:৩৬:১৫ রাত
وَلْتَكُن مِّنكُمْ أُمَّةٌ يَدْعُونَ إِلَى الْخَيْرِ وَيَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنكَرِ وَأُوْلَـئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ
অর্থাৎ;-আর তোমাদের মধ্যে এমন একটি দল থাকা উচিৎ যারা সৎ কর্মের প্রতি আহবান জানাবে, ভাল কাজের নির্দেশ দেবে এবং অন্যায় কাজ হতে বিরত রাখবে। আর তারাই হবে সফলকাম।
১০৪ নং আয়াতে একটি উম্মাহ বানাবার তাকিদ দেওয়া হয়েছে৷ কোরআনের কোথাও মুসলীমদের জন্য ‘কওম’ শব্দটি আসেনি৷ হয় উম্মাহ নয় হেজবু্লাহ বলা হয়েছে৷ সেই উম্মার উপর তিনটি দায়ীত্ব অর্পণ করা হয়েছে, যার প্রথমটি হল দাওয়াতে খাইর বা কল্যানের দিকে আহবান৷ যা করতে হবে এই কোরআনের মাধ্যমে৷ এবং এটিই উত্তম হাতিয়ার৷ সুরা ‘ইউনুসে’র ৫৮ নং আয়াতে বলা হয়েছে;-‘বলুন, এ কোরআন আল্লাহর অনুগ্রহে ও তাঁর রহমতে; অতএব তারা সবাই এতে আনন্দিত হোক৷ তারা যা কিছু জমা করে তার চেয়ে এ কোরআন অনেক উত্তম’৷ দ্বিতীয় দায়িত্ব হল, সৎ কাজের উপদেশ দেবে৷ তৃতীয়টি হল;-খারাপ বা শরিয়ত বিরুদ্ধ কাজে বাধা দেবে৷ হজরত আবু সাঈদ খুদরী রাঃ বর্ণীত হাদিশে বলা হয়েছে যে, রসুল সঃ বলেছেন যে, তোমাদের মধ্যে কেউ যদি কাউকে নিষিদ্ধ কজ করতে দেখে, সে যেন তা হাতের দ্বারা প্রতিহত করে৷ ‘ফাল ইয়ুগাইয়েরহু’ বলে তাকে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে৷ যদি হাত দ্বারা প্রতিহত করার ক্ষমতা না থাকে তবে, কথার দ্বারা নিষেধ করবে৷ রসুল সঃ বলেছেন, ‘আদ্দ্বীনু নসিহাহ’ দ্বীন হল সদোপদেশ (খাইর খাহী)৷ সাহাবাগন জিজ্ঞেস করলেন যে, কার জন্য সদোপদেশ৷ রসুল সঃ বললেন, আল্লাহর জন্য, তাঁর কিতাবের জন্য, তাঁর রসুলের জন্য, আইম্মাতিল মুসলিমীনের জন্য ও তার ইমামের জন্য৷
রসুল সঃ আরও বলেছেন, ‘উনসোর আখাকা জালেমান আও মাজলুমান’৷ আপন ভাইয়ের সাহায্য কর, চায় সে জালেম হোক বা মাজলুম৷ এ কথা শুনে সাহাবাগণ দ্বিধায় পড়লেন এই ভেবে যে, মাজলুম বা অত্যাচারিতের সাহায্যতো করতেই হবে তাই বলে অত্যাচারিকেও সাহায্য করতে হবে৷ রসুল সঃ বললেন হাঁ সাহায্য করতে হবে, অত্যাচার করা থেকে তার হাতকে বাধা দেবে৷ এটি হল নেহী আনিল মুনকার৷ যদি এতেও অক্ষম হও তবে অন্তরে ঘৃণা পোষণ কর৷ এটি ইমানের দূর্বলতম স্তর৷ সমাজে অনৈতীক বা শরিয়ত বিরোধী কাজে শরীরে জ্বলন উঠতে হবে৷ যদি না ওঠে তবে ইমানের অভাব আছে বুঝতে হবে৷
আপনার সন্তান কঠীন রোগে ছটফট করছে সম্ভাব্য সব চিকিৎসা, ঝাড় ফুঁক, দোয়া তাবিজও বিফল হয়েছে৷ পুরোটাই আপনার সাধ্যের বাইরে, আপনি নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারবেন না৷ তেমনই তাগুতী ব্যবস্থায়, সমাজে সূদ ঘূষ, মদ জুয়া, চুরী জেনা শক্তি প্রয়োগে বন্ধ করা, বক্তৃতা বিবৃতি উপদেশের ক্ষমতাও নাই৷ অন্তরে ঘৃণা আছে৷ এখানেও ঐ অসুস্থ সন্তানের দুঃশ্চিন্তার মত শরীরে জ্বলন উঠবে৷ কিন্তু যদি নিশ্চিন্তে ঘুমান৷ তার অর্থ হবে আপনি এ সব মেনে নিয়েছেন৷
সুরা বাক্বারার ২৫৬ আয়াতের শেষে বলা হয়েছে, যে তাগুতকে অস্বীকার করবে এবং আল্লাহর প্রতি ইমান আনবে, সে এমন এক শক্ত হাতল ধারণ করল যা কখনও ভাংবার নয়, আল্লাহ সর্বশ্রোতা, মহাবিজ্ঞ৷ হাদিশে এসেছে যে, বান্দা যখন তাগুতি বা ফাসেকের গুন গায় বা অভিনন্দন পাঠ করে তখন আল্লাহ এত পরিমান রাগান্বিত হন যে তার আরশ কাঁপতে থাকে৷
আমাদের সামনে নবীর সীরাত বর্তমান৷ সে অনুযায়ী অগ্রসর হলেই এক মাত্র কাঙ্খীত লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব৷ রসুল সঃ নবুয়ত প্রাপ্তির পর তৌহীদেরই দাওয়াত দিতেন, যেখানে শির্ক না করার তথা মূর্তীপূঁজা বন্ধ করার উপদেশ দিতেন৷ এটি তাঁর ছিল প্রতিবাদের ২য় স্তর, যা মুখের ভাষায় করা হয়৷ তিনি ইচ্ছা করলে দু চার সাহাবী দিয়ে রাতের আঁধারে কাবার মূর্তীগুলি গুঁড়িয়ে দিতে পারতেন৷ তিনি তা করেনি৷ বরং ১২ বছরের মক্কী জীবনে মূর্তী ভর্তি ক্বাবার তওয়াফ করেছেন, ডাইনে বামে সামনে পিছনে মূর্তি নিয়েই নামাজও পড়েছেন আর মনোবল ও জনবল বৃদ্ধির দাওয়াতই দিয়েছেন৷ যদি তা ভেঙেই দিতেন তবে তা তারা ইব্রাহীম আঃ কওমের মত আবারও বানিয়ে নিত আর নও মুসলীমদের উপর দ্বিগুন অত্যাচার চালাত৷ অবশ্য ওহোদ যুদ্ধে তা হয়েছিল৷
হীজরতের ৮ বছর পর যখন বুঝলেন যে পায়ের নীচে মাটি শক্ত হয়েছে, মনোবল জনবলও যথেষ্ট হয়েছে তখন দশ হাজারের কাফেলা নিয়ে মক্কা গিয়ে প্রথম কাজ যা করলেন তা আর অন্তরের ঘৃণা বা কথার দ্বারা নয় শক্ত হাতে ক্বাবা ঘর ও চত্তরের মূর্তী নির্মূল৷ এটিও সহজে হয়নি৷ মাঝে বাধা এসেছে৷ হোদায়বিয়ার সন্ধি হয়েছে৷ নিবেদিত প্রাণ সাহাবীরা ভুল বুঝেছেন৷ তাঁর আদেশ তিনবার অমান্য করে এহরাম না খুলে, কোরবানী না করে৷ রসুল সঃ অসন্তুষ্ট হয়েছেন৷ অবশেষে উম্মুল মু’মিনীনের পরামর্শ মত নিজে আগে এহরাম খুলে ক্বোরবানী করে সমস্যার সমাধান করেছেন৷ সুরা ফাতহের মাধ্যমে আল্লাহ পরাজয় নয় বিজয়ের ঘোষণা দিয়েছেন৷
এ অবস্থায় পৌঁছতে সাহাবীরাও রসুল নিজেও রক্ত ঝরিয়েছেন৷ এ কাজ মোটেও সহজ ছিলনা৷ সুরা ‘তওবা’র ১১১ নং আয়াতে আল্লাহ ঘোষণা দিয়েছেন;- ১১১/ إِنَّ اللّهَ اشْتَرَى مِنَ الْمُؤْمِنِينَ أَنفُسَهُمْ وَأَمْوَالَهُم بِأَنَّ لَهُمُ الجَنَّةَ يُقَاتِلُونَ فِي سَبِيلِ اللّهِ فَيَقْتُلُونَ وَيُقْتَلُونَ وَعْدًا عَلَيْهِ حَقًّا فِي التَّوْرَاةِ وَالإِنجِيلِ وَالْقُرْآنِ وَمَنْ أَوْفَى بِعَهْدِهِ مِنَ اللّهِ فَاسْتَبْشِرُواْ بِبَيْعِكُمُ الَّذِي بَايَعْتُم بِهِ وَذَلِكَ هُوَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ
অর্থাৎ;-নিশ্চয়ই আল্লাহ মুমিনদের নিকট হতে তাদের জান ও মাল কিনে নিয়েছেন, বিনিময়ে অবশ্যই তাদের জন্য রয়েছে জান্নাত৷ তারা যুদ্ধ করে আল্লাহর পথে, অতঃপর হত্যা করে ও নিহত হয়৷ তওরাত, ইঞ্জীল ও কোরআনে এ সম্পর্কে সত্য ওয়াদা রয়েছে৷ আর আল্লহর চেয়ে প্রতিশ্রুতি রক্ষায় কে অধিক? সুতরাং তোমরা আনন্দ কর তোমাদের সে সওদার জন্য যা তোমরা তার সাথে করেছ৷ আর তাই হল বিরাট সাফল্য৷
অতএব, আসুন নবী সঃ এর সীরাতকে সামনে রেখে ইকামতে দ্বীনের চারটি স্তর, যার প্রথমটি প্রকৃত ইমান-না থাকলে হাসিল করি৷ ২য়টি নিজ চরিত্রে ও পরিবারে শরিয়ত কায়েম করি৷ ৩য়টি হল হাবলুল্লাহ বা কোরআনের শিক্ষা গ্রহণ করে একই উম্মায় একতাবদ্ধ হই৷ ও ৪র্থটি অন্তরে ঘৃণা দিয়ে শুরু করে কথা ও লিখনীর প্রতিবাদ পার হয়ে জনবল মনোবল সঞ্চয়ের মাধ্যমে তাগুতী ব্যবস্থার পতন ঘটিয়ে দ্বীন কায়েমের পথে অগ্রসর হই৷ কমিশণার, চেয়ার ম্যান, এম পি, মন্ত্রীত্ব দিয়ে ইসলাম আসবে না৷ আসবে এক মাত্র নবীর সীরাত অনুসরণে৷ আল্লাহ আমাদের সকলকে বোঝার তৌফিক দিন৷
(মূল বক্তব্য মরহুম জনাব ডাঃ ইসরার আহমদ, ইউ টিউব)
বিষয়: বিবিধ
১১৮১ বার পঠিত, ১৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
জাজাকাল্লাহ খায়ের চাচাজান ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন